ইউরো না বিশ্বকাপ, কোন টুর্নামেন্ট সেরা

তর্কটা শুরু করেছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ইউরোর দামামা তখনো বাজেনি। ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মুখোমুখি হওয়ার আগেই বেফাঁস এক মন্তব্য করে বসলেন ফ্রেঞ্চ তারকা, ‘আমার কাছে মনে হয় বিশ্বকাপের তুলনায় ইউরোতে তুলনামূলক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। গ্রুপ স্টেজ থেকেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। পরিচিত পরিবেশে, পরিচিত মাঠে একে অপরের মুখোমুখি হওয়া; ইউরোর আয়োজনটাই অন্য রকম।’

সদ্য রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়া তারকার এমন বেফাঁস মন্তব্যে মুহূর্তেই ফুঁসে উঠল ফুটবলপ্রেমী জনতা। কেনইবা হবে না? ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ হিসেবে যার নামডাক, এক বাক্যে ছেলে-বুড়ো টিভি পর্দার সামনে বসে যে খেলা দেখার জন্য, বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় আসর; সেই বিশ্বকাপকে তুলনা করা হচ্ছে মহাদেশীয় এক টুর্নামেন্টের সঙ্গে? শুধু তুলনা নয়, বিনা বাক্য ব্যয়ে সেরা বানিয়ে দেওয়া?

অবশ্য কিলিয়ান এমবাপ্পের দিক থেকে ভাবলে কথাটা তেমন ভুলও নয়। অন্তত তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা সেটাই বলে। গত দুই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা পারফরমার ছিলেন এমবাপ্পে। ২০১৮ বিশ্বকাপ তো জিতেছিলেনই, শিরোপার বড্ড কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন ২০২২ সালেও। টাইব্রেকারে হেরে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাঁকে। গত দুই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা তারকার ইউরো পারফরম্যান্সটা কী রকম? একেবারেই সাদামাটা। ২০২১ ইউরোতে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। চার ম্যাচে গোল পাননি, বরং নকআউট পর্বে পেনাল্টি মিস করে দলকে বিদায় করেছেন। সব মিলিয়ে ইউরোকে বিশ্বকাপের তুলনায় বেশি কঠিন বলাতে তেমন ভুল কিছুই ছিল না।

আরও পড়ুন

কিন্তু উত্তেজিত জনতাকে তো আর সামাল দেওয়া যায় না। এর আগেও টুকটাক বেফাঁস কথা বের হয়েছে এমবাপ্পের মুখ থেকে। গত বিশ্বকাপের আগেই তো ‘লাতিন আমেরিকার ফুটবল ইউরোপের মতো উন্নত নয়’ মন্তব্য করে বেশ বিপাকে পড়েছিলেন। সেবার ফাইনালে এমবাপ্পের কথা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি, বিশ্বকাপ ফাইনালে তাঁকে হারিয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে। এবার সেই সুযোগ নেই মেসির হাতে। দুজনে ব্যস্ত দুই প্রান্তের দুই মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে। কোপা আমেরিকায় মাঠে নামার আগে তাই মেসিও বাণ ছুড়ে দিলেন এমবাপ্পের দিকে।

আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি
ফাইল ছবি

‘যে যখন যে টুর্নামেন্ট খেলে তাঁর কাছে সেই টুর্নামেন্টকেই কঠিন বলে মনে হয়। ইউরো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু যে টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনার মতো তিনবারের বিশ্বজয়ী দল, পাঁচবারের বিশ্বজয়ী দল ব্রাজিল, দুবারের বিশ্বজয়ী উরুগুয়ে থাকে না, সেই টুর্নামেন্টকে সেরা বলা কঠিন। বিশ্বকাপে বিশ্বের সেরা দলগুলো আসে এক ছাদের নিচে। যে কারণে সবাই বিশ্বকাপ জিততে চায়।’

আরও পড়ুন

মেসির সঙ্গে একই সুরে সুর মিলিয়েছেন লুকা মদরিচও। ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা মদরিচও অবশ্য এমবাপ্পের পথের সাথি। বিশ্বকাপের সেমি, ফাইনাল খেললেও ইউরোতে তেমন সাফল্য ধরা দেয়নি মদরিচকে। মদ্রিচও তাই বেছে নিয়েছেন বিশ্বকাপকেই। ‘আমি তুলনা করতে পছন্দ করি না, তবে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, উরুগুয়ের মতো দল থাকে। বিশ্বকাপে প্রতিযোগিতা বেশি কারণ বিশ্বের সেরা দলগুলো এক ছাদের নিচে নামে শিরোপার লড়াইয়ে।’

এমবাপ্পে
এএফপি

ইউরো-বিশ্বকাপ নিয়ে এমন আলোচনার সূচনা কিন্তু আজকে থেকে নয়। ২০১২ সালে এমনই এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার জাভি হার্নান্দেজ। টানা ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরো জিতে স্পেন তখন বিশ্বের সেরা দল। ইতালিকে ৪-০ গোলে হারিয়ে যখন ইউরো উদ্‌যাপনে ব্যস্ত স্পেন, তখন জাভিকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলেন ইউরো আর বিশ্বকাপের পার্থক্য নিয়ে। ‘অবশ্যই ইউরোতে প্রতিযোগিতা বেশি। এখানে কোনো ‘সিনড্রেলা’ নেই। বিশ্বকাপে আপনি হন্ডুরাস, সৌদি আরবের মতো দলের বিপক্ষে খেলেন। কিন্তু এখানে তেমন কোনো দল নেই। যে কেউ আপনাকে যেকোনো সময় হারিয়ে দিতে পারে।’

ফুটবলে গ্লোবাল ইভেন্ট মানেই অন্য রকম উত্তেজনা। আন্ডারডগদের উত্থান, বড় দলগুলোর হোঁচট খাওয়া যেন প্রতিটি টুর্নামেন্টের জন্যই সত্য। বিশ্বকাপে যেমন সবাইকে চমকে সেমিফাইনাল খেলেছে মরক্কো। তেমনই ইউরোতে তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড খেলেছে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনাল। বিশ্বকাপে যেমন দেখা মিলেছে মরক্কোর রূপকথার, তেমনই ইউরোতে শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছে গ্রিস, ডেনমার্কের মতো দল। আবার গতবারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি আট বছর ধরে নেই বিশ্বকাপে।

উত্তেজনা আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিক থেকে ইউরো আর বিশ্বকাপ যেন সমানে সমান। তবে তোমাদের কী মতামত? কী মনে হয়, প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিক থেকে কারা এগিয়ে থাকবে? ইউরো না বিশ্বকাপ?

আরও পড়ুন