১৯৮২ বিশ্বকাপ: জেল থেকে রসির বিশ্বজয়
১৯৮২ বিশ্বকাপ বসে ইউরোপীয় ফুটবলের প্রাণকেন্দ্র স্পেনে। সেবারই প্রথম বিশ্বকাপের দলসংখ্যা ১৬ থেকে বেড়ে হয় ২৪। আফ্রিকা ও এশিয়া থেকে দল বাড়াতে যুগান্তকারী এ সিদ্ধান্ত নেয় ফিফা।
বিশ্বকাপে দল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন আসে বিশ্বকাপের ফরম্যাটে। ২৪ দলকে ভাগ করা হয় ৬ গ্রুপে। ৬ গ্রুপের শীর্ষ ২ দল, অর্থাৎ ১২ দলকে ভাগ করা হয় ৪টি গ্রুপে। প্রতি গ্রুপের শীর্ষ দল মুখোমুখি হবে সেমিফাইনালে। এরপর সেখান থেকে ফাইনাল আর বিশ্বকাপজয়ী দল নির্ধারণ।
বাছাইপর্ব শুরু হতে না হতেই শুরু হয় চমক। বাদ পরে আগের দুই বিশ্বকাপের রানার্সআপ দল নেদারল্যান্ডস। অন্যদিকে এক যুগ পর বিশ্বকাপে ফেরত আসে সোভিয়েত ইউনিয়ন। অন্যদিকে ফকল্যান্ড যুদ্ধ নিয়ে ইংল্যান্ড ও আর্জেন্টিনা দুই পক্ষই বিশ্বকাপ বয়কটের সন্নিকটেই ছিল। যদিও ফিফার আলোচনার যুদ্ধের মধ্যেও দুই পক্ষকে রাজি করানো হয় বিশ্বকাপ খেলায়।
বিশ্বকাপের শুরু থেকে সবার নজর ছিল একটা দলের দিকে—ব্রাজিল। এক যুগ পরে ব্রাজিল বিশ্বকাপে হাজির হয়েছিল যুগান্তকারী এক দল নিয়ে। নজর ছিল মাঝমাঠের দুই তারকা, জিকো আর সক্রেটিসর প্রতি। সবাই ধরেই নিয়েছিল অলৌকিক কিছু না ঘটলে এই ব্রাজিল দলকে থামানোর সাধ্য নেই কারও। সেই অলৌকিক ঘটনাই ঘটল দ্বিতীয় রাউন্ডে। ঘটালেন ম্যাচ পাতানোর দায়ে জেল খাটা আসামি ইতালির পাওলো রসি।
বিশ্বকাপের আগে পাওলো রসি ছিলেন ইতালির সবচেয়ে ঘৃণিত তারকাদের একজন। ১৯৮০ সালের ঐতিহাসিক ‘টোটোনেরো কেলেঙ্কারি’-তে নাম এসেছিল তাঁর। ম্যাচ পাতানোর দায়ে তাঁকে নেওয়া হয় জেলে। নিষিদ্ধ করা হয় তিন বছরের জন্য। বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায় রসির। ফুটবল থেকে আগ্রহ হারিয়ে যখন নতুন স্বপ্ন দেখার সূচনা করেছিলেন এই ইতালিয়ান, তখন পাশে এসে দাঁড়ান দুজন। জুভেন্টাসের তৎকালীন কোচ জিওভান্নি ত্রাপাতোনি ও ইতালির কোচ এনজো বেয়ারজটের অনুরোধে নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে আনে ইতালিয়ান ফেডারেশন। বিশ্বকাপের আগের দুই বছরে মাত্র তিন ম্যাচ খেলেই বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নেন রসি। বলতে গেলে রসির ওপর একটা বাজিই রাখেন কোচ বেয়ারজট।
আর প্রথম তিন ম্যাচে তাতে জল ঢেলে দেন রসি। ইতালিয়ান পত্রপত্রিকার আতশি কাচের নিচে ছিলেন রসি। প্রথম তিন ম্যাচে তিন ড্র নিয়ে কোনোমতে পরের রাউন্ডে ওঠে ইতালি। এমনকি সেকেন্ড রাউন্ডের প্রথম ম্যাচেও নিষ্প্রভ রসি। সব মিলিয়ে তাঁর ওপর থেকে যখন খোদ কোচও আশা হারিয়ে ফেলছেন, তখনই ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠলেন রসি। টুর্নামেন্ট ফেভারিট ব্রাজিলের বিপক্ষে যখন জয় ছাড়া গতি নেই, তখনই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন পাঁচ মিনিটের মাথায়। ব্রাজিলের জালে বল জড়িয়ে বিশ্বকাপে গোলের খাতা খুললেন রসি। সেখান থেকেই শুরু বিশ্বকাপে রসির কাব্যগাথা।
