একটা ম্যাচ আমার জীবন বদলে দিয়েছে—গ্লেন ম্যাক্সওয়েল

গ্লেন ম্যাক্সওয়েলছবি: এএফপি

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের অলরাউন্ডার। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও অফ স্পিন বোলার। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের জন্য ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে বেশি জনপ্রিয় তিনি। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে মাত্র ৪০ বলে সেঞ্চুরি করে গড়েছেন বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। ২০২৩ সাল ছিল তাঁর জন্য বেশ ঘটনাবহুল। প্রায় ১২ মাস ইনজুরির কারণে ছিলেন মাঠের বাইরে। তারপর মাঠে ফিরে দারুণ খেলেছেন বিশ্বকাপে। চাপের মুখে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তাঁর অপরাজিত ২০১ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংসটি সর্বকালের অন্যতম সেরা ওয়ানডে ইনিংস। চলতি বছর বের হয়েছে তাঁর নতুন বই ‘দ্য শোম্যান’। এসব নিয়েই সম্প্রতি কথা বলেছেন মাসিক উইজডেন ক্রিকেট ম্যাগাজিনের সঙ্গে। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জো হারম্যান। কিশোর আলোর পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরছেন কাজী আকাশ

ইনজুরিতে থাকা অবস্থায় ভেবেছিলেন, মাঠে ফিরেই এমন একটা বিধ্বংসী ইনিংস খেলবেন?

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল: ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছর চোটের কারণে আমি অনেক দিন মাঠের বাইরে ছিলাম। পায়ের লিগামেন্টের জয়েন্ট ছিড়ে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম কিছু দিনের মধ্যে পা ঠিক হয়ে যাবে। আবার আগের মতো চলতে পারব। কিন্তু এই ইনজুরির জন্য যে আমাকে এতদিন বিশ্রামে থাকতে হবে, তা ভাবতে পারিনি। প্রায় ১ বছর লেগে গেল সুস্থ হতে।

ওই সময়টা আপনার কেমন কেটেছে?

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল: একটা আবেগময় সময় কেটেছে। নিজের সঙ্গেই যেন নিজে লড়াই করেছি। এক ধাপ এগোলে দুই ধাপ পিছিয়েছি। যখনই ভেবেছি, আমি শতভাগ সুস্থ হয়ে উঠব, তখন পায়ের গোড়ালি নিয়ে সমস্যায় পড়েছি। বার বার আবেগের সঙ্গে খেলতে হয়েছে আমাকে। ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছি। তবে আমি যে এই লড়াই সম্পন্ন করে বিশ্বকাপের দলে জায়গা করতে পেরেছি, এর জন্য আমি খুব খুশি।

আরও পড়ুন

২০২৩ বিশ্বকাপের কথা বলুন।

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল: খুব আঁটসাঁট ছিল টুর্নামেন্টের সূচি। ৫০ ওভারের ক্রিকেট সবচেয়ে কঠোর পরিশ্রমের ফরম্যাট। অনেক বেশি শারীরিক পরিশ্রম করতে হয়। টানা ৫০ ওভার মাঠে দৌড়ানোর পর আবার ব্যাট করতে হয়। আমি যখন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪০ বলে সেঞ্চুরি করে সবচেয়ে দ্রুততম শতকের রেকর্ড করলাম, তখনো আমি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলাম না। ওই ম্যাচের কয়েকদিন পরে আমি একটা গলফ কোর্টের পেছনে ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম। তখন মনে হয়েছিল, খারাপ সময় যেন আমার পিছুই ছাড়ছিল না। আমার সৌভাগ্য যে তখন আমার পরিবার সঙ্গে ছিল। আমার স্ত্রী ও সন্তান নেদারল্যান্ডস ম্যাচের এক বা দুই রাত আগে এসেছিল। সেখানে তাদের পেয়ে আমি মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে পেরেছিলাম। আমি জানি না, তারা না থাকলে আমার এই টুর্নামেন্ট কেমন কাটত।

২০২৩ সালের নভেম্বরে ভারতে বিশ্বকাপ জিতেছেন ম্যাক্সওয়েল
আইসিসি

আফগানিস্থানের বিপক্ষে আপনার বিধ্বংসী ম্যাচের কোনো স্মৃতি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন?

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল: এই ম্যাচ আমার জীবন বদলে দিয়েছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১২৮ বলে অপরাজিত ২০১* রানের (২১টি চার ও ১০টি ছয়) ইনিংসটি আমার জীবনের অন্যতম সেরা ম্যাচ হয়ে থাকবে। আমি কয়েকবার ওটার হাইলাইটস দেখেছি। যাঁরা গত ১৫ বছর আমাকে অনুসরণ করছেন, তাঁদের এমন একটা ইনিংস উপহার দিতে পেরে আমি গর্বিত। কয়েক দিন আগে এই ম্যাচের একবছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে অনেকে সেই ম্যাচে আমার খেলা প্রতিটি বল দেখেছেন। অনেকে আমাকে এ ব্যাপারে মেসেজ দিয়ে জানিয়েছেন। এই গল্পগুলো আসলেই আমার কাছে অনেক স্পেশাল।

আরও পড়ুন

এই ম্যাচ নিয়ে আপনার পরিবারের প্রতিক্রিয়া কী?

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল: বাবা ম্যাচটি লাইভ দেখেতে পারেননি। ওইদিন অস্ট্রেলিয়ায় কী একটা সমস্যার কারণে লাখ লাখ মানুষ অনলাইনে ঢুকতে পারেনি। বাবাও তাঁদের মধ্যে একজন। তবে আমার মা ছিলেন বোনের বাড়ি। তিনি সেখানে থেকে মোবাইলে ম্যাচটি দেখেছিলেন। কিন্তু বাবাকে বলতে সাহস পাননি। কারণ, বাবা তো চাইলেও ম্যাচটা লাইভ দেখতে পারবেন না। মা শুধু অপেক্ষা করছিলেন কখন ম্যাচ শেষ হয়। ম্যাচ শেষ হলেই বাবাকে ফোন দিয়ে রিপ্লে দেখতে বলেন। অনূর্ধ্ব-১২ থেকে বাবা আমার কোনো ম্যাচ মিস করেননি। যখন আমি কাউন্টিতে দ্বিতীয় বিভাগে খেলতাম, বাবা তখনো সারা রাত জেগে আমার খেলা দেখতেন।

দেশে ফিরে দর্শকদের কেমন সাড়া পেয়েছেন?

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল: দেশে ফিরে অস্ট্রেলিয়ার প্রতি অগাধ ভালোবাসা অনুভব করলাম, যা আমি সম্ভবত আগে কখনো অনুভব করিনি। এ জন্য আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। বাকি ক্যারিয়ারে যা-ই হোক না কেন, অনেক মানুষের ওপর আমি প্রভাব ফেলেছি।

এপাশে রোহিত, ওপাশে উল্লাস ম্যাক্সওয়েল-লাবুশেনের
রয়টার্স

বিশ্বকাপ জয় নিয়ে কিছু বলতে চান?

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল: অনেক পরিশ্রম আর ডেডিকেশনে কেটেছে ওই বছর। নিজেদের কন্ডিশনে ফেবারিটদের হারিয়ে বিশ্বকাপ নিয়ে আসা আমার সারা জীবন মনে থাকবে।

আরও পড়ুন