ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ: ম্যাচ উইক ১৪
আত্মঘাতী গোলের মহড়া, ‘চিল গাই’ উদ্যাপনে মাতোয়ারা
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ১৪ নম্বর সপ্তাহ কেমন গেল দলগুলোর। ম্যাচউইক শেষে টেবিলের অবস্থাই –বা কী রকম? ‘ইপিএল উইকলি’র ম্যাচউইক ১৪-এর ম্যাচ রিভিউ দেখে নিন একনজরে।
ইপ্সউইচ সিটি ০-১ ক্রিস্টাল প্যালেস
প্যালেস: জিন-ফিলিপ মাতেতা ৫৯’
কোচ অলিভার গ্লাসনারের মাথার ওপর ক্রমাগত বাজতে থাকা বিদায়ের ঘণ্টা যেন একটু হলেও স্বস্তি পেল। ৫ ম্যাচ পর অবশেষে জয়ের দেখা পেল ক্রিস্টাল প্যালেস। অবনমনের যুদ্ধে কিছুটা হলেও হালে পানি পেল ঈগলসরা। প্রায় এক মাস পর চোট থেকে ফিরেছেন ইবেরেজি ইজি। নিজেদের সেরা খেলোয়াড়কে ফেরত পেয়ে ফর্মে ফিরেছে ক্রিস্টাল প্যালেসও। ম্যাচের একমাত্র গোলটিও এসেছে তাঁর বাড়ানো পাস থেকে। মাতেতার একমাত্র গোলে ছয় ম্যাচ পর জয়ের দেখা পেয়েছে ক্রিস্টাল প্যালেস। এই জয় দিয়ে অবনমনের তালিকা থেকে বেড়িয়ে এসেছে তারা।
লেস্টার ৩-১ ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড
লেস্টার: জেমি ভার্দি ২’, বিলাল এল খানুস ৬১’, প্যাটসন ডাকা ৯০’
ওয়েস্ট হাম: নিকলাস ফুলক্রুগ ৯০+৩’
কোচ বদলাতেই যেন বদলে গিয়েছে লেস্টার সিটির ফর্ম। স্টিভ কুপারের অধীনে নিজেকে খুঁজে ফেরা লেস্টার, রুড ফন নিস্টারলয়ের অধীনে হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য। অনেকেই ধারণা করেছিলেন কুপারের অধীনে হয়তো ঠিকঠাক মানিয়ে উঠতে পারছে না ফক্সরা। নিস্টলরয় সেটাকে প্রমাণ করতে নিলেন মাত্র ৯৮ সেকেন্ড। লেস্টারের বিশাল জয়ে বড় অবদান অধিনায়ক জেমি ভার্ডির। মাঠে যতক্ষণ ছিলেন, ততক্ষণ টেনে নিয়েছেন দলকে। ডাগআউটে অপরপ্রান্তে অবশ্য চিন্তার বলিরেখা হুলেন লোপেতেগির কপালে। লেস্টার সমর্থকেরা ‘স্যাকড ইন দ্য মর্নিং’ গানও শুনিয়েছেন তাঁকে। বড়দিনের আগে বরখাস্ত হলেও অবাক হবে না অনেকে।
এভারটন ৪-০ উলভস
এভারটন: অ্যাশলি ইয়াং ১০’, ওরেল মানগালা ৩৩, ক্রেইগ ডাওসন (আত্মঘাতী গোল) ৪৯’, ৭২’
পাঁচ ম্যাচ পর আবারও জয়ের দেখা পেয়েছে এভারটন। সেটাও আবার ৪-০ গোলের বিশাল জয়। অথচ গত আট ম্যাচ মিলিয়ে তাদের গোলসংখ্যা ৫! তবে বড় জয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান উলভস ডিফেন্ডার ক্রেইগ ডাওসনের। উলভসের বিপক্ষে ভালো শুরু করেছিল এভারটন। প্রথমার্ধে ২-০ গোলের লিড একাই দ্বিগুণ করেছেন ডাওসন। ৪৯ মিনিটে নেওয়া কর্নার নিজেদের জালে বল জড়িয়ে দেন ডাওসন। ২৩ মিনিট পর আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। মাঝমাঠ বাড়ানো ক্রস তাঁর পায়ে লেগে জড়িয়ে পরে জালে। এভারটন স্ট্রাইকার ডমিনিক কালভার্ট-লুইসের পরপর দুই গোলের ক্রেডিট অনেকটা চুরি করে নিয়ে যান ডাওসন। মজার ব্যাপার হলো, এই মৌসুমে এভারটনের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন ডাওসন!
