আজ ম্যারাডোনার জন্মদিন। ১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসে জন্মগ্রহণ করেন দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা। পারিবারিকভাবে অতটা সচ্ছল ছিলেন না। পরিবারে তিন কন্যার পরে তিনি ছিলেন প্রথম পুত্র। তাঁর পরে ছিল আরও দুই ছোট ভাই। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ম্যারাডোনার পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হয়। ১৯৭৬ সালের ২০ অক্টোবর আর্জেন্টিনোস জুনিয়রের হয়ে অভিষেক হয় ম্যারাডোনার। ১৯৭৯ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত ফিফা যুব বিশ্বকাপে জয় পায় আর্জেন্টিনা। এই বিশ্বকাপজয়ী দলেরও সদস্য ছিলেন ম্যারাডোনা। অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েছেন তিনি। বিশ্বকাপে ১৬ ম্যাচে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক ছিলেন ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনার হয়ে ৯১ ম্যাচে ৩৪ গোল করেন। ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় পৃথিবীজুড়ে অগণিত মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন।
ম্যারাডোনা জীবনে অসংখ্য পুরস্কার জিতেছেন। ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। পেয়েছিলেন গোল্ডেন বল পুরস্কার। ১৯৭৯, ১৯৮০ ও ১৯৮১ সালে আর্জেন্টিনা লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পান ম্যারাডোনা।
দিয়েগো ম্যারাডোনা এবং লিওনেল মেসি ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ এবং গোল্ডেন বল জিতেছেন। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৫৩টি ফাউলের শিকার হওয়ার রেকর্ড এখনো আছে ম্যারাডোনার ঝুলিতে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত এ পরিমাণ ফাউলের শিকার হন তিনি। শুধু তা–ই নয়, ১৯৮২ সালে ইতালির বিপক্ষে এক ম্যাচে ২৩টি ফাউলের শিকার হয়েছিলেন।
২০০৫ সালের ১৫ আগস্ট ম্যারাডোনা ‘দ্য নাইট অব দ্য নাম্বার টেন’ নামে একটি টক শো করেছিলেন। যেখানে জিদান, রোনালদো এবং হার্নান ক্রেসপোর মতো ফুটবল তারকা যোগ দিয়েছিলেন। প্রথম অতিথি ছিলেন পেলে।
২০০৩ সালের ২৬শে ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার ফুটবল ক্লাব ‘আর্জেন্টিনোস জুনিয়র’ নিজেদের স্টেডিয়ামের নামকরণ করে ম্যারাডোনার নামে।
আর্জেন্টিনার কমিক বই ‘এল সাজদোর দে আভেন্তুরাস’-এ একটি ছোট্ট চরিত্র ছিলেন ম্যারাডোনা। বইটি শেষ হওয়ার পরে এই কমিক বইয়ের লেখক ‘এল ডিয়েগো’ নামে একটি নতুন কমিক বই লেখেন, যে বইয়ে ম্যারাডোনা ছিলেন প্রধান চরিত্র।
মেসি, বাতিস্তা, সার্জিও আগুয়েরো এবং ক্রেসপোর পরে জাতীয় দলের হয়ে ৯০ ম্যাচে ৩৪ গোল করে ম্যারাডোনা হয়েছেন আর্জেন্টিনার সর্বকালের পঞ্চম সর্বোচ্চ গোলদাতা। এ ক্ষেত্রে মেসির গোল সংখ্যা ১১২।
১৯৮০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ম্যারাডোনা মাদকাসক্তির সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। এটি তাঁর ফুটবল খেলায় প্রভাব ফেলেছিল। ডোপ টেস্টে মাদকাসক্তি ধরা পড়লে তাঁকে ১৫ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। মাদকাসক্তির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ হন তিনি।
ম্যারাডোনা ৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে বোকা জুনিয়র্স থেকে বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছিলেন। তখনকার দিনে দলবদলের এই ফি ছিল বিশ্ব রেকর্ড। এর দুই বছর পর ৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে নাপোলিতে যোগ দেন তিনি। ফলে আবারও দলবদলের রেকর্ড ভেঙে যায়।
ফিদেল কাস্ত্রো ছিলেন ম্যারাডোনার ভালো বন্ধু। ম্যারাডোনার বাঁ পায়ে কাস্ত্রোর একটি ট্যাটু করা ছিল। চে গুয়েভারা ছিলেন ম্যারাডোনার অনুপ্রেরণা। ম্যারাডোনা বলেছিলেন, ‘আমি তাঁকে আমার বাহুতে এবং হৃদয়ে বহন করি। আমি তাঁর গল্প থেকে তাঁকে ভালোবাসতে শিখেছি। আমি মনে করি, তাঁর সত্যটা আমি জানি।’