একটি ম্যাচ থেকে বিশ্বজয়
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯–এর বিশ্বকাপে মোট ছয় ম্যাচ খেলে ভারত মাত্র একটি ম্যাচে জিতেছিল। সেই জয়টি এসেছিল সহযোগী দেশ পূর্ব আফ্রিকার বিরুদ্ধে। ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপে আন্ডারডগ হিসেবে খেলতে এসে প্রথম ম্যাচে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দেয়। ফাইনালেও ভারত আন্ডারডগ হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দেয়।
তিন ম্যাচের দুটিতে জয়
১৯৮৩ সালের প্রথম ম্যাচে ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিয়েছিল। বেশির ভাগ ক্রিকেটবোদ্ধা একে অঘটন হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। তবে সেটা যেকোনো অঘটন ছিল না, ফাইনালে ভারত আবার তা প্রমাণ করে। ফাইনালে দ্বিতীয়বারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাজিত করে। উল্লেখ্য, ১৯৮৩–এর বিশ্বকাপে একটি দলকে দুবার প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কিন্তু এই বিশ্বকাপে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিনবার একে অন্যের মুখোমুখি হয়। একটি বিশ্বকাপে এই একবারই দুটি দল তিনবার একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছিল। ৯ জুন ১৯৮৩-তে প্রথম ম্যাচে ২৬২ রান করা ভারতের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২২৮ রানে অল আউট হয়ে যায়। এরপর ১৫ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজের করা ২৮২ রানের জবাবে ভারত ২১৬ রানে অল আউট হয়ে যায়। ফাইনালে দুটি দল আবার মুখোমুখি হয়। ভারতের করা ১৮৩ রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪০ রানে অল আউট হয়ে গেলে ভারত ক্রিকেট ওয়ানডে ওয়ার্ল্ড কাপে বিশ্ব বিজেতার খেতাব অর্জন করে।
হতে পারতেন বহুজাতিক
১৯৮৩ সালে জিম্বাবুয়ে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়। সে দলের সদস্য ছিলেন জন ট্রাইকস। ১৯৬৭ সালে যখন তিনি প্রথম ও শেষবারের মত টেস্ট ম্যাচ খেলেন, তখন তিনি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক। যদি মিশরে ক্রিকেট খেলা জনপ্রিয় হতো, তাহলে তিনি সে দলের হয়ে খেলতে পারতেন। কারণ তাঁর জন্ম মিশরে। যদি গ্রিসে ক্রিকেট খেলা জনপ্রিয় হতো, তাহলে তিনি সে দেশেও ক্রিকেট খেলতে পারতেন। কারণ তার পূর্বপুরুষেরা গ্রিসের নাগরিক ছিলেন।
পারিবারিক ক্রিকেটার
১৯৮৩ সালে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন কেভিন ম্যালকম কারেন। কেভিনের বাবার নাম কেভিন প্যাট্রিক কারেন। তিনিও একজন ক্রিকেটার ছিলেন। আবার ম্যালকমের তিন ছেলে টম কারেন, স্যাম কারেন ও বেন কারেন। তাঁরা সবাই ক্রিকেটার।
দুই দেশান্তরির মিল ও অমিল
১৯৮৩ সালে জিম্বাবুয়ে ও বিশ্বকাপের সবচেয়ে তরুণ খেলোয়াড়ের নাম গ্রায়েম হিক। কিন্তু জিম্বাবুয়ে দলে থাকলেও হিকের সেবার বিশ্বকাপের কোনো ম্যাচে খেলা হয়নি। ১৯৮৩ সালে অস্ট্রেলিয়া দলের খেলোয়াড় ছিলেন কেপলার ওয়েসেলস। কিন্তু তাঁর দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা। এই বিশ্বকাপে কেপলার ওয়েসেলস অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ম্যাচ খেললেও পরে আর অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে খেলেননি। ১৯৯২ সালে হিক ও ওয়েসেলসের পুনরায় বিশ্বকাপে প্রত্যাবর্তন ঘটে। তবে হিক জন্মভূমি জিম্বাবুয়ের বদলে ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপ খেলেন। আর কেপলার ওয়েসেলস এবার অস্ট্রেলিয়ার বদলে ক্রিকেট–বিশ্বে ফিরে আসা জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলেন।
