২০ ওভারের বিশ্বকাপ

ভারতের তারকা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলিবিসিসিআই

স্কুলের হোস্টেলে তখন টিভি দেখার উপায় নেই, ওই সময়ে ভরসা হয়ে এসেছিল স্যারদের রুমের টেলিভিশন সেটটা। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর, সেকেন্ড টার্ম আর বার্ষিক পরীক্ষার মাঝামাঝি সময়। কয়েক মাস আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে সাদা-কালো টেলিভিশন একটা এসেছিল বটে হোস্টেলের ডাইনিংরুমে, তবে বিশ্বকাপ শেষে কয়েকজন একটু ‘অপব্যবহার’ করায় সেটি বিদায় নিয়েছে। ২০ ওভারের প্রথম ‘বিশ্বকাপ’ দেখতে তাই ওই বিকল্প ব্যবস্থার আশ্রয় নেওয়া।

তখনো এ টুর্নামেন্টের নাম বিশ্বকাপ হয়নি, আলাদা করে বলা হচ্ছিল ‘ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি’। গ্রুপ পর্বের ওই ম্যাচে ভারতের ১৪১ রানের জবাবে পাকিস্তানের রানও সমান, মানে ম্যাচ টাই। অন্তত ফলটা অমন জেনেই স্যারদের রুম ত্যাগ করেছিলাম আমরা কয়েকজন। অথচ পরদিন উঠে শুনি আদতে ম্যাচটি জিতেছে ভারত!

সেটিও অদ্ভুত এক নিয়মে। ম্যাচ টাই হওয়ার পর বেছে নেওয়া হয়েছিল টাইব্রেকার, যেটির নাম ছিল বোল-আউট। অনেক খেলাতেই টাইব্রেকারের নিয়ম আছে, স্কোর সমান হলে যেটির আশ্রয় নেওয়া হয়। ফুটবলে পেনাল্টি শুটআউট, টেনিসে নাম টাইব্রেক, বাস্কেটবলে ওভারটাইম। তবে ক্রিকেটের ওই বোল-আউটকে অদ্ভুত বলার কারণ—আদতে এটি ক্রিকেটের মূলনীতির সঙ্গে যায় না।

একজন বোলার বোলিং করবেন, সেটি খেলবেন একজন ব্যাটসম্যান—ক্রিকেট খেলার একেবারে ভিত্তি বলা যায় এটিকে। কিন্তু বোল-আউটের নিয়ম ছিল এমন, একজন বোলার এসে বল করবেন, কিন্তু সামনে কোনো ব্যাটসম্যান থাকবেন না। বল স্টাম্পে লাগলে ১ পয়েন্ট।

বিশ্বকাপে ওই ম্যাচের আগে একটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয়েছিল ওই নিয়মে, তবে পাকিস্তান নাকি সেটির কথা জানতই না। তবে ভারত জানত ঠিকই, এটির আলাদা করে অনুশীলনও করেছিল তারা। ম্যাচে সাধারণত বোলিং করেন না, এমন বোলাররাও এসেছিলেন ভারতের হয়ে বোল-আউটে। ফলটাও হয়েছিল অমন—ভারত ৩, পাকিস্তান ০!

ফুটবল ম্যাচের ফল এমন হতে পারে, কিন্তু ক্রিকেটে তো নয়! ম্যাচ শেষে ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিও বলেছিলেন, ক্রিকেট ম্যাচের ফল এভাবে নির্ধারিত হওয়া উচিত নয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট তখন ছিল এমনই। প্রশ্ন ছিল—আদতে এটি ক্রিকেট তো?

২.

