ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ: ম্যাচউইক ১৬
নজর সবার ম্যানচেস্টারে
ডার্বি মানেই যেন অন্য রকম উত্তেজনা। আর সেটা যখন হয় ম্যানচেস্টার ডার্বি, তখন তো আর কথাই নেই। ফুটবল দুনিয়ার অন্যতম বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতার দেখা মিলছে প্রিমিয়ার লিগের এই সপ্তাহে। তার আগে কেমন প্রস্তুতি দলগুলোর? দেখে নিয়ে আসা যাক একনজরে।
এক নজরে ম্যাচউইক ১৫ শেষে পয়েন্ট টেবিলে
আর্সেনাল বনাম এভারটন
সপ্তাহটা খুব একটা ভালো যায়নি আর্সেনালের। নিজ শহরে ফুলহামের বিপক্ষে ড্র করে প্রিমিয়ার লিগের গুরুত্বপুর্ণ পয়েন্ট হারিয়েছে গানার্সরা। যদিও চ্যাম্পিয়নস লিগে বড় জয় সেই ড্রতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিয়েছে। এভারটনের বিপক্ষে ম্যাচটা তাই লিগের লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে গত সপ্তাহে বিশ্রামে কাটিয়েছে এভারটন। ঘূর্ণিঝড় ‘দারাঘ’ হানা দেওয়ায় স্থগিত হয়েছিল ‘মার্সিসাইড ডার্বি’। ম্যাচ না খেললেও পয়েন্ট টেবিলে আসেনি তেমন কোনো পরিবর্তন। এ কারণে এক সপ্তাহ পর মাঠে ফেরা এভারটনের জন্যও ম্যাচটা সমান গুরুত্বপূর্ণ।
লিভারপুল বনাম ফুলহাম
কাগজে–কলমে ফুলহামের অবস্থান পয়েন্ট টেবিলের দশম স্থানে। কিন্তু শীর্ষ চারের সঙ্গে পার্থক্য মাত্র ৪ পয়েন্টের! আর্সেনালের বিপক্ষে ড্র করে চ্যাম্পিয়নস লিগের দরজা এখনো খোলা তাদের জন্য। তবে চোটের কারণে দলে নেই রিস নেলসন, লাল কার্ড দেখেন নিষিদ্ধ অধিনায়ক টম কিয়ের্নি। তাঁদের নিয়ে দল সাজাতে হবে কোচ মার্কো সিলভাকে। লিভারপুলকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আর্নে স্লটের অধীন প্রতি সপ্তাহেই চমক দেখাচ্ছে অল রেডসরা। গত সপ্তাহে পরিত্যক্ত হয়েছে তাদের ম্যাচ। তবু দ্বিতীয় স্থানে থাকায় দলের সঙ্গে তাদের পয়েন্টের পার্থক্য ৪! সালাহর দুর্দান্ত ফর্ম চলতে থাকলে ফুলহামকে হারাতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না তাদের।
নিউক্যাসল ইউনাইটেড বনাম লেস্টার সিটি
ভার্দি-নিস্টারলয় জুটি যেন জমে ক্ষীর হয়ে উঠেছে। মাত্র দুই সপ্তাহ হতে চলল দুজনে জুটি হয়ে উঠেছেন। এর মধ্যেই লেস্টারকে বদলে দিতে শুরু করেছেন তাঁরা। দায়িত্ব নেওয়ার পর এখনো হারেননি নিস্টারলয়। পয়েন্ট টেবিলে দ্রুত উপরে উঠতে হলে জয়ের বিকল্প অবশ্য খোলা নেই তাঁদের কাছে। অন্যদিকে টানা চার ম্যাচ ধরে জয়শূন্য নিউক্যাসল। নামতে নামতে টেবিলের দ্বাদশ অবস্থানে নেমে গিয়েছে ম্যাগপাইরা। ১৫ ম্যাচ শেষে তারা যেন টেবিলের ভারসাম্য ধরে রেখেছে। নামের পাশে ৫ জয়, ৫ হার আর ৫ ড্র।
উলভস বনাম ইপসউইচ টাউন
