ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ: ম্যাচউইক ২১
রোনালদোর পাশে নাম লেখালেন দিয়ালো
প্রায় আট-নয় দিনের বিরতির পর আবার মাঠে গড়িয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। বিরতি শেষে কেমন ছিল দলগুলোর অবস্থা? নতুন কোচদের অধীনে মানিয়ে নিতে পেরেছে তো দুই দল? ২১তম সপ্তাহের খেলাগুলোর অবস্থা দেখে আসা যাক এক নজরে।
ব্রেন্টফোর্ড ২-২ ম্যানচেস্টার সিটি
ব্রেন্টফোর্ড: ইয়োয়ান উইসা ৮২’, ক্রিস্টিয়ান নরগার্ড ৯০+২’
সিটি: ফিল ফোডেন ৬৬’, ৭৮’
চোট, অফ ফর্ম—সব মিলিয়ে মৌসুমের শুরুটা ভুলে যাওয়ার মতো ছিল ফিল ফোডেনের জন্য। গত মৌসুমে সিটির ত্রাণকর্তা এই মৌসুমে হয়ে পড়েছিলেন ব্রাত্য। কিন্তু নতুন বছরে নতুন করে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন তিনি। ব্রেন্টফোর্ডের মাটিতে দুই গোল যেন সেটারই প্রমাণ। কিন্তু ফোডেনের দুই গোলও জয় নিতে পারেনি পেপ গার্দিওলাকে। শেষ ১০ মিনিটে অসাধারণ এক কামব্যাক দিয়েছে ব্রেন্টফোর্ডের ঘরের মাটিতে উইসা আর নরগার্ডের গোলে ১ পয়েন্ট অর্জন করেছে তাঁরা। টানা দুই জয়ের পর আবারও পুরোনো ফর্মে ফিরে গেল সিটিজেনরা।
চেলসি ২-২ বোর্নমাউথ
চেলসি: কোল পালমার ১৩’, রিস জেমস ৯০+৫’
বোর্নমাউথ: জাস্টিন ক্লুইভার্ট ৫০’ (পেনাল্টি), অ্যান্তোনি সেমেনিও ৬৮’
মৌসুমের মাঝপথে এসে হুট করেই যেন খেই হারিয়ে ফেলেছে চেলসি। শেষ চার ম্যাচে জয়শূন্য কোচ এনজো মারেসকা উদগ্রীব হয়েছিলেন একটা জয়ের জন্য। ঘরের মাঠে সেটাও ছিনিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে তাঁর শিষ্যরা। বরং অধিনায়ক রিস জেমসের শেষ মুহূর্তের গোলে হারের মুখ দেখতে হয়নি তাঁদের। যদিও নিজেদের মাটিতে প্রথমে এগিয়ে গিয়েছিল ব্লুজরা। তবে প্রথমার্ধের পর ফর্মে ফেরে বোর্নমাউথ, টানা দুই গোল দিয়ে এগিয়ে যায় তারা। অবশেষে নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে যোগ করে অতিরিক্ত ৫ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে অসাধারণ এক গোল করে চেলসিকে সমতায় ফেরান অধিয়ানক রিস জেমস। প্রায় দেড় বছর পর আবারও প্রিমিয়ার লিগে গোলের দেখা পেয়েছেন তিনি।
ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড বনাম ফুলহাম
ওয়েস্ট হাম: কার্লোস সোলার ৩১’, টমাস সুচেক ৩৩’, লুকাস পাকেতা ৬৭’
ফুলহাম: অ্যালেক্স আইওবি ৫১’, ৭৮’
নতুন কোচের অধীনে শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছে ওয়েস্ট হামের। আড়াই বছর পর ডাগ আউটে ফিরেই জয় পেয়েছেন ইংলিশ কোচ গ্রাহাম পটার। যদিও লন্ডন ডার্বিতে জয়টা সহজে আসেনি। ২ মিনিটে ২ গোল করে ঘরের মাটিতে দলকে লিড এনে দেন কার্লোস সোলার ও টমাস সুচেক। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয় আইওবি জাদু। ফুলহামের জার্সিতে অসাধারণ ফর্মে আছেন আইওবি। তার দুই গোলে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে ফুলহাম। কিন্তু এর মাঝেই কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন পাকেতা। শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলে এগিয়ে থেকে ম্যাচ শেষ করে ওয়েস্ট হাম।
