কে জিতবে ২০২৪ সালের ব্যালন ডি’অর

এবার ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রদ্রি ও ভিনিসিয়ুসএএফপি

আজ রাত একটায় (২৯ অক্টোবর) ঘোষণা করা হবে চলতি বছরের ব্যালন ডি’অর জয়ীর নাম। কার হাতে উঠবে সম্মানজনক এই পুরস্কার? মেসি নাকি রোনালদো? আসলে তাঁদের কারও হাতেই এ বছর ব্যালন ডি’অরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ২০০৩ সালের পর এই প্রথমবার ফুটবলের সর্বকালের সেরা দুই ফুটবলারের কেউই এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হননি। বরং এবার একজন নতুন বিজয়ী দেখবে ফুটবল–বিশ্ব। ইতিমধ্যে ৩০ জন ফুটবলার এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। সে তালিকায় আছেন ব্রাজিলের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, ইংল্যান্ডের জুড বেলিংহাম, স্পেনের রদ্রি, নরওয়ের আর্লিং হলান্ড, আর্জেন্টিনার লাওতারো মার্তিনেজসহ আরও অনেকে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে মাত্র একজনই বিজয়ী হবেন। তিনি কে?

এককথায় উত্তর হলো, ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত যিনি সবচেয়ে ভালো ফুটবল খেলেছেন, তিনিই হবেন বিজয়ী। কিন্তু এই সহজ কথাটার মধ্যে বেশ ভালোই জটিলতা আছে। তা না হলে আর বিশ্বব্যাপী মানুষ বিজয়ীদের নাম জানার জন্য মুখিয়ে থাকবেন কেন? তুমিই বা এ লেখা কষ্ট করে কেন পড়বে? আসলে জটিলতা হলো, এ সময়ের মধ্যে কোনো একজন নির্দিষ্ট খেলোয়াড় সবচেয়ে ভালো খেলেননি। মানে বলতে চাই, অনেকেই একসঙ্গে ভালো খেলেছেন। সেই ভালো খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে আমরা বাছাই করার চেষ্টা করব। চলো শুরু করি।

ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রিয়াল মাদ্রিদ

রিয়াল মাদ্রিদের জয়ের নায়ক ভিনিসিয়ুস জুনিয়র
রিয়াল মাদ্রিদ ওয়েবসাইট

চলতি বছর ব্যালন ডি’অর জেতার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে থাকবেন ব্রাজিলিয়ান তারকা খেলোয়াড় ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। আমার সঙ্গে হয়তো তোমরা অনেকেই একমত হবে। গত মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন ভিনি। ২০২৩-২৪ মৌসুমে বিভিন্ন ইনজুরির কারণে বেশির ভাগ সময় মাঠের বাইরে থাকলেও লা লিগায় ১৫ গোল করেছেন তিনি। রিয়াল মাদ্রিদ জিতেছে ৩৬তম স্প্যানিশ শিরোপা।

চ্যাম্পিয়নস লিগেও ভিনির আছে ১০ ম্যাচে ৬ গোল ও ৪ অ্যাসিস্ট। সেমিফাইনালের প্রথম লেগে বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে তাঁর গোলটা না হলে হয়তো ফাইনালের দেখা পেত না রিয়াল। আবার ফাইনালেও ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ভিনির গোলেই নিশ্চিত হয় রিয়ালের ১৫তম ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা।

ব্যালন ডি’অর বিবেচনার সময়ের মধ্যে ভিনি রিয়ালের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতেছেন। হয়তো তাঁর হাতেই উঠতে চলেছে এবারের ব্যালন ডি’অর।

রদ্রি, ম্যানচেস্টার সিটি

সিটি মিডফিল্ডার রদ্রি
এক্স

ভিনির মতোই ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে এগিয়ে আছেন স্পেনের রদ্রি। অনেকে ভিনির আগেও তাঁকে দেখছেন। কারণটা অমূলক নয়। ২০২৩-২৪ সালে তিনি জিতেছেন ইউরো ২০২৪, প্রিমিয়ার লিগ, ক্লাব বিশ্বকাপ ও উয়েফা সুপার কাপ। এফএ কাপের ফাইনালে সিটি হেরে না গেলে আরেকটা শিরোপা যোগ হতো তাঁর নামের পাশে। সিটির হয়ে এক মৌসুমে ৮ গোল করেছেন রদ্রি, যা তাঁর ক্যারিয়ার–সেরা। বর্তমানে ইনজুরির কারণে তাঁকে মাঠে নিয়মিত দেখা না গেলেও ২৩-২৪ মৌসুমে তিনি ছিলেন অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। অনেকে তাঁর হাতেই দেখছেন এবারের ব্যালন ডি’অর।

