বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ৫ ম্যারাথন

শীত এসে পড়েছে। ছুটির মৌসুম শুরু হবে। শীতকালে ছুটির দিনগুলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা রকম খেলাধুলার আয়োজন হয়। এর মধ্যে ভিন্ন রকম একটি খেলা ম্যারাথন। তার মধ্যে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, গাজীপুর ও মেরিন ড্রাইভে (কক্সবাজার) এ আয়োজন হয়। এখন আসি ম্যারাথন কী?

ম্যারাথন হলো একটি দীর্ঘ দূরত্বের দৌড় প্রতিযোগিতা, যার দূরত্ব ৪২ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার অথবা ২৬ মাইল ৩৮৫ গজ। সাধারণত রোড রেস বা রাস্তায় দৌড় হিসেবে ম্যারাথন হয়। দৌড়ের মাধ্যমে বা হাঁটার কৌশল দিয়ে ম্যারাথন শেষ করা যেতে পারে। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৮০০টির বেশি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অ্যাথলেট থেকে শুরু করে শখের দৌড়বিদেরা অংশ নেন। বিভিন্ন অঞ্চলে ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়। যেমন কোপেনহেগেন, ফ্লোরেন্স, ইস্তাম্বুল, লন্ডন, প্যারিস, দ্য গ্রেট ওয়াল ম্যারাথন, তেনজিং হিলারি এভারেস্ট ম্যারাথন উল্লেখযোগ্য।

এসব ম্যারাথনের মধ্যে কিছু ম্যারাথন আছে খুব কঠিন। কোনো এলাকার ম্যারাথনের রাস্তা উঁচুনিচু, কোনোটা ঢালু, আবার কোনোটা সমতল হতে পারে। কিছু এলাকায় আবার প্রচণ্ড ঠান্ডা বা খুব গরম থাকে। কোথাও আর্দ্রতা বেশি থাকে। বৈরী আবহাওয়া ও অন্যান্য চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে ম্যারাথনকে কঠিন হিসেবে ধরা হয়। বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ৫ ম্যারাথন কোনগুলো?

দ্য গ্রেট ওয়াল ম্যারাথন, চীন

দ্য গ্রেট ওয়াল ম্যারাথন
ছবি: রান গ্রেটওয়াল ওয়েবসাইট

১৯৯৯ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে দ্য গ্রেট ওয়াল ম্যারাথন বিশ্বের অন্যতম চ্যালেঞ্জিং ম্যারাথন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। শুরুতে ৩৫০ জন দৌড়বিদের অংশগ্রহণ দিয়ে শুরু হয়েছিল এই ম্যারাথন, যা বেড়ে এখন হয়েছে ২ হাজার ৫০০ নবীন ও প্রবীণ দৌড়বিদের অংশ নেওয়া আয়োজন। এই ম্যারাথনে দৌড়বিদদের চীনের মহাপ্রাচীরের হুয়াংইয়াগুয়ান অংশের ৪২ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। তাঁদের ক্রমাগত ওপরে-নিচে ওঠা-নামা করতে হয়। এই প্রাচীরের দৌড়ানোর রাস্তায় ৫ হাজার ১৬৪টি পাথুরে ধাপের বাধা আছে। ধাপগুলোর মধ্যে প্রায় কোনো সামঞ্জস্য নেই। ধাপের উচ্চতায় হেরফের আছে। ধাপগুলো ২–১ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে, যেখানে পাথর খুবই পিচ্ছিল। আহরণের সময় এখানকার তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে। তাই এই চ্যালেঞ্জকে নরকের চ্যালেঞ্জও বলা হয়।

আরও পড়ুন

পাইকস পিক ম্যারাথন, যুক্তরাষ্ট্র

পাইকস পিক ম্যারাথন
ছবি: পাইকস অ্যান্ড পিকস

পাইকস পিক ম্যারাথন শুরু হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। এই ম্যারাথন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরোনো ম্যারাথন। কলোরাডোর ম্যানিটু স্প্রিংস এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭ হাজার ৮০০ ফুট উচ্চতায় শুরু হয় দৌড়। এই উচ্চতা থেকে শুরু করে উঠতে হয় পাইকস পিকে। এর উচ্চতা ১৪ হাজার ১১৫ ফুট। প্রত্যেক দৌড়বিদকে পর্বতের পূর্ব দিকে প্রায় ৮ হাজার ফুট উচ্চতা পাড়ি দিতে হয় মাত্র ১৩ দশমিক ৩ মাইল রাস্তায় দৌড়িয়ে। সীমিত সংখ্যার অংশগ্রহণকারী এই ম্যারাথনে অংশ নিতে পারে। এখানে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা আছে, এটি প্রমাণের জন্য অ্যাথলেটদের একটি ট্রায়াল ইভেন্টে দৌড়াতে হয়। এই ট্রায়াল ইভেন্টের শুরুতেই আছে মরুভূমির উত্তাপের মধ্য দিয়ে দৌড়। মাঝেমধ্যেই দৌড়টি শেষ হয় তুষার ও পাহাড়ি ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে।

