ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ: ম্যাচউইক ১৩
এই সপ্তাহেই কি নিশ্চিত হচ্ছে শিরোপা?
চ্যাম্পিয়নস লিগের দামামা থামতে না থামতেই নতুন সপ্তাহে পা দিল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। ম্যাচউইক ১৩-তে মাঠে নামার আগে দলগুলোর অবস্থা, মাঠের ভেতরে ও বাইরে খবরাখবর জেনে নেওয়া যাক একনজরে।
ব্রাইটন বনাম সাউদাম্পটন
ফর্মের তুঙ্গে থাকা বুঝি একেই বলে। ১০ জনের দল নিয়ে বোর্নমাউথের মাঠ থেকে জয় ছিনিয়ে এনেছে ব্রাইটন। শেষ ছয় ম্যাচের চারটিতেই জয়। ইউরোপের স্বপ্ন এখন কোচ থেকে সমর্থক সবার চোখে। জার্মান কোচ ফাবিয়ান হুৎজলার অবশ্য সতর্ক। পচা শামুকে কাটতে পারে পা। সেই শামুকটা আর কেউ নয়, লিগ টেবিলের তলানিতে থাকা সাউদাম্পটন।
লিগ টেবিলের তলানিতে থাকা দল সব সময়ই ভয়ংকর। অবনমন থেকে বাঁচতে মরণকামড় দেয় তারা। গত সপ্তাহে লিভারপুলের বিপক্ষে কিছুক্ষণের জন্য লিডও ধরে রেখেছিল সাউদাম্পটন। একই ধারা বজায় রাখলে ব্রাইটনের বিপক্ষে ফলাফল তাদের পক্ষেও যেতে পারে।
ব্রেন্টফোর্ড বনাম লেস্টার সিটি
মৌসুমের দ্বিতীয় কোচ হিসেবে বরখাস্তের চিঠি পেলেন লেস্টার সিটির কোচ স্টিভ কুপার। চেলসির বিপক্ষে ২-১ গোলে হারার পরপরই তাঁকে বরখাস্ত করে ফক্সরা। লেস্টার ডাগআউটে তাঁর জায়গা হয়েছিল মাত্র ১৫৭ দিনে! পরবর্তী কোচ হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ রুড ফন নিস্টরলয়।
একদিকে লেস্টারের ডাগআউটে যখন তথৈবচ অবস্থা, তখন ব্রেন্টফোর্ড আবারও ফিরছে নিজেদের ঘরে। আর নিজেদের ঘর মানেই যেন দুর্গ। নিজেদের মাঠে ফর্ম ধরে রাখতে পারলে ম্যাচটা সহজই হতে চলেছে ব্রেন্টফোর্ডের জন্য।
ক্রিস্টাল প্যালেস বনাম নিউ ক্যাসল ইউনাইটেড
অবনমনের ছড়ি ঘুরছে ক্রিস্টাল প্যালেসের মাথায়। অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে এগিয়ে থেকেও ১ পয়েন্ট নিয়ে ফিরতে হয়েছে তাদের। এ নিয়ে শেষ পাঁচ ম্যাচে তাদের নামের পাশে দুই জয়, দুই ড্র। দ্রুত উন্নতি না করতে পারলে বিদায়ঘণ্টা বাজতে চলেছে কোচ অলিভার গ্লাসনারের।
খুব একটা স্বস্তিতে নেই নিউ ক্যাসল ইউনাইটেডও। ওয়েস্টহাম ইউনাইটেডের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে তারা হেরেছে ২-০ গোলে। এক হার তাদের ছিটকে দিয়েছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের লড়াই থেকে। লড়াইয়ে ফিরতে হলে জয়ের বিকল্প নেই তার কাছে।
নটিংহাম ফরেস্ট বনাম ইপ্সউইচ টাউন
পরপর দুই ম্যাচ হেরে ইউরোপের লড়াই থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে ফরেস্ট। গত সপ্তাহে আর্সেনালের সামনে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেনি তারা। ৩-০ গোলের হার মানসিকভাবেও পিছিয়ে দিয়েছে দলটিকে। মৌসুমের শুরুতে যেভাবে চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্য লড়াই করছিল নটিংহাম, সেই ধারায় ফিরতে হলে জয়ের বিকল্প নেই। তবে এই সপ্তাহের লড়াইটা তুলনামূলক কঠিন। অবনমনের শঙ্কায় থাকা ইপ্সউইচ টাউন আছে ফর্মে। হারিয়েছে টটেনহামকে, মাটি করে দিয়েছে রুবেন আমোরিমের অভিষেক। মৌসুমের শুরুতে খেই হারানো ইপ্সউইচ, অনেকটাই ফর্মে ফিরেছে কেইরান ম্যাককেনার অধীনে। তালিকার নিচের দিকে বলে সমীহ করার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।
