বিশ্বকাপের সেরা মুহূর্ত
শচীনকে টপকে কোহলির ৫০তম শতক
এক দিনের আন্তর্জাতিকে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ শতকের মালিক এখন বিরাট কোহলি। এর আগে এই সিংহাসনে ছিলেন ভারতীয় কিংবদন্তি ব্যাটার শচীন টেন্ডুলকার। ৪৯টি সেঞ্চুরি নিয়ে তিনি ছিলেন সবার ওপরে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম সেমিফাইনালে খেলতে নেমে শচীনের সেই রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন কোহলি। সেঞ্চুরি করার পর অবশ্য গ্যালারিতে থাকা শচীনের দিকে ফিরে মাথা নুইয়ে কুর্নিশ করেছেন ডানহাতি ভারতীয় ব্যাটার।
এখানেই শেষ নয়। এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডও ছিল শচীনের দখলে। ২০০৩ বিশ্বকাপে তিনি একাই করেছিলেন ৬৭৩ রান। কিন্তু ২০২৩ বিশ্বকাপে বিরাট কোহলি সেই রান টপকে চলে গেছেন ৭৬৫ রানে। ১১ ইনিংসে ৯৫.৬২ গড়ে, ৩ শতক ও ৬ অর্ধশতকে তিনি এই রান করেন। হয়েছেন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়। অধরা রয়ে গেছে শুধু বিশ্বকাপটাই।
ম্যাক্সওয়েলের পাগলামি
৭ নভেম্বর, বিশ্বকাপের ৩৯তম ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। দুই দলের জন্যই মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। প্রথম দুই ম্যাচ হারা অস্ট্রেলিয়ার সেমিফাইনাল তখনো নিশ্চিত নয়। অন্যদিকে আফগানিস্তানের সামনে সেমিফাইনালের সুযোগ। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না, এটাই স্বাভাবিক। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে আফগানরা স্কোরবোর্ডে তোলে ২৯১ রান। অজিরা ২৯২ রানের টার্গেট যে হেসে খেলে জিতে যাবে, এমনটি হয়তো কেউ ভাবেনি। কিন্তু তাঁদের পক্ষে এই রান তাড়া করে জেতা অসম্ভবও নয়।
ক্রিকেটকে বলা হয় অনিশ্চয়তার খেলা। কখন যে কী হবে, তা কেউ জানে না। এ ম্যাচ তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কোনোভাবেই মাঠে থিতু হতে পারছিলেন না অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা। আফগানদের বোলিং–তোপে মাত্র ৯১ রানে চলে যায় তাদের ৭ উইকেট। ক্রিজে তখন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। আফগানদের জয় প্রায় নিশ্চিত। শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু ম্যাক্সওয়েলের মনে ছিল অন্য কিছু। কামিন্সকে নিয়েই গড়লেন ইতিহাস। ব্যাটিংয়ের নিয়মনীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খেললেন ২০১* রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন তিনি। বিশ্ববাসী দেখল, এক অন্যতম সেরা ম্যাচ—হয়তো বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা ইনিংস।
ম্যাথুসের টাইমড আউট
৬ নভেম্বর। বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যাট করছে শ্রীলঙ্কা। ২৫তম ওভারে বল হাতে আসেন সাকিব আল হাসান। ওই ওভাবের দ্বিতীয় বলে মাহামুদউল্লাহর হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন লঙ্কান ব্যাটসম্যান সাদিরা সামারাবিক্রমা। এরপরই নামার কথা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের। তিনি নামলেন একটু ধীরগতিতে। ক্রিজে এসে সাকিবের তৃতীয় বলটা মোকাবিলা করবেন, এমন সময় মনে হলো, হেলমেটটা একটু টাইট করা দরকার। হেলমেট টাইট করতে গিয়ে বাধল বিপত্তি। হেলমেটের ফিতাই ছিঁড়ে গেল। সাজঘরের দিকে তাকিয়ে ইশারা দিলেন নতুন হেলমেট নিয়ে আসার জন্য। আনা হলো নতুন হেলমেট। কিন্তু একি! সাকিব বল না করে আম্পায়ারের সঙ্গে কী নিয়ে কথা বলছেন। কিছুক্ষণ পর আম্পায়ার ইরাসমাস ম্যাথুসকে জানালেন, তিনি আউট, টাইমড আউট।
ইতিহাসে এটাই টাইমড আউটের প্রথম ঘটনা। তাই সবার বুঝে উঠতে একটু সময় লাগল। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পরবর্তী দুই মিনিটের মধ্যে নতুন ব্যাটসম্যানকে ক্রিজে এসে ব্যাটিংয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যদি এই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাটসম্যান প্রস্তুত হতে ব্যর্থ হন আর প্রতিপক্ষ যদি আম্পায়ারের কাছে আবেদন জানায়, তাহলে ওই ব্যাটসম্যানকে ‘টাইমড আউট’ ঘোষণা করা হবে।
সে হিসাবে ম্যাথুস আউটই। কয়েকবার অবশ্য সাকিবের কাছে গিয়েছিলেন ম্যাথুস যেন সাকিব আবেদন ফিরিয়ে নেন। কিন্তু এ রকম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সাকিব সেটা চাননি। কারণ, ওই ম্যাচ হারলে ২০২৪ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে ছিটকে পড়ত বাংলাদেশ। যেমনটা হয়েছে এখন শ্রীলঙ্কার ভাগ্যে।
আফগানদের উত্থান
আফগানরা বিশ্বকাপ শেষ করেছে ষষ্ঠ স্থানে থেকে। বিশ্বকাপে এটাই তাদের সেরা অর্জন। ৯ ম্যাচের মধ্যে ৪টা জিতে পাকিস্তানের সমান ৮ পয়েন্ট নিয়ে তাদের শেষ হয়েছে বিশ্বকাপ মিশন। চার ম্যাচের মধ্যে তারা হারিয়েছে ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো শক্তিশালী দলকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৮৪ রান করে আফগানরা। বল হাতে ২১৫ রানের মধ্যে গুটিয়ে ফেলে ২০১৯ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। পাকিস্তানের বিপক্ষেও আফগানরা হেসেখেলে জয় পেয়েছে। ২৮৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৬ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় আফগানিস্তান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও ২৮ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখে ম্যাচটা নিজেদের করে নেয় তারা। আর একটা ম্যাচ জিতলেই সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখতে পারত আফগানরা।
উড়তে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা নেদারল্যান্ডসের হাতে ধরাশায়ী
২০২৩ বিশ্বকাপের শুরু থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা উড়ছিল। নতুন রূপে দেখা গিয়েছিল তাদের। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে স্কোরবোর্ডে তোলে ৪২৮ রান। বিশ্বকাপের এক ইনিংসে এটাই সবচেয়ে বেশি রান। দক্ষিণ আফ্রিকার ৩ ব্যাটার পান সেঞ্চুরি। ম্যাচটা তারা জিতে যায় ১০২ রানে। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাটে নেমে স্কোরবোর্ডে তোলে ৩১১ রান। কিন্তু বিশ্বকাপজয়ী অজিরা করতে পারে মাত্র ১৭৭ রান। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচটা জেতে ১৩৪ রানে। এমন ফর্মে থাকা দল তুলনামূলক কম শক্তিশালী নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হেসেখেলেই জেতার কথা। কিন্তু তা হলো না। ২৪৬ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বাভুমার দল আটকে গেল ২০৭ রানে। নেদারল্যান্ডস ম্যাচটা জেতে ৩৮ রানে। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ জয়। ঐতিহাসিক সে ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস ৭৮ রান করে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা।