ইউরো মাতাচ্ছেন যে তরুণ তারকারা
জার্মানিতে চলছে ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। ইউরোপের সেরা ২৪ দল মুখোমুখি হয়েছে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব নিজেদের করে নিতে। আর এই ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চই হয়ে উঠে তরুণ তুর্কিদের জ্বলে উঠার মৌসুম। এবারের ইউরোতে প্রায় প্রতিটি দলেই আছে চমক দেখানোর মতো খেলোয়াড়। কাদের দিকে একটু বিশেষ নজর রাখতে হবে এবারের ইউরোতে, দেখে নেওয়া যাক একনজরে। বলা বাহুল্য, তাঁদের প্রত্যেকেরই প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট এটি।
ফ্লোরিয়ান ভির্টৎস (জার্মানি)
বয়স: ২১
এই মৌসুমে বায়ার লেভারকুসেনের সাফল্যের অন্যতম বড় হাতিয়ার ছিলেন ফ্লোরিয়ান ভির্টৎস। অপরাজিত লেভারকুসেনের মাঝমাঠের গুরুদায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। ঘরের মাঠে ইউরো, প্রত্যাশার পাল্লাটা তাই একটু বেশিই ভারী। ভির্টৎসের শুরুটাও হয়েছে প্রত্যাশামাফিক। এবারের ইউরোর প্রথম গোলটাই এসেছে তাঁর পা থেকে।
লামিন ইয়ামাল (স্পেন)
বয়স: ১৬
লামিন ইয়ামালের বয়সটা দেখলে দুবার চোখ কচলে তাকাতে হয়। ১৬ বছর বয়সে যখন সবাই ব্যস্ত থাকে পড়াশোনায়, সেখানে লামিন প্রতি সপ্তাহেই থাকেন বার্সেলোনার প্রথম একাদশে। বার্সেলোনার ফর্ম ধরে রেখেছেন স্পেনের জার্সিতেও। বার্সেলোনা ও স্পেনের জার্সিতে সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেক, গোল, অ্যাসিস্ট—বলতে গেলে তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে যত রেকর্ড ভাঙা যায়, সবটাই ভাঙা শেষ তাঁর। ইউরোর মঞ্চে এসেও থামেনি তাঁর রেকর্ড। প্রথম ম্যাচেই অ্যাসিস্ট করে ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে অ্যাসিস্ট করার রেকর্ডটাও এখন তাঁর দখলে।
আর্দা গুলের (তুরস্ক)
বয়স: ১৯
এ মৌসুমের প্রথমার্ধ আর্দা গুলেরের কেটেছে হাসপাতালের বেডে শুয়ে। চোট থেকে ফিরেও অনেকটা সময় কাটাতে হয়েছে বেঞ্চে বসেই। অনেকেই ভেবেছিলেন, রিয়াল মাদ্রিদের বেঞ্চে বসে না আবার নষ্ট হয়ে যায় গুলারের সেরা সময়টা। কিন্তু যখন গুলের ফিরলেন, নিজের সেরাটা নিয়েই ফিরলেন। মৌসুমের শেষ তিন মাসে শুধু কোচ আনচেলত্তি নয়, পুরো বিশ্বকে মুগ্ধ করেছেন তাঁর খেলা দিয়ে। তুরস্কের মাঠমাঠ জুড়ে ছিল গুলেরের আধিপত্য। ইউরোর অভিষেকটা স্মরণীয় করে রেখেছেন করেছেন দারুণ এক গোল দিয়ে।
কেনান ইলদিচ (তুরস্ক)
বয়স: ১৮
তুরস্কের মাঝমাঠ সামলানোর দায়িত্ব আর্দা গুলারের, আর আক্রমণে আছেন কেনান ইলদিচ। বায়ার্ন মিউনিখের যুব দলে গড়ে ওঠা কেনান গত মৌসুমে যোগ দিয়েছেন জুভেন্টাসে। যুব দলে তাঁর পারফরম্যান্স দেখে তাঁকে মূল দলে ডাকেন কোচ অ্যালেগ্রি। প্রথমে জার্মানির হয়ে খেলার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তুরস্কের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন ইলদিচ। গতিময় উইঙ্গার যেকোনো সময় বদলে দিতে পারেন খেলার গতি। জুভেন্টাস মূল দলের হয়ে ৪ গোল তারই প্রমাণ। এবারের ইউরোই সুযোগ ইলদিচের পাদপ্রদীপের আলোর নিচে আসার।
রিকার্দো কালাফিওরি (ইতালি)
বয়স: ২১
তাঁর ছবি দেখিয়ে যদি কেউ বলে ইতালির স্বর্ণযুগের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার তিনি, কারও কারও মনে খটকা লাগলেও লাগতে পারে। লম্বায় ৬ ফুট ২ ইঞ্চি, মাথাভর্তি ঘন কালো লম্বা চুল, কপালে সাদা ব্যান্ড; একবিংশ শতকের প্রথম দিককার ইতালিয়ান ডিফেন্ডারদের স্টাইল খুব ভালোভাবেই আয়ত্ব করেছেন তিনি। নেস্তা-মালদিনির ছোট ভার্সন বললেও খুব একটা ভুল হবে না। বোনুচ্চি-কিয়েলিনির পর অনেক দিন ধরেই ভালো ডিফেন্ডারের অভাব ছিল ইতালিতে। সেই জায়গা খুব ভালোভাবেই পূরণ করেছেন কালাফিওরি। ইতালির প্রথম ম্যাচেই দেখা মিলেছে তাঁর ডিফেন্সিভ মাস্টারক্লাসের। দ্বিতীয় ম্যাচে মুদ্রার উল্টোপিঠও দেখেছন, আত্মঘাতী গোল করে হয়েছেন দলের হারের কারণ। তৃতীয় ম্যাচেও সেই একই পারফরম্যান্স। ক্লাবের হয়েও কাটিয়েছেন অসাধারণ এক মৌসুম। তাঁর ওপর ভর করেই ৬০ বছর পর সিরি ‘আ’র শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে বোলোনিয়া। খেলবে এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে। এবারের ইউরো দিয়েই বড় কোনো দলে জায়গা করে নিতে পারেন তিনি।