ভবিষ্যতে ফুটবল হয়ে যাবে হ্যান্ডবল: রদ্রি

২০২৪ সালে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন স্পেন ও ম্যানচেস্টার সিটির মিডফিল্ডার রদ্রি। ২০২৩-২৪ মৌসুমে জিতেছেন ইউরো ২০২৪, প্রিমিয়ার লিগ, ক্লাব বিশ্বকাপ ও উয়েফা সুপার কাপ। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে এক মৌসুমে ক্যারিয়ারসেরা ৮ গোল করেছেন। যদিও এই পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁকে বিচার করলে ভুল হবে। কারণ, রদ্রি মাঝমাঠের খেলোয়াড়। সমসাময়িক অনেক তারকার মতো লাইমলাইটে থাকেন না তিনি। অনেকে হয়তো তাঁকে সুপারস্টার বলতেও দ্বিধা করবে, কিন্তু নিখুঁত ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দিয়েই ফুটবলের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগত পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়েছেন রদ্রি। খেলাধুলাবিষয়ক ব্রিটিশ ম্যাগাজিন ‘ফোরফোরটু’-এর জানুয়ারি সংখ্যার জন্য রদ্রির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অ্যাডাম ক্লেরি। কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরছেন কাজী আকাশ

সিটি মিডফিল্ডার রদ্রিএক্স

অ্যাডাম: ব্যালন ডি’অর জেতার জন্য অভিনন্দন! কেমন লাগছে?

রদ্রি: আমি খুবই গর্বিত। ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না এই আনন্দ। আমার পরিবার, কাছের মানুষ—সবাই এই অর্জনে খুশি। আমিও খুশি। একসঙ্গে দলগতভাবে খেলে আমরা অনেকগুলো ফাইনাল খেলেছি, বেশির ভাগই জিতেছি। এই কৃতিত্ব দলের সবার। আমাকে দলে সুযোগ দেওয়ার জন্য স্পেন জাতীয় দল ও ম্যানচেস্টার সিটিকে ধন্যবাদ।

ইউরোর সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন রদ্রি
এএফপি

অ্যাডাম: মাঠে আপনার ভূমিকা কী?

রদ্রি: আমার নির্দিষ্ট কোনো ভূমিকা নেই। মাঠের সবকিছু ঠিক রাখাই আমার কাজ। মাথা ঠান্ডা রেখে একসঙ্গে অনেক কিছু করতে হয়। এটা নিশ্চিত করতে হয় যে মাঠে সবকিছু ঠিকভাবে প্ল্যান অনুযায়ী চলছে। এটা নেতৃত্ব ও খেলাটা বোঝার বিষয়।

আরও পড়ুন

অ্যাডাম: ম্যানচেস্টার সিটিতে আপনি মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেন। কিন্তু ২০২২ সালের বিশ্বকাপে স্পেনের হয়ে সেন্টার ব্যাকেও খেলেছেন। কোনটা সামলানো বেশি কঠিন?

রদ্রি: জন স্টোনস, জোয়াও ক্যানসেলো বা ম্যানুয়েল অ্যাকেঞ্জিরা যখন এই দায়িত্ব পালন করেছেন, তখন এটা আরও কঠিন ছিল। মিডফিল্ডে আমরা ৩৬০ ডিগ্রি দেখে অভ্যস্ত। সব সময় খেলোয়াড়দের ঘিরে থাকি। রক্ষণ ও আক্রমণভাগ মাঠের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মিডফিল্ডে অনেক দিক সামলাতে হয়। কিন্তু সেন্টার ব্যাক খেলার সময় শুধু বিপক্ষের খেলোয়াড়কে আটকানোই মূল কাজ। সেন্টার ব্যাকে খেলা আমাদের সঙ্গীদের বলি, বল নিয়ে তোমার কাজটা করা খুব সহজ। শুধু আটকাত হবে। কিন্তু এই পজিশন খুব জটিল। আমি যখন বিশ্বকাপে এই পজিশনে খেলেছিলাম, তখন সেন্টার ব্যাকদের অনেক ভিডিও দেখেছি। কীভাবে তাঁরা বল আটকায়, ওদের আচরণ কেমন—সবকিছু। তবে আপনাকে শুধু সঠিক মানুষটিকে অনুসরণ করতে হবে, যে সত্যিই খেলাটা জানে।

আরও পড়ুন
এবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন রদ্রি
রয়টার্স

অ্যাডাম: মিডফিল্ডার হিসেবে আপনার এমন কোনো দিক আছে, যা আপনাকে আয়ত্ত করতে হয়েছে?