২০০৩ সালে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট দেখেছিল প্রথম স্বীকৃত ২০ ওভারের ম্যাচ। ২০০৭ সালে এ সংস্করণের বিশ্বকাপ আয়োজনের যখন পরিকল্পনা করে আইসিসি, মানে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা; ভারত রাজি ছিল না মোটেও। রীতিমতো জোরাজুরি করতে হয়েছিল সে সময়ের ভারতের বোর্ডকে এ টুর্নামেন্ট খেলতে। ভারত পাঠিয়েছিল অনভিজ্ঞ একটা দল। শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড়দের ছাড়াই গঠিত দলটির অধিনায়ক করা হয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনিকে, যিনি এর আগে কখনো ভারতকে নেতৃত্ব দেননি।

ক্রিকেটের এ সংস্করণ এ শতাব্দীর ‘প্রোডাক্ট’। বলতে গেলে একটা প্রজন্ম বড়ও হয়েছে এ সংস্করণের পথচলার সঙ্গে। ২০০৭ সালের পর দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ হওয়ার কথা থাকলেও সব সময় সেটি হয়নি বিভিন্ন কারণে। ২০১৬ সালের পর তো হয়েছে ২০২১ সালে গিয়ে।

এরপর ফাইনালে যখন সেই ভারতের বিপক্ষেই পাকিস্তানের দরকার ৪ বলে ৬ রান, যোগিন্দর শর্মার বলে স্কুপ শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুললেন মিসবাহ-উল-হক। ভারত মাতল উল্লাসে, ক্রিকেটের নতুন ইতিহাসের শুরুটাও যেন হলো ‘ডেথস্কুপ’ আখ্যা পাওয়া মিসবাহর ওই শটে।

চার মাস পর আইপিএল নামের নতুন টি-টোয়েন্টি লিগ আয়োজন করার ঘোষণা দিল ভারত, যুক্তরাষ্ট্রে বাস্কেটবলের লিগ এনবিএ যেভাবে হয়, প্রায় সেভাবে। অথচ এর আগেই ভারতে হয়েছিল আইসিএল (ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ) নামে আরেকটি টি-টোয়েন্টি লিগ, যেটিকে ভারতের বোর্ড বা বিসিসিআই কেউই অনুমোদন দেয়নি! সে লিগে খেলতে গিয়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বাংলাদেশেরও বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার!

আইপিএল চলছে তখন থেকেই। ২০২৪ সালে এসে সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও দেখতে যাচ্ছে নবম আসর। টি-টোয়েন্টি এসে ক্রিকেটের অন্য দুই সংস্করণ টেস্ট ও ওয়ানডেকেও ফেলে দিয়েছে অস্তিত্বের সংকটে। ফলে এখন ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কি না’, এমন প্রশ্ন চাপা পড়ে গেছে, উল্টো অনেকেই ধরে নিয়েছেন—ক্রিকেটের বর্তমান আর ভবিষ্যৎ এটিই।

ও হ্যাঁ, বোল-আউটের নিয়মও বাদ দেওয়া হয়েছে আগেই। এখন টি-টোয়েন্টিতে কোনো ম্যাচ টাই হলে সেটি গড়ায় সুপার ওভারে, মানে ১ ওভারের আরেকটি (বা ক্ষেত্রবিশেষে একাধিক) ম্যাচ হয়। ২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালও গড়িয়েছিল ওই সুপার ওভারে, যে ম্যাচটি ঠাঁই নিয়েছে ক্রিকেট-রূপকথায়।

আরও পড়ুন

৩.

টি-টোয়েন্টিকে যদি কোনো পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে এটিকে ‘বিক্রি’ করতে যে গুণগুলো সামনে আসে—সময় কম লাগে (টেস্ট ম্যাচ চলে পাঁচ দিন ধরে, ওয়ানডেতে লাগে প্রায় আট ঘণ্টা), অনেক অ্যাকশন, বিনোদনদায়ী। কম সময়ে ম্যাচ শেষ করতে এবারের বিশ্বকাপে দেখা যাবে ‘স্টপ ক্লক’ নিয়ম। মানে ২ ওভারের মধ্যে দলগুলোকে বোলিং করতে প্রস্তুত হতে হবে ১ মিনিটের মধ্যে। সেটি না হলে দুবার আম্পায়ার সতর্ক করবেন, এরপর ৫ রান করে পেনাল্টি করা হবে (মানে প্রতিপক্ষ দলের স্কোরে ৫ রান যোগ হবে)।