সেদিন জিকো-সক্রেটিসের ব্রাজিল মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেনি রসির সামনে। সক্রেটিস-ফ্যালকাওয়ের গোলের বদলা নেন হ্যাটট্রিক করে। ১৯৭০ বিশ্বকাপের বদলা যেন একাই শোধ নিলেন রসি। সেমিফাইনালেও একই চিত্র। পোল্যান্ডের ডিফেন্সকে একাই ধসিয়ে দিলেন তিনি। ২-০ গোলের জয়ে দুটো গোলই ছিল তাঁর। ফাইনালে ইতালির প্রতিপক্ষ ছিল পশ্চিম জার্মানি। দুই দলের সামনেই ব্রাজিলের তিন বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ডে ভাগ বসানোর হাতছানি। ফাইনালেও গোলের খাতা খুললেন রসিই। ৫৭ মিনিটে দলকে এগিয়ে নেন রসি। বাকি কাজটা ঠিকঠাক করে নিতে পেরেছিলেন তাঁর সতীর্থরা। বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে ভূতের মতো মাঠে দৌড়ে বেড়ানো রসি, শেষ তিন ম্যাচে করলেন ৬ গোল। একা হাতে দলকে বিশ্বকাপ জেতানোর গল্প লিখলেন জেল, জরিমানা, নিষেধাজ্ঞায় নিন্দিত পাওলো রসি। শুধু ফুটবল কেন, খেলাধুলার জগতে প্রথম কেউ এমন ঘটনার সাক্ষী হলো।
রসির ঘটনা ছিল কেবল শুরু, এরপর থেকে বিশ্বকাপ পরিণত হলো কোনো তারকার বাঁ হাতের খেলা।
১৯৮৬ বিশ্বকাপ: ম্যারাডোনাময় বিশ্বকাপ
আগের বিশ্বকাপে পাওলো রসি তাঁর স্বপ্নযাত্রা শুরু করেছিলেন বিশ্বকাপের মাঝপথে। কিন্তু ম্যারাডোনা কোনো সাসপেন্সের ধার ধারেননি। ছোটবেলা থেকে ম্যারাডোনার স্বপ্ন ছিল দুটি—আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা আর আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জেতা। দুটো স্বপ্নই ১৯৭৮ সালে ভেঙে দিয়েছিলেন সিজার মানোত্তি। অভিজ্ঞতার কথা বলে ১৭ বছর বয়সী ম্যারাডোনাকে বাদ দিয়েই বিতর্কিত এক বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তিনি। আর সেটাই পথ করে দিয়েছিল ম্যারাডোনাকে, নিজের নামে একটা বিশ্বকাপগাথা রচনা করার।
১৯৮৬ বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল কলম্বিয়া। কিন্তু অর্থনৈতিক কারণে ১৯৮২ সালে নিজেদের সরিয়ে নেয় তারা। একক ক্ষমতাবলে তৎকালীন ফিফা সভাপতি জোয়াও হ্যাভালাঞ্জ বদলি হিসেবে বেছে নেন মেক্সিকোকে। যদিও ১৯৮৫ সালে এক ভূমিকম্পে বেহাল হয় মেক্সিকোর। কিন্তু তা সামলে ঠিকই দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজনে সমর্থ হয় মেক্সিকো।
বিশ্বকাপের ফরম্যাটেও আসে সামান্য পরিবর্তন। ৬ গ্রুপের ১২ দল নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের পরিবর্তে নেওয়া হয় ১৬ দল। প্রতি গ্রুপ থেকে শীর্ষ ২ দলের পাশাপাশি নেওয়া হতো ৪টি সেরা তৃতীয় দলকে। ১৬ দলের নকআউট পর্বটিই হয় দ্বিতীয় রাউন্ড। সেখান থেকে রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে বের করে আনা হয় বিশ্বকাপজয়ী দল।
আর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকেই বিশ্বকাপকে নিজের করে নেন ম্যারাডোনা। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে তাঁর শুরুটাই হয় তিন অ্যাসিস্ট দিয়ে। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে ইতালির বিপক্ষে গোল আর বুলগেরিয়ার বিপক্ষে অ্যাসিস্ট করে একাই টেনে নিয়ে যান দ্বিতীয় রাউন্ডে। গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনার ৬ গোলের ৫টিতে সরাসরি অবদান ছিল ম্যারাডোনার। রাউন্ড অব সিক্সটিনে আড়ালে থেকেই নিজের কাজ সারেন ম্যারাডোনা। উরুগুয়ের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে সরাসরি ছিল না তেমন কোনো অবদান।