আরও পড়ুন

জুড বেলিংহাম, রিয়াল মাদ্রিদ

ইংল্যান্ডের জয়ের নায়ক জুড বেলিংহাম
উয়েফা

ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে ক্লাব সতীর্থ ভিনির চেয়ে কিছুটা পিছিয়েই আছেন বেলিংহাম। যদিও ভিনির মতো তিনিও গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতেছেন। ২৩-২৪ মৌসুমে তিনি রিয়াল মাদ্রিদের সর্বোচ্চ গোল স্কোরার ছিলেন। এল ক্লাসিকোর দুই ম্যাচেই গোল করেছিলেন তিনি। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ছিল একটা অ্যাসিস্টও। এ ছাড়া সবশেষ ইউরোতে তাঁর দল ইংল্যান্ড খেলেছে ফাইনাল। যদিও ফাইনালে স্পেনের কাছে হেরে যায় ইংল্যান্ড। কিন্তু ইউরোতে তিনি দারুণ খেলেছিলেন। গত বছর ৬ গোল করেছেন। এর মধ্যে রিয়ালের হয়ে ৪টি আর ইংল্যান্ডের হয়ে ২টি।

দানি কারভাহাল, রিয়াল মাদ্রিদ

কারভাহাল
ছবি: রয়টার্স

কারভাহাল রিয়ালের ডিফেন্ডার। সাধারণত ডিফেন্ডাররা গোল করে না বরং গোল ঠেকায়। তিনি একই দায়িত্ব পালন করেন স্পেনের হয়েও। গোল ঠেকানোর কাজ ভালোই সামলেছেন। তবে গত মৌসুমে ২টি গোলও করেছেন তিনি। এর মধ্যে একটা ২০২৪ ইউরোর ফাইনালে। সেই গোলের মধ্য দিয়ে একটা রেকর্ড করেছেন কারভাহাল। ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সে গোল করেছেন তিনি। জিতেছিলেন ফাইনালের ম্যাচসেরার পুরস্কারও। গত মৌসুমে ইউরো ২০২৪, চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতেছেন তিনি। এবার ব্যালন ডি’অর জিতলে তা–ও হয়তো হবে অন্যন্য। কারণ, সাধারণত স্ট্রাইকার বা উইঙ্গাররা জেতেন এ পুরস্কার। একজন ডিফেন্ডার হিসেবে কারভাহাল তা জিতলে মন্দ হয় না।

আরও পড়ুন

ফিল ফোডেন, ম্যানচেস্টার সিটি

ম্যানচেস্টার সিটি তারকা ফিল ফোডেন
ফোডেনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট

ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে গত বছর কেভিন ডি ব্রুইনা চোটের কারণে তেমন খেলার সুযোগ পাননি। সেই জায়গাটা ভালোই পূরণ করেছেন ফিল ফোডেন। এক মৌসুমে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন। এর মধ্যে ছিল দুটি হ্যাটট্রিক। প্রিমিয়ার লিগ প্লেয়ার অব দ্য সিজন নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ, ক্লাব বিশ্বকাপ ও উয়েফা সুপার কাপ জিতেছেন ফোডেন। আরেকটি রেকর্ড করেছেন তিনি। গত বছর বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়ে তিনি ৬টি গোল করেছেন, যা এক মৌসুমে যেকোনো সিটির খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি।

লাওতারো মার্তিনেজ, ইন্টার মিলান

দারুণ ছন্দে আছেন লাওতারো মার্তিনেজ
রয়টার্স

আর্জেন্টিনার এই স্ট্রাইকার ইতালির ক্লাব ইন্টারের হয়ে দারুণ এক মৌসুম কাটিয়েছেন। জিতেয়েছেন সিরি আ টাইটেল। লিগের সর্বোচ্চ ২৪ গোল করেছেন তিনি। পাশাপাশি ২০২৪ কোপা আমেরিকার নায়ক হয়ে উঠেছিলেন মার্তিনেজ। কোপা আমেরিকায় করেছেন ৫ গোল করেছেন। এর মধ্যে ছিল ফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে গোলটাও। আর্জেন্টিনা ম্যাচটা জেতে ১-০ গোলে। এ ছাড়া তিনি এ বছর সুপার কোপা ইতালানিয়া জিতেছেন। সব মিলিয়ে ভিনি ও রদ্রির থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও অন্যদের দৌড়ে পিছিয়ে নেই এই আর্জেন্টাইন তারকা। শেষ ৬৫ বছরের মধ্যে তিনি পঞ্চম খেলোয়াড়, যিনি টানা তিন মৌসুমে সিরি আ লিগে ২০টির বেশি গোল করেছেন।

