ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ: ম্যাচ উইক ১৪
গার্দিওলা-আমোরিমের বড় পরীক্ষা, লেস্টারে নতুন কোচ
প্রিমিয়ার লিগে ডিসেম্বর মাসটা এ রকমই। এক ম্যাচ শেষ হতে না হতেই চলে আসে আরেক ম্যাচের প্রস্তুতি। মাঝ সপ্তাহের লড়াইয়ের জন্য দলগুলো কতটুকু প্রস্তুত? ম্যাচ উইক ১৪-তে মাঠে নামার আগে দলগুলোর অবস্থা, মাঠের ভেতরে ও বাইরে খবরাখবর জেনে নেওয়া যাক একনজরে।
এক নজরে ম্যাচউইক ১৩ শেষে প্রিমিয়ার লিগের টেবিল
ইপ্সউইচ টাউন বনাম ক্রিস্টাল প্যালেস
সপ্তাহের শুরু হচ্ছে অবনমনের শঙ্কায় ঝুলতে থাকা দুই দলের লড়াই দিয়ে। দুই দলের জন্যই ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ। প্রিমিয়ার লিগে টিকে থাকতে হলে এই ম্যাচে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। টেবিলে দুই দলের পয়েন্ট সমান সমান, গোল ব্যবধানে পিছিয়ে আছে ইপ্সউইচ। শেষ ম্যাচ বাদ দিলে বেশ ভালোই ফর্মে ছিল ইপ্সউইচ। টটেনহাম, ইউনাইটেডের কাছ থেকে মহামূল্যবান পয়েন্ট ছিনিয়ে এনেছে তারা। অন্যদিকে গত সপ্তাহে শেষ মিনিটের গোলে এক পয়েন্ট নিশ্চিত করেছে ক্রিস্টাল প্যালেস। অবনমনের লড়াইয়ে কে পিছিয়ে থাকবে, এই ম্যাচ দিয়ে অনেকখানি নিশ্চিত হবে এটি।
লেস্টার সিটি বনাম ওয়েস্ট হ্যাম
নতুন কোচের অধীনে মাঠে নামতে চলেছে লেস্টার সিটি। আশানুরূপ পারফরম্যান্স না পাওয়ায় ১২ ম্যাচ শেষেই বরখাস্ত হয়েছেন কোচ স্টিভ কুপার। ভঙ্গুর লেস্টারের দায়িত্ব নিতে চলেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক অন্তর্বর্তীকালীন কোচ রুড ফন নিস্টালরয়। স্টিভ কুপারকে বরখাস্ত করার পরপরই যোগাযোগ হয় তাঁর সঙ্গে। এই সপ্তাহ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবেন তিনি। গত ম্যাচে ব্রেন্টফোর্ডের কাছে ৪-১ গোলে হেরেছে লেস্টার। সব মিলিয়ে বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখে এই ডাচ কোচ। অন্যদিকে আর্সেনালের কাছে ৫-২ গোলে হেরেছে ওয়েস্ট হাম। কোচ লোপেতেগির ওপর ঝুলছে বরখাস্তের খড়্গ। দ্রুত অবস্থার পরিবর্তন না করতে পারলে হয়তো ওই ভাগ্য বরণ করতে হবে তাঁকে।
এভারটন বনাম উলভস
শুধু ডাগআউট নয়, একেবারে মালিকপক্ষে রদবদল আনতে চলেছে এভারটন। এই মাসের মধ্যেই এভারটনের দায়িত্ব বুঝে নেবে দ্য ফ্রাইডকিন গ্রুপ। দলের অবস্থার পরিবর্তন না করতে পারলে হয়তো কোচ শন ডাইচকে পত্রপাঠে বিদায় বলবে তারা। মুদ্রার উল্টোপিঠেও একই ঘটনা। অবনমনের শঙ্কায় থাকা উলভসের কোচও আছেন বিদায়ের ঘণ্টা সঙ্গী করে। গ্যারি ও’নেইলের দল ডিফেন্স সামলাতে ব্যর্থ। এই মৌসুমের সবচেয়ে বেশি গোল হজম করা দল তারা। বরখাস্তের শঙ্কায় থাকা দুই কোচ কীভাবে নিজেদের চাকরি বাঁচান, সেটাই উপভোগ্য হয়ে উঠবে এই সপ্তাহে।
