ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ: ম্যাচউইক ১৯
অবশেষে সিটির জয়, ঘরের মাটিতে ২২ বছর পর হাসল ইপসউইচ
প্রিমিয়ার লিগের এই সপ্তাহ ছিল দুই বছর জুড়ে! দিনের হিসেবেও বেশ বড়সর একটা ম্যাচউইক দেখেছে প্রিমিয়ার লিগ। বিশাল এই সপ্তাহ কেমন গেল দলগুলোর? দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।
লেস্টার সিটি ০-২ ম্যানচেস্টার সিটি
সিটি: সাভিনহো ২১’, আর্লিং হল্যান্ড ৭৪’
ম্যাচ শেষে পেপ গার্দিওলার মুখে দেখা হাসিই বলে দিচ্ছিল, একটা জয়ের জন্য ঠিক কতটা প্রতীক্ষায় ছিল ম্যানচেস্টার সিটি। সিটির ডাগ-আউটে এটা ছিল গার্দিওলার ৫০০তম ম্যাচ। দলের যে ফর্ম চলছে, তাতে রাতটা দুঃস্বপ্নের হবে কিনা এমন চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল গার্দিওলার মাথায়। কিন্তু রাতটা তাঁর জন্য স্মরণীয় হয়ে রইল জয় দিয়ে। এ নিয়ে শেষ ১৪ ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো জয়ের দেখা পেল সিটিজেনরা। সাভিনহো আর হালান্ডের গোলে সহজ জয় পেয়েছে তারা। অন্যদিকে এই হার দিয়ে আরেকধাপ নিচে নেমে গেল লেস্টার। টেবিলের ১৯তম অবস্থানে আছে তারা। ফলাফল বদলাতে না পারলে রুড ফন নিস্টারলয়ের ভবিষ্যৎ আশঙ্কাজনক।
ক্রিস্টাল প্যালেস ২-১ সাউদাম্পটন
প্যালেস: ট্রেভর চ্যালোবাহ ৩১’, এরেরাচি ইজি ৫২’
সাউদাম্পটন: টায়লার ডিবলিং ১৫’
নতুন কোচ নিয়োগ দিয়েও ভাগ্য খুব একটা পরিবর্তন হচ্ছে না সাউদাম্পটনের। ক্রিস্টাল প্যালেসের কাছে ২-১ গোলে হেরে মৌসুমের ১৫তম হারের দেখা পেল সাউদাম্পটন। চোট নিয়ে খেলেও দলকে রক্ষা করতে পারলেন না গোলরক্ষক অ্যারন রামসডেল। ১৫ মিনিটে ডিবলিংয়ের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল সাউদাম্পটন। চার ম্যাচ পর গোলের দেখা পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল ‘সেইন্টস’রা। হারের বন্যায় ডিবলিংয়েই কিছুটা আশা খুঁজেছিল তারা। কিন্তু সে হাসি উবে গিয়েছে দ্রুতই। চ্যালোবাহ ও ইজির দুই গোলে জয় নিশ্চিত করেছে ক্রিস্টাল প্যালেস। কিছুদিন আগেও অবনমনের শঙ্কায় থাকা ক্রিস্টাল প্যালেস এখন টেবিলের ১৫তম স্থানে।
এভারটন ০-২ নটিংহাম ফরেস্ট
ফরেস্ট: ক্রিস উড ১৫’, মরগান গিবস-হোয়াইট ৬১’
মৌসুমের মাঝপথে এসে নতুন ছন্দের দেখা পেয়েছিল এভারটন। সে সুর অবশ্য নিজেদের নয়, বরং অন্যের সুর কেটে আনন্দ পাচ্ছিলেন কোচ শন ডাইচ। পরপর তিন ম্যাচে শিরোপাপ্রত্যাশী তিন দলের সঙ্গে ড্র করে পয়েন্ট টেবিলে হুলুস্থুল কাণ্ড বাধিয়ে দিয়েছিল তারা। সেটা থেমে গেল নটিংহাম ফরেস্টের কাছে এসে। ২-০ গোলের জয় দিয়ে নতুন বছরে নটিংহাম পা দিয়েছিল দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে। যদিও আর্সেনালের জয়ে এক ধাপ নিচে নেমে গিয়েছে তারা, তবে আনন্দ বিন্দুমাত্র কমেনি। অথচ এক বছর আগেও যখন এই দলের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছিলেন কোচ নুনো এসপারিতো সান্তো, তখন দল ছিল অবনমনের শঙ্কায়। এখন প্রায় প্রতিদিনই নিজেদের ইতিহাস নতুন করে ভাঙছে তারা।
ফুলহাম ২-২ বোর্নমাউথ
ফুলহাম: রাউল হিমিনেজ ৪০’, হ্যারি উইলসন ৭২’
বোর্নমাউথ: ইভানিলসন ৫১’, ডঙ্গো অউতারা ৮৯’
