গ্রুপ বি প্রিভিউ
অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড দ্বৈরথে কে জয়ী হবে
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর চলছে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে। চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে বিশ্বকাপ খেলবে ২০টি দল। গ্রুপ অনুযায়ী দলগুলোর শক্তিমত্তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির ওয়েবসাইটে। কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে সেই বিশ্লেষণ তুলে ধরছেন কাজী আকাশ।
এ বছর বিশ্বকাপে একই গ্রুপে খেলবে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। গ্রুপ বি–তে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দলের সঙ্গে আরও আছে স্কটল্যান্ড, নামিবিয়া ও ওমান। এই গ্রুপের পাঁচটি দল বাকি চার দলের সঙ্গে একটি করে ম্যাচ খেলবে। সেরা দুই দল যাবে পরবর্তী রাউন্ডে, অর্থাৎ সুপার এইটে। এই পাঁচ দলের মধ্যে কোন দুটি দল শেষ পর্যন্ত পরের ধাপে যেতে পারে, তা নিয়েই আজকের আলোচনা। পাশাপাশি কোন দলের সেরা খেলোয়াড় কারা, কোন দিন কোন দলের খেলা ও শেষ পর্যন্ত দলে জায়গা করে নিয়েছে কারা—সেসবও থাকবে আলোচনায়।
অস্ট্রেলিয়া
২০২২ সালে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ চারে না উঠলেও এবারের আসরে ফেবারিটদের তালিকায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আসলে দলটিই এমন যেকোনো ফরম্যাটে এদের ফেবারিটের তকমা না দিয়ে উপায় নেই। ওয়ানডে বিশ্বকাপে সবেচেয়ে সফল অস্ট্রেলিয়া স্বল্পদৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে বিশ্বকাপ পেয়েছে একবার। কিন্তু তবু চিন্তা নেই অজিদের ডেরায়। দলে দারুণ সব খেলোয়াড় রয়েছে। বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই আছেন ফর্মে। সদ্য শেষ হওয়া আইপিএলএ প্যাট কামিন্সের কাঁধে ভর করে ফাইনাল খেলেছে হায়দরাবাদ। একই দলের সতীর্থ ট্রাভিস হেড ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। যদিও ফাইনালে হেরেছে মিচেল স্টার্কের দল কলকাতার কাছে। এ ছাড়া ওয়ার্নার, ম্যাক্সওয়েল, মার্শ, গ্রিন, ইংলিশরা রয়েছেন ব্যাটিং অর্ডারে। বোলিংয়ের দায়িত্বটা সামলাবেন স্টার্ক, কামিন্স, এলিস, জাম্পারা। সবাই নিজেদের সেরা দিতে পারলে অস্ট্রেলিয়ার ফাইনাল না খেলাটাই হবে হতাশার। তা ছাড়া সুপার এইটে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার কাছে বাধা হওয়ার কথা না। তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে রয়েছে ইংল্যান্ড, ওমান, স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়া।
৫ জুন, বুধবার ওমানের বিপক্ষে প্রথম মাঠে নামবে অজিরা। শক্তিতে অনেক এগিয়ে আছে মার্শের দল। তবে অনেক সময় পচা শামুকে পা কাটে কি না, তাই সাবধান!
