সব খেলোয়াড়ই নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে চায়। আর এটা প্রমাণের সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো অলিম্পিক। শুরু হয়েছে প্যারিস অলিম্পিক ২০২৪। চলবে ১১ আগস্ট পর্যন্ত। ৩২৯টি ইভেন্টের জন্য প্রায় সাড়ে ১০ হাজার অ্যাথলেট লড়াই করবে। এরা সবাই নিজেদের প্রমাণ করেই অলিম্পিকে প্রতিযোগিতার সুযোগ পেয়েছে। আরও একবার নিজেকে বিশ্বসেরা প্রমাণ করতে হবে। তাহলেই গলায় ঝুলবে মেডেল।
প্রতিটি ব্রোঞ্জপদকের ওজন ৪৫৫ গ্রাম। এর মধ্যে কপার ৪১৫ গ্রাম, জিংক ২২ গ্রাম ও লোহা ১৮ গ্রাম। রৌপ্যপদকের ওজন ৫২৫ গ্রাম। ৫০৭ গ্রাম রৌপ্য ও ১৮ গ্রাম লোহা। আর স্বর্ণপদকের ওজন ৫২৯ গ্রাম। ৫০৫ গ্রাম রৌপ্য, ১৮ গ্রাম লোহা ও মাত্র ৬ গ্রাম স্বর্ণ।
স্বর্ণপদকের বর্তমান বাজারমূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ লাখ টাকার একটু বেশি। রৌপ্যপদক প্রায় ৫৬ হাজার আর ব্রোঞ্জপদকের দাম মাত্র ১ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু এই সামান্য টাকাই শেষ কথা না। অলিম্পিক জিতে মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি দেশ বড় অঙ্কের অর্থমূল্য ঘোষণা করে। কোনো দেশ আবার দেয় ফ্ল্যাট। কোনো দেশ আসলে কত টাকা দেয় অলিম্পিকজয়ীদের, তা-ই জানাব এই লেখায়।
তবে আগেই বলে রাখি, টাকা দিয়ে এসব পদকের মূল্য নির্ধারণ করা যায় না। লাখ লাখ টাকা খরচ করেও তুমি দেড় হাজার টাকার একটা ব্রোঞ্জপদক কিনতে পারবে না। এটা টাকার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ।
যা-ই হোক, প্রথমর বলি ক্যারিবিয়ান দেশ ডোমিনিক রিপাবলিকের কথা। দেশটি প্রত্যেক স্বর্ণপদকজয়ীকে দেবে ২ লাখ ৫২ হাজার ডলার। ভাবতে পারো! বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। রৌপ্যপদকজয়ী পাবেন ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা আর ব্রোঞ্জজয়ী পাবেন ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। মাত্র দেড় হাজার টাকার মেডেল দেখিয়ে দেশে গিয়ে নিতে পারবে প্রায় দেড় কোটি টাকা। যদিও এ বছর এখন পর্যন্ত (৩ আগস্ট, রাত ৩টা পর্যন্ত) দেশটি কোনো পদক পায়নি। অলিম্পিক ইতিহাসে তারা মোট ১২টি পদক পেয়েছে। এর মধ্যে স্বর্ণপদক ৩টি। সর্বশেষ টোকিও অলিম্পিকে দেশটি ৩টি রৌপ্য ও ২টি ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে। খেলোয়াড়দের উৎসাহী করতেই এমন বড় অঙ্কের অর্থমূল্য ঘোষণা করেছে ডোমিনিক রিপাবলিক।
মেক্সিকো সরকার ঘোষণা করেছে, প্রতিটি স্বর্ণপদকের জন্য খেলোয়াড়েরা পাবেন ৩০ লাখ মেক্সিকান পেসো। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ। রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদকের জন্য যথাক্রমে ২০ লাখ ও ১০ লাখ মেক্সিকান পেসো। যা বাংলাদেশি টাকায় যথাক্রমে ১ কোটি ২৬ লাখ ও ৬৩ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত প্যারিস অলিম্পিকে দেশটি ২টি রৌপ্য ও ১টি ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে।
