ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ: ম্যাচউইক ১৭
বড়দিনে শীর্ষে লিভারপুল
প্রিমিয়ার লিগে বড়দিন আসে ফুটবলের আবহে। বড়দিনে শীর্ষে থাকা দলকে অনানুষ্ঠানিক শিরোপাধারী হিসেবেও ধরে নেন অনেকে। গত ১৫ মৌসুমে ১০ বারই শিরোপা বাড়ি নিয়েছে বড়দিনে শীর্ষে থাকা দলগুলো। বড়দিনের আগে শেষ সপ্তাহটা কেমন গেল দলগুলোর?
অ্যাস্টন ভিলা ২-১ ম্যানচেস্টার সিটি
ভিলা: জন ডুরান ১৬’, মরগান রজার্স ৬৫’
সিটি: ফিল ফোডেন ৯০+৩’
দুর্দশা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে পেপ গার্দিওলাকে। হারের বৃত্ত থেকে বের হওয়া যেন একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অন্য কোনো কোচ হলে হয়তো এতক্ষণে বরখাস্তপত্র হাতে ধরিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু নামটা গার্দিওলা বলেই সেটা সম্ভব হচ্ছে না। অ্যাস্টন ভিলার মাটিতে গিয়েও ভাগ্যের খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি তাদের। ম্যাচের ১৬ মিনিটে ভিলাকে এগিয়ে নেন জন ডুরান। এ নিয়ে ২১ বছর বয়সী কলম্বিয়ান গোল করলেন টানা পাঁচ ম্যাচে! প্রথম গোল হজমের পর চোখ ছলছল করতে দেখা যায় গার্দিওলার। দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মরগান রজার্স। দ্বিতীয় গোল হজমের পর মনে হচ্ছিল গার্দিওলা বুঝি কেঁদেই ফেলবেন। তবু চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন শেষ পর্যন্ত। ৯৩ মিনিটে ফিল ফোডেন গোল করলেও তা শুধু ব্যবধান কমিয়েছে, হারের লজ্জা থেকে বাঁচাতে পারেনি সিটিকে। এ নিয়ে শেষ ১২ ম্যাচের ৯টিতে হারের স্বাদ পেল সিটি। এই জয় দিয়ে টেবিলের ৬ নম্বরে উঠে এল অ্যাস্টন ভিলা।
ব্রেন্টফোর্ড ০-২ নটিংহাম ফরেস্ট
ফরেস্ট: আইনা ৩৮’, অ্যান্থনি এলেঙ্গা ৫১’
অবশেষে ব্রেন্টফোর্ডের দুর্গে হানা পড়ল। মৌসুমের প্রায় অর্ধেক পথ তারা পাড়ি দিয়েছে নিজেদের ঘরকে সুরক্ষিত রেখে। ঘরের বাইরে পারফরম্যান্স যেমনই হোক না কেন, ঘরের মাঠে বরাবরই অপরাজেয় তারা। সেই তালা ভাঙল নটিংহাম ফরেস্ট। ফরেস্টের কাউন্টার অ্যাটাক আর গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উঠতে পারেনি ব্রেন্টফোর্ড। ম্যাচে আধিপত্য বজায় না রাখলেও তিন পয়েন্ট ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে নুনো এসপারিতো সান্তোর শিষ্যরা। এ নিয়ে মৌসুমের নবম জয় পেল ফরেস্ট। গত দুই মৌসুম ধরে তাদের জয়ের সংখ্যা ছিল ৯। সেটা ছুঁয়ে ফেলল মৌসুমের অর্ধেক পথেই। শীর্ষ চারে থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগের লড়াইয়ে নিজেদের অবস্থানটাও পাকা করে ফেলেছে তারা।
ইপসউইচ টাউন ০-৪ নিউক্যাসেল সিটি
নিউক্যাসেল: অ্যালেকজেন্দার ইসাক ১’, ৪৫+২’, ৫৪’, জ্যাকব মার্ফি ৩২’
ম্যাচের শুরু থেকে মাঠ ছাড়ার আগপর্যন্ত, পুরো ম্যাচের সব আলো কেড়ে নিয়েছিলেন সুইডিশ স্ট্রাইকার অ্যালেকজেন্দার ইসাক। বছরের সবচেয়ে বড় রাতটা আলোকিত করে রেখেছেন হ্যাটট্রিক দিয়ে। পাঁচ বছর পর প্রিমিয়ার লিগে হ্যাটট্রিকের দেখা পেল নিউক্যাসেলের কোনো স্ট্রাইকার। এ নিয়ে টানা দুই সপ্তাহে ৪ গোলের বড় জয় পেল ম্যাগপাইরা। দুর্দান্ত ইসাকের সামনে কোনো প্রতিরোধ দাঁড় করাতে পারেনি ইপসউইচ। যে দু-একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল, সেটাও ভেস্তে গিয়েছে আক্রমণভাগের ব্যর্থতায়।
ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড ১-১ ব্রাইটন
ওয়েস্ট হাম: মোহাম্মদ কুদুস ৫৮’
ব্রাইটন: ম্যাট উইফার ৫১’
বছরের সবচেয়ে ছোট দিনে অনাড়ম্বর এক ম্যাচের দেখা পেয়েছে প্রিমিয়ার লিগ। ওয়েস্ট হাম ও ব্রাইটনের ম্যাচে বলার মতো মুহূর্ত ছিল মাত্র ৭ মিনিট। ৫১ মিনিটে ব্রাইটনকে এগিয়ে নিয়ে যান ম্যাট উইফার। ৭ মিনিট পর সেই গোল শোধ করেন মোহাম্মদ কুদুস। লন্ডন স্টেডিয়ামে ম্যাচের বাকিটা সময় চলেছে ধীরগতিতে। এই নিয়ে টানা ৫ ম্যাচে জয়ের দেখা পায়নি ব্রাইটন। অন্যদিকে ওয়েস্ট হামও রয়ে গেল ১৪তম অবস্থানে। বড়দিনে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করা ছাড়া আর কোনো কিছু চাওয়ার নেই দুই দলের।
ক্রিস্টাল প্যালেস ১-৫ আর্সেনাল
প্যালেস: ইসমাইলা সার ১১’
আর্সেনাল: গাব্রিয়েল জেসুস ৬’, ১৫’, কাই হাভার্টজ ৩৮’, গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি ৬০’, ডেকলান রাইস ৮৪’
পরপর দুই ম্যাচ ড্র করে শিরোপার লড়াই থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিল আর্সেনাল। হারলেও যে দমে যায়নি, তার প্রমাণ মিলল ক্রিস্টাল প্যালেসের মাঠে। বিশাল এক জয় দিয়ে বড়দিন উদ্যাপনে শামিল হবে গানার্সরা। কোচ মিকেল আর্তেতার আর্সেনালের দায়িত্ব নেওয়ার ৫ বছর পূর্তি ছিল সেদিন। উপহার হিসেবে ৫ গোলের বড় জয় দিয়েছেন শিষ্যরা। শুরুটা করেছিলেন গাব্রিয়েল জেসুস। অনেক দিন পর শুরুর একাদশে দেখা মিলেছিল তাঁর। সুযোগ পেয়েও দুর্দান্ত এক শুরু। ১৫ মিনিটের মধ্যে আর্সেনালকে এগিয়ে নেন দুইবার। প্রিমিয়ার লিগে প্রায় এক মাস পর গোলের দেখা পেয়েছেন মার্তিনেল্লি। ক্রিস্টাল প্যালেসের হয়ে একমাত্র গোল করেছেন ইসমাইলা সার।
এভারটন ০-০ চেলসি
এভারটন যেন পণ করে নেমেছে, শিরোপাপ্রত্যাশী প্রতিটি দলের কাঁপুনির কারণ হবে তারা। গত সপ্তাহে আর্সেনালকে আটকে দেওয়া এভারটন, এই সপ্তাহে আটকে দিয়েছে চেলসিকে। দারুণ ফর্মে থাকা এনজো মারেসকার শিষ্যরা গোলের হদিস খুঁজে পাননি গুডিনসন পার্কে। নতুন ম্যানেজমেন্টের অধীনে এ যেন এক নতুন এভারটন। টানা আট ম্যাচ জেতার পর অবশেষে এভারটনের মাটিতে এসে হোঁচট খেল চেলসি। পুরো ম্যাচে আধিপত্য ছিল ব্লুজদের। কিন্তু সব আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছে গোলমুখে এসে। জর্ডান পিকফোর্ডের দেয়াল ভাঙতে ব্যর্থ চেলসি। বড়দিনের আগে শীর্ষ স্থানে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও সেটা হেলায় হারাল তারা।
ফুলহাম ০-০ সাউদাম্পটন
নতুন কোচের অধীনে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে সাউদাম্পটন। যদিও ডাগ আউটে দেখা মিলেছে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ সিমোন রাস্ককে। স্ট্যান্ড থেকে পুরো খেলাটা উপভোগ করেছেন ক্রোয়াট কোচ। সেটুকু যেন যথেষ্ট ছিল সাউদাম্পটনকে বদলে দিতে। বৃষ্টিস্নাত বিকেলে ফুলহামের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছে তারা। এই মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মতো কোনো গোল হজম করেনি সাউদাম্পটন। এর পেছনে বড় অবদান অবশ্য গোলরক্ষম অ্যারন রামসডেলের। ভাঙা আঙুলের কারণে শঙ্কায় ছিল তাঁর মাঠে নামা। কিন্তু দলের প্রয়োজনে স্পেশাল চার আঙুলের গ্লাভস পরে নেমেছিলেন মাঠে। আর সেই হাত দিয়ে অর্জন করেছেন গোলশূন্য ড্র।