নটিংহাম ফরেস্ট ১-১ লিভারপুল
ফরেস্ট: ক্রিস উড ৮’
লিভারপুল: দিয়োগো জোতা ৬৬’
‘এই লিভারপুলকে থামাবে কে?’ প্রশ্ন যখন সকলের মনে জমতে শুরু করেছিল, তখনই যেন ত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হল এই মৌসুমের চমক নটিংহাম ফরেস্ট। মৌসুমের শুরু থেকে একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছে ফরেস্ট। এই ম্যাচউইকে দেখা মিলল আরেকটি চমকের। লিভারপুলকে আটকে দিয়ে শুরু তাদের জয়রথে হানা দেননি নুনো এসপারিতো সান্তো, সঙ্গে নিজেদের জয়ের রাস্তাটাও সুপ্রশস্ত করেছেন। ম্যাচে শুরুতে এগিয়ে গিয়েছিল ফরেস্ট। ৮ মিনিটে দলকে এগিয়ে নেন ক্রিস উড। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুলকে সমতায় ফেরান দিয়োগো জোতা। পর্তুগিজ স্ট্রাইকারের ওপর ভর করে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় অল রেডদের।
এভারটন ০-১ অ্যাস্টন ভিলা
ভিলা: ওলি ওয়াটকিনস ৫১’
প্রায় এক যুগ পর ঘরে ফেরাটা স্মরণীয় করে রাখতে পারলেন না ডেভিড ময়েস। অনেকে ভেবেই রেখেছিলেন, ময়েসের আগমনে রাতারাতি বদলে যাবে এভারটন। কিন্তু তা হলো না। বরং নিজেদের মাটিতে ১-০ গোলে হেরে নিজের দ্বিতীয় যাত্রা শুরু করেছেন তিনি। এ নিয়ে শেষ ১১ ম্যাচের মধ্যে ৯ ম্যাচে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছে এভারটন। অ্যাস্টন ভিলাও যে খুব একটা ভালো খেলেছে, ব্যাপারটা তেমন নয়। বরং জয়ের জন্য ঠিক যতটুকু করা প্রয়োজন, তাদের কাছ থেকে এসেছে ততটাই। ওলি ওয়াটকিনসের একমাত্র গোলে জয় নিশ্চিত করেছে ভিলা। এই জয় দিয়ে টেবিলের সপ্তম অবস্থানে উঠে এল অ্যাস্টন ভিলা।
লেস্টার সিটি ০-২ ক্রিস্টাল প্যালেস
ক্রিস্টাল: জিন-ফিলিপ মাতেতা ৫২’, মার্ক গুয়েহি ৭৮’
যত দিন গড়াচ্ছে, সময়টা কঠিন হয়ে উঠছে লেস্টার কোচ রুড ফন নিস্টরলয়ের জন্য। যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখনও অবনমনের সারিতে যোগ দেয়নি তারা। কিন্তু নিস্টরলয় আসার পর থেকে ক্রমাগত পয়েন্ট হারাচ্ছে তারা। নিজেদের মাটিতে আরেকটি হারের দেখা পেল লেস্টার। এ নিয়ে টানা ছয় ম্যাচ প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচে হারের দেখা পেল তারা। কুয়াশাচ্ছন্ন কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি লেস্টার। যে কয়েকটা আক্রমণ করেছে, সেগুলোও ছিল বৃথা চেষ্টা। মাতেতা ও গুয়েহির গোলে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় লেস্টারকে। এই জয় দিয়ে টানা ছয় অ্যাওয়ে জয় পেল ক্রিস্টাল প্যালেস। অবনমনের সারি থেকে তারা এখন আট পয়েন্ট দূরে।
নিউক্যাসেল ইউনাইটেড ৩-০ উলভস
নিউক্যাসেল: অ্যালেজেন্দার ইসাক ৩৪’, ৫৭’, অ্যান্থনি গর্ডন ৭৪’
দূর্দান্ত নিউক্যাসেলকে থামাবে কে? এই প্রশ্নের উত্তর যেন কারো জানা নেই। বিশেষ করে ইসাক-গর্ডনের সঙ্গে কোচ এডি হাও; সব মিলিয়ে এই নিউক্যাসেলকে থামানো দায়। উলভসের বিপক্ষে দেখা মিলেছে সেই নিউক্যাসেলের। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ম্যাচে আধিপত্য ছিল নিউক্যাসেলের। বরাবরের মতো নিউক্যাসেলের হয়ে জোড়া গোল করেছেন ইসাক। এটি তার মৌসুমের ১৭ তম গোল। অন্যদিকে আরেকটি গোল করেছেন অ্যান্থনি গর্ডন। এই জয় দিয়ে চেলসিকে সরিয়ে শীর্ষ চারে প্রবেশ করল নিউক্যাসেল। অন্যদিকে ভিতর পেরেইরার অধীনে এখনো নিজেদের খুঁজে ফিরছে উলভস। যদিও অবনমনের সারিতে নেই, তবে এখনও শঙ্কা ঘুরপাক খাচ্ছে মাথার ওপরে।