‘দ্য ব্যাটেল অব রিলেগেশন’ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম রোমাঞ্চকর ম্যাচআপ হিসেবে ধরা হয় অবনমনের শঙ্কায় ঝুলতে থাকা দলগুলোর লড়াইকে। তেমনই এক লড়াইয়ে নামছে উলভস আর ইপসউইচ টাউন। টেবিলে দুই দলের অবস্থান সমান–সমান। ৯ পয়েন্ট নিয়ে দুজন ঝুলছেন অবনমনের শঙ্কায়। জিতলেই যে এই তালিকা থেকে মুক্তি মিলছে, তা–ও নয়। বরং ফলাফল যা–ই হোক না কেন, ম্যাচ শেষে দুই দলই থাকছে অবনমনের শঙ্কায়। গত সপ্তাহের দুই দলের অবস্থা ছিল একই রকম। জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়ে হার নিয়ে ফিরতে হয়েছে তাদের। দেখা যাক, অবনমনের সারির লড়াইয়ে কে ঘুরে দাড়াতে পারে।
নটিংহাম ফরেস্ট বনাম অ্যাস্টন ভিলা
অ্যাস্টন ভিলার কোচ উনাই এমেরি যেন পরশপাথর হাতে পেয়েছেন। টানা আট ম্যাচ জয়শূন্য থাকার পর ফর্মে ফিরেছেন পুরো দলবল নিয়ে। টানা দুই ম্যাচে জয় দিয়ে আবারও ফিরে এসেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের সমীকরণে। একটা সময় যে চ্যাম্পিয়নস লিগকে দূরের চাঁদ বলে মনে হচ্ছিল, সুতায় ঝুলছিল এমেরির চাকরি, সেই এমেরির সামনে সুযোগ আবারও শীর্ষ চারে ওঠার। সুযোগ আছে নটিংহাম ফরেস্টেরও। দুই দলের পয়েন্ট সমান, গোল ব্যবধানে এগিয়ে আছে নটিংহাম। যে জিতবে, সে–ই পৌঁছে যাবে শীর্ষ চারে। ক্রিস উড ফর্মে ফিরেছেন, ভাগ্য খুলতে শুরু করেছে ফরেস্টের। ফর্মে থাকা দুই দলের লড়াইটা উপভোগ্য হবে, সে নিয়ে সন্দেহ নেই বিন্দুমাত্র।
ব্রাইটন বনাম ক্রিস্টাল প্যালেস
সময়টা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না ব্রাইটনের। সিটিকে হারানোর পর থেকে যেন ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েছে তাদের। চার ম্যাচে মাত্র ১ জয়। টেবিলের তলানিতে থাকা সাউদাম্পটনের বিপক্ষে ড. লেস্টারের বিপক্ষে ৮৫ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও ড্র! শীর্ষ চারে উঠেও জায়গা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। ক্রিস্টাল প্যালেস অবশ্য সেদিক দিয়ে বেশ ভালো ফর্মে আছে। টানা চার ম্যাচ অপরাজিত, অবনমনের সারি থেকে খানিকটা দূরে। ক্রিস্টালের সামনে সুযোগ ব্যবধানটা আরেকটু বাড়ানোর।
ম্যানচেস্টার সিটি বনাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
প্রিমিয়ার লিগের বাইরের দর্শকদের যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কোন ম্যাচটা দেখার জন্য সারা বছর মুখিয়ে থাকেন। তবে বেশির ভাগ সময়ে উত্তর আসবে ‘ম্যানচেস্টার ডার্বি’। ম্যানচেস্টারের দুই প্রান্তের দুই দলের লড়াইটা প্রায় দেড় শ বছরের। দলের নাম বদলেছে, অবস্থা, প্রতিপত্তি, ট্রফি বদলেছে। বদলায়নি শুধু আগের রোমাঞ্চ। কয়েক বছর ধরে ম্যানচেস্টার ডার্বি হেলে আছে ম্যানচেস্টার সিটির দিকে। এবার অবশ্য ঘটনা কিছুটা ভিন্ন। গত ১০ ম্যাচে সিটির মাত্র ১ জয়। চোট আর পারফরম্যান্স নিয়ে বেশ শঙ্কায় আছেন পেপ গার্দিওলা। অন্যদিকে নতুন কোচের অধীন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। যদিও আমোরিমের শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি, তবে পেপ গার্দিওলার বিপক্ষে উজ্জ্বল তিনি। গত মাসেই তাকে হারিয়েছেন ৪-১ গোলে। স্পোর্তিংয়ের দায়িত্ব থাকাকালীন চ্যাম্পিয়নস লিগে মুখোমুখি হয়েছিলেন সিটির। সেখানে তাকে হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোকে বড় বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। তেমনই কিছু একটা করে দেখানোর সুযোগ ম্যানচেস্টার ডার্বিতে। যতই অফ ফর্মে থাকুক না কেন দল, ম্যানচেস্টার ডার্বির উত্তেজনা অন্য রকম। দিনশেষে লড়াই যতটা না মাঠের, তার থেকে বেশি সম্মানের। সম্মানের লড়াইয়ে ছাড় নেই বিন্দুমাত্র।
চেলসি বনাম ব্রেন্টফোর্ড
পয়েন্ট টেবিল দেখে যে কেউ বলবেন, এই ম্যাচের ক্লিয়ার ফেভারিট চেলসি। লিভারপুল থেকে মাত্র চার পয়েন্ট দূরে, শিরোপার জন্য টেক্কা দিচ্ছে। কিন্তু এই ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে টানা পাঁচ ম্যাচ জয়শূন্য চেলসি। এমনকি স্ট্যামফোর্ড ব্রিজেও তাদের নেই কোনো জয়। কাগজে–কলমে চেলসি ফেভারিট হলেও ম্যাচটা ঝুঁকে আছে ব্রেন্টফোর্ডের দিকে। শেষ ম্যাচেও বড় জয়ে এসেছে তাদের পা থেকে। যদিও ঘরের বাইরে তাদের পারফরম্যান্স যাচ্ছেতাই। এখন পর্যন্ত মাত্র ১ পয়েন্ট অর্জন করতে পেরেছে তারা। চেলসিকে হারাতে পারলে ঘরের বাইরে পয়েন্টের খরা কাটাতে হবে তাদের।
সাউদাম্পটন বনাম টটেনহাম হটস্পার
গত সপ্তাহে রবিনহুড পরীক্ষা উৎরাতে ব্যর্থ হয়েছে টটেনহাম। চেলসির বিপক্ষে এগিয়ে গিয়েও ব্যর্থ মনোরথে ফিরতে হয়েছে তাদের। লন্ডন ডার্বি শেষ হয়েছে হার দিয়ে। টানা হার দিয়ে টটেনহামের অবস্থা এখন শোচনীয়। শীর্ষ দশেও দেখা মিলছে না তাদের। পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থাকা সাউদাম্পটনের বিপক্ষে ম্যাচটা তাই টটেনহামের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। অফ ফর্মে থাকা সাউদাম্পটনের বিপক্ষে জিততে না পারলে সময়টা বেশ কঠিন হয়ে উঠবে কোচের জন্য। সাউদাম্পটনের শেষ জয় এসেছিল ৫ ম্যাচ আগে। টটেনহামের ৪ ম্যাচ আগে। অফ ফর্মে থাকা দুই দলের লোড়াইয়ে শেষ হাসি কে হাসবে, সেটা প্রমাণ হবে মাঠে।
বোর্নমাউথ বনাম ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড
গত সপ্তাহে অগ্নিপরীক্ষা পার করেছেন হুলেন লোপেতেগি। অসাধারণ এক জয় দিয়ে বাঁচিয়েছেন নিজের চাকরি। এবার অবশ্য পরীক্ষা সামনে এগিয়ে যাওয়ার। বোর্নমাউথের বিপক্ষে জয় পেলে সুযোগ আছে তিন ধাপ ওপরে ওঠার। যদিও নিজের দলের সেরা স্ট্রাইকার মিখাইল অ্যান্টোনিওকে পাচ্ছেন না তিনি। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত অ্যান্টোনিও ছিটকে গিয়েছেন পুরো মৌসুমের জন্য। তবে ফুলক্রুগের প্রত্যাবর্তন দলকে একটু হলেও সাহায্য করবে। অন্যদিকে বোর্নমাউথের ফর্ম ওঠানামা করছে অনেকটা। গত দুই ম্যাচে শেষ মুহূর্তের গোলে জয় নিশ্চিত করেছে তারা।