অস্ট্রেলিয়ার দল
মিচেল মার্শ (অধিনায়ক), অ্যাশটন অ্যাগার, প্যাট কামিন্স, টিম ডেভিড, নাথান এলিস, ক্যামেরন গ্রিন, জশ হ্যাজলউড, ট্রাভিস হেড, জশ ইংলিস, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মিচেল স্টার্ক, মার্কাস স্টয়নিস, ম্যাথু ওয়েড, ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যাডাম জাম্পা।
সময় সূচী
সেরা খেলোয়াড়—ট্রাভিস হেড
সম্প্রতি ফর্মের তুঙ্গে রয়েছে হেড। প্রায় ২০০ স্ট্রাইক রেটে ৫০০-এর বেশি রান করেছেন আইপিএলে। ব্যাট হাতে কেমন তাণ্ডব চালিয়েছেন ভাবো একবার! নিজের খেলাটা খেলতে পারলে বিশ্বের যেকোনো বোলারকে একাই দুমড়েমুচড়ে ফেলতে পারেন। তা ছাড়া আইসিসির ইভেন্ট হলেই কেন যেন হেডের ব্যাটে রানের বন্যা বয়ে যায়। সবশেষ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ও ওয়ানডে ক্রিকেটের ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় হেড। এবারও সে ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে অজিদের ট্রেবল জয় কে ঠেকায়!
ইংল্যান্ড
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বর্তমান ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। বেশ কয়েক বছর ইংল্যান্ড সব ধরনের ক্রিকেটে আক্রমণাত্মক খেলা খেলছে। সীমিত ওভারে ক্রিকেটে যে সেটা আরও বেড়েছে, তা নিশ্চয়ই আর বলতে হবে না। পেস লাইন আপে মার্ক উড, টপলি, জর্ডান, কারেনদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে স্পিড স্টার জফরা আর্চার। স্কোরবোর্ডে রান তোলার কাজটা করবেন বাটলার, বেয়ারস্টো, জ্যাকস, লিভিংস্টোনরা। সঙ্গে মঈন আলী, হার্টলিরা তো আছেনই। কোনো অঘটন না ঘটলে হয়তো ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া সুপার এইটের টিকিট কাটবে। অন্য তিনটি দলের সঙ্গে তুলনা করলে এই দুই দলই এগিয়ে থাকবে। কিন্তু বাকি দলগুলোও কিন্তু বসে থাকবে না। স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়া ইতিমধ্যে তাদের সামর্থ্য প্রমাণ করেছে। তাই সাধু সাবধান!
ইংল্যান্ডের প্রথম খেলা ৪ জুন স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। খাতা–কলমে ইংল্যান্ড এগিয়ে থাকলেও ছেড়ে কথা বলবে না স্কটল্যান্ড। তাই এ ম্যাচে ইংল্যান্ডকে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়েই খেলতে হবে।
ইংল্যান্ডের দল
জস বাটলার (অধিনায়ক), মঈন আলী, জফরা আর্চার, জনি বেয়ারস্টো, হ্যারি ব্রুক, স্যাম কারেন, বেন ডাকেট, টম হার্টলি, উইল জ্যাকস, ক্রিস জর্ডান, লিয়াম লিভিংস্টোন, আদিল রশিদ, ফিল সল্ট, রিস টপলি, মার্ক উড।
সময় সূচী
সেরা খেলোয়াড়—মার্ক উড
অত্যন্ত গতিশীল বোলার। উডের দৌড়ের ধরন ও বল ডেলিভারিও ব্যাটারদের বিভ্রান্ত করতে পারে। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২৮ ইনিংসে ৪৭ উইকেটে নিয়েছেন উড। অবশ্য এই ডেটা দেখে উডকে বিচার করা ঠিক হবে না। কারণ, ম্যাচে উডের ইমপ্যাক্ট এই ডেটার সাহায্যে প্রকাশ পায় না। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিতে সিদ্ধহস্ত উড ইংল্যান্ডের বড় ভরসার নাম।