টি-টোয়েন্টি নিয়ে ক্রিকেটের কর্তাদের আরেকটি কথা আছে, এটিকেই বিশ্বায়নের হাতিয়ার হিসেবে দেখেন তাঁরা। মানে যেসব দেশে ক্রিকেট সেভাবে জনপ্রিয় নয়, সেখানে ছড়িয়ে দিতে ভরসা ২০ ওভারের সংস্করণই। এ ক্ষেত্রে অনেক আগে থেকেই বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ক্রিকেট ছড়িয়ে দিতে মূল উপকরণও এই টি-টোয়েন্টি।

ভারতের বিরাট কোহলি (ডানে) ও পাকিস্তানের বাবর আজম
আইসিসি

সেই যুক্তরাষ্ট্রে এবার প্রথমবারের মতো হতে যাচ্ছে ক্রিকেটের কোনো বিশ্বকাপ। সঙ্গে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অর্থাৎ ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ভেন্যু নিউইয়র্ক, ডালাস ও ফ্লোরিডার সঙ্গে খেলা হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের গায়ানা, বার্বাডোজ, অ্যান্টিগা, ত্রিনিদাদ, সেন্ট ভিনসেন্ট ও সেন্ট লুসিয়ায়। ২০১০ সালে এককভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট অবশ্য বাংলাদেশে এরই মধ্যে পরিচিত পেয়ে যাওয়ার কথা। বিশ্বকাপের আগে আইসিসি র৵াঙ্কিংয়ের ১৮তম দলটির কাছে যে সিরিজ হেরে বসেছে বাংলাদেশ! কাগজে-কলমে শক্তির বিচারে বাংলাদেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশ পিছিয়ে থাকলেও সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচে জয়ী দল তারাই। টি-টোয়েন্টির এটিও একটি ব্যাপার—মাঠে দুই দলের পার্থক্য সবচেয়ে কম টের পাওয়া যায় এ সংস্করণেই।

এবারই প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চ ২০টি দল অংশ নিচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। প্রাথমিকভাবে প্রতি গ্রুপে খেলবে ৫টি করে দল। প্রতি গ্রুপের সেরা দুটি দল উঠবে পরের পর্বে, যেটির নাম সুপার এইট। সেখানে থাকবে দুটি গ্রুপ। ওই দুটি গ্রুপের সেরা দুটি করে দল খেলবে সেমিফাইনালে, এরপর বার্বাডোজে আগামী ২৯ জুন হবে ফাইনাল।

আরও পড়ুন

৪.

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত একাধিকবার শিরোপা জেতার রেকর্ড দুটি দলের—ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২০১২ ও ২০১৬) ও ইংল্যান্ড (২০১০ ও ২০২২)। ইংল্যান্ড এখনকার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, ২০২২ সালে মেলবোর্নের ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল তারা। এবারের আসরেরও শিরোপা জয়ের অন্যতম ফেবারিট ধরা হচ্ছে তাদের।

অস্ট্রেলিয়া আবার সর্বশেষ ৫০ ওভারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এবার শিরোপা জিতলে একই সঙ্গে সীমিত ওভারের দুটি বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার রেকর্ড হবে তাদের, এখন পর্যন্ত যেটি করে দেখিয়েছে শুধু ইংল্যান্ড (২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল তারা)। এমনিতে ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে বেশিবার শিরোপা জিতলেও ২০ ওভারের বিশ্বকাপে তারা প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০২১ সালে এসে। সেটিই তাদের একমাত্র শিরোপা।

বিশ্বকাপের ট্রফি হাতে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স
এএফপি

