মিডটেবিলে নজর সবার

দেখতে দেখতে শেষ হয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অর্ধেকটা। ৬ পয়েন্টের ব্যবধান নিয়ে শীর্ষে লিভারপুল। মুদ্রার উল্টো পিঠে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে সাউদাম্পটন। শিরোপা লড়াইয়ের থেকে জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে উঠেছে মিডটেবিলের লড়াই। প্রিমিয়ার লিগের দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করার আগে সবার প্রস্তুতি কেমন? দেখে নেওয়া যাক একনজরে।

লেস্টার সিটি বনাম ম্যানচেস্টার সিটি

গার্দিওলার মাথায় হাত।
ছবি: এক্স

বড়দিন, নতুন বছর সবটাই যেন মাটি হয়ে গিয়েছে পেপ গার্দিওলার জন্য। শেষ ১৩ ম্যাচে মাত্র ১ জয়। পয়েন্ট টেবিলের ৭ নম্বরে অবস্থান। কোচিং ক্যারিয়ারে এমন দুর্দিন তাঁকে দেখতে হয়নি কখনো। টুকটাক হোঁচট খেয়েছেন বটে, কিন্তু সেটা সামলে নিয়েছেন। কিন্তু এ যেন হোঁচট নয়, গিরিখাত ভেঙে সরাসরি খাদে পড়া। তবে আশার কথা একটাই, পেপ গার্দিওলার ওপর থেকে ভরসা বিন্দুমাত্র কমেনি সিটি পরিবারের। যে কারণে চাকরি নিয়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিন্ত তিনি। কিন্তু অবস্থার উন্নতি করতে না পারলে কতটা নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন, সেটা বলাও মুশকিল। একই অবস্থা লেস্টার সিটি কোচ রুড ফন নিস্টলরয়ের। বড় আশা নিয়ে ফক্সদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু টানা তিন ম্যাচ হেরে অবনমনের সারিতে তাঁর দল। শেষ পাঁচ ম্যাচে জয় একটিতে! দ্রুত অবস্থার উন্নতি করতে না পারলে মৌসুমটাও হয়তো শেষ করা হবে না তাঁর।

ক্রিস্টাল প্যালেস বনাম সাউদাম্পটন

দলের সঙ্গে এখনো মানিয়ে নিচ্ছেন সাউদাম্পটন কোচ ইভান জুরিচ।
ছবি: এক্স

নতুন কোচের অধীনে শুরুটা মনমতো হয়নি সাউদাম্পটনের। ওয়েস্ট হামের কাছে হেরে শুরু হয়েছে ক্রোয়েট কোচের যাত্রা। তবে মাত্র এক জয় নিয়ে টেবিলের তলানিতে ঘুরপাক খাওয়া সাউদাম্পটনের কাছে বেঁচে থাকার সুযোগ আছে এখনো। ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ম্যাচটা হতে পারে তাদের ওপরে যাওয়ার সিঁড়ি। অন্যদিকে প্যালেসের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। অতিকষ্টে প্রিমিয়ার লিগের অবনমনের লড়াই থেকে বেঁচেছে তারা। আবারও নিশ্চয় সেই তালিকায় ফেরত যেতে চাইবে না তারা। সাউদাম্পটনের কাছে পা ফসকানোর কোনো সুযোগই নেই তাদের।

আরও পড়ুন

এভারটন বনাম নটিংহাম ফরেস্ট

শিরোপাপ্রত্যাশীদের চক্ষুশূল এখন এভারটন।
ছবি: এক্স

এভারটন কোচ শন ডাইচকে যদি কেউ ‘কিংস্লেয়ার’ বলে ডাকেন, তিনি খুব একটা মাইন্ড করবেন না। পরপর তিন ম্যাচে আটকে দিয়েছেন শিরোপাপ্রত্যাশী তিন দলকে। আর্সেনাল, চেলসি, সিটির পর তাঁর পরবর্তী প্রতিপক্ষ নটিংহাম ফরেস্ট। চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্য লড়াই করা ফরেস্টের কপালে চিন্তার ভাঁজ হয়ে আবির্ভূত হবে এভারটন। শেষ চার ম্যাচে এভারটনের ডিফেন্স ভেঙেছে মাত্র একবার। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এভারটনকে হারাতে বিশেষ কিছু করতে হবে ফরেস্টকে। চ্যাম্পিয়নস লিগের লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে কোনোভাবেই পয়েন্ট হারানো চলবে না তাদের।

