বাংলাদেশের বিশ্বকাপ–যাত্রা মানেই কোনো না কোনো তরুণ প্রতিভার ভাগ্য খুলে যাওয়া। ২০০৭ বিশ্বকাপে সাকিব-মুশফিক-তামিম, ২০১৫ বিশ্বকাপে সৌম্য-সাব্বির-তাসকিন—দুই বিশ্বকাপেই তরুণেরা হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের কান্ডারি। গত কয়েকবারের তুলনায় এবারের দলে অভিজ্ঞতার থেকে তারুণ্যের প্রাধান্যই বেশি। আটজন খেলোয়াড় প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলছেন। বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি বাংলাদেশের তরুণেরা। তবু তাঁদের দিকেই দৃষ্টি থাকবে সমর্থকদের।
তাওহিদ হৃদয়
বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের কান্ডারি ছিলেন তাওহিদ হৃদয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দিয়ে নজর কাড়লেও হৃদয়ের উত্থান ঘটেছিল বিপিএল দিয়ে। ২০২৩ বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের জার্সিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। বিশেষ করে মিডল অর্ডারে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে করা রানগুলো নজর কেড়েছিল বাংলাদেশের সমর্থকদের। বিপিএলে ভালো পারফরম্যান্সের সুবাদে জাতীয় দলে ডাক পান হৃদয়। আর প্রথম ম্যাচ থেকেই শুরু হয় তাঁর স্বপ্নযাত্রা। বাংলাদেশের জার্সিতে এখন পর্যন্ত সমর্থকদের হতাশ করেননি হৃদয়। প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং পাননি। দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ পেয়েও বড় করতে পারেননি ইনিংস। সমর্থকেরা আশায় আছেন হৃদয়কে নিয়ে। বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে তাঁর ব্যাটের দিকে।
তানজিদ হাসান তামিম
বিশ্বকাপে তামিমের সুযোগ পাওয়াটা বেশ রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতাই বটে। বিশ্বকাপের আগে মাত্র পাঁচ ম্যাচে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে জুনিয়র তামিমের কপালেই জুটেছে বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিং করার সুযোগ। প্রস্তুতি ম্যাচে সে সুযোগ পেয়ে হেলায় হারাননি। ৮৪ রানের একটি ইনিংস খেলে জানান দিয়েছেন সামর্থ্যের। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে তামিমের রেকর্ড দেখলে যে কেউ ঈর্শান্বিত হতে বাধ্য। অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে মাত্র ৩০ জন খেলোয়াড় হাজার রানের রেকর্ড ছাড়িয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র দুজন খেলোয়াড়ের স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০-এর ওপরে। একজন শুবমান গিল, অন্যজন তানজিদ তামিম। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা প্রডিজি নিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে পা রেখেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব ক্রিকেটকে চমকে দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এখন তামিমের হাতে। প্রথম দুটি ম্যাচেই ব্যর্থ হয়েছেন তামিম। কিন্তু কোচের আস্থা আছে তাঁর ওপর। এখন বাকি কাজটা তানজিদ তামিমকে করতে হবে।
তানজিম হাসান সাকিব
বাংলাদেশের পাইপলাইন যেন দেজা ভ্যু, সাকিব-তামিমের বিদায়ের আগেই এসে পড়েছেন নতুন তামিম-সাকিব। তামিমের সঙ্গে তামিমের মিল থাকলেও সাকিবের সঙ্গে সাকিবের মিল নেই বললেই চলে। এশিয়া কাপে নিজের অভিষেক ম্যাচেই দারুণ বোলিং করেছেন সাকিব। শুরুতেই ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে চিড় ধরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ইবাদত হোসেনের চোটের সুবাদে দলে জায়গা হলেও বিশ্বকাপে তাঁর অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন নেই কারও। এখন শুধু অপেক্ষা প্রত্যাশার পারদ কতটুকু পূরণ করতে পারেন তিনি।
শরীফুল ইসলাম
বাংলাদেশের পেস বোলিং লাইনআপের অন্যতম কান্ডারি শরীফুল। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের আরেক তারকা ছিলেন তিনি। অভিষেকের পর থেকেই সে তাণ্ডব চলছে বাংলাদেশের জার্সিতেও। একটা সময় ছিল, যখন বাংলাদেশের পেস ইউনিটে মোস্তাফিজই ছিলেন সর্বেসর্বা। তাঁকে বাদ দিয়ে একাদশ গঠন করার কথা কেউ স্বপ্নেও ভাবত না। শরীফুল এসেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন সে জায়গায়। বাঁহাতি পেসার হওয়ায় শরীফুলকে এখন ভাবা হচ্ছে মোস্তাফিজের বিকল্প হিসেবে। বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচ মিলিয়ে ৫ উইকেট নেওয়া শরীফুল তাঁর সেরাটা দিতে পারলে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে পারবে বাংলাদেশ।