ইউরোপে সুযোগ পাওয়ার লড়াইটা কতটা ভয়ঙ্কর? এই ম্যাচটা যেন তার জ্বলন্ত প্রমাণ। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ মিনিট পর্যন্ত ছিল উত্তেজনা। সেখানে শেষ বাঁশি বাজিয়েছে ডঙ্গো আউতারার গোল। প্রথমে অবশ্য এগিয়ে গিয়েছিল ফুলহাম, রাউল হিমিনেজের। সেখান থেকে বোর্নমাউথকে সমতায় ফেরান ইভানিলসন। অতঃপর হ্যারি উইলসনের গোলে আবারও এগিয়ে যান ফুলহাম। এখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছিল ম্যাচটা বুঝি তাদেরই হতে যাচ্ছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে গোল করে ড্র এনে দেন আউতারা। এই ড্র দিয়ে দুই দলই যেন নিজেদের অবস্থান ঠিকঠাক রাখল।
টটেনহাম হটস্পার্স ২-২ উলভস
স্পার্স: রদ্রিগো বেন্তাকুর ১২’, ব্রেনান জনসন ৪৫+৩’
উলভস: হুয়াং হি-চান ৭’, জর্গেন স্ট্র্যান্ড লারসেন ৮৭’
কোনোভাবেই এক চিলতে হাসির দেখা মিলছে না টটেনহাম সমর্থকদের চোখেমুখে। বড়দিনের আগে যে হাসি উবে গিয়েছিল, নতুন বছরে এসেও সে হাসি জোটেনি তাদের কপালে। ঘুরে ফিরে তারা আবারও ফিরে গিয়েছে নিজেদের ‘রবিনহুড’ মোডে। অবনমনের শঙ্কায় থাকা উলভস শেষ মুহূর্তের গোলে নিশ্চিত করেছে ড্র। এতে অবশ্য টটেনহামের দোষই বেশি। পেনাল্টি মিস, নিশ্চিত গোল মিস করেছেন পুরো ম্যাচজুড়ে। নিশ্চিত গোলও হাতছাড়া হয়েছে স্ট্রাইকারদের দোষে। তবে উলভসের এক পয়েন্ট ছিনিয়ে আনতে পর্দার আড়াল থেকে ভূমিকা রেখেছেন রায়ান আইত-নুরি। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে দলের দুই গোলে সরাসরি অবদান রেখেছেন তিনি। দুটো গোলই এসেছে তার বানানো বল থেকে।
ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড ০-৫ লিভারপুল
লিভারপুল: লুইস ডিয়াজ ৩০’, কোডি গ্যাকপো ৪০’, মোহাম্মদ সালাহ ৪৪’, ট্রেন্ট অ্যালেকজেন্ডার-আর্নল্ড, দিয়োগো জোতা ৮৪’
বড়দিনের পর সালাহ নিষ্প্রভ হয়ে যান– গত কয়েক মৌসুম ধরে চলা এই ‘প্রোপাগান্ডা’ যেন মিথ্যে প্রমাণ করতে নেমেছেন সালাহ। গোল অ্যাসিস্টে ভরপুর এক ম্যাচের দেখা পেয়েছেন সালাহ। সঙ্গে টেবিলের শীর্ষস্থানে লিভারপুলের জায়গা করেছেন পাকাপোক্ত। এই জয় দিয়ে এক ম্যাচ কম খেলে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আর্সেনালের সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান হলো ৬! পুরো ম্যাচে ওয়েস্ট হামকে বিন্দুমাত্র জায়গা দেয়নি লিভারপুল। ম্যাচজুড়ে ছড়ি ঘুরিয়েছেন মোহাম্মদ সালাহ। ১ গোলের পাশাপাশি নিজের নামের সঙ্গে যোগ করেছেন ২ অ্যাসিস্ট। এক সালাহর কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন হুলেন লোপেতেগির শিষ্যরা।
অ্যাস্টন ভিলা ২-২ ব্রাইটন
ভিলা: ওলি ওয়াটকিন্স ২৩’ (পেনাল্টি), মরগান রজার্স ৪৭’
ব্রাইটন: সিমোন আদিনগ্রা ১২’, তারিক লাম্পতে ৮১’
নতুন বছরেও ভাগ্যের খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি অ্যাস্টন ভিলা আর ব্রাইটনের। একটা সময়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জন্য লড়াই করা দুই দলই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে মিডটেবিলে। নিজেদের মাঠে প্রভাব বিস্তার করলেও শেষপর্যন্ত লিড ধরে রাখতে পারেনি ভিলা। বরং ৮১ মিনিটে তারিক লাম্পতের গোলে ড্র নিয়ে ম্যাচ শেষ করতে হয় অ্যাস্টন ভিলাকে।
ইপসউইচ টাউন ২-০ চেলসি
ইপসউইচ: লিয়াম ডিলাপ ১২’ (পেনাল্টি), ওমারি হাটচিনসন ৫৩’
