অলিম্পিক ২০২৪
অলিম্পিকে কেমন করলেন বাংলাদেশি অ্যাথলেটরা?
‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ শেষ হতে এখনো কিছুদিন বাকি। কিন্তু এর আগেই যাত্রা শেষ হয়ে গেছে বাংলাদেশি অ্যাথলেটদের। এবারের অলিম্পিকে বাংলাদেশ থেকে সুযোগ পেয়েছিলেন পাঁচজন অ্যাথলেট। কেমন ছিল তাঁদের অলিম্পিক-যাত্রা?
প্রায় ২০ কোটি মানুষের দেশ হওয়ার পরও প্রতি অলিম্পিকেই বাংলাদেশকে তাকিয়ে থাকতে হয় অলিম্পিক কমিটির দিকে, ওয়াইল্ড কার্ডের আশায়। বিভিন্ন ইভেন্টে দুর্বল দেশগুলোকে বেশ কিছু ইভেন্টে ওয়াইল্ড কার্ড দেওয়া হয় অলিম্পিক কমিটির পক্ষ থেকে। সেই ওয়াইল্ড কার্ড দিয়েই অলিম্পিকের মঞ্চে জায়গা করে নেয় অ্যাথলেটরা। দুই অলিম্পিক ধরে সে ধারায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে, ২০১৬ অলিম্পিকে গলফার সিদ্দিকুর রহমান, ২০২০ অলিম্পিকে আর্চার রোমান সানা আর ২০২৪ সালে আর্চার সাগর ইসলাম সরাসরি সুযোগ পেয়েছেন অলিম্পিক ইভেন্টে। এ ছাড়া ১৯৮৪ অলিম্পিক থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক অ্যাথলেটই অলিম্পিক খেলেছেন ওয়াইল্ড কার্ড দিয়ে। বাংলাদেশ থেকে প্যারিস অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়া অ্যাথলেটরা হলেন:
ওয়াইল্ড কার্ড
গতানুগতিক অলিম্পিক স্টেডিয়াম ছেড়ে এবারের অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল সিন নদীতে। পুরো বিশ্ব একনাগাড়ে উপভোগ করেছে প্যারিস আর সিন নদীর সৌন্দর্য। নৌকায় করে সিন নদীতে প্যারেড করেছে প্রতিটি দেশ। অনেক দেশ নিজস্ব নৌকা না পেলেও মাত্র ৫ জন অলিম্পিয়ান নিয়েও নিজেদের নৌকা পেয়েছে বাংলাদেশ। এবার অলিম্পিকে বাংলাদেশের পতাকাবাহক ছিলেন দুজন। আর্চার সাগর ইসলাম ও সাঁতারু সোনিয়া ইসলাম। এবার আসা যাক তাঁদের পারফরম্যান্স নিয়ে।
সাগর ইসলাম: আর্চারি
অলিম্পিকে বাংলাদেশের যে পাঁচজন অ্যাথলেট সুযোগ পেয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আশা ছিল সাগর ইসলামকে কেন্দ্র করেই। একে তো অলিম্পিকে সরাসরি সুযোগ পাওয়া, সেই সঙ্গে অলিম্পিক কোয়ালিফিকেশন টুর্নামেন্টে রৌপ্যপদকও জয় করেছিলেন তিনি। বিকেএসপি থেকে উঠে আসা এই আর্চার ১৬ বছর বয়স থেকেই নিয়মিত লড়ছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। কিন্তু অলিম্পিকে সাগরের পারফরম্যান্স যতটা না খারাপ ছিল, তাঁর থেকে খারাপ ছিল ভাগ্য। প্রথম পর্বেই তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন গত অলিম্পিকের রুপাজয়ী আর্চার ইতালির মাউরো নেসপোলি। কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষেও নার্ভ ধরে রেখেছিলেন সাগর। ফলাফলে ০-৬ সেটে হার দেখালেও প্রতিটি সেটেই বেশ ভালো লড়াই করেছিলে তিনি। ৩০-২৭, ২৭-২৬, ২৮-২৫ সেটে হেরে প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় তাঁকে। ৬৪ জন আর্চারের মধ্যে ৪৫তম হয়ে শেষ হয় সাগরের অলিম্পিক-যাত্রা।
মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম: ১০ মিটার এয়ার রাইফেল
অলিম্পিক বাছাইপর্বে মাত্র ০.৩ পয়েন্টের জন্য বাদ পরেছিলেন শুটার রবিউল ইসলাম। অলিম্পিকে সুযোগ পেতে যেখানে দরকার ছিল ৬২৮.৩ পয়েন্ট সেখানে রবিউল শেষ করেছিলেন ৬২৮ পয়েন্ট নিয়ে। যদিও ওয়াইল্ড কার্ড দিয়ে অলিম্পিকের মূল আসরে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয় ২৫ বছর বয়সী অ্যাথলেটের। তবে মূল ইভেন্টে হতাশ করেছেন তিনি। ৬ রাউন্ডে মোট ৬২৪.২ পয়েন্ট অর্জন করেন এই শুটার। ৪৯ জন শুটারের মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল ৪৩তম।
ইমরানুর রহমান: পুরুষ ১০০ মিটার স্প্রিন্ট
বাংলাদেশের দ্রুততম মানব ইমরানুর রহমান ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রি পেয়েছিলেন প্যারিস অলিম্পিকে। ফাইনালে সুযোগ না পেলেও প্রাথমিক পর্ব পার হবেন, এমনটা আশা ছিল অনেকের। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে ইমরানুর রহমান দৌড় শেষ করেছেন ১০.৭৩ সেকেন্ডে। গত কয়েক বছরের মধ্যে তাঁর সবচেয়ে বাজে টাইমিং এটি। ৪৬ জন স্প্রিন্টারের মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল ২৪তম। নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলে পরবর্তী পর্বের জন্য খুব সহজেই উত্তীর্ণ হতে পারতেন তিনি।
সামিউল ইসলাম: পুরুষদের ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল সাঁতার
বাংলাদেশের সাঁতারু সামিউল ইসলাম ছিলেন সাঁতারের ২ নম্বর হিটে। তাঁর সঙ্গে সাঁতারে নামা ৭ জন সাঁতারুর মধ্যে কেউই পরবর্তী পর্বে জায়গা করে নিতে পারেননি। ৫৩.১০ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাতজনের মধ্যে পঞ্চম হয়ে হয়ে সাঁতার শেষ করেছেন তিনি। ৭৯ জন সাঁতারুর মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল ৬৯তম।
সোনিয়া খাতুন: নারীদের ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইল সাঁতার
এবারের অলিম্পিকে বাংলাদেশের একমাত্র নারী প্রতিনিধি ছিলেন সোনিয়া খাতুন। নারীদের ৫০ মিটার ফ্রি স্টাইল সাঁতারে ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রি ছিল তাঁর। তিনি সাঁতার শেষ করেছেন ৩০.৫২ সেকেন্ডে। ৭৯ জন প্রতিযোগীর মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল ৬৪তম।