ক্রিকেটের জানা-অজানা ১০ তথ্য

ক্রিকেটের বলফাইল ছবি
১. তোমরা কি জানো, ক্রিকেটের উইকেটকে কেন স্ট্যাম্প বলা হয়? কারণ, আগে মানুষ গাছের গুড়িকে উইকেট বানিয়ে খেলত। এখনো আমরা মাঝেমধ্যে কাটা গাছের গুড়ি (নিচের অংশ) বা ইট দিয়ে উইকেট বানিয়ে খেলি। ক্রিকেটের ইতিহাসের শুরুর দিকে রাখালরা এমন গাছের গুড়ি দিয়ে উইকেট বানাত। আর এই গাছের গুড়িকে বলে স্ট্যাম্পস। সেখান থেকেই উইকেটের নাম হয়েছে স্ট্যাম্পস। গুগলে ইংরেজিতে স্টাম্পস লিখে সার্চ করলে এখনো উইকেটের পাশাপাশি গাছের গুড়ির ছবি দেখতে পাবে। 
২. স্যামুয়েল বেকেট একজন ঔপন্যাসিক, কবি এবং থিয়েটারের ডিরেক্টর। ১৯৬৯ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। জেনে অবাক হবে যে, তিনি ছিলেন একজন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার। ১৯২০-এর দশকে তিনি ডাবলিন বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে ২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছিলেন।
৩. ২০০৩ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন করে দক্ষিণ আফ্রিকা। মোট ১৪ দল সেখানে অংশ নেউ। এই দলগুলোর মধ্যে ছিল নামিবিয়া। সম্প্রতি নামিবিয়া ভালো ক্রিকেট খেলছে। কিন্তু তখন অবস্থা ছিল নাজেহাল। নামিবিয়ার প্রতিপক্ষ হিসেবে মাঠে নামে অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট মাঠে ছিল নামিবিয়া। ১৪ ওভারে দলটি সব উইকেট হারিয়ে মাত্র ৪৫ রান করতে পেরেছিল। সেবার তৃতীয় বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
আরও পড়ুন
৪. ইংল্যান্ডের ক্রিস বল্ডারস্টোন একই সঙ্গে ক্রিকেটার এবং ফুটবলার। তবে তাঁর জীবনে এর চেয়েও মজার ঘটনা আছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি একই দিনে প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেট ও ফুটবল লীগে খেলেন। ওই দিন ইংল্যান্ডের চেস্টারফিল্ডে লিচেস্টারশায়ারের হয়ে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলতে নামেন। অপরাজিত ৫১ রান করে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেন। এরপর সন্ধায় ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে ফুটবল লীগের ম্যাচ খেলতে যান ডানকাস্টার রোভার্স মাঠে। পরেরদিন আবার ব্যাট হাতে নামেন ক্রিকেট খেলতে। ১১৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন বল্ডারস্টোন সেই ম্যাচে।
গ্রাহাম গুচ: টেস্ট অভিষেকে ‌পেয়ার`পেয়েও ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান। ফাইল ছবি
৫. ১৯৯৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামে নিউজিল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমে ব্যাট করে রান তোলে ৫ উইকেটে ৬২১। এরপর নিউজিল্যান্ডকে ব্যাট করতে আমন্ত্রণ জানায়। নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৩৫২ রান করে ফলোঅনে পড়ে। পরের ইনিংসে করে ২৪৪ রান। এই ম্যাচে পঞ্চম দিনে নিউজিল্যান্ডের হয়ে মাঠে নামেন জিওফ অ্যালট। ম্যাচ জিততে পারবে না বুঝে টানা ১০১ মিনিট ব্যাট করেন, কিন্তু কোনো রান করেননি। এভাবে ৭৭ বলে ০ রান করে সে ম্যাচ ড্র করেছিল নিউজিল্যান্ড।
৬. ১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হয় গ্রাহাম গুচের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেকে দুই ইনিংসে ডাক (০ রান) মেরেছিলেন তিনি। ক্রিকেটার ভাষায় একে বলে পেয়ার। একই ব্যক্তি ১৯৯০ সালে ভারতের বিপক্ষে এক টেস্টে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড গড়েন। প্রথম ইনিংসে ৩৩৩ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ১২৫ রান।
আরও পড়ুন
৭. ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড ৬ উইকেটে ৫৫১ রান করে ডিক্লেয়ার করে। অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম ইনিংসে সব উইকেট হারিয়ে ৫১৩ রান তোলে। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড ১২৯ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়া ১৬৮ রানের টার্গেটে ব্যাট করে সে ম্যাচ জিতে যায়। প্রথম ইনিংসে এমন ভালো শুরু করেও ম্যাচ হারার রেকর্ড নেই আর একটিও।
৮. অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের এমন কীর্তি আছে আরও একটা। তবে এবার বেশি রান করে নয় বরং কম রান করে জয়ের গল্প। ১৮৮২ সালে এই খেলা হয়েছিল ইংল্যান্ডের দ্য ওভাল মাঠে। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ৬৩ রান করে ৮০ ওভারে। ইংল্যান্ড তুলতে পেরেছিল ১০১ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে মাত্র ১২২ রান করে ডিক্লেয়ার করে। ইংল্যান্ডকে টার্গেট দেয় মাত্র ৮৫ রান। কিন্তু ইংল্যান্ড সেই রান করতেই নাস্তানাবুদ। ৭৭ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংলিশরা। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতে যায় ৭ রানে। ওই ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। 
অ্যাশেজ লড়াইয়ে মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। ছবি: এএফপি
৯. একটা ক্রিকেট ম্যাচে সর্বনিম্ন কত রান হতে পারে? ১৯৯২ সালের ৬ মে ইংল্যান্ডে একটা ক্রিকেট লিগের খেলা চলছিল। ইয়র্কশায়ারের মাঠে ক্লিফ ও ইস্টিংটন দলের মধ্যে চলছিল খেলা। ক্লিফের একের পর এক ব্যাটসম্যান মাঠে নামছে আর উঠছে। ১০ জনের ১০ জনই হয়েছে বোল্ড। রান করতে পারেনি একটাও। অর্থাৎ শূন্য রানে দশ উইকেট হারিয়েছে দলটি। এর চেয়ে কম রান নিশ্চয়ই করা সম্ভব নয়!
১০. ১৯৮১ সালে হেডিংলি টেস্টে মাঠে নামে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ড সে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ফলোঅনে ফেলে ম্যাচ জিতে নেয়। সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডের হয়ে মাঠে ছিল পিটার উইলি। এরপর কেটে গেছে ২০ বছর। একইভাবে অস্ট্রেলিয়াকে ফলোঅনে ফেলে ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। তবে সে দিনও মাঠে উপস্থিত ছিলেন পিটার উইলি। না খেলোয়াড় হিসেবে নয়, আম্পায়ার হয়ে।

সূত্র: ১০১ বিচিত্র ক্রিকেট তথ্য/ হিউ লারকিন, ক্রিকেট কাউন্ট্রি, ক্লিফভিলেজ ও ক্রিকইনফো ডট কম

আরও পড়ুন