জীবনঘাতী ব্যাধি নিয়েও খেলে গিয়েছেন যাঁরা

কিছুদিন আগে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার ক্যামেরন গ্রিন। জন্মের পর থেকেই কিডনির সমস্যায় ভুগছেন তিনি। জন্মের পরপরই ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, তাঁর আয়ু মাত্র ১২ বছর। অথচ মৃত্যুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ২৪ বছর বয়সে এখনো পুরোদমে ক্রিকেট খেলে চলেছেন গ্রিন। এত প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়েও উঁচিয়ে ধরেছেন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও বিশ্বকাপ ট্রফি। গ্রিনই প্রথম নন, এমন আরও খেলোয়াড় রয়েছেন, যাঁরা জীবনঘাতী রোগ উপেক্ষা করে খেলে গিয়েছেন নিজেদের আপন মনে।

যুবরাজ সিং

২০০৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর স্টুয়ার্ট ব্রডকে ছয় ছক্কা মেরেছিলেন যুবরাজ সিং
এএফপি

ক্যানসারজয়ী ক্রিকেটারের নাম এলে সবার প্রথমেই ভেসে আসে যুবরাজ সিংয়ের মুখ। ২০১১ বিশ্বকাপ জিতে যুবরাজ যখন ভারতের ১২০ কোটি মানুষের নায়ক, তখনই দুঃস্বপ্ন নেমে আসে তাঁর জীবনে। ২০১২ সালে ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হন যুবরাজ। ফুসফুসে তৈরি হওয়া টিউমার থেকে হয় ক্যানসার। কয়েক দফা থেরাপি নেওয়ার পর অবশেষে ২০১৩ সালে ক্যানসার জয় করেন যুবরাজ। জাতীয় দল ও আইপিএলে এরপরও বেশ কিছু বছর দেখা গিয়েছে তাঁকে।

মাইকেল ক্লার্ক

২০১৫ সালে নিজেদের মাটিতে অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জেতেন ক্লার্ক
ছবি: এএফপি

অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্কও আক্রান্ত হয়েছিলেন ক্যানসারে। ২০০৬ সালে ক্লার্ক যখন আস্তে আস্তে নিজেকে অস্ট্রেলিয়া দলে থিতু করে নিচ্ছেন, তখনই দুঃসংবাদ হানা দেয় তাঁর জীবনে। একদিন হঠাৎই নিজের মুখে দুটি কালো ছোপ ছোপ দাগের দেখা পান তিনি। কয়েকটি টেস্ট করার পরই বুঝতে পারেন, এই কালো কালো দাগ আসলে ‘মেলানোমা’ রোগের লক্ষণ, যাকে ‘স্কিন ক্যানসার’ও বলা হয়ে থাকে। ক্যানসার থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য ক্রিকেটকে সাময়িক সময়ের জন্য বিদায় বলেন ক্লার্ক। ২০০৭ সালে আবারও ক্রিকেটে ফেরত আসেন তিনি। যদিও সময়–সময় স্কিন ক্যানসার হানা দিয়েছে ক্লার্কের জীবনে। তবে তা তাঁকে আটকাতে পারেনি বিশ্বজয় থেকে। ২০১৫ সালে নিজেদের মাটিতে অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জেতেন ক্লার্ক। ২০১৯ সালে সার্জারির মাধ্যমে পাকাপাকিভাবে ক্যানসার থেকে মুক্ত হন কিংবদন্তি এই ব্যাটসম্যান।

ম্যাথু ওয়েড

ম্যাথু ওয়েড
ছবি: এএফপি

অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডও আক্রান্ত হয়েছিলেন ক্যানসারে। সেটাও ক্রিকেটে পা দেওয়ার আগেই। মাত্র ১৬ বছর বয়সে টেস্টিকুলার ক্যানসার ধরা পড়ে ওয়েডের। একেবারে প্রথম স্টেজে ধরা পড়ায় দ্রুতই থেরাপির শরণাপন্ন হন ওয়েড। কয়েক বছর লড়াই করার পর অবশেষে ক্যানসার থেকে মুক্তি মেলে। ক্যারিয়ারের বিশাল একটা সময় অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষকের জায়গা নিয়ে লড়াই করে অবশেষে শেষ বয়সে এসে টি-টোয়েন্টি দলে থিতু হয়েছেন ওয়েড। পেয়েছেন অধিনায়কের দায়িত্বও। সহ-অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপাও।

এরিক আবিদাল

ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন এরিক আবিদাল
ছবি: টুইটার

এরিক আবিদাল তখন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে। ফ্রান্স ও বার্সেলোনার অবিচ্ছেদ্য অংশ তখন আবিদাল। এমন সময়েই দুঃসংবাদ নিয়ে আসেন ডাক্তাররা। ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। বেশ বাজেভাবে ছড়িয়ে পড়া ক্যানসার দূর করতে প্রায় এক বছর খেলার বাইরে ছিলেন আবিদাল। অবশেষে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের পর ২০১৩ সালে আবারও ফুটবলে ফেরত আসেন তিনি। সে মৌসুমেই চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে বার্সেলোনা। আর অধিনায়ক পুয়োল আর্মব্যান্ড পরিয়ে দেন আবিদালের হাতে, যাতে ক্যানসারজয়ী আবিদালের হাত ধরেই চ্যাম্পিয়নস লিগ উঁচিয়ে ধরতে পারে বার্সেলোনা।

ডেভিড বেকহাম

অ্যাজমা নিয়েই মাঠ কাঁপিয়েছেন বেকহাম
ছবি: এক্স

অন্যদের তুলনায় বেকহামের রোগটা বেশ সাধারণ। কিন্তু বেকহাম যে খেলার লোক ছিলেন, তাতে প্রথমেই বাতিলের খাতায় ফেলে দিতে হয় সেই রোগীদের। মাত্র ১২ বছর বয়সে অ্যাজমার সমস্যা ধরা পড়ে তাঁর। ডাক্তারের পরামর্শ ছিল লম্বা সময় ধরে দৌড়াদৌড়ি করা, খেলাধুলা করা থেকে দূরে থাকার। কিন্তু ফুটবল যাঁর রক্তে, তাঁকে কি আর আটকে রাখা সম্ভব? বেকহাম এই অ্যাজমা নিয়েই মাঠ কাঁপিয়েছেন। ম্যানচেস্টার-মাদ্রিদ থেকে মিলান, রাজত্ব করেছেন ফুটবলের মাঠে। ইংল্যান্ডকে যেমন হতাশায় ডুবিয়েছেন, তেমনই তুলেছেন শীর্ষে। অ্যাজমা নিয়েও বেকহাম ফুটবল চালিয়ে গিয়েছেন আপন গতিতে।