রদ্রি: সিটিতে আমার প্রথম বছরে আমি অনেক সামনে এগিয়ে যেতাম, লম্বা পাস দিতাম। মাঝেমধ্যে এগুলো ভালো, কিন্তু সব সময় নয়। কারণ, একই সময়ে প্রতিপক্ষও আপনাকে বোকা বানিয়ে বেরিয়ে গেলে গোল খেতে হবে। আমার প্রথম বছরে এই ব্যাপারে সত্যিই কোচদের থেকে অনেক বকা খেয়েছি। কোচেরা মাঠেই বলত, ‘তুমি কেন ওপরে উঠে গেলে? তোমাকে এখানেই সামলাতে হবে। নিজের জায়গায় থেকে খেলো।’ এই জিনিসটা আমি শিখেছি। ধীরে ধীরে বুঝেছি, কখন আমাকে ওপরে উঠতে হবে আর কখন জায়গায় থাকতে হবে। আমার জায়গা একদম দলের কেন্দ্রে। এখান থেকে বানানো বলেই বেশি গোল হয়। এটা নষ্ট হয়ে গেলে দলের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যায়। প্রতিপক্ষ তখন গোল দিতে মরিয়া হয়ে উঠবে। কিন্তু আমি যদি নিজের জায়গায় থাকি, তাহলে কাজটা করতে প্রতিপক্ষের জন্য কঠিন হবে।

অ্যাডাম: আপনার খেলার এমন কোনো অংশ আছে, যেখানে আরও উন্নতি প্রয়োজন?

রদ্রি: শান্ত থাকা, কম আবেগপ্রবণ হওয়া এবং প্রতিদিন আরও ভালো নেতৃত্ব দেওয়া। নেতৃত্বের দিকে আমি বেশি মনোযোগী। সব সময় গোল করতে সাহায্য করতে চাই এবং নিজেও গোল দিতে চাই। ক্লান্ত হয়ে গেলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করি, বেশি দৌড়াদৌড়ি না করে জায়গায় থেকে নিজের কাজটা করার চেষ্টা করি।

অ্যাডাম: ফুটবলের ভবিষ্যৎ কীভাবে দেখছেন?

রদ্রি: বিষয়টা নিয়ে আমি প্রায়ই আমার বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করি। আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে ফুটবল অনেকটা হ্যান্ডবলের মতো হয়ে যাবে। হ্যান্ডবলের নিয়মটা জানেন তো? খেলোয়াড়েরা প্রতিপক্ষকে নিয়ে চিন্তিত না। তারা কোনো খেলোয়াড়কে মার্ক বা টার্গেট করে খেলে না। শুধু নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে এবং বল এলে সেখান থেকেই অন্যজনের কাছে পাস করে দেয়। একটা জগাখিচুড়ি টাইপ অবস্থা। এখন আমরা দেখি, কোনো দল যদি মনে করে তারা প্রতিপক্ষের চেয়ে দুর্বল, তাহলে বক্স থেকে বেরই হয় না। পারলে ১১ জনই বক্সের মধ্যে ঢুকে বসে থাকে এবং আরও রক্ষণাত্মক খেলার চেষ্টা করে। এটা নতুন যুগের ফুটবল। তারপর হঠাৎ কাউন্টার অ্যাটাক করবে। হয়তো সফল হবে অথবা হবে না। আর যারা শক্তিশালী দল, তারা সারা মাঠে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকবে। আমি ভবিষ্যতের ফুটবল এভাবেই দেখছি। এমনকি দুটি বড় দলের মধ্যে খেলা হলেও একটা দল ডিফেন্ড করে এবং বক্সের মধ্যে ঢুকে খেলে।

আরও পড়ুন
সিটির মিডফিল্ডার রদ্রি
এএফপি

অ্যাডাম: প্রিমিয়ার লিগেও এখন আমরা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই খুব কম দেখি। খেলা শেষ হওয়ার আগেই ফলাফল…

রদ্রি: এ কারণেই আমি লিভারপুলের বিপক্ষে খেলাগুলো খুব উপভোগ করি। আমরা মনে করি, সামনে যে–ই আসুক না কেন পরোয়া করি না, ওদের শাস্তি (আক্রমণাত্মক খেলে গোল দেওয়া) দিতেই হবে। ওদের অনুভূতিও একই রকম। ওরা রক্ষণশীল মনোভাব নিয়ে খেলে না। ফলে দুর্দান্ত খেলা হয়।

অ্যাডাম: এমন কোনো দল আছে, যাদের বিপক্ষে খেলা আপনার জন্য কঠিন?

রদ্রি: কিছু দলের বিপক্ষে খেলা কঠিন। আমাদের জন্য যেমন টটেনহাম। ওই দলে যখন হ্যারি কেইন, সন ও লুকাস মৌরা ছিল, তখন ওদের সঙ্গে টক্কর দেওয়া কঠিন হতো। গত মৌসুমের আগে আমি কখনো ওদের বিপক্ষে জিতিনি। আমি মাঝেমধ্যে ভেবেছি, ওদের বিপক্ষে খেলা এত কঠিন কেন? কিন্তু মাঝেমধ্যে তো এমনটা হয়ই!

আরও পড়ুন