৫ মিনিটের ভার্দি-ঝড়, আর্সেনাল-ইউনাইটেড-সিটির পা ফসকে যাওয়া

ঘূর্ণিঝড় ‘দারাঘ’ হানা দেওয়ায় ম্যাচের ঘণ্টাখানেক আগে স্থগিত করা হয়েছিল ‘মার্সিসাইড ডার্বি’। এই সপ্তাহে তাই খেলা মোট হয়েছে ৯টি। ঘূর্ণিঝড়ের সপ্তাহ কেমন গেল প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর? ‘ইপিএল উইকলি’র ম্যাচউইক ১৫-এর ম্যাচ রিভিউ দেখে নিন একনজরে।

অ্যাস্টন ভিলা ১-০ সাউদাম্পটন

ভিলা: জন ডুরান ২৪’

জন ডুরানের একমাত্র গোলে জয় পেয়েছে অ্যাস্টন ভিলা
ছবি: এক্স


জয়ের জন্য ঠিক যতটুকু প্রয়োজন, ঠিক যেন ততটুকুই করেছে অ্যাস্টন ভিলা। ঘরের মাটিতে পয়েন্ট টেবিলের সবচেয়ে নিচে থাকা সাউদাম্পটনকে হারিয়েছে তারা। জন ডুরানের একমাত্র গোলে এসেছে জয়। এই জয় দিয়ে টেবিলের ছয় নম্বরে উঠে এসেছে ভিলা। অন্যদিকে সাউদাম্পটনের জার্সিতে যেন একা খেলেছেন টেইলার ডিবলিং। ১৮ বছর বয়সী তরুণকে সঙ্গে দেওয়ার মতো ছিল না কেউ। তবে সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে এমি মার্তিনেজের সামনে এসে।

ব্রেন্টফোর্ড ৪-২ নিউক্যাসল ইউনাইটেড

ব্রেন্টফোর্ড: ব্রায়ান এমবুয়েমু ৮’, ইয়োয়ান উইসা ২৮’, নাথান কলিন্স ৫৬’, কেভিন শারদে ৯০’
নিউক্যাসেল: অ্যালেকজেন্দার ইসাক ১১’, হার্ভি বার্নেস ৩২’

শুরুতেই দলকে এগিয়ে নিয়েছেন এমবুয়েমু। ছবি: এক্স

ঘরের মাঠে ব্রেন্টফোর্ড যেন চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের রিয়াল মাদ্রিদ। ঝড়-বৃষ্টি যা–ই আসুক না কেন, এই মৌসুমে ঘরের মাটিতে তাদের হারানো অসম্ভব। জিটেক কমিউনিটি স্টেডিয়ামে টানা আট ম্যাচ অপরাজিত, সাতটিতে আবার জয়। বরাবরের মতো দলকে শুরুতে এগিয়ে নিয়েছিল ব্রায়ান এমবুয়েমো। প্রথমবার নিউক্যাসেলকে সমতায় ফেরান ইসাক। উইসার গোলের পর নিউক্যাসেলকে দ্বিতীয়বার সমতায় ফেরান বার্নেস। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ফর্মে ফেরে ব্রেন্টফোর্ড। নাথান কলিন্স আর কেভিন শারদের শেষ মিনিটের গোলে বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রেন্টফোর্ড।

আরও পড়ুন

ক্রিস্টাল প্যালেস ২-২ ম্যানচেস্টার সিটি

প্যালেস: ডানিয়েল মুনোজ ৪’, ম্যাক্সেন্স ল্যাক্রোস ৫৬’
সিটি: আর্লিং হল্যান্ড ৩০’, রিকো লুইস ৬৮’

