বিশ্বকাপের বাকি নেই দুই মাসও। অক্টোবরের ৫ তারিখ পর্দা উঠতে যাচ্ছে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টের। মহাকাশ থেকে যাত্রা শুরু করা বিশ্বকাপ শিরোপা এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে দেশে–বিদেশে। বিশ্বকাপ নিয়ে প্রস্তুতি, জল্পনা-কল্পনা কোনো কিছুরই অভাব নেই। অভাব শুধু একটা জিনিসেরই। বিশ্বকাপের সূচি!
বিশ্বকাপের ৫০ দিন আগে এসেও বিশ্বকাপের ফিকশ্চার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ক্রিকেটের অভিভাবক আইসিসি ও ভারতের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক বিসিসিআই। প্রতিটি রাজ্য ও তাদের বোর্ডের মনরক্ষা করতে গিয়ে বারবার দ্বিধায় পড়েছে তারা। যে কারণে বিশ্বকাপের ভেন্যু গিয়ে ঠেকেছে ১০-এ! সমস্যা মেটেনি তারপরও। প্রতিদিনই নতুন নতুন কোনো সমস্যা নিয়ে হাজির হচ্ছে রাজ্যগুলো। যার বদৌলতে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সূচি বদলেছে আইসিসি। আর তাতে পরিবর্তিত হয়েছে বাংলাদেশের ম্যাচের দিন-তারিখ।
জুন মাসের শেষ দিকে বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণা করে আইসিসি। কিন্তু গতকাল আবারও সেই সূচিতে পরিবর্তন এনেছে তারা। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কারণ দেখায়নি তারা। তবে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের দুটি বড় উৎসবের সঙ্গে বিশ্বকাপের বড় ম্যাচের দিনক্ষণ মিলে যাওয়ায় এই পরিবর্তন আনা। আর সে পরিবর্তন আনতে গিয়েই বাংলাদেশের তিনটি ম্যাচের দিন-তারিখ আর সময় সবটাই পাল্টে গিয়েছে। তাতে কি আদতে লাভ হলো বাংলাদেশের? নাকি ক্ষতি?
ম্যাচ ২: প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, ভেন্যু ধর্মশালা
পূর্বের সূচি: ১০ অক্টোবর, দিবা রাত্রি
নতুন সূচি: ১০ অক্টোবর, দিন
বাংলাদেশের প্রথম পরিবর্তন এসেছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে। ভেন্যু কিংবা তারিখ নয়, বরং পরিবর্তন হয়েছে ম্যাচের সময়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি দিবা-রাত্রির হওয়ার কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করে দিনের ম্যাচে পরিণত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য ব্যাপারটা কিছুটা চিন্তারই বটে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পরিচয় ইংল্যান্ডের ত্রাস হিসেবেই। টানা দুই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে ছিটকে ফেলে মিরাকলের জন্ম দিয়েছে টাইগার বাহিনী। বিশ্বকাপে চারবারের দেখায় ২ জয় আর ২ হার বাংলাদেশের। মজার ব্যাপার কি জানো? বাংলাদেশের দুটি জয়ই দিবা-রাত্রির ম্যাচে। আর দুটি হারই দিনের ম্যাচে। ধর্মশালায় দিবা-রাত্রির ম্যাচ হওয়ায় আর আবহাওয়া ও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় ইংল্যান্ডকে হারানোর একটা চাপা স্বপ্ন ছিল টাইগারদের মনে। দিনের খেলাতে খুব যে একটা পরিবর্তন হয়েছে তা নয়, কিন্তু ইতিহাসের সমর্থনে কিছুটা ভাটা পড়ল বটে। তা ছাড়া ধর্মশালার উইকেট পেস সহায়ক। আবহাওয়াও বেশ ঠান্ডা। অক্টোবরের সকালে পেস সহায়ক পিচ থেকে সুবিধা আদায় করে নিতে পারে ইংল্যান্ডের শক্তিশালী পেস আক্রমণ।
ম্যাচ ৩: প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড, ভেন্যু চেন্নাই
পূর্বের সূচি: ১৪ অক্টোবর, দিন
নতুন সূচি: ১৩ অক্টোবর, দিবা রাত্রি
বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচকে টার্গেট করে রেখেছিল বাংলাদেশ। চেন্নাইয়ের স্পিন পিচ সঙ্গে ৩ দিনের বিশ্রাম; সব মিলিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টাইগারদের ফেবারিট ভাবা দোষের কিছু ছিল না। কিন্তু সেই ম্যাচটাই এগিয়ে আনা হয়েছে এক দিন। এমনকি দিনের ম্যাচের সময় পরিবর্তন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাতে। অর্থাৎ ম্যাচটি হবে দিবা-রাত্রির। রাতের পিচে পরে বোলিং করলে বাংলাদেশ যে স্পিন সুবিধা হারাবে, তা বলাই বাহুল্য।
মূলত ভারত–পাকিস্তানের ম্যাচ ১৪ অক্টোবরে নিয়ে আসার বলি হয়েছে বাংলাদেশের ম্যাচটি। ভারত-পাকিস্তানের হাই ভোল্টেজ ম্যাচের দিন অন্য কোনো ম্যাচ রাখতে চায়নি আইসিসি। তাই বাংলাদেশের ম্যাচ এক দিন এগিয়ে আনা। তাতে অবশ্য কপালটা পুড়ল বাংলাদেশেরই।
ম্যাচ ৯: প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ভেন্যু পুনে
পূর্বের সূচি: ১২ নভেম্বর, দিন
নতুন সূচি: ১১ নভেম্বর, দিন
পুনেতে বাংলাদেশের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচও এগিয়ে আনা হয়েছে এক দিন। যদিও এতে সময়সূচির পরিবর্তন হয়নি। দিনের ম্যাচ দিনেই রয়ে গিয়েছে বটে। কিন্তু এক দিন এগিয়ে আসায় বাংলাদেশের প্রস্তুতিতে কিছুটা ভাটা পড়তে পারে। কথা ছিল বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দিয়েই ইতি টানা হবে গ্রুপ পর্বের। সে অনুযায়ী দুই দলই মাঠে নামতো সব হিসাব–নিকাশ মাথায় রেখে। যা আর হচ্ছে না। পরিবর্তিত সূচিতে এবার সে সুযোগ পাচ্ছে ভারত।
দলের অবস্থা, চেনা কন্ডিশন আর টিম কম্বিনেশন; সব মিলিয়েই এই বিশ্বকাপের ডার্ক হর্স বাংলাদেশ। সমর্থক থেকে শুরু করে খেলোয়াড়, সবারই লক্ষ্য বিশ্বজয়। লক্ষ্য যখন বিশ্বজয়, তখন সামান্য সূচিতে পরিবর্তন দেখে ভয় পেলে চলবে না। বরং বাঘের গর্জন যাতে পৌঁছে যায় পৃথিবীর প্রতিটি কোনায়, সে লক্ষ্যই সবার। সে লক্ষ্য অর্জনে গর্জনটা কত বড় হয়, তার জন্যই অপেক্ষা ৭ অক্টোবরের।