সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ান কে, টারজানের সঙ্গে তাঁর কী সম্পর্ক
১৯৯০-এর দশকের শুরুতে বাংলাদেশের একমাত্র টিভি চ্যানেল ছিল বিটিভি বা বাংলাদেশ টেলিভিশন। সে সময় টারজান সিরিজ মুভি ছিল খুব জনপ্রিয়। টিভিতে সম্প্রচার শুরু হলে সবাই টিভির সামনে বসে পড়ত। সারা বিশ্বে অনেকেই তখন টারজানের সেই বিখ্যাত ডাক ‘ওয়ো ও’ নকল করার চেষ্টা করত। তখন অনেকে জানত না, এই টারজান চরিত্রে অভিনয় করা লোকটি কেবল একজন নামকরা অভিনেতাই ছিলেন না, ছিলেন সর্বকালের সেরা এক অলিম্পিয়ান।
জনি ওয়েইসমুলার বিশ্বের প্রথম সাঁতারু, যিনি এক মিনিটের কম সময়ে ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল রেস শেষ করেন। তিনি প্রথম সাঁতারু যিনি ৪৪০ ইয়ার্ড সাঁতার প্রতিযোগিতা পাঁচ মিনিটের কম সময়ে শেষ করেছিলেন।
টারজান সিরিজের মুভিরগুলোতে সর্বকালের সেরা অভিনেতা জনি ওয়েইসমুলার। টারজান ছবিতে অভিনয় করে সুনাম অর্জন করার আগেই অলিম্পিকের সাঁতারে একের পর এক রেকর্ড গড়ে ইতিহাসে নিজের নাম অমর করে নিয়েছিলেন। তাঁর জন্ম অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় রাজ্যের যে অঞ্চলে, সেটা এখন রোমানিয়ার অংশ, আর তাঁর মৃত্যু মেক্সিকোতে। কিন্তু তিনি ছিলেন আমেরিকার নাগরিক।
জনি ওয়েইসমুলার অলিম্পিকে পাঁচটি সোনা ও একটি ব্রোঞ্জ মেডেল জিতেছিলেন। তিনি আমেরিকার সাঁতার প্রতিযোগিতায় ৫২টি সোনার পদক জেতেন। তিনি যতগুলো পদক জিতেছেন, তার চেয়ে বেশি গড়েছিলেন বিশ্বরেকর্ড। সবমিলিয়ে তিনি ৬৭টি দেশি ও আন্তর্জাতিক রেকর্ড গড়েছিলেন। তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব, অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ তাঁকে সাঁতারের কোনো আয়োজনে হারাতে পারেনি।
জনি ওয়েইসমুলার বিশ্বের প্রথম সাঁতারু, যিনি এক মিনিটের কম সময়ে ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল রেস শেষ করেন। তিনি প্রথম সাঁতারু যিনি ৪৪০ ইয়ার্ড সাঁতার প্রতিযোগিতা পাঁচ মিনিটের কম সময়ে শেষ করেছিলেন।
অলিম্পিকে জনির যাত্রা শুরু হয় ১৯২৪ সালে। সেবার অলিম্পিকের আসর বসেছিল এবারের মতোই, প্যারিসে। সেবার তিনি প্যারিস থেকে তিনটি সোনা ও একটি ব্রোঞ্জ মেডেল জিতেছিলেন। তাঁর স্বর্ণপদক তিনটি এসেছিল সাঁতার থেকে। যুক্তরাষ্ট্র সেবার ওয়াটার পোলো নামের খেলায় ব্রোঞ্জ জিতেছিল। জনি সেই দলের এক সদস্য হিসেবে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন।
১৯২৮ সালে অলিম্পিকের আসর বসেছিল আর্মস্টাডামে। সেবার অলিম্পিকে জনি দুটি সোনার মেডেল পান। অলিম্পিকে জনি যে পাঁচটি সোনার মেডেলে পেয়েছিলেন সব কটি তিনি রেকর্ড গড়ে জিতেছিলেন।
সাঁতার থেকে অবসরের পর তিনি হলিউডে কাজ শুরু করেন। ‘টারজান দ্য এপম্যান’ মুভিতে অভিনয় করে তিনি দারুণ খ্যাতি অর্জন করেন। টারজানের বিখ্যাত ডাক ‘ওয়ো ও’ তাঁরই সৃষ্টি। এ ছাড়াও জঙ্গল নিয়ে আরেকটি মুভি সিরিজে তিনি অভিনয় করে সুনাম অর্জন করেছিলেন। সেটার নাম জঙ্গল জিম। হলিউডে তিনি এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন যে তাঁকে বলা হতো তিনি ‘কিং অব সুইমিং’ থেকে ‘কিং অব জঙ্গলে’ পরিণত হয়েছিলেন।
তবে সাঁতারু জনি অভিনেতা জনিকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। এক বিখ্যাত বিপ্লবের ঘটনায় সেটা স্পষ্ট হয়েছিল। কিউবায় যখন বিপ্লব সংঘটিত হচ্ছিল, সে সময় জনি ওয়েইসমুলার কিউবায় তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে গলফ খেলছিলেন। এমন অবস্থায় বেশ কয়েকজন অস্ত্রধারী বিপ্লবী তাঁদের ঘিরে ফেলে। বিপ্লবের শত্রু হিসেবে তাঁদের চিহ্নিত করা হয়। কোনোভাবেই বিপ্লবীদের বোঝাতে না পেরে জনি তখন তাঁর সেই বিখ্যাত ডাকটি দেন, সঙ্গে সঙ্গে বিপ্লবীরা টারজানকে চিনে ফেলেন এবং সসম্মানে তাঁকে চলে যেতে দেন।
তবে জনি সাঁতারে যে কীর্তি গড়েছেন, খুব কম সাঁতারু তা করে দেখাতে পেরেছে । ১৯২১ থেকে ১৯২৯ পর্যন্ত তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ সাঁতারু। এই সময় সাঁতারের কোনো আয়োজনে তিনি কারও কাছে পরাজিত হননি।