গোলের পর লাল কার্ড দেখেছেন রিকো লুইস
ছবি: এক্স

ম্যান সিটির জয়রথ থেমে গেল শুরু হবার আগেই। পুরো নভেম্বর মাস সিটি ছিল জয়শূন্য। নটিংহাম ফরেস্টের বিপক্ষে জয়টাকে অনেকেই ভেবেছিলেন ফর্মে ফেরার বার্তা। সে বার্তা রইল মাত্র এক ম্যাচ! আবারও দেখা মিলল পুরোনো সিটির। অবনমনের সারিতে লড়াই করা ক্রিস্টাল প্যালেসের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে তারা। পয়েন্ট হারানোর পেছনে অবশ্য সিটি ডিফেন্ডারদের দায়ই বেশি। দুটো গোলই এসেছে ডিফেন্ডার কাইল ওয়াকারের ভুলের কারণে। ম্যাচের শেষদিকে মিডফিল্ডার রিকো লুইস দেখেছেন লাল কার্ড। ১০ জনের সিটির বিপক্ষে মুহুর্মুহু মিস না করলে হয়তো নিজেদের মাটিতে জয়ের দেখা পেত ক্রিস্টাল প্যালেস। তবে আশার কথা, পুরো এক মাস প্রিমিয়ার লিগে গোলখরায় থাকার পর আবারও গোলের দেখা পেয়েছেন আর্লিং হল্যান্ড। তিনি ফর্মে ফিরলে হয়তো সিটির দুর্দশা দ্রুত কেটে যাবে।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ২-৩ নটিংহাম ফরেস্ট

ইউনাইটেড: রাসমাস হয়লান্দ ১৮’, ব্রুনো ফার্নান্দেজ ৬১’
ফরেস্ট: নিকোলা মিলেনকোভিচ ২’, মরগান গিবস-হোয়াইট ৪৭’, ক্রিস উড ৫৪’

হয়লুন্দের আনন্দ থাকেনি বেশিক্ষণ
ছবি: এক্স

মার্সিসাইডের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছিল ম্যানচেস্টারেও। ম্যাচের শুরু থেকে ছিল বাতাস, সঙ্গে বৃষ্টি। সেই ঝড় আঘাত হানলো ইউনাইটেড শিবিরে। পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বের হতে ব্যর্থ হলেন রুবেন আমোরিম। আমোরিমের ট্যাক্টিসের সঙ্গে যে এখনো মানিয়ে নিতে পারেনি ইউনাইটেড, ফরেস্টের বিপক্ষে ম্যাচটা তার প্রমাণ। গোল হজম করে বসে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে। হয়লান্দের গোলে সমতায় ফিরলেও আনন্দ থাকেনি বেশিক্ষণ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরও দুই গোল হজম করে রেড ডেভিলরা। ব্রুনো ফার্নান্দেজের গোল ব্যবধান কমিয়েছে মাত্র। পরপর দুই হার ইউনাইটেডকে ইউরোপ থেকে মোটামুটি ছিটকে দিল বলা চলে। অসাধারণ কিছু করতে না পারলে এই ইউনাইটেডকে নিয়ে ইউরোপে খেলা সম্ভব না।

ফুলহাম ১-১ আর্সেনাল

ফুলহাম: রাউল হিমিনেজ ১১’
আর্সেনাল: উইলিয়াম সালিবা ৫২’

রাউল হিমিনেজের গোলে ড্র করেছে ফুলহাম
ছবি: এক্স

অবশেষে নিজ শহরে এসে জয়রথে বাধা পরল আর্সেনালের। আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফিরে ফর্মের তুঙ্গে ছিল গানার্সরা। মার্টিন ওডেগার্ডের ওপর ভর করে লিগ টেবিলের দ্বিতীয়তে উঠে এসেছিল তারা। কিন্তু জায়গাটা বেশি দিন নিজেদের রাখতে পারলেন না মিকেল আর্তেতা। ঘরের মাটিতে শুরুতে ফুলহামকে এগিয়ে নেন রাউল হিমিনেজ। ৫২ মিনিটে সেই গোল শোধ করে আর্সেনাল। বরাবরের মতো কর্নার থেকে ম্যাচে ফেরে আর্সেনাল। কর্নার থেকে বেশ কয়েকটি সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি। শেষদিকে সাকা দলকে এগিয়ে নিলেও আনন্দ মাটি করে দেয় ভিএআর। ড্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় আর্সেনালকে। এই ড্র বেশ বড়সর ধাক্কা দেবে আর্সেনালের লিগের লড়াইতে।