ফুলহাম বনাম বোর্নমাউথ

৪৫ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে ফুলহাম।
ছবি: এক্স

৪৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে চেলসির মাঠ থেকে জয় ছিনিয়ে এনেছে ফুলহাম। ফুরফুরে মেজাজ বললেও যেন কম বলা হয়ে যাবে। মার্কো সিলভার শিষ্যরা এখন আছেন বৃহস্পতির তুঙ্গে। বোর্নমাউথের বিপক্ষে ম্যাচটা তাদের ওপরে ওঠার সিঁড়ি। ইউরোপে সুযোগ পেতে জয়ের কোনো বিকল্প নেই এই ম্যাচে। একই কথা সত্য বোর্নমাউথের জন্যও। গত ম্যাচে ড্র করে ইউরোপের লড়াইয়ে ধাক্কা খেয়েছে তারা। সব মিলিয়ে সাবধানি ফুটবল না খেললে পা ফসকানোর সুযোগ থাকছে।

টটেনহাম হটস্পার্স বনাম উলভস

নতুন কোচের অধীনে অসাধারণ শুরু করেছে উলভস।
ছবি: এক্স

নতুন কোচের অধীনে শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছে উলভসের। টানা দুই জয় দিয়ে ইতিমধ্যে অবনমনের সারি থেকে বেরিয়ে পড়েছে তারা। এখন লক্ষ্য অবনমনের শঙ্কা থেকে যতটা দূরে সরা যায়। আর প্রতিপক্ষ যখন অফ ফর্মে থাকা টটেনহাম, তখন তো একটু আশা করাই যায়। বেশ বাজে একটা মৌসুম কাটাচ্ছে টটেনহাম। আগ্নে পোস্তেকোগলু কোনোভাবে দলের সঠিক কম্বিনেশন খুঁজে পাচ্ছেন না। চোটের কারণে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের হারিয়ে ফেলাতে দলকে মনমতো সাজাতে পারছেন না তিনি। কিন্তু ফুটবল তো থেমে থাকে না। দ্রুত ফলাফলে পরিবর্তন না এলে হয়তো পূর্বসূরিদের মতো তাকেও কাটা পড়তে হবে টটেনহামের চেয়ারম্যান ডেনিয়েল লেভির খড়গের নিচে।

আরও পড়ুন

ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড বনাম লিভারপুল

টেবিলের শীর্ষে লিভারপুল।
ছবি: এক্স

যত ম্যাচ গড়াচ্ছে বাকি দলগুলোর সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান বাড়িয়ে চলেছে লিভারপুল। এক ম্যাচ হাতে রেখে দ্বিতীয় অবস্থানের সঙ্গে তাদের ব্যবধান ৬ পয়েন্টের। মাঠের ভেতরে ও বাইরের দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে আর্নে স্লটের শিষ্যরা আছে ফুরফুরে মেজাজে। অন্যদিকে শেষ ম্যাচে সাউদাম্পটনের বিপক্ষে কষ্টার্জিত জয় পেয়েছে ওয়েস্ট হ্যাম। মিডটেবিলের লড়াইয়ে আছে তারাও। ইউরোপ নয়তো অবনমন, দুটি সুযোগই আছে তাদের কাছে। লিভারপুলকে চমকে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে তাদের।

আরও পড়ুন

অ্যাস্টন ভিলা বনাম ব্রাইটন

লাল কার্ড দেখে তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ জন ডুরান।
ছবি: এক্স

