ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ: ম্যাচউইক ২২
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে কেন ভাঙা হলো টিভি, আবারও হোঁচট আর্সেনালের
পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ চারে জায়গা পাওয়া নিয়ে চলছে বেশ জল্পনা-কল্পনা। কে কাকে পেছনে ফেলে উঠতে পারে, সে লড়াই চলছে সপ্তাহজুড়ে। ২২তম সপ্তাহটা কেমন গেল প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেটাই
নিউক্যাসল ইউনাইটেড ১-৪ বোর্নমাউথ
নিউক্যাসল: ব্রুনো গুইমারেস ২৫’
বোর্নমাউথ: জাস্টিন ক্লাইভার্ট ৬’, ৪৪’, ৯০+২’, মিলোস কিরকিজ ৯০+৬’
নিউক্যাসেল কোচ এডি হাও আগেই সতর্ক করেছিলেন– ৯ ম্যাচ জেতার পরও সবকিছু নিশ্চিত বলা সম্ভব নয়। বোর্নমাউথের কাউন্টার অ্যাটাকের কাছে ধরাশায়ী হতে পারে যে কেউ। সেটাই প্রমাণ হলো মাঠে। সপ্তাহের প্রথম ম্যাচে সেন্ট জেমস পার্কে এসে নিউক্যাসেলকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বোর্নমাউথ। এই হারের পেছনে সবচেয়ে বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছেন ডাচ স্ট্রাইকার জাস্টিন ক্লাইভার্ট। হ্যাটট্রিক করে একাই দলকে জয়ের প্রান্তে পৌছে দিয়েছেন তিনি। তবে বড় ক্রেডিটটা যাবে ইসাককে আটকে রাখায়। টানা আট ম্যাচে গোল পাওয়ার পর অবশেষে বোর্নমাউথের ডিফেন্ডারদের কাছে এসে আটকে গেলেন এই সুইডিশ স্ট্রাইকার। পুরো ম্যাচে মাত্র একটি শট অন টার্গেটে রাখতে পেরেছেন তিনি।
ব্রেন্টফোর্ড ০-২ লিভারপুল
লিভারপুল: ডারউইন নুনেজ ৯০+১’, ৯০+৩’
ত্রাতা বোধহয় একেই বলে। এক ডারউইন নুনেজকে নিয়ে অভিযোগের অভাব ছিল না লিভারপুল সমর্থকদের। একের পর এক সহজ গোল মিস করে সমর্থকদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই নুনেজই দলকে ফিরিয়ে আনলেন নিশ্চিত ড্র থেকে! ব্রেন্টফোর্ডের মাঠে কোনোভাবেই সুবিধা করতে পারছিল না অল রেডরা। সালাহ, গ্যাকপো পুরোপুরি নিজেদের ছায়ায় বন্দি ছিলেন। ৬৫ মিনিটে বদলি নেমে নুনেজও নিজের ছায়া হয়েই ছিলেন। তবে সেটা অতিরিক্ত সময়ের ঘন্টা বাজার আগ পর্যন্ত। যেই না অতিরিক্ত সময়ের নির্দেশনা এল, দানবে পরিণত হলেন নুনেজ। দুই মিনিটে দুই গোল করে দলকে পৌঁছে দিলেন জয়ের বন্দরে। এমন দানবীয় পারফরম্যান্স এল এমন সময় যখন দল তাঁকে সৌদিতে বিক্রি করার কথা ভাবছে। এমন খেলা দেখার পর নিশ্চয় নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হবেন দুই পক্ষই। এই জয় দিয়ে ১ ম্যাচ কম খেলে ৬ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে আছে অল রেডরা।
লেস্টার সিটি ০-২ ফুলহাম
ফুলহাম: এমিল স্মিথ রো ৪৮’, আদামা ট্রায়োরে ৬৮’
যত দিন গড়াচ্ছে সময়টা কঠিন হয়ে আসছে রুড ফন নিস্টরলয়ের জন্য। যতটা আশা নিয়ে তার ওপর দায়িত্ব দিয়েছিল লেস্টার সিটি, ততটাই হতাশ করেছেন তিনি। টানা হারে এখন অবনমনের সারিতে অবস্থান তাঁর। এই নিয়ে গত সাত ম্যাচে হারের দেখা পেল লেস্টার। নিস্টরলয়ও নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন অকপটে। ম্যাচের প্রথমার্ধে ডিফেন্স ধরে রাখলেও দ্বিতীয়ার্ধে আর ফুলহামের সঙ্গে পেরে উঠেনি তারা। প্রথম স্মিথ রো এগিয়ে নেন দলকে। এরপর যুক্ত হন আদামা ট্রায়োরে। দুইজনের গোলে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় লেস্টারকে।
ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড ০-২ ক্রিস্টাল প্যালেস
প্যালেস: ইয়ান-ফিলিপ মাতেতা ৪৮’, ৮৯’ (পেনাল্টি)
