শেষ হয়েছে ইউরোপিয়ান দলবদলের মৌসুম। নতুন চ্যালেঞ্জের খোঁজে দল ছেড়েছেন অনেকেই। ভিড়েছেন নতুন ঠিকানায়, নতুন স্বপ্ন পূরণ করতে। গ্রীষ্মকালীন দলবদল পাল্টে দিয়েছে অনেক খেলোয়াড়ের গন্তব্যই। কেউ কেউ আবার দলবদলই করেননি। দলবদলে কতটুকু ওলটপালট হলো ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের গন্তব্য? একনজরে দেখে নাও ব্রাজিলের সেরা খেলোয়াড়েরা খেলছেন কোন লিগে, কোন দলে…
নেইমার জুনিয়র, আল হিলাল
১২ বছর ধরে ব্রাজিলের আক্রমণভাগের ভরসার নাম নেইমার জুনিয়র। তাঁর প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস নেই কারও। কিন্তু তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে যেকোনো সময়। কারণ, মাত্র ৩১ বছর বয়সে ইউরোপিয়ান ফুটবলের জৌলুশ ছেড়ে নেইমার পাড়ি দিয়েছেন সৌদি আরবে। এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুমে পিএসজি ছেড়ে সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালে যোগ দিয়েছেন তিনি। পিএসজিতেও তাঁর অবস্থান যে খুব একটা সুখকর ছিল, তা নয়, কিন্তু সেখানে নিয়মিত ইউরোপিয়ান ফুটবলের ছোঁয়া তো পেতেন। সৌদি আরবে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটিও যেন হারিয়ে ফেললেন।
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রিয়াল মাদ্রিদ
২০১৮ সালে ব্রাজিল থেকে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ১৮ বছর বয়সী খেলোয়াড়ের জন্য ৫০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করাকে অনেকেই বাজে চোখে দেখেছিল। প্রথম দুই মৌসুমে বলার মতো তেমন কোনো পারফরম্যান্সও করতে পারেননি। কিন্তু ছয় মৌসুম পর তাঁর নামের পাশে শিরোপার সংখ্যা দেখে ঈর্ষা হবে যে কারও। রিয়ালের হয়ে সম্ভাব্য সব শিরোপাই উঁচিয়ে ধরেছেন তিনি। আছে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে গোল। রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান ‘নম্বর ৭’, ক্লাব ও জাতীয় দল দুই জায়গাতেই ভরসার পাত্র।
কাসেমিরো, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
গত দুই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বাদ পড়ার অন্যতম কারণ ছিল কাসেমিরোর অনুপস্থিতি। মাঝমাঠে কাসেমিরো এমনই একজন খেলোয়াড়, যাঁর উপস্থিতিই ভীতি সঞ্চার করতে পারে প্রতিপক্ষের মনে। গত দশকে রিয়াল মাদ্রিদের ইউরোপ রাজত্বের ভিত্তি ছিলেন এই কাসেমিরো। পঞ্চম চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার পর নতুন চ্যালেঞ্জের লক্ষ্যে রিয়াল ছাড়েন কাসেমিরো। বর্তমানে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের জায়ান্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মাঝমাঠ সামলাচ্ছেন কাসেমিরো।
রদ্রিগো, রিয়াল মাদ্রিদ
ভিনিসিয়ুসের সঙ্গে ব্রাজিল থেকে আরও একজন তরুণ তারকাকে উড়িয়ে এনেছিল রিয়াল। ৪৫ মিলিয়ন ইউরোর বদলে রদ্রিগোকে দলে ভিড়িয়েছিল ইউরোপের জায়ান্টরা। প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে একটু অসুবিধা হলেও আস্তে আস্তে রিয়ালের ‘সুপার সাব’-এ পরিণত হয়েছিলেন রদ্রিগো। বিশেষ করে গত দুই মৌসুমে। ৮০ মিনিটের পর রিয়ালের গোল মানেই তা রদ্রিগোর পা থেকে। এখন অবশ্য যোগ্যতাবলে মূল দলে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ব্রাজিলে অবশ্য এখনো নিজের জায়গাটা নড়বড়ে, তবে আগামী কোপা আমেরিকা আসতে আসতে রিয়ালের মতো ব্রাজিলেও ভিনি-রদ্রিগো জুটি দেখার সৌভাগ্য হবে।
থিয়াগো সিলভা, চেলসি
বয়স ৪০ ছুঁই ছুঁই করছে, অথচ এখনো ব্রাজিলের ডিফেন্সের কথা আসতে প্রথম নাম আসে থিয়াগো সিলভার। লুসিওর পর ব্রাজিলের ডিফেন্সকে একা হাতে সামলে যাচ্ছেন সিলভা। অথচ ক্যারিয়ারের শুরুতেই ইনজুরির কারণে ডাক্তার বলেছিলেন খেলা ছেড়ে দিতে। প্রচণ্ড মনোবল নিয়ে এখনো লড়ে যাচ্ছেন তিনি। যে কারণে ৩৯ বছর বয়সেও সিলভা ব্রাজিল ও চেলসি দুই দলেরই মূল ডিফেন্ডার। দুই মৌসুম আগে বয়স হয়ে যাচ্ছে বলে তাঁকে ফ্রিতেই ছেড়ে দিয়েছিল পিএসজি। সেখান থেকে তাঁকে দলে নেয় চেলসি। এরপর তাদের উপহার দিয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ। চেলসির দুঃসময়েও একাই লড়ে যাচ্ছেন সিলভা।
রিচার্লিসন, টটেনহাম
গত বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সারপ্রাইজ প্যাকেজ ছিলেন রিচার্লিসন। তাঁর গায়ে তুলে দেওয়া হয়েছিল ৯ নম্বর জার্সি, প্রথম ম্যাচে দুই গোল করে তাঁর মানও রেখেছিলেন কিছুটা। বাকি বিশ্বকাপে তাঁকে আর সেভাবে জ্বলে উঠতে দেখা যায়নি, তবে খুব যে খারাপ খেলেছেন, তা নয়। ব্রাজিলের এই নাম্বার নাইন বর্তমানে খেলেন ইংলিশ ক্লাব টটেনহাম হটস্পার্সের হয়ে। বিশ্বকাপের আগে আগেই চড়া দামে এভারটন থেকে কিনে নিয়েছিল তারা। কিন্তু সেই চড়া দামের বিন্দুমাত্র মূল্য দিতে পারেননি তিনি। গত মৌসুম শেষ করেছেন মাত্র তিনটি গোল দিয়ে। ক্লাবের হয়ে ৪০ ম্যাচে তার গোলসংখ্যা মাত্র ৪! তবে রিচার্লিসন ক্লাবের জার্সিতে যতটুকু ফ্লপ, জাতীয় দলের জার্সিতে ঠিক ততটুকুই হিট।
গাব্রিয়েল জেসুস, আর্সেনাল
বিশ্বকাপে গোলপোস্টের সামনে ব্রাজিলে আরেক ভরসার নাম ছিল গাব্রিয়েল জেসুস। ব্রাজিল থেকে বাকি সব তরুণ তারকার মতো তাঁকেও চড়া দামে কিনে নিয়ে গিয়েছিল ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি। বিশ্বকাপের আগে আগে সিটি ছেড়ে যোগ দেন আরেক ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালে। যোগ দেওয়ার পর থেকে আর্সেনালের আক্রমণভাগ নির্ভরশীল হয়ে গেছে তাঁর ওপর।