লেস্টার সিটি ০-৩ উলভস
উলভস: গনসালো গেদেস ১৯’, রদ্রিগো গোমেস ৩৬’, ম্যাথিয়াস কুনহা ৪৪’
স্রেফ ৪৫ মিনিট! হারের বৃত্তে ঘুরতে থাকা উলভসকে বদলে দিতে মাত্র ৪৫ মিনিট লেগেছে নতুন কোচের। বড়দিনের আগে নতুন কোচের অধীনে মাঠে নেমেছিল উলভস। প্রতিপক্ষ ছিল সদ্য নতুন কোচ পাওয়া লেস্টার। রুড ফন নিস্টলরয়ের দলকে উড়িয়ে দিয়ে নিজের প্রথম জয় তুলে নিয়েছেন পর্তুগিজ কোচ ভিতর পেরেইরা। প্রথম ম্যাচে তাঁর একাদশে ছিলেন ৭ জন পর্তুগিজ জানা খেলোয়াড়! তাঁদের নিয়ে দলকে ঢেলে সাজিয়েছেন, ১৬ ম্যাচে ৪০ গোল হজম করা উলভস ডিফেন্স মুহূর্তে ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছে তাঁর ছোঁয়ায়। প্রথম গোলটাও এসেছে পর্তুগিজ মিডফিল্ডার গনসালো গেদেসের পা থেকে। ম্যাডস হারমানসেনের চোট বেশ ভোগাচ্ছে লেস্টারকে। এ ছাড়া লেস্টারের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন বাংলাদেশি তারকা হামজা চৌধুরী। হামজা মাঠে নামার পর স্বস্তি ফিরেছিল লেস্টার ডিফেন্সে। যদিও ততক্ষণে যতটা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ০-৩ বোর্নমাউথ
বোর্নমাউথ: ডিন হুইসেন ২৯’, জাস্টিন ক্লুইভার্ট ৬১’ (পেনাল্টি), অ্যান্তোয়ান সেমেনো ৬৩’
বড়দিনে যাঁদের মন ভালো থাকবে না, এমন তালিকা করলে ওপরের দিকে থাকবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সমর্থকদের নাম। প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শীর্ষ ১০-এর বাইরে থেকে বড়দিন উদ্যাপন করতে যাচ্ছে ইউনাইটেড। আর সেটাও এসেছে বোর্নমাউথের কাছে ৩-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে হেরে। না ডিফেন্স, না মাঝমাঠ, না আক্রমণ; কোথাও সামঞ্জস্য করতে পারেনি ইউনাইটেড। ফলে ঘরের মাটিতে বোর্নমাউথের কাছে বিশাল ব্যবধানে হারতে হয়েছে তাদের।
টটেনহাম হটস্পার্স ৩-৬ লিভারপুল
স্পার্স: জেমস ম্যাডিসন ৪১’, ডেহান কুলুসেভস্কি ৭২’, ডমিনিক সোলাঙ্কে ৮৩’
লিভারপুল: লুইস ডিয়াজ ২৩’, ৮৫’, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার ৩৬’, ডমিনিক সোবোস্লাই ৪৫+১’, মোহাম্মদ সালাহ ৫৪’, ৬১’
বড়দিনের প্রিমিয়ার লিগ বুঝি এমনই হয়। প্রিমিয়ার লিগের উত্তেজনা বুঝতে চাইলে তার পারফেক্ট উদাহরণ হবে টটেনহাম-লিভারপুল ম্যাচ। কী ছিল না ম্যাচের মধ্যে? ভিএআরের কারণে গোল বাতিল, গোল, ফিরতি গোল, উদ্যাপন—সব মিলিয়ে যেন একটা পরিপূর্ণ প্যাকেজ। ৯ গোলের লড়াইয়ে শেষ হাসিটা অবশ্য হেসেছে লিভারপুল। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের ম্যাচে একপর্যায়ে লিভারপুল এগিয়ে গিয়েছিল ৫-১ গোলে। অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, গোলের সংখ্যা হয়তো দুই অঙ্কে ঠেকবে। কিন্তু তখনই পাল্টা জবাব দেয় স্পার্স। ১১ মিনিটে ২ গোল দিয়ে ম্যাচে ফেরার সুযোগ তৈরি করে তারা। কিন্তু লুইস ডিয়াজের শেষ গোল পেরেক মেরে দেয় তাদের প্রত্যাবর্তনের আশায়। ৬-৩ গোলে হেরে সন্তুষ্ট থাকতে হয় টটেনহামকে। দুই ম্যাচ পর আবারও জয়ের দেখা পেয়েছে অল রেডসরা। এ নিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে ৪ পয়েন্ট এগিয়ে গেল তারা। বড়দিন উদ্যাপন করবে টেবিলের শীর্ষে থেকে।