আমাদের সানজিদা ইস্ট বেঙ্গলে কেমন আছেন
আমাদের সানজিদা অনবদ্য একটা গোল করেছেন ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে। ভারতীয় নারী ফুটবল লিগে কলকাতার ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ফ্রি কিক থেকে চমৎকার একটা গোল করেন সানজিদা। প্রায় ৪০ গজ দূর থেকে সানজিদা যে গোলটা করেন, তাকে আমার মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে করা ব্রাজিলের রোনালদিনহোর গোলের মতো। সেই গোলের পর ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, নিশ্চয়ই খুলনা, সিলেট, ঢাকা আর কলসিন্দুরের মানুষ এখন অনেক গৌরবান্বিত বোধ করছেন।
আমাদের সানজিদা। আমাদের নিজেদের সানজিদা আক্তার। এই কথাটা যখন বলছি, তখন এই আমরাটা কারা? বাংলাদেশের সব মানুষ। সানজিদা তো আমাদেরই। এই সেই ফুটবলার, যিনি ২০২২ সালে সাফ ফুটবল ফাইনাল খেলার আগে বলেছিলেন, আমরা একেকজন লড়াকু। আমরা মায়ের গয়না বেচে হয়তো খেলতে এসেছি। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব। আর তারপর? মেয়েদের সাফ ফুটবলে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা।
আবার সানজিদা কিশোর আলোরও। প্রথম আলোরও। আমরা, কিশোর আলোর পক্ষ থেকে এখনো ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামের ছোট ছোট ফুটবলার মেয়েদের নিয়মিত বৃত্তি দিয়ে আসছি। তারও আগে, অনূর্ধ্ব-১৪ চ্যাম্পিয়ন ফুটবলার মেয়েদের সবাইকে বৃত্তি দিত প্রথম আলো। সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ২০২২ সালে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রথম আলো ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ফুটবল ফেডারেশনের নারী উইংয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল। মেয়েদের এবং প্রশিক্ষকদের প্রত্যেককে দিয়েছিল এক লাখ টাকা করে।
আমাদের সানজিদা। আমাদের নিজেদের সানজিদা আক্তার। এই কথাটা যখন বলছি, তখন এই আমরাটা কারা? বাংলাদেশের সব মানুষ। সানজিদা তো আমাদেরই।
তারও আগে, ২০১৫ সালে প্রথম আলো কলসিন্দুরের ফুটবলার মেয়েদের নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র বানিয়েছিল ‘অদম্য মেয়েরা’। তখন মেয়েরা অনূর্ধ্ব-১৪-এর ফাইনালে উঠেছিল। জাতীয় দলের ১৮ মেয়ের ১০ জনই এক স্কুলের, তা জেনে প্রথম আলো প্রামাণ্যচিত্র বানায়। মেয়েদের ঢাকায় এনে সংবর্ধনা দেয়। তখনই কলসিন্দুরের ফুটবলার সানজিদা আক্তার বলেছিল, আপনারা যে আমাদের নিয়া সিনেমা বানাইছেন, আমরা দেখুম কেমনে? আমগো গ্রামে কি কারেন্ট আছে?
সেই কাহিনি লিখেছিলাম আমি। আর বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামের ৮০০ বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছিলেন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সেই বিদ্যুৎ সংযোগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর সঙ্গে আমিও গিয়েছিলাম সানজিদাদের স্কুলে। ২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মেয়েরা যখন ফিরল, কিশোর আলোর জন্মদিন পালন করতে আমরা সবাই মিলে চলে গিয়েছিলাম কলসিন্দুর গ্রামে। সেখানে সানজিদা, মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, তহুরাদের সঙ্গে আমরা কেক কেটেছি, অনুষ্ঠান করেছি, ওদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়িয়েছি। কিশোর আলোর বন্ধুরা সঙ্গে ছিল।
আমাদের এই সানজিদা আর বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা এখন ভারতের নারী ফুটবল লিগে খেলছেন। সানজিদা খেলছেন ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে। এটা কলকাতার ক্লাব। আর সাবিনার ক্লাব কিকস্টার্ট এফসি।
ভারতে সানজিদার কেমন লাগছে?
সানজিদা মিস করছেন দেশকে। কলকাতার চেয়ে তাঁর বেশি ভালো লাগে ঢাকা। কলকাতায় ওরা একটা রিসোর্টে থাকেন। খাওয়াদাওয়া বাঙালিদের মতোই, কাজেই কোনোই অসুবিধা বোধ করেন না সানজিদা। সাবিনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল কিকস্টার্টের সঙ্গে খেলার দিন। ওই দিন কিন্তু কিকস্টার্টই জয় পেয়েছিল।
সানজিদা খেলছেন বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে। এই সম্মান এবং সুযোগ তিনি উপভোগ করছেন।
কলকাতায় এখনো শাড়ি বা জামা কিনতে যাননি তিনি। গাউস আংকেল তাকে বুট, ট্রাউজার, টিশার্ট—যা যা লাগে কিনে দিয়েছেন। গাউস আংকেল হলেন সানজিদার ভাষায়, মোনেম মুন্না, গাউস আংকেল, ওনাদের নাম শোনেননি, সেই গাউস আংকেল। এই প্রসঙ্গে বলা যায়, মোনেম মুন্না ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে খেলে একই রকম একটা গোল করেছিলেন। মোনেম মুন্না এখন প্রয়াত।
তাঁর ওই দুর্দান্ত গোলে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব খুব খুশি। কর্মকর্তারা বলেছেন, তোমার গোল ওয়ার্ল্ড ক্লাস গোল হয়েছে।
সানজিদা মার্চের শেষে দেশে ফিরে আসবেন।
সানজিদা আক্তার ৯ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে লিখেছিলেন:
আমাদের পরবর্তী খেলা তিলক ময়দানে। প্রথমবারের মতো অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে কলকাতার বাইরে যাচ্ছি। যাবার পথে ইষ্ট বেঙ্গল মেন্স টিমের অধিনায়ক ক্লেইটন সিলভার সাথে দেখা। সদ্য সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষেত্রে বড় কৃতিত্ব উনার। সমর্থক ভাইবোনদের মুখে হাসি ফোটানোই আমাদের দায়িত্ব। আর সেটি একই দলের অন্য কারও মাধ্যমে হলেও অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে। গুড লাক সিলভা ও উনার টিমকে।