ভারত আবার ২০০৭ সালের ওই বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টিতে কোনো শিরোপা জেতেনি। আইপিএল তাদের ক্রিকেটের অন্যতম বড় শক্তি করে তুলেছে অনেক দিক দিয়েই, কিন্তু ২০১৩ সালের পর আইসিসির কোনো ট্রফি (৫০ বা ২০ ওভারের বিশ্বকাপ, ৫০ ওভারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, টেস্টের চ্যাম্পিয়নশিপ) জেতেনি। ফলে তাদের সে খরা কাটানোর বাড়তি একটা তাগিদও আছে। সেটি সম্প্রতি প্রায় প্রতিটি বিশ্বকাপেই থাকে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ একসময় টি-টোয়েন্টিতে বেশ দাপুটে দল ছিল। পালাবদলে তাদের সোনালি দিন পেছনে পড়েছে অনেকটাই। কিন্তু এবারের দলটি নতুন করে উজ্জীবিত, তার ওপর নিজেদের মাটিতে খেলা। ক্রিকেটে কন্ডিশন বড় একটা ব্যাপার। মানে পিচ থেকে শুরু করে আবহাওয়া—সবকিছুরই প্রভাব আছে। সে হিসেবে স্বাগতিক দেশগুলো বরাবরই একটা বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেশ কিছু পিচে স্পিন বোলিং কার্যকর, এবারের বিশ্বকাপেও হওয়ার কথা সেটি। পাওয়ারপ্লের প্রথম ৬ ওভারেও দেখা যেতে পারে স্পিন, এর বাইরে মাঝের ওভারগুলোতে স্পিনারদের ভূমিকা থাকতে পারে বেশ। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের মাঠগুলোয় বাইরের দলগুলোর সেভাবে খেলার অভিজ্ঞতা নেই, একটি মাঠ তো একেবারে নতুন। নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে বলা হচ্ছে ক্রিকেটের প্রথম মডিউলার স্টেডিয়াম, মানে এটির গ্যালারি থেকে শুরু করে কাঠামোর অনেকটাই অস্থায়ী। চাইলে এক জায়গায় থেকে নিয়ে যাওয়া যায় আরেক জায়গায়। এ মাঠের পিচগুলোও তৈরি করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে, সেখান থেকে জাহাজ ও ট্রাকে করে নিয়ে এসে বসানো হয়েছে।

আন্দ্রে রাসেল
এএফপি

টি-টোয়েন্টি সংস্করণে পাকিস্তানও বেশ শক্তিশালী। গত আসরে ফাইনাল খেলেছে তারা, বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ছয়বার সেমিফাইনাল ও যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি তিনটি ফাইনাল খেলার রেকর্ড তাদের। আবার কখনোই কোনো বিশ্বকাপের ফাইনাল না খেলা দক্ষিণ আফ্রিকাও বেশ বিপজ্জনক। টুর্নামেন্ট এলে নিউজিল্যান্ডকে হিসাবের বাইরে রাখা যায় না কখনোই, টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতা আছে শ্রীলঙ্কারও। যদিও খাতা-কলমে লঙ্কানরা ঠিক ফেবারিট হিসেবে গণ্য হবে না। সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে আফগানিস্তান প্রায় সেমিফাইনালে চলেই গিয়েছিল, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের রেকর্ড সুবিধার না হলেও আফগানরা যেকোনো দিন হয়ে উঠতে পারে বিপজ্জনক। এমন কিছু করতে পারে আয়ারল্যান্ডও।

আরও পড়ুন

এর বাইরে আলাদা করে নজর রাখতে হবে আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর দিকেও। সর্বশেষ দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ যে ফরম্যাটে হয়েছে, তাতে সহযোগী দেশগুলো সেভাবে সুযোগ পায়নি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অবশ্য তারা নিয়মিত অঘটনের জন্ম দেয়। নামিবিয়া, নেদারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ড নিজেদের দিনে হারিয়ে দিতে পারে যেকোনো দলকে। এর বাইরে আছে নেপাল, ওমান, পাপুয়া নিউগিনির মতো দল। স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলবে কানাডা ও উগান্ডা।

৫.