নামিবিয়া
আফ্রিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছে নামিবিয়া। নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে তারা। বাছাইপর্বে ছিল অপরাজিত। সেখানে জিম্বাবুয়েসহ ৬টি দেশকে পেছনে ফেলে তারা আজ বিশ্বকাপে। ফলে নামিবিয়াকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে চমকে দিয়েছিল এই নামিবিয়া। ১৬৩ রান করে লঙ্কানদের গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ১০৮ রানে। ৫৫ রানের বিশাল জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপ মিশন। এ বছর তাদের প্রথম খেলা ওমানের বিপক্ষে আগামীকাল। জয় দিয়েই শুরু করতে চাইবে দলটি। দলে এরাসমাস, লাইশার, স্মিট ও ডেভিড ভিসার মতো খেলোয়াড় রয়েছে। এবার অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের মধ্যে এক দলকে হারাতে পারলেই সুপার এইটের দরজা খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে নামিবিয়ার।
নামিবিয়ার দল
গেরহার্ড এরাসমাস (অধিনায়ক), জেইন গ্রিন, মাইকেল ফন লিনগেন, ডিলান লাইশার, রুবেন ট্রাম্পেলমান, জ্যাক ব্রাসেল, বেন শিকোঙ্গো, তেনজেনি লুঙ্গামেনি, নিকো ডাভিন, জেজে স্মিট, ইয়ান ফ্রাইলিঙ্ক, জেপি কোটজে, ডেভিড ভিসা, বার্নার্ড শোলৎজ, ম্যালান ক্রুগার, পিটার ড্যানিয়েল ব্লিগনট।
সময় সূচী
সেরা খেলোয়াড়—ডেভিড ভিসা
নামিবিয়াকে বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অলরাউন্ডার ডেভিড ভিসা। এটা তাঁর তৃতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। দ্বিতীয়বারের মতো খেলছেন নামিবিয়ার হয়ে, আর প্রথমবার খেলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে। বড় দলের তারকা খেলোয়াড় ছিলেন ভিসা। সেই অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই কাজে লাগাচ্ছে নামিবিয়া। ব্যাট, বল, ফিল্ডিং—সব বিভাগেই দুর্দান্ত তিনি। তাঁর ব্যাট যেন চলে থরের হ্যামারের মতো। সেটা কাজে লাগিয়ে যদি সুপার এইটে উঠতে পারে নামিবিয়া, তাহলে এক ইতিহাস রচিত হবে বটে।
ওমান
শক্তিমত্তার দিক থেকে এই গ্রুপে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে ওমান। গ্রুপের একমাত্র এশীয় দলও এটি। তবে সবচেয়ে পিছিয়ে থেকেও কিন্তু একটা লাভ আছে। ওদের হারানোর কিছু নেই। বরং এখান থেকে একটা জয় তুলে নিতে পারলে গর্ব করার মতোই কাজ হবে। তা ছাড়া অভিজ্ঞতায় গ্রুপের অন্যান্য দুটি দল থেকে এগিয়ে আছে ওমান। এবার যে ওরা নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলবে। অভিজ্ঞতায় ভর দিয়ে আগামীকাল নামিবিয়ার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচটা নিশ্চয়ই জিততে চাইবে এশীয় দলটা। দলে আকিব ইলিয়াস, আয়ান খান, বিলাল খানদের মতো পরিচিত মুখও রয়েছে। শুধু নিজেদের দিনে মাঠে জ্বলে উঠতে হবে, এই যা!