ম্যানচেস্টার সিটি ৩-০ নটিংহাম ফরেস্ট
সিটি: বার্নাদো সিলভা ৮’, কেভিন ডি ব্রুইনা ৩১’, জেরেমি ডকু ৫৭’
অবশেষে! সিটি খেলোয়াড়, সমর্থক থেকে শুরু করে কোচ গার্দিওলা, সবাই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। গত ২০ বছরে এমন বাজে পরিস্থিতি সাক্ষী হতে হয়নি তাঁদের। ১ মাস ধরে জয়শূন্য সিটি, ম্যাচের হিসেবে ৭ ম্যাচ! সিটির ‘অবিস্মরণীয়’ জয়ের কারিগর মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনা। চোট কাটিয়ে প্রায় আড়াই মাস পর ফিরেছেন মূল একাদশে। ফিরেই বদলে দিয়েছেন সিটির খেলার ধরন। নিজে গোল করেছেন, গোল করিয়েছেন সতীর্থদের দিয়ে। আট মিনিটে তাঁর বাড়ানো বল থেকে দলকে এগিয়ে নেন বার্নাদো সিলভা। ৩১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন নিজে। ৫৭ মিনিটে শেষ গোল করেন ডকু। এই জয় দিয়ে শীর্ষ চারে ফিরল সিটি।
নিউক্যাসেল ইউনাইটেড ৩-৩ লিভারপুল
নিউক্যাসেল: অ্যালেজেন্দার ইসাক ৩৫’, অ্যান্থনি গর্ডন ৬২’, ফ্যাবিয়ান স্কার ৯০’
লিভারপুল: কার্টিস জোনস ৫০’, মোহাম্মদ সালাহ ৬৮’, ৮৩’
সিটির ফর্মে ফেরার দিনে হোঁচট খেয়েছে লিভারপুল। এই মৌসুমে তৃতীয়বারের মতো পয়েন্ট হারালো লিভারপুল। মোহাম্মদ সালাহর অসাধারণ পারফরম্যান্সও লিভারপুলকে এনে দিতে পারেনি জয়। লিভারপুলের করা তিন গোলের তিনটিতেই ছিল সালাহর অবদান। দুটি করেছেন, আরেকটি করিয়েছেন। তবুও বৃষ্টিস্নাত নিউক্যাসেল থেকে অল রেডসদের ফিরতে হয়েছে ১ পয়েন্ট নিয়ে। নিউক্যাসেলের হাই ইন্টেনসিটির সঙ্গে মানিয়ে নিতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে লিভারপুলকে। পুরো ম্যাচেই ফন ডাইকদের টতস্থ করে রেখেছে তারা। এ ছাড়াও ট্রেন্ট অ্যালেক্সেন্ডার আর্নল্ডের অভাব বেশ ভালোই ভুগিয়েছে লিভারপুলকে। একদম শেষে মিনিটের গোলে লিভারপুলের কাছ থেকে পয়েন্ট ছিনিয়ে নিয়েছেন ফ্যাবিয়ান স্কার।
সাউদাম্পটন ১-৫ চেলসি
সাউদাম্পটন: জো আরিবো ১১’
চেলসি: অ্যাক্সেল দিসাসি ৭’, ক্রিস্তোফার এনকুকু ১৭’, ননি মাদুয়েকে ৩৪’, কোল পালমার ৭৬’, জ্যাডন সানচো ৮৭’
এনজো মারেসকার অধীনে চেলসির জয়যাত্রা চলছেই। টেবিলের তলানিতে থাকা সাউদাম্পটনকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় অবস্থানে উঠেছে ব্লুজরা। ভাগ্য সহায় থাকলে গোলের ব্যবধান বেশিও হতে পারত। তিনবার গোলপোস্টে লেগে ফেরত এসেছে বল। অথচ চেলসি মাঠে নেমেছিল বড়সর পরিবর্তন নিয়ে। কিন্তু মাঠে যেন তার বিন্দুমাত্র প্রভাব পরেনি। প্রথমার্ধেই তারা এগিয়ে যায় ৩-১ গোলে। দ্বিতীয়ার্ধে মার্ক কুকুরেলার চুল টেনে লাল কার্ড দেখেন সাউদাম্পটন অধিনায়ক জ্যাক স্টিফেনস। ১০ জনের সাউদাম্পটনের জালে আরও দুই গোল যোগ করে চেলসি। ম্যাচের ৮৭ মিনিটে সাউদাম্পটনের কফিনে শেষ পেরেক মারেন জ্যাডন সানচো। এটাই ছিল চেলসির জার্সিতে সানচোর প্রথম গোল।
আর্সেনাল ২-০ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
আর্সেনাল: জারেন টিমবার ৫৪’, উইলিয়াম সালিবা ৭৩’
