ম্যাচ উইক ১৫
লন্ডনজুড়ে উত্তেজনা, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্ধ মার্সিসাইড ডার্বি
ডার্বি মানেই যেন অন্য রকম উত্তেজনা। আর সেই ডার্বি যদি হয় একই শহরের দুই দলের মধ্যে, তবে তো কথাই নেই। বন্ধু সঙ্গে বন্ধুর দেখাদেখি বন্ধ, কথা বন্ধ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ১৫তম সপ্তাহে দেখা মিলবে দুই ডার্বির। ডার্বিতে নামার আগে প্রস্তুতি কেমন দলগুলোর? জেনে নেওয়া যাক একনজরে।
একনজরে ম্যাচ উইক ১৪ শেষে প্রিমিয়ার লিগের টেবিল
এভারটন বনাম লিভারপুল
সপ্তাহের শুরু হওয়ার কথা ছিল ‘মার্সিসাইড ডার্বি’ দিয়ে। ঘূর্ণিঝড় ‘দারাঘ’ হানা দেওয়ায় স্থগিত করা হয়েছে এই ম্যাচ। স্থগিত ম্যাচটি অন্য আরেক সপ্তাহে খেলা হবে।
অ্যাস্টন ভিলা বনাম সাউদাম্পটন
ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে জয় দিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে অ্যাস্টন ভিলা। আট ম্যাচ জয়শূন্য থাকার পর এমন জয় দলকে যেমন উজ্জীবিত করেছে, তেমনই উনাই এমেরির মাথা থেকে একটা চাপ নেমে গিয়েছে। এক জয় তাদের টেনে এনেছে পয়েন্ট টেবিলের অষ্টম স্থানে। টেবিলের তলানিতে থাকা সাউদাম্পটনের বিপক্ষে ম্যাচটা তাই খুব একটা কঠিন হতে যাচ্ছে না তাদের জন্য। চার ম্যাচ ধরে জয়শূন্য সাউদাম্পটন, প্রিমিয়ার লিগে প্রতিপক্ষের মাটিতে জয় নেই ১৪ ম্যাচ ধরে। অলৌকিক কিছু দেখাতে না পারলে জয় ছাড়াই ভিলা পার্ক থেকে ফিরতে হবে তাদের।
ব্রেন্টফোর্ড বনাম নিউক্যাসল ইউনাইটেড
এই মৌসুমে ব্রেন্টফোর্ডের ফর্ম যেন পেন্ডুলামের মতো দুলছে। ঘরের মাঠে গোলবন্যা, আর প্রতিপক্ষের মাঠে গেলেই উবে যায় সবটা। এই মৌসুমে প্রতিপক্ষের মাটি থেকে মাত্র ১ পয়েন্ট অর্জন করতে পেরেছে ব্রেন্টফোর্ড। ঘরের মাটিতে ম্যাচ নিয়ে তাই টমাস ফ্র্যাংকের শিষ্যরা একটু নিশ্চিন্তে থাকতেই পারে। নিউক্যাসলের ফর্মটা তেমন ভালো যাচ্ছে না। যদিও গত সপ্তাহে উড়তে থাকা লিভারপুলকে আটকে দিয়েছে ম্যাগপাইরা। কিন্তু শেষ তিন ম্যাচ ধরে জয়শূন্য তারা। ঘরের মাটিতে ফর্মে থাকা ব্রেন্টফোর্ডকে হারাতে বেশ বেগ পেতে হবে তাদের।
ক্রিস্টাল প্যালেস বনাম ম্যানচেস্টার সিটি
৭ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর আবারও জয়ের ধারায় ফিরেছে ম্যানচেস্টার সিটি। কেভিন ডি ব্রুইনার প্রত্যাবর্তনে সিটি যেন নতুন করে হালে পানি পেয়েছে। টানা হার গার্দিওলার শিষ্যদের অনেকটাই ছিটকে দিয়েছে প্রিমিয়ার লিগের দৌড় থেকে। টিকে থাকতে হলে তাই জয়ের কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত খেলোয়াড়েরা আস্তে আস্তে ফিরতে শুরু করায় ফর্মে ফিরতে শুরু করেছে সিটি। অন্যদিকে ইপ্সউইচ সিটির বিপক্ষে জয় দিয়ে অবনমনের সারি থেকে বেরিয়েছে ক্রিস্টাল প্যালেস। মিরাকল না ঘটলে সিটির বিপক্ষে জেতা বেশ কষ্টসাধ্য হবে তাদের জন্য।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বনাম নটিংহাম ফরেস্ট
ড্র দিয়ে শুরু, জয়ের ধারায় ফিরতে না ফিরতেই হার। ইউনাইটেড ক্যারিয়ারের সূচনা মনমতো হয়নি রুবেন আমোরিমের। ট্যাক্টিকস থেকে শুরু করে লিগের উত্তেজনা—সবকিছু সামলে নিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাঁকে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আর্সেনালের বিপক্ষে ২-০ গোলের হার। অন্যদিকে ফরেস্টও খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। সিটির বিপক্ষে হার অপ্রত্যাশিত না হলেও বাড়তি চাপ তৈরি করেছে তাদের ওপর। ইউরোপের লড়াইয়ে টিকে থাকতে চাইলে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই ফরেস্টের জন্য।
ফুলহাম বনাম আর্সেনাল
লন্ডন ডার্বির আগে আর্সেনাল আছে ফুরফুরে মেজাজে। বিশেষ করে পরপর কয়েকটি বিশাল জয় চিন্তার ভার নামিয়ে দিয়েছে মিকেল আর্তেতার কাঁধ থেকে। আন্তর্জাতিক বিরতির পর দলে ফিরেছেন মার্টিন ওডেগার্ড। দলের খেলার ধরনই বদলে গিয়েছে তার আগমনে। ইউনাইটেডের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় লিগ টেবিলে তাদের অবস্থান আরও জোরালো করেছে। অন্যদিকে ফুলহামের হয়ে মাঠে নামতে পারছেন না নিয়মিত অধিনায়ক টম কিয়ের্নি। সরাসরি লাল কার্ড দেখায় ৩ ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ তিনি। আর্সেনালের বিপক্ষে তাই অ্যালেক্স আইওবির দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের।
ইপ্সউইচ টাউন বনাম বোর্নমাউথ
ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ভালো খেলেও জয় ছিনিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে ইপ্সউইচ। ঘরের মাটিতে এমন হারে কোচ কেইরান ম্যাককেনার কণ্ঠেও ঝরে পড়েছে অস্বস্তি। ঘরের মাটিতে এই নিয়ে একটি ম্যাচেও জিততে পারেনি তারা। অন্যদিকে বোর্নমাউথ আছে ফর্মের তুঙ্গে। গত সপ্তাহে হারিয়েছে টটেনহামকে, এর আগে হ্যাটট্রিক করেছেন জাস্টিন ক্লুইভার্ট। ফর্মে থাকা বোর্নমাউথের জন্য ম্যাচটা তুলনামূলক বেশ সহজ।
লেস্টার সিটি বনাম ব্রাইটন
নতুন কোচের অধীন যেন নতুন করে প্রাণ খুঁজে পেয়েছে লেস্টার সিটি। রুড ফন নিস্টারলয়ের দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর থেকে বদলে গিয়েছে লেস্টারের হালচাল। ৩-১ গোলের বিশাল জয় দিয়ে লেস্টার ক্যারিয়ার শুরু করেছেন ডাচ কোচ। নিজেকে প্রমাণ করার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন তার সামনে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফিরে কোনোভাবেই নিজেদের খুঁজে পাচ্ছে না ব্রাইটন। বোর্নমাউঠের বিপক্ষে কষ্টার্জিত জয়, সাউদাম্পটনের বিপক্ষে ড্র আর ফুলহামের বিপক্ষে হার। মাঠেও বেশ ছন্নছাড়া ফাবিয়ান হুৎজলারের শিষ্যরা। চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার সুযোগ বলতে গেলে হেলায় হারিয়েছে তারা। দ্রুত ফর্মে ফিরতে না পারলে ইউরোপে খেলার স্বপ্নটাও অধরা থেকে যাবে তাদের।
টটেনহাম বনাম চেলসি
‘প্রিমিয়ার লিগের রবিনহুড’ খেতাবটা টটেনহামের অনেক দিনের। এই মৌসুমে যেন সেটা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন আগ্নে পোস্তেকোগলুর শিষ্যরা। গত সপ্তাহে পয়েন্ট খুইয়েছেন বোর্নমাউথের কাছে। গত ছয় ম্যাচে একমাত্র জয় ম্যান সিটির বিপক্ষে। হিসাব অনুযায়ী লন্ডন ডার্বি হতে চলেছে তাদের পয়েন্ট জয়ের ম্যাচ। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা চেলসিকে আটকে দেওয়ার সব রসদই আছে স্পার্সের কাছে। চোটের কারণে নিয়মিত ডিফেন্ডার বেন ডেভিসকে পাচ্ছে না তারা। অন্যদিকে চেলসিও মাঠে নেমেছে আঁটসাঁট বেঁধে। লন্ডন ডার্বিকে মাথায় রেখে গত সপ্তাহে খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিয়েছিলেন চেলসি কোচ এনজো মারেসকা। এই ম্যাচ যতটা না পয়েন্টের লড়াই, তার থেকে বেশি সম্মানের। সম্মানের লড়াইয়ে পেছনে পড়তে চাইবে না কেউই।
ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড বনাম উলভস
ইংলিশ মিডিয়া এই ম্যাচের নাম দিয়েছে ‘এল স্যাকিলো’। যে হারবে, তার কপালেই জুটবে বরখাস্তের নোটিশ। দুই কোচের জন্যই ম্যাচটা তাই অঘোষিত ফাইনাল। গত মৌসুমে অসাধারণ ফর্মে থাকা ওয়েস্ট হ্যাম এবার ১৪ ম্যাচে জয় তুলতে পেরেছে ৪টিতে। উলভসের অবস্থা আরও শোচনীয়। ১৪ ম্যাচে জয় মাত্র ২টিতে। যদিও দুই জয় নিয়ে সমর্থকদের কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করতে পেরেছিলেন উলভস কোচ গ্যারি ও’নেইল। সেটাও উবে গিয়েছে এভারটনের কাছে ৪-০ গোলে হেরে। লোপেতেগিও শেষ ম্যাচ হেরেছেন লেস্টারের কাছে ৩-১ গোলে। জয় বাদে যেকোনো ফলাফল একপ্রকার নিশ্চিত করে দেবে কোচেদের ভাগ্য।