নাটকীয়তা শেষে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েরা

‘অবশেষে তাহাকে আমি পাইলাম’- রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বাঘিনীদের অনুভূতি ছিল অনেকটা এরকম। একবার নয়, দুইবার নয়, তিনবারের চেষ্টায় বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। সেটাও অনেকটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দয়ায়। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ভারতে অনুষ্ঠেয় একদিনের বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেল বাংলাদেশের নারীরা।

বাংলাদেশের কাছে সুযোগটা এসেছিল জানুয়ারির শুরুতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেই বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত হতো বাংলাদেশের। সিরিজ হেরে, রান রেটের দৌড়ে পিছিয়ে পড়ে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলা হয়নি বাঘিনীদের। তবে বাংলাদেশের ‘সুযোগ’ হয় বাছাইপর্বে।

ছয় দলের মধ্যে শীর্ষ দুই দল সুযোগ পাবে বিশ্বকাপে। সে লক্ষ্যে শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। প্রথম তিন ম্যাচে বড় ব্যবধানে জয়। কিন্তু এরপরই যেন খেই হারানো শুরু। প্রথমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হার, বাংলাদেশের করা ২২৭ রানের লক্ষ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেরিয়ে গিয়েছিল ৪ ওভার হাতে রেখে।

অতঃপর স্বাগতিক পাকিস্তানের কাছে বেশ বড় ব্যবধানের পরাজয়। এই ম্যাচে নেমেছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং ধ্বস। প্রথমে ব্যাটিং করে ৯ উইকেটে করেছে ১৭৮। সে রান চেজ করতে পাকিস্তান লাগে ৩৯.৪ ওভার। ৩ উইকেটের ব্যবধানে জিতে বিশ্বকাপের টিকিট কাটে স্বাগতিক পাকিস্তান। বাংলাদেশের রান রেট নেমে আসে +০.৬৩৯-এ। প্রথম তিন ম্যাচে বাংলার বাঘিনীদের যে রূপ দেখা গিয়েছিল, তা অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছিল শেষ দুই ম্যাচে।

শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ তাকিয়ে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকে। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের জয় আটকানো সম্ভব ছিল না কোনোভাবে। এই ম্যাচের আগে বাংলাদেশের চেয়ে রান রেটে বেশ পিছিয়ে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তাদের রান রেট ছিল –০.২৮৩। টসে জিতে প্রথমে বোলিং নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লক্ষ্য ছিল হিসেব-নিকেশ করে ব্যাটিং করতে নামবে তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী থাই মেয়েদের ৪৬.১ ওভারে ১৬৬ রানে অলআউট করে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

হতাশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ছবি: এক্স

শেষ পর্যন্ত সমীকরণ দাঁড়ায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি ১০.৪ ওভারের মধ্যে ১৬৭ রান করতে পারে তবে নেট রান রেটে বাংলাদেশকে টপকে চলে যাবে বিশ্বকাপে। তবে ১১ ওভার পর্যন্ত ছিল সুযোগ, সেখানে ছিল যদি তবে কিন্তুর খেলা। অর্থাৎ ১০.৫ ওভারে যদি স্কোর সমান থাকে, আর ওভারের শেষ বলে ছক্কা মারে তাহলেও রানরেটে এগিয়ে যাবে তারা।

আরও পড়ুন

১০ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ছিল ৩ উইকেটে ১৫৬। প্রথম বলে ১ রান। দ্বিতীয় বলে হাওয়ায় ভাসালেন শট, ধরা পরলেন লং অনে। নতুন ব্যাটসম্যান এসে তুলে নিলেন ৪, অতঃপর ১। নির্দিষ্ট সময় শেষ। ১০.৪ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ১৬২। এবার শুরু নাটকীয়তা। জিততে হলে উইন্ডিজদের প্রয়োজ়ন ৫ রান। কিন্তু রান রেটে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যেতে হলে দরকার ২ বলে ১০ রান। স্টেফানি টেইলর বল তুলে দিলেন লংঅনে, ভেবেছিলেন হয়তো চার হবে। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! থাই ফিল্ডারকে পার হয়ে সেই বল পৌছে গেল সীমানার বাইরে। ছক্কা! ১০.৫ বলে ম্যাচ জিতে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, স্কোরবোর্ডে সংগ্রহ ১৬৮। তাদের রান রেট হলো +০.৬২৬। বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান রেটের পার্থক্য মাত্র ০.০১৩! ক্ষুদ্রতম ব্যবধানে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।

ডাগআউটে হতবিহ্বল হয়ে রইল ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেয়েরা। স্টেফানি টেইলর তখনও নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। মাঠের বাইরে সতীর্থদের চোখেমুখে হতাশা। এ যেন জিতেও জেতা হলো না কিছুই! মাঠে আম্পায়ার ঘোষণা দিলেন, না ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাচ্ছে না। বিশ্বকাপে পৌছে গিয়েছে বাংলাদেশ। রাগে-ক্ষোভে ব্যাটে ঘুষি মারলেন টেইলর। বাংলাদেশের অবশ্য তাতে কিছু যায় আসে না।

আরও পড়ুন