‘পুরো ম্যাচের সমীকরণ বদলে দিয়েছে কর্নার। ম্যাচটা আমরা কর্নারের কাছেই হেরেছি।’ ইউনাইটেডের জার্সিতে নিজের প্রথম হার এভাবেই অকপটে স্বীকার করলেন রুবেন আমোরিম। টানা ২১ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর অবশেষে হারের মুখ দেখলেন তিনি। পরাজয়ের সেই তিক্ত স্বাদ উপহার দিলেন মিকেল আর্তেতা। আর্তেতা ম্যাচ শুরু করেছিলেন বাস পার্ক স্টাইলে। একমাত্র ভরসা ছিল কাউন্টার অ্যাটাক আর সেট-পিস। আর তাতেই সফল। গানার্স ডিফেন্স ভাঙ্গতে ব্যর্থ হয়েছে ইউনাইটেডের আক্রমণভাগ। আর কাউন্টারে গিয়ে গোল আদায় করে এনেছে আর্সেনাল। তাদের করা ২টি গোলই এসেছে কর্নার থেকে। রাইসের বাড়ানো কর্নার থেকে দলকে এগিয়ে নেন জারেন টিম্বার। ১৯ মিনিট পর থমাস পার্তের বাড়ানো কর্নার থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন উইলিয়াম সালিবা। পুরো ম্যাচে মোট ১৩টি কর্নার পেয়েছে আর্সেনাল। ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারলে হয়তো ব্যবধান আরও বেশিই হতো।
অ্যাস্টন ভিলা ৩-১ ব্রেন্টফোর্ড
ভিলা: মরগান রজার্স ২১’, অলি ওয়াটকিনস (পেনাল্টি) ২৮’, ম্যাটি ক্যাশ ৩৪’
ব্রেন্টফোর্ড: মিকেল ড্যামসগার্ড ৫৪’
পুরো দেড় মাস অপেক্ষার পর আবারও জয়ের মুখ দেখল অ্যাস্টন ভিলা। আট ম্যাচ পর জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল উনাই এমেরির শিষ্যরা। প্রায় এক বছর পর দলে ফিরেছেন টাইরন মিংস। চোট নিয়েও একাদশে ছিলেন এমি মার্তিনেজ। এত হিসাব-নিকাশ মাথায় নিয়ে জয়ের দেখা পেয়েছে অ্যাস্টন ভিলা। এই হার দিয়ে ব্রেন্টফোর্ডের অ্যাওয়ে রেকর্ড রইল আগের মতোই। ঘরের মাটিতে অসাধারণ খেলা ব্রেন্টফোর্ড এখনো প্রতিপক্ষের মাটি থেকে ছিনিয়ে আনতে পারেনি কোনো জয়। মিকেল ড্যামসগার্ডের করা গোল শুধু ব্যবধানই কমিয়েছে।
ফুলহাম ৩-১ ব্রাইটন
ফুলহাম: অ্যালেক্স আইওবি ৪’, ৮৭’, ম্যাট ও’রাইলি (আত্মঘাতী গোল) ৭৯’
ব্রাইটন: কার্লোস বালেবা ৫৬’
লাল কার্ড দেখায় অধিনায়ককে ছাড়াই মাঠে নামতে হয়েছিল ফুলহামকে। অধিনায়কের অভাবটা বিন্দুমাত্র বুঝতে দেননি অ্যালেক্স আইওবি। তাঁর জোড়া গোলে ব্রাইটনকে হারিয়েছে ফুলহাম। ম্যাচের শুরুতেই গোলরক্ষকের হাস্যকর ভুলে বল পেয়ে যান আইওবি। দলকে এগিয়ে নিয়ে যান চতুর্থ মিনিটেই। দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাইটনকে সমতায় ফেরান কার্লোস বালেবা। কর্নার থেকে নিজেদের জালে বল জড়িয়ে দেন ম্যাট ও’রাইলি। ৮৭ মিনিটে অসাধারণ এক গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন আইওবি।
বোর্নমাউথ ১-০ টটেনহাম হটস্পার্স
বোর্নমাউথ: ডিন হুইসেন ১৭’
যত ম্যাচ গড়াচ্ছে, তত যেন ‘প্রিমিয়ার লিগের রবিনহুড’ খেতাবটা নামের পাশে সেটে যাচ্ছে টটেনহামের। গত ছয় ম্যাচে টটেনহামের মাত্র এক জয়। সেটাও ম্যানচেস্টার সিটিকে ৪-০ গোলে হারিয়ে। তবে এই মৌসুমে বোর্নমাউথকে ছোট দল বলা সম্ভব না। শিরোপা প্রত্যাশী আর্সেনাল আর ম্যান সিটিতে হারিয়েছে তারা। টটেনহাম তো সে তুলনায় নস্যি। বোর্নামাউথের হয়ে সকল আলো কেড়ে নিয়েছেন ডিন হুইসেন। ১৯ বছর বয়সী ডিফেন্ডারের গোলেই জয় নিশ্চিত হয়েছে ‘চেরিস’দের। তাদের প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী গোলদাতা এখন তিনি। গোলের পর জনপ্রিয় মিম ‘চিল গাই’ পোজে উদ্যাপন করেন তিনি। মৌসুমের প্রথম গোল, জয় আর আইকনিক উদ্যাপন; সব মিলিয়ে ডাচ ডিফেন্ডারের জন্য এ যেন এক ‘চিল’ করার মতো সপ্তাহ।