আরও পড়ুন

লেস্টার সিটি ২-২ ব্রাইটন

লেস্টার: জেমি ভার্দি ৮৬’, ববি দি কর্দোভা-রেইড ৯০+১’
ব্রাইটন: তারিক ল্যাম্পটি ৩৭’, ইয়ানকুবা মিনটে ৭৯’

ভার্দিময় এক রাত লেস্টারের
ছবি: এক্স



‘যতক্ষণ জেমি ভার্দি আছেন, ততক্ষণ ম্যাচে আশা আছে’— ম্যাচ শেষে কোচ রুড ফন নিস্টারলয়ের সঙ্গে দ্বিমত করার মতো ছিল না কেউ। ম্যাচের ৮৬ মিনিট চলছে, ২-০ গোলে এগিয়ে ব্রাইটন। ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজলেই তারা উঠে যাবে পঞ্চম অবস্থানে। চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার স্বপ্নটা আবারও সত্যি হতে শুরু করবে। এমন সময় যেন উড়ে এসে জুড়ে বসলেন ভার্দি। বুঝে নিলেন নিজের রাজত্ব। ৮৬ মিনিটে অসাধারণ এক ওয়ান টাচ ফিনিশে কমালেন ব্যবধান। মিনিট পাঁচেক পরেই তার বানিয়ে দেওয়া বল থেক থেকে লেস্টারকে সমতায় ফেরালেন কর্দোভা-রেইড। ৫ মিনিটের ভার্দি ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেল ব্রাইটন। নিশ্চিত জয় থেকে লেস্টারের মাটি ছাড়তে হলো এক পয়েন্ট নিয়ে।

ইপ্সউইচ টাউন ১-২ বোর্নমাউথ

ইপ্সউইচ: কনর চ্যাপলিন ২১’
বোর্নমাউথ: এনেস উনাল ৮৭’, ড্যাঙ্গো আউতারা ৯০+৫’

বোর্নমাউথের ত্রাতা দঙ্গো উইতেরা
ছবি: এক্স

এই সপ্তাহটা যেন ছিল শেষ মুহূর্তের ম্যাজিকের। পাশার দান উলটে গিয়েছে ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে এসে। ঘরের মাটিতে মৌসুমের দ্বিতীয় জয়ের সুবাতাস পাচ্ছিল ইপ্সউইচ টাউন। কনর চ্যাপলিনের একমাত্র গোল ছিল তাদের একমাত্র সম্বল। সেই সম্বল কেড়ে নিতে ১০ মিনিট নিল বোর্নমাউথ। ফর্মে থাকা বোর্নমাউথের ত্রাতা হয়ে এসেছিলেন বুরকিনা ফাসোর উইঙ্গার দঙ্গো উইতেরা। ম্যাচের ৮৭ মিনিটে অসাধারণ পাস থেকে দলকে এগিয়ে নেন এনেস উনাল। শেষ বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে ফাঁকা জায়গা থেকে গোল করে জয় ছিনিয়ে আনেন আউতারা। এই জয় দিয়ে টেবিলের আটে উঠে এল বোর্নমাউথ।

টটেনহাম ৩-৪ চেলসি

স্পার্স: ডমিনিক সোলাঙ্কে ৫’, দেহান কুলুসেভস্কি ১১’, সন হিউয়েন-মিন ৯০+৬’
চেলসি: জ্যাডোন সানচো ১৭’, কোল পালমার ৬১’ (পেনাল্টি), ৮৪’ (পেনাল্টি), এনজো ফার্নান্দেজ ৭৩’

ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন কোল পালমার
ছবি: এক্স



টটেনহাম কোচ আগ্নে পোস্তেকোগলুর ‘রবিনহুড’ থিউরিতে যেন ছেদ পড়ল বলে। সেটাতে সবচেয়ে বড় অবদান বোধহয় স্পার্স ডিফেন্ডারদের। ডি বক্সের ভেতর দুইবার ফাউল করে চেলসিকে সুযোগ করে দেন এগিয়ে যাওয়ার। লন্ডন ডার্বির সূচনা হয়েছিল ডিফেন্ডারের হাস্যকর ভুল দিয়ে। ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিটে দুবার পা ফসকে পড়েন চেলসি ডিফেন্ডার মার্ক কুকুরেলা। তার ভুল থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় স্পার্স। এরপর যেন ম্যাচে ফিরতে শুরু করে চেলসি। ১৭ মিনিটে দলকে এগিয়ে নেন সানচো। ৬১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দলকে সমতায় ফেরান কোল পালমার। ডি-বক্সের বাইরে থেকে অসাধারণ এক শটে দলকে এগিয়ে নেন এনজো ফার্নান্দেস। পারিবারিক সমস্যা কাটিয়ে যেন নতুন জীবন পেয়েছেন এনজো। প্রতি ম্যাচে দেখা মিলছে তাঁর অসাধারণ পারফরম্যান্সের। ৮৪ মিনিটে আরেকটি পেনাল্টি পায় চেলসি। আরেকবার দলকে এগিয়ে নেন পালমার। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে সন একটি গোল করে শুধু ব্যবধানই কমিয়েছেন। এই জয় দিয়ে এনজো মারেসকার শিষ্যরা টেবিলের দ্বিতীয় স্থান পাকাপোক্ত করে ফেলল। অন্যদিকে টটেনহামের হারের বৃত্তে যুক্ত হলো আরেকটি মুকুট।

আরও পড়ুন

ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড ২-১ উলভস

ওয়েস্ট হাম: টমাস সুচেক ৫৪’, জ্যারেড বোয়েন ৭২’
উলভস: ম্যাট ডোহার্টি ৬৯’

অ্যান্টোনিওর জার্সি নিয়ে উদ্‌যাপন করেছে ওয়েস্ট হাম
ছবি: এক্স

‘এল স্যাকিলো’ মানে স্যাক হবার লড়াই ছিল দুই কোচের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। হারলেই যেন বিদায় এক প্রকার নিশ্চিত। যে পরীক্ষায় ভালোভাবে উৎরে গেলেন ওয়েস্ট হাম কোচ হুলেন লোপেতেগি। ওয়েস্ট হাম ম্যাচটা শুরু করেছিল দুঃসংবাদ দিয়ে। সড়ক দুর্ঘটনায় বেশ বাজেভাবে আহত হয়েছেন ওয়েস্ট হ্যাম স্ট্রাইকার মিখাইল অ্যান্টোনিও। তাঁর স্মরণে ওয়েস্ট হামের খেলোয়াড়েরা অনুশীলনে নেমেছিল ৯ নম্বর জার্সি পরে। অ্যান্টোনিওর অদৃশ্য শক্তি যেন অণুপ্রেরণা হয়ে এসেছিল হ্যামার্সদের জন্য। ৫৪ মিনিটে প্রথম গোল করে দলকে এগিয়ে দেন টমাস সুচেক। ৬৯ মিনিটে উলভস সমতায় ফিরলেও ৩ মিনিট পর আবার ওয়েস্ট হ্যামকে এগিয়ে নেন জ্যারেড বোয়েন। দুজনেই উদ্‌যাপন করেছেন অ্যান্টোনিওকে স্মরণ করে। তাঁদের দুই গোলেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ওয়েস্ট হ্যাম। 

আরও পড়ুন