ভুলে যাওয়ার মতো একটা ‘বক্সিং ডে’ পার করেছে অ্যাস্টন ভিলা। টানা চতুর্থ বছরের মতো ‘বক্সিং ডে’তে তিন গোল হজম করেছে তারা। সেই ম্যাচে দলের স্ট্রাইকার জন ডুরানকে দেওয়া লাল কার্ড নিয়ে এখনো চলছে বিতর্ক। কোচ উনাই এমেরি তো সব দোষ চাপিয়েছেন রেফারি অ্যান্থনি টেইলরের ওপর। ব্রাইটনের বিপক্ষে জন ডুরানকে ছাড়া নামতে হচ্ছে তাদের। ব্রাইটনও খুব একটা ফর্মে নেই। শেষ ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করেছে তারা। পয়েন্ট টেবিলের পাশাপাশি অবস্থানে থাকা দুই দলের সামনে সুযোগ একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।

ইপসউইচ টাউন বনাম চেলসি

পরপর দুই ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়েছে চেলসি।
ছবি: এক্স

পরপর দুই ম্যাচে হোঁচট খেয়ে শিরোপার লড়াই থেকে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে চেলসি। বড়দিনের আগে যেখানে সুযোগ ছিল লিভারপুলকে ছোঁয়ার, সেখানে এখন ৭ পয়েন্ট পেছনে। শেষ ম্যাচে ফুলহামের কাছে হেরে ৪৫ বছরের অপরাজিত থাকার রেকর্ড হারিয়েছে ব্লুজরা। সব মিলিয়ে সময়টা ভালো যাচ্ছে না চেলসির। ইপসউইচ টাউনের বিপক্ষকে ফিরে আসার একটা সুযোগ পাচ্ছে চেলসি। কাজে না লাগাতে পারলে শিরোপার লড়াইয়ে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে তাদের জন্য।

আরও পড়ুন

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বনাম নিউক্যাসেল ইউনাইটেড

ম্যাচ শেষে থাকছে না রুবেন আমোরিমের এই হাসি।
ছবি: এক্স

যত দিন গড়াচ্ছে রুবেন আমোরিম যেন ছন্নছাড়া হয়ে পড়ছেন। তার ট্যাকটিসের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া দূরে থাক, পুরো ইউনাইটেডকে মনে হচ্ছে নিজেদের ছায়া। কয়েক সপ্তাহ ধরে দলের সঙ্গে নেই রাশফোর্ড। গত ম্যাচে লাল কার্ড দেখে নিষিদ্ধ হয়েছেন ব্রুনো ফার্নান্দেস। সব মিলিয়ে হযবরল একটা অবস্থায় আছেন আমোরিম। সেদিক থেকে বেশ ভালো অবস্থায় আছে নিউক্যাসেল। টানা জয় দিয়ে পয়েন্ট টেবিলের পাঁচ নম্বরে তাদের অবস্থান। ফর্ম ধরে রাখতে পারলে শীর্ষ চারে জায়গা করে নেওয়া হবে সময়ের ব্যাপার। ‘ইউনাইটেড’ ডার্বির আগে দুই দলের অবস্থান তাই দুই মেরুতে।

ব্রেন্টফোর্ড বনাম আর্সেনাল

কাই হাভার্টজের একমাত্র গোলে ইপসউইচের বিপক্ষে জিতেছে আর্সেনাল।
ছবি: এক্স

টানা দুই জয় দিয়ে আবারও লিগের লড়াইয়ে ফেরত এসেছে আর্সেনাল। নগর প্রতিদ্বন্দ্বী চেলসিকে সরিয়ে আবারও উঠে এসেছে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে। লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে জয়ের কোনো বিকল্প নেই তাদের। অন্যদিকে নিজেদের নিয়মিত গোলরক্ষক মার্ক ফ্লেকেনকে হারিয়ে বেশ বিপাকে আছে ব্রেন্টফোর্ড। তরুণ গোলরক্ষক হ্যাকন ভালসিমারসনের ওপর ভরসা রাখতে হবে তাদের। মিডটেবিলের হুড়োহুড়িতে পা হড়কানোর সুযোগ নেই তাদেরও। হোঁচট খেয়ে নতুন বছরের শুরু করতে চাইবে না কেউ।

আরও পড়ুন