কিন্তু এরপরই পাদপ্রদীপে আসে আর্জেন্টিনা বনাম ইংল্যান্ড। ১৯৮২ সালের ফকল্যান্ড যুদ্ধ নিয়ে যখন শীতল সম্পর্ক দুই দেশের। চার বছর পরে এসে আলোচনা দূরে থাক, মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ তাঁদের। প্রথমবারের মতো দুই দেশ মুখোমুখি হলো ১৯৮৬ সালে এসে। আর সেটাকেই স্মরণীয় করে রাখলেন ম্যারাডোনা।
প্রথমেই বিশ্ব কাঁপিয়ে দেন তাঁর বহুল আলোচিত ‘হ্যান্ড অব গড’ দিয়ে। গোলরক্ষক পিটার শিলটনের সমানে সমান লাফ দিয়ে বল জালে জড়ান ম্যারাডোনা। ইংল্যান্ডের হাজার আপিল সত্ত্বেও সে গোল মেনে নেন রেফারি, ফুটবল ইতিহাসে আইকনিক হয়ে থাকে সেই গোল। আর ঠিক তার চার মিনিট পরেই ম্যারাডোনা জন্ম দেন তাঁর আরেক অনবদ্য সৃষ্টি, ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’। ইংল্যান্ডের চার ফুটবলারকে কাটিয়ে করা সে গোল ইতিহাসের অন্যতম সুন্দর গোল হিসেবে ধরা হয় এখনো। ৮১ মিনিটে লিনেকার গোল শোধ করলেও ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফেরাতে পারেনি তা।
সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল বেলজিয়াম। সে ম্যাচেও চারজনকে কাটিয়ে অসাধারণ এক গোল দিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। বলতে গেলে এক ম্যারাডোনাতে ভর করেই বিশ্বকাপ ফাইনালে পা দিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ফাইনালে তাঁদের প্রতিপক্ষ পরাক্রমশালী জার্মানি।
জার্মান কোচ ফ্রেঞ্চ বেকেনবাওয়ার ভেবেই রেখেছিলেন, ম্যারাডোনাকে কীভাবে আটকাবেন। ইতিহাসের অন্যতম সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার লোথার ম্যাথিউসকে দায়িত্ব দিলেন ম্যারাডোনাকে আটকানোর। আর সেটাতে সফলও হয়েছিলেন অনেকটা। সমস্যা হলো ম্যারাডোনার মতো খেলোয়াড়দের খেলা পাল্টে ফেলতে সময় লাগে মাত্র এক মিনিট। সেদিন অ্যাজটেক স্টেডিয়ামে সেটাই করেছিলে ম্যারাডোনা। শুরুতেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। একসময় যখন মনে হচ্ছিল আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জেতা সময়ের ব্যাপার। তখনই মাত্র ছয় মিনিটের ব্যবধানে দারুণভাবে খেলায় ফিরে আসে পশ্চিম জার্মানি।
ম্যাচের সময় যখন ৮৫ মিনিট, তখনই ৩০ সেকেন্ডের জন্য জেগে ওঠেন ম্যারাডোনা। আর সেটুকুই যথেষ্ট ছিল ম্যাচে ফেরাতে। ম্যারাডোনার বাড়ানো পাস জালে জড়িয়ে রাতারাতি নায়ক বনে যান লুইস বুরুচাগা। ৩-২ গোলে জিতে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ঘরে তলে আর্জেন্টিনা। ম্যারাডোনাময় একটি বিশ্বকাপের সমাপ্তি ঘটে ম্যারাডোনার হাতে শিরোপা দিয়ে।
১৯৯০ বিশ্বকাপ: মুদ্রার অন্য পিঠে ম্যারাডোনাময় বিশ্বকাপ!
