আর্জেন্টিনার ফুটবল নিয়ে কতটা জানেন

আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেসিএক্স

তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার ভক্ত বিশ্বজুড়ে। ম্যারাডোনা ও মেসির ফুটবল–জাদুতে পাগল ফুটবলপ্রেমীরা। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় দল আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশেও আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের শত শত ভক্ত। চলো, আর্জেন্টিনা দল নিয়ে কিছু তথ্য জেনে নিই।

আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের নাম ‘দ্য আলবিসেলেস্তে’। এই নামের অর্থ—সাদা ও আকাশি নীল।

আর্জেন্টিনায় ফুটবলের প্রচলন করে ব্রিটিশরা। ১৮০০ সালের শুরুতে ব্রিটিশ রেল কোম্পানির কর্মচারী ও শ্রমিকেরা রেলগাড়ির সঙ্গে সে দেশে যেসব খেলা নিয়ে গিয়েছিল, ফুটবল তার মধ্যে একটি।

ফিফার করা এক তালিকা অনুসারে বিশ শতকের সেরা ফুটবলের তালিকায় ২৫ নম্বরে রয়েছেন আর্জেন্টিনার ম্যানুয়াল মোরেনো। তিনি বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি চারটি দেশের জাতীয় দলে খেলেছেন, দেশগুলো হলো আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, কলম্বিয়া ও চিলি।

থমাস ও জেমস হগ নামের দুজন ব্রিটিশ নাগরিক আর্জেন্টিনায় প্রথম ফুটবল ক্লাব স্থাপন করেন। এই ফুটবল ক্লাবের নাম ছিল ‘বুয়েন্স এইরেস ফুটবল ক্লাব’।

আলেকজান্ডার ওয়াটসন হাটনকে আর্জেন্টিনার ফুটবলের জনক বলে অভিহিত করা হয়। স্কটল্যান্ডের এই নাগরিক অভিবাসী হয়ে আর্জেন্টিনায় আসেন এবং ফুটবলকে সে দেশে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেন।

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন লিগের তালিকায় আর্জেন্টিনার ফুটবল লিগ পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এর আগে বিশ্বে শুধু ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডে ফুটবল লিগের প্রচলন ঘটেছিল। ১৮৯১ সালে দেশটিতে প্রথম ফুটবল লিগের প্রচলন ঘটে।

আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন গঠিত হয় ১৮৯৩ সালে। দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা প্রথম ১৯১২ সালে ফিফার সদস্য হয়।

আরও পড়ুন

আর্জেন্টিনা প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে উরুগুয়ের মুখোমুখি হয়। সে ম্যাচে আর্জেন্টিনা ৩-২ গোলে পরাজিত হয়। আর্জেন্টিনা প্রথম কোপা আমেরিকা কাপ জয় করে ১৯২১ সালে।

১৯২৮ সালে প্রথম অলিম্পিক ফুটবলে অংশ নেয় আর্জেন্টিনা। প্রথম অলিম্পিকের পঞ্চম খেলায় দলটি ১১-২ গোলে যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত করে। প্রথম অলিম্পিকই দলটি ফাইনালে ওঠে। ফাইনালের প্রথম ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়। এর তিন দিন পর আবার খেলা হয়। সে খেলায় উরুগুয়ের কাছে আর্জেন্টিনা ২-১ গোলে পরাস্ত হয়ে অলিম্পিকে রৌপ্যপদক লাভ করে।

আর্জেন্টিনা প্রথম বিশ্বকাপ জয় করে ১৯৭৮ সালে ‘আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড কাপে’। আর দেশটি অলিম্পিক ফুটবলে প্রথম স্বর্ণপদক জয় করে ২০০৪ সালে এথেন্স অলিম্পিকে। বর্তমান ফুটবল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।

জয়ের পর সমর্থকদের অভিনন্দনের জবাবে আর্জেন্টিনা দল
এএফপি

জনসংখ্যা অনুসারে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রেজিস্টার্ড ফুটবলার আর্জেন্টিনার নাগরিক। ফিফার এক হিসাব অনুসারে দেশটিতে ২৬ লাখ ৫৮ হাজার ৮১১ জন ফুটবলার রয়েছে, যার মধ্যে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৮১১ জন রেজিস্টার্ড ফুটবলার, আর দেশটিতে রেজিস্টার্ড নন, এমন খেলোয়াড়ের সংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ ২৭ হাজার। দেশটিতে ৩ হাজার ৬৫০টি ক্লাব ও ৩৭ হাজার ১৬১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।

আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স এইরেস হচ্ছে এমন এক শহর, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্টেডিয়াম আছে। এ শহরে মোট ৫৯টি স্টেডিয়াম রয়েছে।

আরও পড়ুন

ট্যাঙ্গো নাচের উৎপত্তি আর্জেন্টিনায়। কয়েকজন নৃবিজ্ঞানী গবেষণা করে দেখিয়েছেন, ফুটবল, আরও বিশেষ করে রিভার প্লেট ফুটবল দলের বিকাশের সঙ্গে এ নাচের বিকাশের একটা সম্পর্ক রয়েছে।

ফিফার করা এক তালিকা অনুসারে বিশ শতকের সেরা ফুটবলের তালিকায় ২৫ নম্বরে রয়েছেন আর্জেন্টিনার ম্যানুয়াল মোরেনো। তিনি বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি চারটি দেশের জাতীয় দলে খেলেছেন, দেশগুলো হলো আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, কলম্বিয়া ও চিলি।

আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুটবল লিগের সবচেয়ে কনিষ্ঠতম খেলোয়াড়—যাঁর নাম সের্গেই আগুয়েরও। ২০০৩ সালের ৫ জুলাই ইনদিপেনদিয়েন্তে দলে খেলা শুরু করার সময় তাঁর বয়স ছিল ১৫ বছর ১ মাস ৩ দিন।

আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহণকারী অথবা সে দেশে বেড়ে উঠেছেন, এমন বেশ কয়েকজন নাগরিক অন্য দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জয় করেছেন। তাঁরা হলেন এনরিকে গুইয়াতা, রাইমন্ডো ওরসি, লুইস মন্টি ও অ্যাটেলিয়া দে মারিয়া, যাঁরা ১৯৩৪ সালে ইতালির হয়ে বিশ্বকাপ জয় করেছে। এরপর ডেভিড ত্রেজেগে ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সের হয়ে, আর মাউরো কামেরানেজি ২০০৬ সালে ইতালির হয়ে বিশ্বকাপ জয় করেছেন।

আধুনিক ফুটবল খেলার বল আবিষ্কার হয় ১৯৩১ সালে আর্জেন্টিনায়। সেলাইবিহীন এই বল সুপারবল নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। আর্জেন্টিনার কর্ডোবা প্রদেশের বেল ভিয়া শহরের লুইস পোলো, আন্তোনিও তোসালিনি ও হুয়ান ভালবোনেসি এই বল আবিষ্কার করেন। ফলে এ এলাকায় বল তৈরির জন্য এক শিল্প গড়ে ওঠে। এ ঘটনার স্মরণে ১৯৯৪ সাল থেকে এ এলাকায় ফিয়েস্তা ন্যাসিওনাল দে লা পেলোতা দে ফুটবল বা জাতীয় ফুটবল বল উৎসব নামের এক বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন