বিশ্বকাপটা হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশেই। শেষ মুহূর্তে রাজনৈতিক জটিলতা আর নিরাপত্তার কারণে বিশ্বকাপের নতুন ভেন্যু নির্ধারিত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। আর আরব আমিরাতের মাটিতেই আজ (২০ অক্টোবর) দেখা মিলবে নতুন বিশ্বজয়ীর। দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকা মুখোমুখি হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরার লড়াইয়ে।
বিশ্বকাপের ১০ দলকে ভাগ করা হয়েছে দুটি গ্রুপে। ৫ জনের গ্রুপ থেকে সেরা ২ দল জায়গা করে নেবে সেমিফাইনালে। বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকেই তাই পা ফেলতে হয়েছে সাবধানে। সূচনাটা হয়েছিল বাংলাদেশের ম্যাচ দিয়ে। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬ রানের জয় দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে বাঘিনীদের একমাত্র সুখস্মৃতি এই জয়। এর পর থেকেই জমে ওঠে বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ।
শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে চমকে দেয় নিউজিল্যান্ড। কাগজে–কলমে খুব একটা পার্থক্য না থাকলেও কিউইদের কাছে ৫৮ রানের হার বেশ বড় একটা ধাক্কা খায় ভারত। সেই ধাক্কাই আর সামলে উঠতে পারেনি তারা। গ্রুপ ‘এ’তে কিউইদের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কা। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাকে উতরে গেলেও পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার মানতে হয় নিউজিল্যান্ডকে। এটুকুই যথেষ্ট ছিল তাদের সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করতে।
অন্যদিকে গ্রুপ ‘বি’ ছিল যেন রোলার কোস্টার রাইড। বাংলাদেশ আর স্কটল্যান্ড শুরু থেকেই ছিল সমীকরণের বাইরে। মূল লড়াইটা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে। লড়াই এতটাই হাড্ডাহাড্ডি পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচের আগে সমীকরণ মেলাতে বসে তিন দলই। দক্ষিণ আফ্রিকা আর ইংল্যান্ডের ঝুলিতে তখন তিন জয়। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঝুলিতে জয় দুটি। ইংল্যান্ড জিতলে সেমিতে পা রাখবে দক্ষিণ আফ্রিকা আর ইংল্যান্ড। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতলে নেট রান রেটের মারপ্যাঁচে বাদ পড়ে যেতে পারে যে কেউ। এমন সমীকরণ মাথায় নিয়ে খেলতে নেমে ২ ওভার হাতে রেখে ৬ উইকেটের বিশাল জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নেট রান রেটে পিছিয়ে পড়ে ৩ জয় নিয়েও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় ইংলিশদের।
কাগজে–কলমে নারী বিশ্বকাপের সবচেয়ে শক্তিশালী দল অস্ট্রেলিয়া। ৮ বিশ্বকাপের ৬টি শিরোপাই তাদের পকেটে। আর বাকি দুটির মালিক ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেমিতে বাকি দুই প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট–বিশ্বে পরিচিত ‘চোকার’ হিসেবে। বড় মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খেলে হারানোর রেকর্ড তাদের ভূরি ভূরি। এই দোষে শুধু পুরুষ দল নয়, নারী দলও দুষ্ট। কিন্তু এবার যেন সব সমীকরণ ভাঙতে এসেছিল তারা। নারী বিশ্বকাপের দুই সেমিফাইনাল তাই হয়ে রইল দৃষ্টান্ত।
২০০৯ সালের প্রথম নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছাড়া প্রতিটি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে অজিরা। সেমিফাইনালে তাদের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিরোধ গড়বে, সেটাই ভাবতে পারেননি অনেকে। কিন্তু চমক দেখাল দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েরা। অস্ট্রেলিয়ার ছুড়ে দেওয়া ১৩৫ রানের লক্ষ্য হেসেখেলে ১৬ বল হাতে রেখেই জিতে নিল প্রোটিয়ারা। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের দগদগে ক্ষতটা একটু হলেও প্রলেপ দিতে পেরেছে প্রোটিয়ারা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো জায়গা করে নিল বিশ্বকাপ ফাইনালে।
নিউজিল্যান্ডের জয়টা অবশ্য এত সহজে আসেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে হয়েছে তাদের। প্রথমে ব্যাট করে কিউইরা করেছিল ১২৮ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটাররা তা ছুঁতে পারেননি। কিউই বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে তাদের ইনিংস থামে ১২০ রানে। ৮ রানের জয় নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নেয় কিউইরা।
ফাইনালে মুখোমুখি দুই দলেরই আছে ফাইনাল হারের দগদগে ক্ষত। গত বিশ্বকাপে নিজেদের মাটিতে পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হয়েছিল প্রোটিয়াদের। সেই দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই আছেন এবারের দলে। নিউজিল্যান্ডের স্মৃতিটা প্রায় এক যুগ পুরোনো। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ২ আসরের ফাইনালিস্ট ছিল কিউইরা। কিন্তু বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখা হয়নি। সেই দলের দুই তারকা সুজি বেটস আর সোফি ডেভিন এখনো খেলে যাচ্ছেন। ডেভিন এখন অধিনায়ক আর বেটসের অসাধারণ বোলিংয়ে ভর করেই সেমি জিতেছে কিউইরা। এক যুগের বেশি সময় ধরে হারানোর যে যন্ত্রণা তাদের কুরে কুরে খাচ্ছে, তা জয় করার শেষ সুযোগ এখনই।
অপেক্ষা শুধু দুবাইয়ে বল মাঠে গড়ানোর। কিউই না প্রোটিয়া—দেখার পালা কারা হয় নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।