আরও পড়ুন

আরও যাঁরা জিততে পারেন ব্যালন ডি’অর

তাঁদের বাইরে আরও কয়েকজন আছেন, যাঁদের নাম অনেকের মুখে শোনা যাচ্ছে। তবে তাঁরা ওপরের খেলোয়াড়দের চেয়ে পেছনেই আছেন। তাঁদের মধ্যে নিকো উইলিয়ামস অন্যতম। তিনি অ্যাথলেটিক ক্লাবের হয়ে জিতেছেন কোপা দেল রে। স্পেনের হয়ে জিতেছেন ইউরো ২০২৪। ক্লাবের হয়ে ৫ গোলের পাশাপাশি করেছেন ১১ অ্যাসিস্ট। কোপা দেল রের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। ৪০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম অ্যাথলেটিক ক্লাবের কেউ কোপা দেল রের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হলেন। পাশাপাশি ২০২৪ ইউরোতে স্পেনের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ফাইনালে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ সমতা ছিল, তাঁর গোলে ২-১ জয় পায় স্পেন।

কিলিয়ান এমবাপ্পে
এএফপি

এই দৌড়ে আছেন কিলিয়ান এমবাপ্পেও। বর্তমানে খেলছেন রিয়ালের হয়ে। রিয়ালে আসার আগে তিনি খেলেছেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর হয়ে। সেখানে লিগ ওয়ান, কোপা দে ফ্রেঞ্জ ও ট্রফি দেস চ্যাম্পিয়নস জিতেছেন। তবে ব্যালন ডি’অর জয়ের জন্য হয়তো এসবই যথেষ্ট নয়।

বায়ার্ন মিউনিখের হ্যারি কেইন আছেন এ তালিকায়। যদিও তিনি কোনো টাইটেল জিততে পারেননি। তবে ক্লাবের হয়ে গোল করেছেন নিয়মিত। ইউরোর ফাইনাল খেললেও ট্রফি জিততে পারেননি।

এ ছাড়া এ দৌড়ে আরেকজন রয়েছেন। তিনি হলেন বায়ার লেভারকুসেনের ফ্লোরিয়ান রিৎজ। তিনি জার্মানির হয়ে ইউরোতে গোল করা সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড়। ২০২৩-২৪ মৌসুমে বুন্দেসলিগা ও ডিএফবি-পোকাল জিতেছেন। লেভারকুসেনের বুন্দেসলিগা জেতায় তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। ১৫ গোলের পাশাপাশি করেছেন ১৫ অ্যাসিস্ট।

তালিকায় আরও যাঁরা আছেন

হাকান কালাহানগ্লু: ইন্টার মিলানের ২১ বছর বয়সী মিডফিল্ডার প্রথমবার ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা পেয়েছেন।

রুবেন দিয়াস: প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার সিটির অন্যতম ভরসার নাম রুবেন দিয়াস।

আরতেম দোভিক: লা লিগার সেরা গোলদাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দোভিক। তিনি গত মৌসুমে জিরোনার হয়ে খেললেও এখন খেলছেন রোমায়।

আর্লিং হলান্ড: শুরুর দিকে ভাবা হয়েছিল, এ বছর আর্লিং হলান্ড ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তবে সিটির হয়ে তিনি গড়ে প্রতি ম্যাচেই একটি গোল করেছেন।

এ ছাড়া এ তালিকায় আরও রয়েছেন রোমার ম্যাটস হামেলস, রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক ফুটবলার টনি ক্রুস, আতলান্টার আদেমোলা লুকমান, অ্যাস্টন ভিলার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ, আর্সেনালের মার্টিন ওডেগার্ড, বার্সেলোনার দানি অলমো, চেলসির কোল পালমার, আর্সেনালের ডেক্লান রাইস, বুকায়ো সাকা ও উইলিয়াম সালিবা, রিয়াল মাদ্রিদের আন্তোনিও রুডিগার ও ফেদে ভালভের্দে, পিএসজির ভিতিনিয়া, বায়ার লেভারকুসেনের গ্রানিত জাকা ও বার্সেলোনার লামিনে ইয়ামাল।

সূত্র: ম্যাচ ম্যাগাজিন, এসআই ডটকম

আরও পড়ুন