আড়াই বছর পর ডাগআউটে ফেরাটা যে খুব একটা সুখকর হবে না কোচ গ্রাহাম পটারের, সেটা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন অনেকেই। মৌসুমের মাঝপথে নতুন দায়িত্ব, সেটাও ভঙ্গুর ওয়েস্ট হামের। সব মিলিয়ে চাকরিটা বেশ শক্ত ছিল তাঁর জন্য। তবে হারটা যে ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে আসবে, সেটা হয়তো নিজেও ভাবেননি। প্যালেস না বলে ইয়ান-ফিলিপ মাতেতার কথা বললেই বোধকরি ভালো হয়। একাই ওয়েস্ট হাম ডিফেন্সে ত্রাস চালিয়েছেন তিনি। ডিফেন্ড করতে এতটা ব্যস্ত ছিল ওয়েস্ট হাম যে প্রতিপক্ষের জালে একটি শটও রাখতে পারেনি তারা। উলটো লাল কার্ডে দেখে পরিণত হয়েছে ১০ জনের দলে।
আর্সেনাল ২-২ অ্যাস্টন ভিলা
আর্সেনাল: গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি ৩৫’, কাই হাভার্টজ ৫৫’
ভিলা: ইউরি তিলেমানস ৬০’, ওলি ওয়াটকিনস ৬৮’
শীর্ষে যাওয়ার সুযোগ আসবে গানার্সদের কাছে, আর সেই সুযোগ হেলায় হারাবে না মিকেল আর্তেতার শিষ্যরা, এমনটা হতেই পারে না। এটা শুধু এই মৌসুমে নয়, গত কয়েক মৌসুম ধরে যেন প্রিমিয়ার লিগে চলছে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। প্রতিবার শীর্ষে যাওয়ার সুযোগটা হেলায় হারায় আর্সেনাল, এবারও তার বৈপরীত্য ঘটেনি। দুই গোলে এগিয়ে যেয়েও ড্র করতে হয়েছে তাদের। মার্তিনেল্লি-হাভার্টজের গোলে যখন জয়ের স্বপ্ন দেখতে আর্সেনাল, তখনই ১০ মিনিটের মধ্যে দুই গোল করে তাদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছে উনাই এমেরির শিষ্যরা। শেষ মুহূর্তে মিকেল মেরিনোর গোলটা বাতিল না হলে অবশ্য জয়ের দেখা পেত তারা। তবে যেটা হয়নি, সেটা নিয়ে ভাবার কোনো অবকাশ নেই। টেবিলে পরিবর্তন না এলেও লিভারপুলের সঙ্গে ব্যবধান কমানোর সুযোগটা হেলায় হারালো তারা।
এভারটন ৩-২ টটেনহাম হটস্পার্স
এভারটন: ডমিনিক কালভার্ট-লেউয়িন ১৩’, ইলিমান এনদিয়ায়ে ৩০’, আর্চি গ্রে ৪৫+৭’
স্পার্স: দেহান কুলুসেভস্কি ৭৭’, রিচার্লিসন ৯০+২’
লিগে অবস্থান ১৫, অবনমনের সারি থেকে মাত্র ৮ পয়েন্ট দূরে। অজি কোচ আগ্নে পোস্তেকোগলু যেন ঘুমের মধ্যেও বিদায়ের ঘন্টা শুনতে পাচ্ছেন। এই নিয়ে টানা ছয় প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচ ধরে জয়শূণ্য তারা। শেষ জয় এসেছিল এক মাস আগে। সবমিলিয়ে তথৈবচ অবস্থায় চলছে স্পার্সের। অন্যদিকে প্রশংসা করতে হয় এভারটন কোচ ডেভিড ময়েসের। ম্যাচটা পারতপক্ষে প্রথমার্ধেই শেষ করে ফেলেছেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধে অসাধারণ খেলেও তাই তিন গোলের লিড উৎরে উঠতে পারেনি স্পার্স। দ্বিতীয়বারের মতো এভারটনের দায়িত্ব নেওয়া ময়েসের এটাই ছিল প্রথম জয়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ১-৩ ব্রাইটন
ইউনাইটেড: ব্রুনো ফার্নান্দেস ২৩’ (পেনাল্টি)
ব্রাইটন: ইয়ানকুবা মিন্তে ৫’, কাওরো মিতোমা ৬০’, জর্জিনিও রাটার ৭৬’
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফর্ম যেন ঝুলছে একটা পেন্ডুলামের ওপরে। এক ম্যাচ ভালো যায় তো, আরেক ম্যাচ খারাপ। গত ম্যাচে আমাদ দিয়ালোয় ভর করে জয়ের দেখা পেয়েছিল ইউনাইটেড। এই ম্যাচে একদম শুরু থেকে নেমেও কিছু করতে পারেননি তিনি। বরং গোলরক্ষক ওনানার ভুল আরেকটি হার উপহার পেয়েছে রেড ডেভিলরা। এ নিয়ে ১৫ ম্যাচে সপ্তম হারের দেখা পেল ইউনাইটেড। শুরুতে এগিয়ে গিয়েছিল ব্রাইটন, পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান ব্রুনো ফার্নান্দেস। সেটুকুই ছিল পুরো ম্যাচে ইউনাইটেডের হাইলাইটস। বাজে পজিশনিংয়ের কারণে দ্বিতীয় গোল হজম করেন ওনানা। আর তৃতীয় গোল এসেছে তাঁর হাত থেকে ফসকে যাওয়া বলে। এমন হার সহজে মেনে নিতে পারেননি কোচ রুবেন আমোরিম। রাগে ক্ষোভে ড্রেসিং রুমে তুলকালাম চালিয়েছেন তিনি। ফলশ্রুতিতে ভেঙে ফেলেছেন ড্রেসিং রুমের টিভি। দেখা যাক ভাঙা টিভি ভাঙা ইউনাইটেডে প্রাণের সঞ্চনার করতে পারে কী না?
