বিশ্বকাপের আগে যদি কেউ তোমাকে বলত, বিশ্বজয়ী ইংল্যান্ড দল টুর্নামেন্ট শেষ করবে সপ্তম অবস্থানে থেকে, তুমি হয়তো হেসেই উড়িয়ে দিতে। সাধারণ মানুষ নয়, ক্রিকেট–বোদ্ধারাও হয়তো হেসেই উড়িয়ে দিত এমন কথা। ফর্মের তুঙ্গে থাকা ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ব্যর্থ হবে, এমনটা ভাবা আসলে অসম্ভবই ছিল। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরু হতে না হতেই বদলে গেল পাশার দান। কোনোমতে বাংলাদেশের ওপরে থেকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করল ইংলিশরা।
বিশ্বকাপচক্রে আমূল পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যায় দলগুলো। নতুন তারকার আগমণ, পুরোনো তারকাদের বিদায়ে দুই বিশ্বকাপের দলের মাঝে মিল খুঁজে পাওয়াই দায়। সেদিক থেকে বিশ্বজয়ী ইংল্যান্ড একটু আলাদাই ছিল বৈকি। গতবারের বিশ্বজয়ী ইংলিশ দলের সঙ্গে এই ইংলিশ দলের পার্থক্য খুব একটা নেই। ব্যাটিং লাইনআপ সেই পুরোনো বাটলার-রুট-বেয়ারস্ট্রো আর বল হাতে আদিল রশিদ-মার্ক উড-ক্রিস ওকসরা। চার বছরের ব্যবধানে পরিবর্তন এসেছে শুধু অধিনায়কে। এউইন মরগানের রেখে যাওয়া অধিনায়কের জায়গাটা বেশ ভালোভাবেই নিজের করে নিয়েছিলেন উইকেটরক্ষক জস বাটলার। সেখানেও যে খুব একটা রদবদল এসেছে, তা নয়। মরগানের সময় থেকেই সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। বল হাতে জফরা আর্চারের জায়গাটা পূরণ করেছেন ডেভিড উইলি। এই দলটাই এক বছর আগে জিতেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অথচ যতসামান্য পরিবর্তন নিয়েও এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তাঁদের ব্যর্থতা চোখে পড়ার মতো। আফগানিস্তানের মতো দলের কাছে হেরে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে চলে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। শেষ দুই ম্যাচ জিতে ৭ নম্বরে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করতে হয়েছে জস বাটলারের দলকে। এমন ব্যর্থতার নেপথ্যে রয়েছে কী?
অন্যান্য ফরমেটকে প্রাধান্য দেওয়া
বিশ্বকাপ জেতার পর থেকেই একদিনের ক্রিকেটের প্রতি মনোযোগ অনেকাংশেই কমে গিয়েছে ইংলিশ দলের। তাদের নজর ছিল ক্রিকেটের বাকি দুই ফরম্যাটে। যে কারণে দুই বলে দুই অধিনায়কের পাশাপাশি, আলাদা আলাদা কোচও নিয়োগ দিয়েছে তারা। লাল বলের ক্রিকেটে কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন কিউই কিংবদন্তি ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম। তাঁর ‘বাজবল’ অ্যাপ্রোচ শুধু ইংলিশ ক্রিকেট নয়, বদলে দিয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের হালচালও। ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর টানা দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, অ্যাশেজের মতো টুর্নামেন্টে মজে ছিল ইংল্যান্ড।
অতিরিক্ত বিশ্রাম
অন্যান্য ফরম্যাটকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নিজেদের খেলোয়াড়দের একটু বেশিই বিশ্রাম দিয়ে ফেলেছে ইংলিশ বোর্ড। একদিনের ক্রিকেটে শেষ কবে পূর্ণশক্তির দল নিয়ে খেলেছে ইংল্যান্ড, তা নিয়ে একটা প্রশ্ন থাকেই। গত চার বছরে মাত্র একটি সিরিজে পূর্ণশক্তির দল নিয়ে মাঠে নেমেছে থ্রি লায়ন্সরা। তিন ফরম্যাটে দলে নিয়মিত খেলোয়াড়দের হামেশাই বিশ্রাম মিলত একদিনের ক্রিকেটে। অনিয়মিত খেলোয়াড়দের মানিয়ে নিতেও তাই সময় লেগেছে অনেকখানি।
কন্ডিশন
ইংলিশদের কাছে ভারত বরাবরই রহস্যময়। প্রায় ২০০ বছর শাসন করে গেলে কী হবে, ক্রিকেটের প্রশ্নে ইংল্যান্ড সব সময়ই ভারতে ধরাশায়ী। দক্ষিণ এশিয়ার পিচে বরাবরই দুর্বল ইংলিশরা, বড় টুর্নামেন্টে যেন সেই ধরাশায়ী হয়ে ফিরতে হয়েছে তাদের। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ব্যর্থ হয়েছিল ইংল্যান্ড।
কথায় আছে, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। ইংলিশরা তেমন জাতি নয়। ইতিহাস থেকে সবচেয়ে বড় শিক্ষাটা প্রতিবার তারাই নেয়। ২০১৫ সালে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে পুরো সাদা বলের ক্রিকেটকে বদলে ফেলেছিল তারা। তার ফল পেয়েছিল চার বছর পর, নিজেদের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের শিরোপা নিজেদের কাছেই রেখে দিয়েছিল এউইন মরগানের দল। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ২০২৭ বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে বদলে যাচ্ছে ইংল্যান্ডের পথচলা। ইতিমধ্যে বিদায়বার্তা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে নিয়মিত কয়েকজন খেলোয়াড়কে। ইংলিশদের এই দুর্দিন যে খুব বেশি দিন থাকছে না, তা এখন থেকেই বলে দেওয়া সম্ভব।