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা ঠিক বাংলাদেশ দলের খেলার ধরনের সঙ্গে মানানসই নয়, কথাটি বেশ প্রচলিত। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শুরুটা কিন্তু হয়েছিল দুর্দান্ত, ২০০৭ সালে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই তারা হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। কিন্তু পরের আসরগুলোয় ঠিক মনে রাখার মতো পারফরম্যান্স নেই বাংলাদেশের।

এবার নতুন দিনের জয়গান গেয়ে বিশ্বকাপের উদ্দেশ্যে গেলেও বাংলাদেশ দল বড় একটা হোঁচট খেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সিরিজ হেরে। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও নেদারল্যান্ডস। আশাবাদীদের কাছে পরের পর্বে যেতে বাংলাদেশের সমীকরণটা এমন—দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে যেকোনো একটি দলের সঙ্গে জয় এবং নেপাল আর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রত্যাশিত জয়। তবে কাজটি সহজ হবে না মোটেও।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ
ছবি: আইসিসি

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের নেতৃত্ব এবার নাজমুল হোসেনের কাঁধে, যাঁকে সম্প্রতি তিন সংস্করণেই অধিনায়ক করা হয়েছে। বিশ্বকাপের আগে ব্যাটিংয়ে অবশ্য খুব একটা ছন্দে ছিলেন না অধিনায়ক। সঙ্গে লিটন দাসের মতো ব্যাটসম্যানের ফর্মে না থাকাও বাংলাদেশ দলের বড় দুশ্চিন্তার কারণ। এরপরও তানজিদ হাসান, রিশাদ হোসেনের মতো তরুণ, মোস্তাফিজুর রহমান, রেকর্ড নবম বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহদের মতো অভিজ্ঞরা আশা জোগাতেই পারেন।

আর টি-টোয়েন্টিতে তো হতে পারে যেকোনো কিছুই!

বিশ্বকাপে প্রসঙ্গ যখন বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, তখন আলাদা করে বলতে হবে আম্পায়ার শরফুদ্দৌলার কথাও। এরই মধ্যে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অন-ফিল্ড দায়িত্ব পালন করা, আইসিসির আম্পায়ারদের শীর্ষ স্তর এলিট প্যানেলে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জায়গা করে নেওয়ার মর্যাদা পেয়েছেন তিনি। এবার ছেলেদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনার।

আরও পড়ুন

৬.

প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে, অকল্যান্ডে। নিউজিল্যান্ড খেলোয়াড়েরা নেমেছিলেন বিচিত্র সাজে, ম্যাচের মধ্যেও অস্ট্রেলিয়ানরা ‘মজা’ করছিলেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট তখনো ছিল এমনই।

ক্রিকেটের এ সংস্করণ এ শতাব্দীর ‘প্রোডাক্ট’। বলতে গেলে একটা প্রজন্ম বড়ও হয়েছে এ সংস্করণের পথচলার সঙ্গে। ২০০৭ সালের পর দুই বছর পরপর বিশ্বকাপ হওয়ার কথা থাকলেও সব সময় সেটি হয়নি বিভিন্ন কারণে। ২০১৬ সালের পর তো হয়েছে ২০২১ সালে গিয়ে।

তবে ক্রিকেট যে ভবিষ্যতেও এ সংস্করণে ভর দিয়েই এগোবে, সেটি অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। ২০০৭ সালের ওই বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টি বদলেছে, বদলেছে ক্রিকেটও।

তবে জীবনের রীতি অনুযায়ী এবারের বিশ্বকাপও অনেকের জন্যই হবে প্রথম—সেটি শুধু খেলোয়াড় নয়, দর্শক-সমর্থকদেরও। তারাও হয়তো পাবে গল্প করার রসদ, তাদের স্মৃতিতেও থাকবে এ বিশ্বকাপের কোনো ঘটনা। ২০০৭ সালের ওই স্কুল হোস্টেলের রাতটির মতো!

আরও পড়ুন