ওমানের দল
আকিব ইলিয়াস (অধিনায়ক), জিশান মাকসুদ, কাশ্যপ প্রজাপতি, প্রতীক আঠাবলে, আইয়ান খান, শোয়েব খান, মোহাম্মদ নাদিম, নাসিম খুশি, মেহরান খান, বিলাল খান, রফিউল্লাহ, কলিমউল্লাহ, ফাইয়াজ বাট, শাকিল আহমেদ ও খালিদ কাইল।
রিজার্ভ খেলোয়াড়: যতীন্দর সিং, সময় শ্রীবাস্তব, সুফিয়ান মেহমুদ ও জয় ওদেদরা।
সময় সূচী
সেরা খেলোয়াড়—আকিব ইলিয়াস
টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান, টপ অর্ডার স্পিনার, অধিনায়ক। এসব বিশেষণ একজনেরই। আকিব ইলিয়াস। তিনি হয়ে উঠতে পারেন ওমানের সবচেয়ে ভরসার নাম। অধিনায়ক হিসেবে নতুন হলেও পারফরম্যান্সে দারুণ অভিজ্ঞ। তা ছাড়া তাঁকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য পাশে থাকবেন সাবেক অধিনায়ক জিসান মাকসুদ। অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে আকিবের ব্যাটে রানের বন্যা। সাত ম্যাচে ৪২.৫ গড়ে ও ১৫৮.৩৮ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন। বিলাল খানের মতো অভিজ্ঞ পেসার থাকায় সামনের থেকে নেতৃত্ব দিতেও হয়তো সমস্যায় পড়তে হবে না। ওমানের স্বপ্ন, অন্তত একটা ম্যাচ হলেও জিততে হবে। সেই স্বপ্ন পূরণের কান্ডারি হতে পারেন আকিব ইলিয়াস।
স্কটল্যান্ড
এই গ্রুপের অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের পরে স্কটল্যান্ড সবচেয়ে শক্তিশালী। এটা অবশ্য আমার ব্যক্তিগত মতামত। তাই এই দলটি যদি বড় দুটি দলের একটাকেও হারাতে পারে, তবেই কেল্লা ফতে। কারণ, নামিবিয়া ও ওমানকে হারিয়ে দেবে স্কটল্যান্ড, এমন আশা করাই যায়। এই আশা করার পেছনে একটা কারণ আছে। স্কটল্যান্ড দলে যে কিছু নামীদামি খেলোয়াড় রয়েছে। তাঁদের উপেক্ষা করাও তো সম্ভব নয়। যেমন ধরো, অধিনায়ক রিচি বেরিংটন, মাইকেল জোন্স, জর্জ মুনসি, মার্ক ওয়াট। তা ছাড়া ২০১৮ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে তারা কিন্তু হারিয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে। এবারও গ্রুপে সেই ইংল্যান্ড রয়েছে। ফলে আবারও তাদের হারানোর সাহসটা করতেই পারে স্কটল্যান্ড।
৪ জুন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যদি তারা জিতে যায়, তাহলে বলাই যায়, সুপার এইটের পথে বেশ এগিয়ে যাবে স্কটিশরা। এরপর শুধু নিজেদের প্রত্যাশিত খেলাটা খেলতে পারলেই সুপার এইট নিশ্চিত।
স্কটল্যান্ডের দল
রিচি বেরিংটন (অধিনায়ক), ম্যাথু ক্রস, ব্র্যাড কুরি, ক্রিস গ্রিভস, ওলি হ্যারিস, জ্যাক জারভিস, মাইকেল জোন্স, মাইকেল লিস্ক, ব্রান্ডন ম্যাকমুলেন, জর্জ মানসি, সাফিয়ান শরীফ, ক্রিস সোল, চার্লি টিয়ার, মার্ক ওয়াট ও ব্র্যাড হুইল।
সময় সূচী
সেরা খেলোয়াড়—মার্ক ওয়াট
বাঁহাতি স্পিনার মার্ক ওয়াট বেশ কিছুদিন স্কটল্যান্ড ক্রিকেট দলের ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করছেন। ইতিমধ্যে অভিজ্ঞতাও হয়েছে বেশ। ওয়াট মাঝেমধ্যে বেশ গতিতে বল করলেও হঠাৎ স্লো বল করেন। পেসাররা যেমন স্লোয়ার করেন, অনেকটা সে রকম। তাই ওয়াটকে খেলা একটু কঠিনই বটে। স্পিন বিভাগে স্কটিশরা ভরসা রাখবেন ওয়াটের ওপরেই। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৬.৮১ ইকোনমিতে ৬২ ম্যাচে নিয়েছেন ৭৭ উইকেট। প্রয়োজনে ব্যাট হাতেও ভরসার প্রতিদান দিতে পারেন ওয়াট।