৫ অক্টোবর ২০২৩ শুরু হয়েছে পুরুষদের এক দিনের বিশ্বকাপ মিশন। বরাবরের মতো বাংলাদেশও অংশগ্রহণ করেছে এই বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে। বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তিনি এবার খেলছেন তাঁর ক্যারিয়ারের পঞ্চম বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও বলা যায় তাঁকে। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের সঙ্গে বিশ্বকাপ নিয়ে কথা বলেছেন ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। সেই ভিডিও আইসিসি প্রকাশ করেছে তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে। চলো জেনে নিই, সাকিব কী নিয়ে কথা বললেন আইসিসির সঙ্গে।
‘আমার মনে হয় আমি কখনো হারতে চাই না। কোনো পরিস্থিতিতেই নয়। আমি সব সময় জিততে চাই। সেটা হোক আমার বন্ধুদের সঙ্গে, গ্রাম বা মহল্লায় কিংবা যেকোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে। আমি সব সময় জয়ের জন্য খেলি। হয়তো আমার এই ম্যাচ জেতার ক্ষুধার কারণে আমি আজ এখানে।’
‘ওডিআই ফরম্যাট আমার সবচেয়ে পছন্দের। প্রথম দিকে আমরা শুধু ওডিআই খেলতাম। শৈশবে আমি বুঝতাম না ক্রিকেট কীভাবে খেলতে হয়। কোন ফরম্যাটের মানে কী। যেমন ওডিআই আর টি-টোয়েন্টিতে কিছু পার্থক্য আছে। আবার টেস্টের খেলার নিয়ম সম্পূর্ণ আলাদা।’
‘২০১৯ বিশ্বকাপ ছিল আমার সেরা বিশ্বকাপ। আমি রান ও উইকেটের জন্য পাগল হয়ে ছিলাম। আমার পক্ষে যা যা করা সম্ভব, আমি সব করেছি ২০১৯ বিশ্বকাপে। সাফল্যও পেয়েছি। ওই বিশ্বকাপের আগে আমি দলের বাইরে ছিলাম অনেক দিন। দলের সঙ্গে প্র্যাকটিস করতে পারিনি। তাই একাই চেষ্টা করেছি নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার।’
‘ওই সময় রাত ১০টা পর্যন্তও জিমে কাটিয়েছি আমি। যা আগে কখনো করিনি। প্রায় তিন মাস এভাবে খেটেছি। আমার মধ্যে এটা কাজ করেছিল যে আমি বিশ্বকে দেখিয়ে দেব, আমি কী করতে পারি। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আমি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৪ বলে ৭৫ রানের ইনিংস খেলি। তারপর আর আমাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই ম্যাচেই প্রথম উইকেট পেয়েছিলাম। বোল্ড করেছিলাম এইডেন মার্করামকে। ওটা আমার ২৫০তম উইকেট ছিল। এটা যে দ্রুততম ২৫০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড ছিল, তা আমি জানতাম না। আমি ওভাবে চিন্তা করে কখনো খেলিও না। আমি আমার মতো করে খেলাটা উপভোগ করতে চাই। সৌভাগ্যবশত আমি খেলাটা উপভোগ করতে পেরেছিলাম ২০১৯ বিশ্বকাপে।’
‘আমি এখন তিন ফরম্যাটেই অধিনায়ক। ২০১৯ সালের আগে ও পরেও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছি। আরও আগে টানা ছয় বছর এক দিনের ম্যাচের অধিনায়ক ছিলাম।’
‘আমি বাংলাদেশের জন্য খেলি। যত দিন ফিট থাকি, পারফর্ম করতে পারি, তত দিন দেশের জন্য খেলব।’
আইসিসির এই ভিডিওতে দেখা গেছে ২০২৩ বিশ্বকাপের সহ-অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকেও। সাকিব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁকে ভালোবাসি। তিনি নতুন খেলোয়াড়দের দারুণভাবে উজ্জীবিত করতে পারেন। সব সময় জয় চান তিনি। আমরা তাঁর প্রতিনিধিত্ব পছন্দ করি।’
২০০৬ সালে ১৯ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় সাকিবের। ২০০৯ সালে দলের সহ-অধিনায়ক হন। ২০১১ সালে এক দিনের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক। এর আগেই অবশ্য টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এখনো তিনি খেলে যাচ্ছেন বীরদর্পে। গড়ছেন অনেক অনেক রেকর্ড। আজ আর সে রেকর্ডের দিকে যাচ্ছি না। বরং অধিনায়ক সাকিব কতটা সফল, তা একটু দেখে নিই।
২০২৩ বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত তিনি ৫৬টি এক দিনের ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে জয় পেয়েছেন ২৬টিতে। ৩৯টি টি–টোয়েন্টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে জয় এনে দিয়েছেন ১৬টি। আর ১৯টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে তাঁর নেতৃত্বে জয় এসেছে চারবার।
ক্যারিয়ারে ৬৬টি টেস্ট ম্যাচে প্রায় ৪০ গড়ে সাকিব রান করেছেন সাড়ে ৪ হাজার। সঙ্গে ৩–এর নিচে ইকোনমিতে নিয়েছেন ২৩৩টি উইকেট। এক দিনের ক্রিকেটে ২৪১ ম্যাচে প্রায় ৩৮ গড়ে সাড়ে ৭ হাজার রানের সঙ্গে আছে ৩১১টি উইকেট। দেশের হয়ে খেলার পাশাপাশি প্রায় ২০টি ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক দলের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা আছে সাকিবের ঝুলিতে।
এত সব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে এবারের বিশ্বকাপে তিনি কত দূর নিয়ে যেতে পারেন, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।