নটিংহাম ফরেস্ট ৩-২ সাউদাম্পটন
ফরেস্ট: এলিয়ট অ্যান্ডারসন ১১’, ক্যালাম হাডসন-ওডোই ২৮’, ক্রিস উড ৪১’
সাউদাম্পটন: জান বেডনারেক ৬০’, পল ওনুয়াচু ৯০+১’
শিরোপার দৌড় থেকে এখনই যে ইস্তফা দিচ্ছে না নটিংহাম ফরেস্ট তার প্রমাণ যেন এই ম্যাচটা। যত দ্রুত জয় নিশ্চিত করা সম্ভব, তাতই স্বাচ্ছন্দ্য তাদের। ম্যাচের প্রথমার্ধেই তিন গোলের লিড নিয়ে নেন নুনো এস্পারিতো সান্তোর শিষ্যরা। সেই লিড আর ছুয়ে দেখতে পারেনি সাউদাম্পটন। দ্বিতীয়ার্ধে কামব্যাক করার চেষ্টা করলেও সেটা যথেষ্ট ছিল না পয়েন্ট বের করার জন্য। ২ গোল হজম করলেও ঠিকই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গিয়েছে ফরেস্ট। এই জয় দিয়ে ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নটিংহাম। লিভারপুলের সঙ্গে তাদের পার্থক্য মাত্র ৬ পয়েন্টের।
ইপসউইচ টাউন ০-৬ ম্যানচেস্টার সিটি
সিটি: ফিল ফোডেন ২৭’, ৪২’, মাতেও কোভাচিচ ৩০’, জেরেমি ডকু ৪৯’, আর্লিং হল্যান্ড ৫৭’, জেমস ম্যাকএটি ৬৯’
ফিল ফোডেন যেন সিটির পরশপাথর। তার সঙ্গে সঙ্গে যেন জয়ের ধারায় ফিরতে শুরু করেছে সিটিজেনরা। মৌসুমের শুরু থেকে চোট আর অফ ফর্মের কারণে একাদশের বাইরে থাকতে হয়েছে তাকে। কিন্তু যখন থেকে ফিরলেন, একেবারে নিজের মতো করে ফিরলেন। গত তিন প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচে ৫ গোল করেছেন তিনি। তার ছোঁয়াতে যেন আপাদমস্তক বদলে গিয়েছে সিটি। যদিও প্রতিপক্ষ হিসেবে ইপসউইচ খুব একটা শক্ত নয়, তাদের মাটিতে গিয়ে ৬ গোল দেওয়া সেটারই যেন জলজ্যান্ত প্রমাণ। লম্বা সময় হাসপাতালে কাটিয়ে ফিরে এসেছেন মাতেও কোভাচিচ। ফিরেই পেয়েছেন গোলের দেখা।
চেলসি ৩-১ উলভস
চেলসি: তসিন আদারাবিওয়ো ২৪’, মার্ক কুকুরেলা ৬০’, ননি মাদুয়েকে ৬৫’
উলভস: ম্যাট ডোহার্টি ৪৫+৫’
মৌসুমের মাঝপথে এসে একের পর এক হোঁচট খেয়ে চলেছে এনজো মারেসকার শিষ্যরা। একের পর এক হার এবং ড্র তাদেরকে ছিটকে দিয়েছে শিরোপার দৌড় থেকে। চার ম্যাচ জয়শূণ্য থাকার পর অবশেষে উলভসের বিপক্ষে এসে গ্যাড়াকল থেকে মুক্তি মিলল ব্লুজদের। প্রথম থেকেই ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করেছে চেলসি। বিশেষ করে মার্ক কুকুরেলার কথা বলতে হবে আলাদা করে। প্রতিটি আক্রমণেই ছিল তাঁর বিশেষ অবদান, পেয়েছেন গোলও। ফলে জয়টা সহজ হয়ে গিয়েছে ব্লুজদের জন্য।