১০ দিন আগেও চেলসির সামনে সুযোগ ছিল প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে যাওয়ার। একটি জয় পেলেই বড়দিন কাটাতে পারত প্রিমিয়ার লিগের টপার হয়ে। অথচ ১০ দিনের ব্যবধানে টেবিলের চতুর্থ অবস্থানে তারা। প্রিমিয়ার লিগের লড়াইটা এমনই। একদিন শীর্ষে তো পরদিন জায়গা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে এতটা বাজে অবস্থার আশা করেননি কোচ এনজো মারেসকা। অবনমনের সারিতে থাকার ইপসউইচের কাছে হারটা কাঁটা হয়ে বিধবে চেলসির জন্য। ২২ বছর পর আবারও ঘরের মাটিতে প্রিমিয়ার লিগে জয়ের দেখা পেয়েছে ইপসউইচ। ঐতিহাসিক এক জয় এসেছে লিয়াম ডিলাপ আর ওমারি হাটচিনসনের অসাধারণ পারফরম্যান্সে। ম্যাচের ১২ মিনিটে পেনাল্টি পায় ইপসউইচ। সেখান থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন ডিলাপ। এরপর ৫৩ মিনিটে অসাধারণ এক গোল করে দলকে পৌছে দেন জয়ের বন্দরে। পুরো ম্যাচে চেলসি ছিল নিজেদের ছায়া হয়ে। এ মৌসুমে ইপসউইচ দুই জয় পেলেও সেগুলো এসেছে ঘরের বাইরে। ২২ বছর পর প্রিমিয়ার লিগে ফেরা ইপসউইচের ঘরের মাটিতে এটাই প্রথম জয়। নতুন বছরটা ইপসউইচ সমর্থকদের জন্য আরও স্মরণীয় হয়ে রইল।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ০-২ নিউক্যাসেল ইউনাইটেড
নিউক্যাসেল: অ্যালেজেন্দার ইসাক ৪’, জোয়েলিংটন ১৯’
সময়টা কোনোভাবেই পক্ষে না ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। যে পরিবর্তনের আশা নিয়ে রুবেন আমোরিমের হাতে দল সঁপে দিয়েছিলেন ক্লাবের মালিকেরা, সেটা পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ তিনি। হারের বৃত্ত থেকে কোনোভাবেই যেন বের হতে পারছে না ইউনাইটেড। ম্যানচেস্টার ডার্বি জেতার পর এ নিয়ে টানা চতুর্থ হারের দেখা পেল ইউনাইটেড। এবার সেটা এল নিউক্যাসেলের বিপক্ষে। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে ম্যাগপাইদের এগিয়ে নিয়ে যান ইসাক। ১৯ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন জোয়েলিংটন। দুই গোলের পর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি ইউনাইটেড। এ নিয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর ১১ ম্যাচের মধ্যে ৬টিতে হারলেন আমোরিম। সবমিলিয়ে হতবিহ্বল অবস্থায় নতুন বছরে পা দিচ্ছে ইউনাইটেড।
ব্রেন্টফোর্ড ১-৩ আর্সেনাল
ব্রেন্টফোর্ড: ব্রায়ান এমবুয়েমো ১৩’
আর্সেনাল: গাব্রিয়েল জেসুস ২৯’, মিকেল মেরিনো ৫০’, গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি ৫৩’
নতুন বছরটা জয় দিয়ে শুরু হলো আর্সেনালের। ঘরের মাটিতে ব্রেন্টফোর্ডকে হারানো সহজ কোনো বিষয় নয়। বড়দিনের আগ পর্যন্ত ঘরের মাঠকে দূর্গ বানিয়ে রাখা ব্রেন্টফোর্ড, যেন নিজেদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। আর সে সুযোগটা নিয়েছেন আর্সেনাল। হেসেখেলে নতুন বছরের প্রথম দিন জয় নিয়ে বাড়ি ফিরেছে গানার্সরা। যদিও শুরুটা করেছিলেন ব্রেন্টফোর্ডের এমবুয়েমো। অতঃপর আর্সেনালের মুহূর্মুহূ আক্রমণের সামনে খেই হারিয়ে ফেলেছে ব্রেন্টফোর্ড। এ নিয়ে টানা ১২ ম্যাচ অপরাজিত আর্সেনাল। এমনকি এই জয় দিয়ে প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয় স্থানে আবারও ফেরত এল তারা।