একটি জয়ের অপেক্ষা বাংলাদেশের

মালদ্বীপের বিপক্ষে রাকিবের গোলের পর বাংলাদেশের উচ্ছ্বাসবাফুফে

শেষ কবে বাংলাদেশের ম্যাচের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছে দেশবাসী? ফুটবলপাগল জাতি হয়েও সবুজ জার্সি পরে বাংলাদেশ দল যখন মাঠে নামে, তখনই হতাশায় টিভির সামনে থেকে উঠে যান অনেকে। হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, বারবার আশাভঙ্গ হতে কারই–বা ভালো লাগে?

এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দল নেমেছে অন্য মিশনে। প্রতিবারের মতো এবার আর আশাহত করার মিশনে নয়, বাংলাদেশ নেমেছে জিততে। স্প্যানিশ কোচ হাবিয়ের কাবরেরা শিষ্যদের নিয়ে সাজিয়েছেন নতুন ট্যাকটিস। লক্ষ্য নতুন স্বপ্নজয়। সাফের প্রথম ম্যাচ থেকেই দেখা মিলেছে অন্য এক বাংলাদেশের।

প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল লেবানন। সাফের সদস্য না হয়েও আয়োজকদের আমন্ত্রণে অতিথি দল হিসেবে খেলতে এসেছে তারা। ফুটবলীয় সামর্থ্যের দিক দিয়ে চিন্তা করলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির সামনে পাত্তা পাওয়ারই কথা না বাংলাদেশের। অথচ প্রথম ৮০ মিনিটের খেলা দেখে কারও মনেই হবে না, লেবাননের বিপক্ষে খেলছে বাংলাদেশ। শেষ মুহূর্তে ডিফেন্ডারের ভুলে হারতে হয়েছে ম্যাচটি। ভালো খেললেও সেই শেষ মুহূর্তে গোল খাওয়ার বদনাম ঘোচাতে পারেনি বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় ম্যাচের শুরুটাও হয়েছিল ছন্নছাড়া। মালদ্বীপের সঙ্গে বাংলাদেশের রেকর্ড তেমন বলার মতো কিছু না। শেষ ৬ ম্যাচের ৫টিতেই হারের মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। ১৮ মিনিটে মালদ্বীপের প্রথম গোলের পর তো তাই আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন সবাই। ধরেই নিয়েছিলেন, আর দশটা ম্যাচের মতোই হবে এই ম্যাচটা। ভালো খেলেও মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়তে হবে বাংলাদেশকে।

কিন্তু কোচ কাবরেরার মনে ছিল অন্য চিন্তা। লং বল আর ডিফেন্সিভ ফুটবল থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনার পরিকল্পনা তাঁর অনেক দিনের। মালদ্বীপের বিপক্ষে শুরু হলো বাংলাদেশের পাসিং ফুটবল শো। ফল এল প্রথমার্ধেই, বিশ্বনাথের থ্রো থেকে সোহেল রানার লম্বা ক্রস। সেখান থেকে তপুর মাথা ঘুরে বল রাকিব হাসানের কাছে। তাঁর হেডেই সমতায় ফিরল বাংলাদেশ।
 
দ্বিতীয়ার্ধে যেন আরও বদলে গেল বাংলাদেশ। ৬৩ মিনিটে কাবরেরার করা তিন পরিবর্তন বদলে দিল বাংলাদেশের খেলার ধরন। ৬৭ মিনিটে আসে দ্বিতীয় গোল, ইব্রাহিমের কর্নার থেকে তপুর হেড, এরপর তারিক কাজীর গোল। ২-১ গোলে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

এরপরই যেন চিন্তা ভর করলও বাংলাদেশের মাথায়। বাংলাদেশের কপালে চিন্তার ভাঁজ তোলে তো সেই শেষ ২০ মিনিটই। কত কত ম্যাচে এগিয়ে থেকে শেষ মুহূর্তের গোলে হেরেছে বাংলাদেশ, তার হিসাব নেই। মালদ্বীপের সঙ্গেও যদি একই ভাগ্য বরণ করতে হয়? এর মাঝেই আবার ৮২ মিনিটে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন তারিক কাজী। কপালে যুক্ত হয় আরেকটি চিন্তার বলিরেখা। কিন্তু এবারে পাশার দান উল্টে দিলেন মোরসালিন। ১৮ বছর বয়সী তরুণ তুর্কি ঘুরিয়ে দিলেন ম্যাচের মোড়। ৯০ মিনিটে দুর্দান্ত এক গোল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যান ৩-১ গোলে। নিশ্চিত করেন বাংলাদেশের জয়।

এই জয় সাফের সেমিফাইনালের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল বাংলাদেশকে। শেষ ২০০৯ সালে শেষবারের মতো সেমিফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। সমীকরণটা এখন বড্ড সোজা। ৩-১ গোলে জেতায় গোল ব্যবধানে মালদ্বীপ বাংলাদেশের পেছনে। আগামী ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে জিতলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত।

টানা দুই ম্যাচ জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে লেবানন। তাদের শক্তিমত্তার সামনে অন্য কারও দাঁড়ানোর সামর্থ্য নেই বললেই চলে। অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে মালদ্বীপের বিপক্ষে জয় তাদের জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। মালদ্বীপ হারলে সেমিতে পৌঁছাতে বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে শুধু একটি পয়েন্ট। ভুটান যে ফর্মে আছে, তাতে বাংলাদেশের জয় আশা করাই যায়।

অপেক্ষা শুধু ২৮ তারিখ রাত ৮টায়, বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে। একটা জয় আবারও উল্লাসে মাতাবে সমগ্র দেশকে। জামাল ভূঁইয়ারা পারবেন তো, ঈদের আগেই ঈদের আনন্দে বাংলাদেশকে ভাসাতে?