জার্মানি স্বর্ণজয়ীদের দিচ্ছে ২৬ লাখ টাকা, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জজয়ীদের যথাক্রমে ১৯ লাখ ও ১৩ লাখ টাকা। প্যারিস অলিম্পিকে এখন পর্যন্ত ২টি স্বর্ণপদক, ৩টি রৌপ্যপদকসহ মোট ৭টি পদক পেয়েছে। তোমাদের জানিয়ে রাখি, জার্মান কিন্তু অলিম্পিকের তৃতীয় সেরা পদকজয়ী দেশ। অলিম্পিকের ইতিহাসে ওদের চেয়ে বেশি পদক পেয়েছে শুধু তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র।
চিলি সরকার স্বর্ণপদকের জন্য দিচ্ছে ৫ কোটি ৩০ লাখ চিলির পেসো, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৫ লাখ। রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদকের জন্য যথাক্রমে ১ কোটি ৪৫ লাখ ও ৩২ লাখ টাকা। দেশটি প্যারিস অলিম্পিকে এখন পর্যন্ত কোনো পদক পায়নি।
অর্থমূল্য ঘোষণা করেছে স্পেন সরকারও। তারা স্বর্ণপদকের জন্য ১ কোটি ১৯ লাখ, রৌপ্যপদকের জন্য ৬০ লাখ ও ৩৮ লাখ টাকা দেবে ব্রোঞ্জপদকের জন্য। প্যারিস অলিম্পিকে এখন পর্যন্ত ১টি স্বর্ণপদক, ১টি রৌপ্য ও ৩টি ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে স্পেন।
অস্ট্রেলিয়া স্বর্ণপদকের জন্য প্রায় ১৫ লাখ, রৌপ্যপদকের জন্য সাড়ে ১১ লাখ ও ব্রোঞ্জপদকের জন্য দেবে ৮ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত প্যারিস অলিম্পিকে ১১টি স্বর্ণপদকসহ মোট ২২টি পদক পেয়েছে দেশটি।
মালয়েশিয়া স্বর্ণপদকজয়ীদের দেবে প্রায় ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ব্রোঞ্জজয়ীদের ৭৬ লাখ ও রৌপ্যজয়ীদের দেবে প্রায় ২৬ লাখ টাকা। মালয়েশিয়াও এখন পর্যন্ত প্যারিস অলিম্পিকে কোনো পদক অর্জন করেনি।
জার্মানি স্বর্ণজয়ীদের দিচ্ছে ২৬ লাখ টাকা, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জজয়ীদের যথাক্রমে ১৯ লাখ ও ১৩ লাখ টাকা। প্যারিস অলিম্পিকে এখন পর্যন্ত ২টি স্বর্ণপদক, ৩টি রৌপ্যপদকসহ মোট ৭টি পদক পেয়েছে। তোমাদের জানিয়ে রাখি, জার্মান কিন্তু অলিম্পিকের তৃতীয় সেরা পদকজয়ী দেশ। অলিম্পিকের ইতিহাসে ওদের চেয়ে বেশি পদক পেয়েছে শুধু তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র।
পোল্যান্ড স্বর্ণজয়ীদের দিচ্ছে প্রায় ২৯ লাখ টাকা। আর রৌপ্য ও ব্রোঞ্জজয়ীদের যথাক্রমে ২২ লাখ ও ১৬ লাখ টাকা। প্যারিস অলিম্পিকে এখন পর্যন্ত ১টি রৌপ্যপদকসহ মোট ৪টি পদক পেয়েছে।
রিপাবলিক অব কাজাখস্তান স্বর্ণজয়ীদের জন্য মোটা অঙ্ক ঘোষণা করেছে। স্বর্ণজয়ী পাবে প্রায় ২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। রৌপ্যজয়ী প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ ও ব্রোঞ্জজয়ীরা পাবে প্রায় ৮৮ লাখ টাকা। দেশটি চলতি অলিম্পিকে ১টি স্বর্ণপদক ও ২টি রৌপ্যপদক জিতেছে। তবে কাজাখস্তানে কেউ চাইলে টাকার পরিবর্তে অ্যাপার্টমেন্ট নিতে পারে। পদক অনুসারে যথাক্রমে ৩ বেডরুম, ২ বেডরুম ও ১ বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্ট পাবে।
