ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ আইসিসি নিয়মিতভাবে আয়োজন করছে ১৯৮৮ সাল থেকে। বাংলাদেশ নিয়মিত অংশ নিলেও চূড়ান্ত সাফল্য পেতে অপেক্ষা করতে হয় ২০২০ সাল পর্যন্ত। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ১৩তম আসরের ফাইনালে ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের করে নেন আকবর আলী, মাহমুদুল হাসান জয়রা। ২০১৬ বিশ্বকাপেও ভালো খেলে বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও টুর্নামেন্টসেরা হন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ।
এ প্রতিযোগিতায় শুধু পিছিয়ে ছিলেন মেয়েরা। মেয়েদের বিশ্বকাপ আয়োজিত হলেও এত দিন ছিল না কোনো বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতা। আইসিসি বেশ কয়েক বছর আগে মেয়েদের একটা বয়সভিত্তিক বিশ্বকাপ শুরু করার তোড়জোড় শুরু করে। সিদ্ধান্ত হয়, প্রথমবারের মতো মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ আয়োজন করবে বাংলাদেশ, ২০২১ সালে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির জন্য বিশ্বকাপটি পিছিয়ে যায়। নতুন সূচিতে ঠিক করা হয়, বিশ্বকাপটি অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকায়।
নারী ক্রিকেটে বেশ কয়েক বছর ধরেই ভালো করে আসছে বাংলাদেশ। সালমা খাতুন, জাহানারা, নিগার সুলতানাদের নাম শুনেছে ক্রিকেট বিশ্বের সবাই। ২০১৮ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে ৩ উইকেটে পরাজিত করে রীতিমতো হইচই ফেলে দেন টাইগ্রেসরা। ফলে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও ভালো করবে বাংলাদেশের মেয়েরা, এমন প্রত্যাশা ছিল সবারই।
হতাশ করেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। টুর্নামেন্টে চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে অংশ নেয় মোট ১৬টি দল। গ্রুপ এ তে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা আর যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম ম্যাচে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। মারুফা আকতার, দিশা বিশ্বাসদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ২০ ওভারে মাত্র ১৩০ রানের সংগ্রহ পায় অস্ট্রেলিয়া।
ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা অস্ট্রেলিয়ানদের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেন, এই স্কোরে থামানো যাবে না তাঁদের। স্কোরবোর্ডে কোনো রান তোলার আগেই রানি সাহা বিদায় নিলেও আফিয়া আর দিলারা ইনিংসের ভিত গড়ে দেন। আর ম্যাচের শেষ ভাগে স্বর্নার ১৮ বলে ২৩ আর সুমাইয়ার ২৫ বলে ৩১ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ২ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ক্রিকেট দল। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ৪২ বলে ৪০ রান করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে নেন উইকেট-কিপার ব্যাটসম্যান দিলারা আক্তার।
গ্রুপের বাকি দুই দল শ্রীলঙ্কা আর যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেও সহজে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ১০ রানে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ৫ উইকেটে জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার সিক্সে পা রাখে।
মেয়ের বয়সভিত্তিক এই টুর্নামেন্টের সূচিটি ছিল একটু জটিল। নিয়মানুযায়ী, গ্রুপ পর্যায়ের ১৬ দল থেকে পরের রাউন্ডে ওঠে মোট ১২টি দল। এই ১২টি দলকে নিয়ে তৈরি করা হয় দুইটি গ্রুপ, সুপার সিক্স, গ্রুপ ১ এবং সুপার সিক্স, গ্রুপ ২। দুই গ্রুপ থেকে প্রথম দুই দল করে মোট চার দল খেলবে সেমিফাইনাল, নিয়ম ছিল এমনই। সুপার সিক্সে ভালো পারফর্ম করে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পয়েন্ট সমান থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে পড়ে রান রেটে। ফলে বিদায় নিতে হয় সুপার সিক্স থেকেই।
সেমিফাইনাল খেলতে না পারলেও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ভালো পারফরম্যান্স আত্মবিশ্বাস জোগাবে বাংলাদেশকে। আগামী মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত হবে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সে জন্য ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভালো পারফর্ম করে সেই দলে ডাক পেয়েছেন ৪ জন ক্রিকেটার। তাঁদের মধ্যে আছেন দিশা বিশ্বাস, মারুফা আক্তার, দিলারা আক্তার এবং স্বর্ণা আক্তার। প্রথম তিনজন জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন আগেই। প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছেন স্বর্ণা আক্তার।
নারী অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের প্রথম আসরের ভালো পারফরম্যান্সই প্রমাণ করে, বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের পাইপলাইন বেশ শক্তিশালী। সামনের মাসের নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো খেলবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল—এমন প্রত্যাশা এখন সবার।