জিরো থেকে হিরো
১৯৮৩ সালে আইসিসি খেলতে এসে প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয়। সে ম্যাচে জিম্বাবুয়ে দলের অধিনায়ক ডানকান ফ্লেচার ব্যাটিংয়ে ৫০ রান ও বোলিংয়ে ৪ উইকেট নেন।
নাশতা না খেয়েই
১৮ জুন ১৯৮৩-তে ভারত মুখোমুখি হয়েছিল জিম্বাবুয়ের। টসে জিতে ভারত ব্যাটিংয়ে নামে। সে সময় ভারতীয় দলের উইকেটকিপার ছিলেন সৈয়দ কিরমানি। যেহেতু দলের প্রয়োজনে ৮, ৯ এমনকি ১০ নম্বরে তিনি ব্যাট করতেন, তাই আয়েশ করে তিনি কেবল খাবার মুখে দিয়েছেন, এমন সময় শুনতে পেলেন কে যেন বলছে, কিরমানি প্যাড পরো। তিনি ভেবেছিলেন কেউ বুঝি তাঁর সঙ্গে দুষ্টুমি করছে। না কেউ তাঁর সঙ্গে দুষ্টুমি করছিল না। ভারতীয় ইনিংস শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে দলের ৫ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। সে সময় ভারতের রান ছিল মাত্র ১৭।
কোনো ভিডিও নেই
ভারত বনাম জিম্বাবুয়ের একই ম্যাচে ১৭ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ভারত সে ম্যাচে ৮ উইকেটে ২৬৬ রান করে। এর জন্য কপিল দেবকে এক অবিস্মরণীয় অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংস খেলতে হয়। মজার বিষয় হচ্ছে এই ম্যাচের কোনো ভিডিও নেই। কারণ, সেদিন সরাসরি বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট সম্প্রচার করা একমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল বিবিসির কর্মচারীরা ধর্মঘট করেছিলেন।
ছিল না অনেক কিছু
১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপজয়ী ভারত দলের কোনো টিম ম্যানেজার, কোচ, ডাক্তার আর ফিজিও ছিল না। এমনকি দলের জন্য কোনো প্রাইজমানিও ছিল না।
টাকা দিলেন লতা মঙ্গেশকর
কিংবদন্তি গায়িকা লতা ক্রিকেট খেলার ভক্ত ছিলেন। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট টিমের জন্য কোনো প্রাইজমানি বা কোনো ধরনের উপহার ছিল না। লতা মঙ্গেশকর কেবল এয়ারপোর্টে এসে ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানালেন না, সেই সঙ্গে কনসার্টের আয়োজন করলেন। এই কনসার্ট থেকে আয় হওয়া ২০ লাখ টাকার পুরোটাই ক্রিকেটারদের উপহার হিসেবে প্রদান করলেন।
একমাত্র খেলোয়াড়
সুনীল ভালসান ছিলেন ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী ভারত দলের একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি কোনো ম্যাচ খেলেননি।
নিজের লেখা নিজেই খেলেন
১৯৮৩ সালে ভারত ক্রিকেট দল একজন স্পোর্টস কলামিস্টকে তাঁর লেখা চিবিয়ে খেতে বাধ্য করে। ডেভিড এডওয়ার্ড ফ্রিথ ছিলেন ক্রিকেট কলামলেখক। বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তিনি ক্রিকেটবিষয়ক ম্যাগাজিন উইজডেন ক্রিকেট মান্থলির প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮৩-এর বিশ্বকাপের আগে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, বিশ্বকাপের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে ভারতের মতো দলকে খেলতে দেওয়া উচিত নয়। আর যদি ভারত এবার বিশ্বকাপ জেতে, তাহলে তিনি এই প্রবন্ধ চিবিয়ে খাবেন। বাস্তবে ভারত বিশ্বকাপ জেতার পর তিনি তাঁর লেখাটি চিবিয়ে খান।