২০ বছর বয়সের মেসির সঙ্গে কে সেই ছোট্ট শিশু

ওপরের ছবিটা হয়তো তোমাদের চোখে পড়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে ছবিটা বিশ্বব্যাপী নানা পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বারবার এসেছে ঘুরেফিরে। ছবিতে আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসিকে তো চেনাই যাচ্ছে। যদিও এখানে মেসির চুল অনেক বড়। চেহারায় নেই বয়সের ছাপ। ২০ বছর বয়সের ছবি বলে কথা। কিন্তু তিনি কাকে এভাবে গোসল করাচ্ছিলেন?

শুনতে অবাক লাগতে পারে। কিন্তু সত্যিই ওই ছোট্ট শিশুটি আজকের স্পেনের ফরোয়ার্ড লামিনে ইয়ামাল। ১০ জুলাই রাতে সেমিফাইনালে ফ্রান্সকে বিদায় করে দেওয়ার কান্ডারি এই তরুণ তারকা। চলতি ইউরো মৌসুমে সবচেয়ে ছোট খেলোয়াড় এই ইয়ামাল। বয়স সবে ১৬ বছর। বর্তমানে আছেন দুর্দান্ত ফর্মে। ১৫ জুলাই নেদারল্যান্ডস বা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনাল খেলার জন্য মুখিয়ে আছেন তিনি।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, একই দিনে মেসিও খেলবেন ফাইনাল। তবে সেটা কোপা আমেরিকায়। একই দিনে মেসিও ১ গোল করে আর্জেন্টিনাকে ফাইনাল তুলেছেন। হতে পারে আবার একই দিনে, অর্থাৎ ১৫ জুলাই ছবির এই দুই কান্ডারি দুটি কাপ উঁচিয়ে ধরতে পারবেন।

হয়তো ভাবছো, ২০ বছর বয়সের মেসি কেন ইয়ামালকে এভাবে গোসল করাচ্ছিলেন? তাহলে কি ইয়ামাল ও মেসি আত্মীয়? আসলে তা নয়। এখানে একটা গল্প আছে। গল্পটা আগে বলি।

মেসি তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন স্পেনের বার্সেলোনায়। সেই ক্লাবেই তো তিনি খেলে কতশত রেকর্ডের মালিক হয়েছেন। ঘটনাটা ২০০৭ সালের। মেসিও তখন তরুণ। এত নামডাক তখনো শুরু হয়নি তাঁর। তবে ভাবিষ্যতে যে একজন তারকা খেলোয়াড় হবেন, তা জানান দিয়েছিলেন ওই বয়সেই। সে যা–ই হোক, তখন মানে ২০০৭ সালে একটি চ্যারিটিতে সাহায্য করার জন্য পুরো বার্সেলোনা দল এগিয়ে এসেছিল। যেহেতু মেসি তখন বার্সেলোনার হয়ে খেলেন, তাই তিনিও গিয়েছিলেন সাহায্য করতে। খেলোয়াড়দের কাজ হচ্ছে, স্থানীয় শিশুদের সঙ্গে ছবি তুলবেন। তারপর সেই ছবি দিয়ে তৈরি করা হবে ক্যালেন্ডার। এভাবেই একটি চ্যারিটিকে স্বেচ্ছায় সাহায্য করবে সম্পূর্ণ বার্সেলোনা দল।

আরও পড়ুন

যে এলাকায় বাচ্চাদের সঙ্গে মেসিরা ছবি তুলবেন, সেখানে ছিল ইয়ামালের পরিবার। ইউনিসেফ অনেক পরিবার নিয়ে একটা লটারির আয়োজন করেছিল। সেই লটারিতে জিতেছিল ইয়ামালের পরিবার। আর কাকতালীয়ভাবেই ইয়ামালের সঙ্গে ছবির মডেল হন মেসি।

স্পেন উইঙ্গার লামিনে ইয়ামাল। স্পেন ফাইনালে ওঠার পর তার উল্লাস
এএফপি

ছবিটি তুলেছেন ফটোগ্রাফার জোয়ান মনফোর্ট। তিনি জানিয়েছেন, বাচ্চাদের সঙ্গে মডেল হওয়ার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলেন না মেসি। কারণ, তিনি খুব লাজুক স্বভাবের মানুষ। বাচ্চাটাকে কীভাবে ধরতে হবে, তা–ই বুঝতে পারছিলেন না। তারপরও তিনি চেষ্টা করে পরিস্থিতি সামলে নিয়েছিলেন।

সর্বশেষ প্রশ্ন, ছবিটি এত দিন পর কীভাবে ভাইরাল হলো? আসলে ছবিটি প্রথমে সবার সামনে আনেন ইয়ামালের বাবা। তিনি তাঁর ইনস্টাগ্রামে একটি ছবি শেয়ার করেন। তারপর ইয়ামালের বাবার কাছ থেকে একই সময়ের আরেকটি ছবি চেয়ে নেন সাংবাদিক ফ্যাব্রিজিও রোমানো। তাঁর কাছ থেকেই ছবিটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

মেসির কোলে ছোট্ট ইয়ামাল
ছবি: এক্স

মেসি বার্সেলোনা ছাড়লেও লামিনে ইয়ামাল যোগ দিয়েছেন ক্লাবটিতে। ২০২৩ সাল থেকে বার্সেলোনার হয়ে মোট ৫৪টি ম্যাচ খেলেছেন। স্পেনের হয়ে দলে সুযোগ পেয়েছেন ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। স্পেনের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে গোল করার রেকর্ডটিও এখন ইয়ামালের। ভবিষ্যতে লামিনে কী করতে পারেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়। ২০ বছর বয়সের মেসির সঙ্গে তোলা ছবির ছোট্ট শিশুটি কি মেসির মতো ফুটবলের নায়ক হতে পারবেন?

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, স্কাই নিউজ ডটকম ও বিবিসি

আরও পড়ুন