যেভাবে ভারতকে হারাল বাংলাদেশ

প্রতিপক্ষ যখন ভারত, তখন উত্তেজনা চড়ে যায় সপ্তম আসমানে। হোক না সেটা ক্রিকেট, ফুটবল কিংবা অন্য যেকোনো খেলা। প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিবেশি ভারতকে পেলে পুরো বাংলাদেশ যেন অপেক্ষা থাকে কিছু একটা করে দেখানোর। আর সেটা যদি হয় ফাইনাল, তবে তো আর কথাই নেই। অনূর্ধ্ব–১৯ এশিয়া কাপের ফাইনাল ছিল সেরকমই এক লক্ষ্য। একদিকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপে জেতার জন্য প্রস্তুত টাইগাররা। অন্যদিকে কখনও এশিয়া কাপ ফাইনাল না হারা ভারত। দুবাইয়ে সে লড়াইটা হেসে খেলে জিতে নিল বাংলাদেশ। টানা দ্বিতীয়বারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জিতল বাংলাদেশ।

টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলিং যতটা ঝলসে উঠেছে, ব্যাটিং ততটা গর্জে ওঠেনি। শুরুটা হয়েছিল আফগানিস্তানকে হারিয়ে। টাইগার্সদের ২২৮ রানের ছুঁড়ে দেওয়া টার্গেটে অল আউট হয়েছে ১৮৩ রানে। নেপালকে প্রথম ইনিংসে আটকে দিয়েছে ১৪১ রানে। সেই রান তাড়া করতেও ৫ উইকেট হারাতে হয়েছে যুবাদের। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। লঙ্কানদের ২২৯ রানের টার্গেটে হোঁচট খেয়েছে টাইগাররা। ৭ রান বাকি থাকতে ২২১ রানে অল আউট হয়ে ডাগ আউটে ফিরতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। ১১ ওভারে ৫৭ রান, হাতে ৭ উইকেট। সমীকরণটা যখন এমন, তখন ৪৯ রানে করতে গিয়ে হারাতে হয়েছিল ৭ উইকেট।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারটা বাংলাদেশের জন্য ছিল শাপে বর। গ্রুপে দ্বিতীয় হয়ে সেমিফাইনালে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছিল অপরাজিত পাকিস্তানকে। অথচ পাকিস্তানের ব্যাটিং স্তম্ভ মুহূর্তেই ধ্বসে পড়ল বাংলাদেশী পেসারদের সামনে। ইকবাল হোসেইন ইমনের ৪ উইকেটে পাকিস্তান আটকে গেল ১১৬ রানে। এর মধ্যে আবার ১৭ রানই ছিল অতিরিক্ত! সেই রান পার করতে মাত্র ২২ ওভার নিয়েছিল বাংলাদেশের যুবারা।

দুবাইয়ে দর্শকদের সঙ্গে উদযাপনে মাতোয়ারা বাংলাদেশ দল
ছবি: এক্স

ফাইনালে যুবাদের জন্য কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। বিশেষ করে প্রতিপক্ষ যখন ভারত। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি রান এসেছে তাদের ব্যাট থেকে। যেভাবে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছে, সেভাবে রান রেটও। জাপানের বিপক্ষে করেছে ৩৩৯ রান। সেমি ফাইনালে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ১৭৪ রানের টার্গেট উৎরে গিয়েছে মাত্র ২১ ওভারে। সদ্য আইপিএলে ডাক পাওয়া ১৩ বছর বয়সী তারকা বৈভব সূর্যবংশী আছেন দূর্দান্ত ফর্মে। সঙ্গে মোহাম্মদ আমান আর আয়ুশ মাত্রে। ভারতের সামনে বড় স্কোর দাঁড় করাতে না পারলে লড়াইটা বড্ড কঠিন হয়ে যাবে বোলারদের জন্য।

আরও পড়ুন

কিন্তু সেটা আর হলো কোথায়? ভারতের দূর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল ১৯৯ রানে। সেটাও এসেছে নবম উইকেটে ফরিদ হাসান ও আল ফাহাদের ৩১ রানের জুটির কল্যাণে। মিডল অর্ডারে শিহাব জেমসের ৪০ আর রিজান হোসেনের ৪৭ রানে ভর করে স্করটা দাঁড়ায় ১৯৮। এরপরের পথটুকু পাড়ি দেওয়া দায়িত্ব ছিল বোলারদের ওপর। ভারতের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সামনে নার্ভ হারাননি, বরং পরীক্ষাটা উৎরে গিয়েছেন অনায়াসে।

দ্বিতীয় ওভারে আয়ুশ মাত্রেকে ফিরিয়ে দলকে এগিয়ে নেন আল ফাহাদ। পঞ্চম ওভারে বৈভব সূর্যবংশীকে প্যাভিলিয়নে ফেরান মারুফ মৃধা। এরপর সামনে আসেন ইকবাল হাসান ইমন আর অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিম। দুইজন মিলে একে একে তুলে নিতে থাকেন ভারতীয় ব্যাটারদের। ৯২ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান ভারতের ৭ জন ব্যাটার। বাকি তিন উইকেট নিয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে ভারত। কিন্তু সেটাও থেমে গিয়েছে ১৩৯ রানে। ৫৯ রানের বিশাল জয় নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।  ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ইমন।

ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় ও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার হাতে ইকবাল হোসেইন ইমন।
ছবি: এক্স

এবারের এশিয়া কাপ জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান বাংলাদেশি পেসারদের। বিশেষ করে ইকবাল হোসেইন ইমন আর আল ফাহাদ। পুরো টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী দুজনে। ১৩ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন ইমন। আর ফাহাদের ঝুলিতে রয়েছে ১২ উইকেট! আর ব্যাট হাতে পুরো টুর্নামেন্টে দ্যুতি ছড়িয়েছেন অধিনায়ক আজিজুল হাকিম তামিম। ৫ ম্যাচে ৮১ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ২৪০ রান। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। ব্যাটের সঙ্গে সঙ্গে বল হাতেও জাদু দেখিয়েছেন, ফাইনালের তিন উইকেটসহ মোট নিয়েছেন ৪ উইকেট।

যুব এশিয়া কাপে নয়বার ফাইনাল খেলছে ভারত। টুর্নামেন্টে ফেভারিটও ছিল ভারতই। কিন্তু এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়নের ট্রফিতে থাকল না তাদের নাম। শিরোপা হাতে বাংলার যুবাদের সঙ্গে উৎসবে মাতোয়ারা হয়েছে পুরো দেশবাসী। যুবাদের সেই উদযাপন ছড়িয়ে পড়ুক বাংলাদেশের সিনিয়র দলেও।

আরও পড়ুন