উলভস বনাম বোর্নমাউথ
টানা দুই ম্যাচ জিতে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে উলভস। তবে কোচ গ্যারি ও’নেইলের চাকরিটা যে বেঁচে গেছে এবারের মতো, তা এখনো বলা যাচ্ছে না। এখনো অবনমনের শঙ্কা মাথার ওপর। জয়ের ধারা ধরে রাখতে না পারলে নতুন কোচের সন্ধানে নামতে পারে নেকড়েরা।
বোর্নমাউথ আছে ঠিক মুদ্রার উল্টো পাশে। মাসের শুরুটা হয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে। এরপর থেকে যেন নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে তারা। টানা দুই ম্যাচে হার, গত সপ্তাহে হারতে হয়েছে ১০ জনের ব্রাইটনের কাছে। মৌসুমের শুরুতে যে ফর্ম ছিল, সেটা উবে গেছে অনেকটাই। ইউরোপের জন্য লড়াই শুরু করা বোর্নমাউথের অবস্থান এখন পয়েন্ট টেবিলের মাঝামাঝি। ফর্মের উন্নতি না হলে এখান থেকেই মৌসুম শেষ করতে হবে তাদের।
ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড বনাম আর্সেনাল
প্রায় দেড় মাস পর আবারও জয়ের ধারায় ফিরেছে ওয়েস্ট হাম। মৌসুমের শুরুতে বিশাল খরচের পর দলের এমন হাল, হুলেন লোপেতেগির চাকরি হুমকির মুখেই ফেলে দিয়েছিল। নিউ ক্যাসলের মাঠে গিয়ে তাদের হারিয়ে সেই দুশ্চিন্তা অনেকটাই দূর হয়েছে হ্যামার্সদের। বাড়তি চাপ ছাড়াই লোপেতেগি নামবেন লন্ডন ডার্বিতে।
অধিনায়ক মার্টিন ওডেগার্ডের প্রত্যাবর্তনে সঙ্গে সঙ্গে আবারও ফর্মে ফিরেছে আর্সেনাল। আন্তর্জাতিক বিরতির পর দুই ম্যাচেই বিশাল জয় পেয়েছে মিকেল আর্তেতার শিষ্যরা। নটিংহাম ফরেস্টকে ৩-০, স্পোর্তিংয়ের মাঠে গিয়ে তাদের ৫-১ গোলে হারিয়ে এসেছে গানার্সরা। লন্ডন ডার্বির আগে তারাও বেশ ফুরফুরে মেজাজে।
চেলসি বনাম অ্যাস্টন ভিলা
চেলসি এই মৌসুমে টাইটেলের জন্য লড়বে—মৌসুমের শুরুতে এ কথা শুনলে হেসেই উড়িয়ে দিতেন অনেকে। কিন্তু ইতালিয়ান কোচ এনজো মারেসকার অধীনে এটাই এখন সত্য। ডাগআউটে দাঁড়িয়ে আপাদমস্তক বদলে দিয়েছেন ব্লুজদের। লিভারপুল আর ম্যান সিটির পেছনেই তাদের অবস্থান। যদিও তাদের ম্যাচের ওপরই নির্ভর করছে চেলসির ভাগ্য। তবে নিজেদের ফর্ম ধরে রাখতে পারলে শিরোপার স্বপ্ন আলো দেখতে পারে।
একই কথা প্রযোজ্য অ্যাস্টন ভিলার ক্ষেত্রেও। টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে চাইলে ম্যাচে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। গত সপ্তাহে ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ড্র বেশ বড় প্রভাব ফেলেছে পয়েন্ট টেবিলে। ইউরোপের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ এখন ৯ দল! একটু হোঁচট খাওয়া মানেই পিছিয়ে পড়া। সেই সুযোগ নিশ্চয় নিতে চাইবেন না কোচ উনাই এমেরি।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বনাম এভারটন