ইসরায়েল স্বর্ণজয়ীদের জন্য বরাদ্দ রেখেছে প্রায় ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। রৌপ্যজয়ী প্রায় ২ কোটি ৫২ লাখ ও ব্রোঞ্জজয়ীদের দেওয়া হবে ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। দেশটি চলতি অলিম্পিকে এখন পর্যন্ত ২টি রৌপ্যপদক ও ১টি ব্রোঞ্জপদক জিতেছে।
সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে হয়তো ইন্দোনেশিয়ার টাকার অঙ্ক। তারা স্বর্ণপদকের জন্য দেবে ৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। রৌপ্যপদকের জন্য ১ কোটি ৭৫ লাখ ও ব্রোঞ্জের জন্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা। যদিও এখন পর্যন্ত দেশটি কোনো পদক পায়নি।
অলিম্পিকজয়ীদের জন্য জাপানের বরাদ্দ যথাক্রমে প্রায় ৩৭ লাখ, ১৫ লাখ ও ৭ লাখ টাকা। প্যারিস অলিম্পিকে এখন পর্যন্ত ৮টি স্বর্ণপদক, ৪টি রৌপ্যপদক ও ৬টি ব্রোঞ্জপদক জিতে তালিকার ৬ নম্বরে আছে জাপান।
যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিজয়ীদের দেবে প্রায় ৪৪ লাখ, ২৭ লাখ ও সাড়ে ১৭ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত ৯টি স্বর্ণপদক, ১৮টি রৌপ্যপদক ও ১৬টি ব্রোঞ্জপদক জিতে সবচেয়ে বেশি ৪৩ পদক মার্কিনদের। তবে তাড়া আছে তালিকার ৪ নম্বরে। তালিকা করা হয় স্বর্ণপদের হিসাবে।
দক্ষিণ কোরিয়া দিচ্ছে যথাক্রমে প্রায় সাড়ে ৫২ লাখ, ২৯ লাখ ও ২১ লাখ টাকা। ৭ স্বর্ণপদকসহ মোট ১৬ পদক নিয়ে দেশটি আছে তালিকার ৭ নম্বরে।
স্বাগতিক ফ্রান্স তাদের বিজয়ীদের জন্য বরাদ্দ করেছে যথাক্রমে ১ কোটি, ৫০ লাখ ও ২৫ লাখ টাকা। ১১ স্বর্ণপদকের পাশাপাশি ১২ রৌপ্যপদক, ১৩ ব্রোঞ্জপদকসহ মোট ৩৬টি পদক নিয়ে ফ্রান্স রয়েছে তালিকার ২ নম্বরে।
সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের অর্থমূল্য শুনলে চোখ কপালে উঠবে। সিঙ্গাপুর প্রতিটি স্বর্ণপদকের জন্য দিচ্ছে ৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা প্রায়। রৌপ্যজয়ীদের ৪ কোটি ৩৬ লাখ এবং ব্রোঞ্জজয়ীদের প্রায় ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা দেবে। যদিও এই অলিম্পিকে এখনো কোনো পদক পায়নি দেশটি।
তবে হংকং এখন পর্যন্ত ২টি স্বর্ণ ও ২টি ব্রোঞ্জপদক পেয়েছে। স্বর্ণপদকের জন্য প্রত্যেক খেলোয়াড়কে হংকং সরকার দেবে প্রায় ৯ কোটি টাকা। অর্থমূল্যটা ভাবো একবার। ১১ আগস্টের মধ্যে কেউ যদি রৌপ্যপদক জিততে পারেন, তাহলে তাঁকে দেওয়া হবে প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা আর ব্রোঞ্জজয়ী প্রত্যেকে পাবেন প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এখন নিশ্চয়ই ব্রোঞ্জ দককে আর মাত্র দেড় হাজারের মেডেল মনে হচ্ছে না। একটা দেড় হাজার টাকার মেডেল জিতে দেশভেদে কেউ কেউ হয়ে যেতে পারেন কোটিপতি।
সূত্র: ফোর্বস, ইউরো নিউজ, এনবিসি নিউইয়র্ক ডট কম ও এমএসএন ডট কম