১৯৯০ বিশ্বকাপকে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের কার্বন কপি বললেও খুব একটা ভুল হবে না। বিশ্বকাপের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, পুরোটাই একই পটভূমিতে সাজানো, শুধু সমাপ্তিটা ছাড়া।
১৯৮৬ বিশ্বকাপের ফরম্যাটেই সাজানো হয় ১৯৯০ বিশ্বকাপ। সঙ্গে চালু হয় গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ একত্রে হওয়ার নিয়মও। বিশ্বকাপের ১৪তম আসরের শুরুই হয়েছিল চমক দিয়ে।
বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দেয় ক্যামেরুন। এমনকি রোমানিয়াকে হারিয়ে গ্রুপ হিসেবে পৌঁছে যায় রাউন্ড অব সিক্সটিনে। সেখানে কলম্বিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ডার্ক হর্স হয়ে ওঠে ক্যামেরুন। সেই সঙ্গে ৩৮ বছর বয়সী রজার মিলার নাচ মন কেড়ে নিয়েছিল সবার। কোয়ার্টারে গিয়ে শেষ হয় সেই স্বপ্নযাত্রা। আর তাদের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে দেয় ইংল্যান্ড।
অন্যদিকে ক্যামেরুনের কাছে হারলেও মাত্র ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে তৃতীয় হয়ে ফাইনালের পথে পা বাড়ায় আর্জেন্টিনা। রাউন্ড অব সিক্সটিনে মুখোমুখি হয় ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা। আর সেখানেই সৃষ্টি হয় বিতর্কের। ‘হলি ওয়াটার কেলেঙ্কারি’-তে জড়িয়ে পড়েন আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়েরা।
ঘটনার সূচনা ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে। আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়ের চোটে সেবা করতে মাঠে আসেন আর্জেন্টাইন ফিজিও। সেখান থেকে একটি বোতল চেয়ে নিয়ে পানি খান ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার ব্রাঙ্কো। কিন্তু এর পরপরই কেমন যেন ক্লান্ত বোধ করতে থাকেন তিনি। আর সেই সুযোগটাই নেন ম্যারাডোনা। পুরো ম্যাচে ম্যারাডোনাকে বিন্দুমাত্র ছাড় না দেওয়া ব্রাঙ্কোকে কাটিয়ে অসাধারণ এক বল বাড়ান ক্যানেজিয়ার দিকে। ক্যানেজিয়াও ভুল করেননি, বল জড়িয়ে দেন ব্রাজিলের জালে। গোলের পরপরই রেফারি এমনকি নিজের সতীর্থদের কাছেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। বরং সবাই তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দেন ব্রাঙ্কোর কথা। কিন্তু ঘটনার ১৫ বছর পর এসে ম্যারাডোনা নিজেই স্বীকার করেন সেদিনের এই কেলেঙ্কারির ঘটনা। ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যায় আর্জেন্টিনা।
কোয়ার্টার-সেমি দুটোতেই আর্জেন্টিনার ভাগ্য নিষ্পত্তি হয় টাইব্রেকারে। কোয়ার্টারে যুগোস্লাভিয়া আর সেমিতে ইতালি। দুই দলই ম্যারাডোনাকে বোতলবন্দী করে রেখেছিল বটে, কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে ম্যাচের রাজা হয়ে ওঠেন গোলরক্ষক সার্জিও গয়াচিকা। পরপর দুই ম্যাচে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনাকে একা হাতে জেতান তিনি।
ফাইনালে আবারও মুখোমুখি পশ্চিম জার্মানি আর আর্জেন্টিনা। এবারে প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন। ফর্মের তুঙ্গে পশ্চিম জার্মানি দল। গ্রুপে যুগোস্লাভিয়া, নকআউটে এসে নেদারল্যান্ডস, চেকোস্লাভিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়ে ফাইনালে তারা। অন্যদিকে ম্যারাডোনাও নেই তাঁর সেরা ফর্মে, ফাইনালে অনুপস্থিত ক্লদিও ক্যানেজিয়া। সব মিলিয়ে জার্মানির জন্য সুবর্ণ সুযোগ এবারের ফাইনালে। কোচ ফ্রেঞ্চ বেকেনবাওয়ার আর কোনো ভুল করেননি। ম্যারাডোনাকে সামলানোর দায়িত্ব দিলেন গুইদো বুখভাল্ডের ওপর। একমুহূর্তের জন্য ম্যারাডোনাকে চোখের আড়াল হতে দেননি তিনি।
নিষ্প্রভ ম্যারাডোনা আর ক্যানেজিয়ার অনুপস্থিতির সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন পশ্চিম জার্মানি। তার ওপর যুক্ত হয়েছিল রেফারির ভুল সিদ্ধান্ত। ৬৫ মিনিটে ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমানকে ফাউল করার কারণে লাল কার্ড দেখেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার পেদ্রো মনজন। যেটা আসলে ফাউলই ছিল না। এমনকি ৮৫ মিনিটে রবার্তো সেনসিনির করা ফাউলে পেনাল্টি পায় পশ্চিম জার্মানি। রেফারির সঙ্গে বিতর্ক জড়িয়ে লাল কার্ড দেখেন আর্জেন্টাইন গুস্তাবো ডেজোত্তি। ৯ জনের দলে পরিণত হয় আর্জেন্টিনা। আর পেনাল্টি থেকে গোল করে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তোলে পশ্চিম জার্মানি।
এটাই ছিল বিভক্ত জার্মানির শেষ বিশ্বকাপযাত্রা। আগের দুবারের মতো এবারও তারকাখচিত এক দলকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয় ‘জায়ান্ট হান্টার’ জার্মানি।