প্রিমিয়ার লিগের চ্যালেঞ্জটা হাতেনাতে বুঝতে শুরু করেছেন রুবেন আমোরিম। এখানে শুধু দল সামলালেই চলে না, সামলাতে হয় পারিপার্শ্বিক সবকিছুই। নিজেই স্বীকার করেছেন, গত ১০ দিনে যত ইন্টারভিউ দিয়েছেন, চার বছরেও তার ছিটেফোঁটা দেননি তিনি। সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই নতুন চ্যালেঞ্জ আমোরিমের হাতে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে অভিষেক হতে যাচ্ছে তার। ঘরের মাটিতে সমর্থকদের সামনে নিজেকে প্রমাণ করার সুবর্ণ সুযোগ পর্তুগিজ কোচের সামনে।
শেষ চার ম্যাচের ৩টিতেই ড্র করেছে এভারটন। এমনকি মৌসুমের অন্যতম ভয়ানক অ্যাটাক ব্রেন্টফোর্ডকে পর্যন্ত আটকে দিয়েছে শন ডয়েচের দল। এখনো ট্যাকটিকসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না–পারা ইউনাইটেডকে বাগে ফেলতে পারলে একটি জয়ের দেখা পেয়েও যেতে পারে তারা।
টটেনহাম হটস্পার্স বনাম ফুলহাম
মৌসুমের শুরুটা বেশ ভালোই হয়েছিল ফুলহামের।। কিন্তু মাঝপথে এসে হোঁচট খায় মার্কো সিলভার শিষ্যরা। সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে যেই না সামাল দিয়ে উঠেছে, তখনই আবার হোঁচট। অবনমনের শঙ্কায় থাকা উলভসের কাছে ৪-১ গোলে হেরেছে তারা। সব মিলিয়ে ফুলহাম বেশ ব্যাকফুটে।
টটেনহাম অবশ্য আছে সপ্তম আসমানে। তবে আগ্নে পোস্তেকোগলুর অধীনে তাদের ফর্ম দুলছে পেন্ডুলামের মতো। শেষ ছয় ম্যাচে তারা দুবার হারিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটিকে। আর হেরেছে ক্রিস্টাল প্যালেস, ইপ্সউইচ টাউন আর গালাতেসারের মতো দলের কাছে। এ যেন আধুনিক যুগের রবিন হুড। বড় দল থেকে পয়েন্ট নিয়ে বিলিয়ে দেয় ছোটদের মধ্যে। ফুলহামের সঙ্গে টটেনহামের পয়েন্ট ব্যবধান মাত্র ১। চ্যাম্পিয়নস লিগের লড়াইয়ে থাকতে হলে এই ম্যাচ জেতার কোনো বিকল্প নেই।
লিভারপুল বনাম ম্যানচেস্টার সিটি
সিটি-লিভারপুল রাইভালরি তুলনামূলক বেশ নতুন। তাদের মডার্ন ডে রাইভালরি দাঁড়িয়ে আছে প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের শক্তিমত্তার ওপর। বিশেষ করে ইয়ুর্গেন ক্লপ আর পেপ গার্দিওলার আগমনের পর থেকে প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের নতুন পরাশক্তি হিসেবে জানান দিয়েছে লিভারপুল ও সিটি। চুক্তি শেষে গত মৌসুমে বিদায় নিয়েছেন ক্লপ, স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন আর্নে স্লট। তাতে পেপের মাথায় চিন্তার ভাঁজ কমার বদলে উল্টো বেড়েছে। টানা ছয় ম্যাচে জয়শূন্য ম্যানচেস্টার সিটি, এর মধ্যে পাঁচটিতে হার। চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের মাটিতে ৩-০ গোলে এগিয়ে থেকে ম্যাচ ড্র করেছে তারা।
অন্যদিকে লিভারপুল আছে ফুরফুরে মেজাজে। ১৪ বছর পর রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে অল রেডরা। প্রিমিয়ার লিগে আছে ৮ পয়েন্টের লিডে। অ্যালিসনের ইনজুরিও দমাতে পারেনি তাদের, ফর্মের তুঙ্গে আছে ডিফেন্স থেকে অ্যাটাকের সবাই। সিটির বিপক্ষে ম্যাচটা তাই আক্ষরিক অর্থেই ২৪-২৫ মৌসুমের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ। অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের জয় তাদের নিয়ে যাবে ১১ পয়েন্ট লিডে। সেই পাহাড় বেয়ে শিরোপা জিততে হলে অসম্ভবকে সম্ভব করতে হবে বাকিদের। আর সিটি জিতলে বেঁচে থাকবে তাদের শিরোপা সম্ভাবনা। সপ্তাহের শেষ ম্যাচে তাই সবার নজরটা থাকবে তীক্ষ্ণ।