আর্সেনাল ২-১ টটেনহাম হটস্পার্স
আর্সেনাল: ডমিনিক সোলাঙ্কে ৪০’ (আত্মঘাতী গোল), লিওনার্দো ট্রসার্ড ৪৪’
স্পার্স: সন হিউয়েন-মিন ২৫’
পরপর টানা দুই কাপে হার, মিকেল আর্তেতার সামনে এক এক করে সব সরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শিরোপার একমাত্র স্বপ্ন বেঁচে আছে শুধু প্রিমিয়ার লিগে। সেখানে নিয়মিতই হোঁচট খেয়ে পিছিয়ে পড়ছে তারা। এবার অবশ্য তেমনটা হয়নি। লন্ডন ডার্বিতে টটেনহামকে হারিয়ে নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছে তারা। সেটাও বুকায়ো সাকাকে ছাড়াই। তবে এই জয়ের পেছনে বড় অবদান ঘুরে ফিরে স্পার্সের। শুরুতে এগিয়েও গিয়েছিল তারা। কিন্তু ৪০ মিনিটে কর্নার থেকে দুর্দান্ত এক হেড করেন গাব্রিয়েল। সোলাঙ্কের গায়ে লেগে সেই বল জড়িয়ে যায় জালে। সমতায় ফেরে আর্সেনাল। এর ঠিক ৪ মিনিট পর গোল করে আর্সেনালকে এগিয়ে নেন লিওনার্দো ট্রসার্ড। চার মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় টটেনহাম। এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি তারা। ফলে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।
ইপসউইচ টাউন ০-২ ব্রাইটন
ব্রাইটন: মাউরো মিতোমা ৫৯’, জিওর্জিনিও রাটার ৮২’
একটা সময় চ্যাম্পিয়নস লিগের স্বপ্ন দেখছিল ব্রাইটন। ম্যানচেস্টার সিটিকে সরিয়ে শীর্ষ চারেও জায়গা করে নিয়েছিল তারা। এরপর থেকেই যেন ছন্দপতন। টানা আট ম্যাচ ধরে জয়শূন্য তারা। অবশেষে তারা জয়ের ধারায় ফিরল অবনমনের সারিতে লড়তে থাকা ইপসউইচের বিপক্ষে এসে। মিতোমা আর রিটারের গোলে সহজ জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে তারা। অন্যদিকে ইপসউইচের সামনে সুযোগ ছিল অবনমনের সারি থেকে উঠে আসার। আরেকটা হার দিয়ে সেটা সম্ভব হলো না তাদের।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ৩-১ সাউদাম্পটন
ইউনাইটেড: আমাদ দিয়ালো ৮২’, ৯০’, ৯০+৪’
সাউদাম্পটন: ম্যানুয়েল উগার্তে ৪৩’ (আত্মঘাতী গোল)
বর্তমানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সবচেয়ে বড় তারকা কে? এক বাক্যে সে প্রশ্নের উত্তর হবে আমাদ দিয়ালো। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী সিটি, লিভারপুলের বিপক্ষে ইউনাইটেডের ত্রাতা হয়ে এসেছেন তিনি। এবার ত্রাতা হয়ে এলেন টেবিলের তলানিতে থাকা দলটার বিপক্ষে। ১২ মিনিটের হ্যাটট্রিকে সাউদাম্পটনকে ছিটকে দিয়েছেন জয়ের পথ থেকে। ২০২২ সালের পর এই প্রথম কোনো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের খেলোয়াড় হ্যাটট্রিক করলেন। প্রথমেই আত্মঘাতী গোল হজম করে পিছিয়ে পরেছিল ইউনাইটেড। ৮২ মিনিটে ত্রাতা হয়ে এসে আরেকবার ইউনাইটেডকে বাঁচিয়ে দিলেন দিয়ালো। নিজেদের মাঠ থেকে জয় নিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন কোচ রুবেন আমোরিম।