আরও পড়ুন

দ্য বিগ ফাইভ ম্যারাথন, দক্ষিণ আফ্রিকা

দ্য বিগ ফাইভ ম্যারাথন
ছবি: সংগৃহীত

২০০৫ সালে শুরু হওয়া বিগ ফাইভ ম্যারাথন ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দ্য বিগ ফাইভ ম্যারাথনের রুটটি জোহানেসবার্গ ও ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কের মধ্যে অবস্থিত। পথটি লিম্পোপো প্রদেশের এন্টাবেনির মধ্য দিয়ে গেছে। এই ম্যারাথনে দৌড়বিদদের সিংহ আছে, এমন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে পথ অতিক্রম করতে হয়। তবে এখানে ভালো নিরাপত্তাব্যবস্থা আছে। কারণ, রুটটি হেলিকপ্টার ও সশস্ত্র রেঞ্জার দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। আফ্রিকার বিখ্যাত পাঁচটি প্রাণীর নামে এই ইভেন্টকে ‘দ্য বিগ ফাইভ গেম’ বলা হয়। প্রাণীগুলো হলো হাতি, গন্ডার, মহিষ, সিংহ ও চিতাবাঘ। এই ইভেন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের দৌড়বিদেরা একটি নতুন অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ পান। এই ইভেন্ট শীতকালে হয়। তবে সাভানায় শীতকালে সূর্যের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। এ ছাড়া রুটটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ পয়েন্টের মধ্যে ৫৪০ মিটারের বেশি উচ্চতার পার্থক্য আছে।

আরও পড়ুন

অ্যান্টার্কটিক আইস ম্যারাথন, অ্যান্টার্কটিকা

অ্যান্টার্কটিক আইস ম্যারাথন
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ম্যারাথনের মধ্যে অ্যান্টার্কটিক আইস ম্যারাথন অন্যতম। এই ইভেন্ট সত্যিই ভয়ংকর কঠিন, আবার অ্যাডভেঞ্চারেও ভরপুর। অন্য সব ম্যারাথনে পাথর, বালুকণা বা মাটির রুট থাকে। কিন্তু এখানে রয়েছে তুষার আর বরফ, যেখানে বাতাসের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০০ মিটার উচ্চতায় মেরু অঞ্চলে বাতাসের গতি থাকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ২৫ নট বা ১১ থেকে ৩০ মাইল। এই ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয় বছর শেষে। পুরো এলাকায় একা একা দৌড়াতে হয়। শান্ত আবার কঠিন পরিবেশে দৌড়ের জন্য শুধু নিজের শক্তি, সক্ষমতা ও সাহসের ওপর নির্ভর করতে হয়।

তেনজিং হিলারি এভারেস্ট ম্যারাথন, নেপাল

তেনজিং হিলারি এভারেস্ট ম্যারাথন
ছবি: সুনীল শর্মা

১৯৫৩ সালের ২৯ মে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেন তেনজিং নোরগে শেরপা ও স্যার এডমন্ড হিলারি। এর স্বীকৃতিস্বরূপ এই ম্যারাথনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘তেনজিং হিলারি এভারেস্ট ম্যারাথন’ নামকরণ করা হয়। প্রথমে এটা ‘সুবর্ণজয়ন্তী এভারেস্ট ম্যারাথন’ নামে পরিচিত ছিল। পরে ২০০৪ সালে এর নাম ‘তেনজিং হিলারি এভারেস্ট ম্যারাথন’ রাখা হয়। বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতার ম্যারাথন হিসেবে এই ইভেন্টের খ্যাতি রয়েছে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত এভারেস্ট বেসক্যাম্পে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার ৩৬৪ মিটার বা ৭ হাজার ৫৯৮ ফুট উচ্চতায় এই দৌড় অনুষ্ঠিত হয়।

অন্যান্য ম্যারাথনে দৌড়বিদেরা আয়োজনের আগের সকাল বা রাতে আসে। কিন্তু তেনজিং হিলারি এভারেস্ট ম্যারাথনে যাওয়ার আগে দৌড়বিদদের বেসক্যাম্পে পৌঁছানোর জন্য দুই সপ্তাহ ট্রেক করতে হয়। ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য তিনটি আলাদা বিভাগ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ৭০ কিলোমিটার আলট্রা ম্যারাথন দৌড়, ৪২ কিলোমিটার পূর্ণ ম্যারাথন দৌড় এবং ২১ কিলোমিটার হাফ ম্যারাথন দৌড়।

দৌড়টি অনেক চ্যালেঞ্জিং হওয়ায় দৌড়বিদদের দৌড়ানোর আগে নির্দিষ্ট মেডিকেল চেকআপগুলো করতে হবে। ২০২৪ সালে নেপালের অর্জুন রাই কুলুং ৪২ কিলোমিটার পূর্ণ ম্যারাথন শেষ করতে সময় নিয়েছিলেন ৩ ঘণ্টা ৫২ মিনিট ২ সেকেন্ড।

আরও পড়ুন