ম্যানচেস্টার সিটি বনাম নটিংহাম ফরেস্ট
সাত ম্যাচ ধরে জয়ের দেখা নেই সিটি শিবিরে। ডাগ আউটে পেপ গার্দিওলা মেজাজ হারাচ্ছেন নিয়মিত। কোচিং ক্যারিয়ারে এমন বাজে সময়ের মুখোমুখি হতে হয়নি তাঁকে। এমনকি নিকট অতীতে ম্যানচেস্টার সিটিও এত বাজে অবস্থায় পড়েনি। লিগ টেবিলের লড়াই থেকে ছিটকে ম্যানচেস্টার সিটি এখন ইউরোপে টিকে থাকার দোলাচলে। নটিংহাম ফরেস্টের বিপক্ষে ম্যাচটা সিটির জন্য ফিরে আসার লড়াই। নটিংহাম ফরেস্টও মুখিয়ে আছে এই ম্যাচের দিকে। ইউরোপের টিকিট নিশ্চিত করতে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই। তবে গার্দিওলার ভয় যতটা না নটিংহামকে নিয়ে, তার থেকে বেশি কোচ নুনো এসপারিতো সান্তোকে নিয়ে। ৯ বার মুখোমুখিতে ৫ জয়ের বিপরীতে আছে ৩ হার আর ১ ড্র। লিগের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে সান্তোর কাছে পয়েন্ট হারানো নতুন কোনো অভিজ্ঞতা নয় গার্দিওলার কাছে।
নিউক্যাসল ইউনাইটেড বনাম লিভারপুল
লিভারপুলের অবস্থা যেন রবীন্দ্রনাথের কবিতার মতো। ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে’। ১৩ ম্যাচ শেষে ১১ পয়েন্ট লিডে অল রেডরা। গত সপ্তাহে সিটিকে বিধ্বস্ত করে ফুরফুরে মেজাজে আছে আর্নে স্লটের শিষ্যরা। নিউক্যাসলের বিপক্ষে তাই চাপ ছাড়া খেলতে নামবে লিভারপুল। কিন্তু টানা পয়েন্ট হারিয়ে ইউরোপের লড়াই থেকে ছিটকে পড়েছে নিউক্যাসল। গত সপ্তাহে আত্মঘাতী গোল থেকে একটি পয়েন্ট পেয়েছে তারা। ইউরোপের লড়াইয়ে থাকতে হলে লিভারপুলকে হারানোর কোনো বিকল্প নেই তাদের কাছে।
সাউদাম্পটন বনাম চেলসি
টানা দুই হারের পর কিছুটা ফর্মে ফিরেছে সাউদাম্পটন। গত সপ্তাহে ব্রাইটনের মাঠ থেকে ১ পয়েন্ট নিয়ে ফিরেছে তারা। পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থাকা দল সাউদাম্পটন খুব একটা চ্যালেঞ্জ হতে পারছে না কারও জন্য। মুদ্রার অন্যপিঠে চেলসি আছে ফুরফুরে মেজাজে। বিশেষ করে এনজো ফার্নান্দেজ ফেরার পর রাতারাতি বদলে গেছে তাদের মাঝমাঠের চেহারা। স্ট্রাইকার জ্যাকসনও আছে ফর্মে। ফর্মে থাকা চেলসির জন্য সাউদাম্পটন খুব একটা বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে না বলাই যায়।
আর্সেনাল বনাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
ইউনাইটেড ক্যারিয়ারের প্রথম বড় পরীক্ষার মুখোমুখি কোচ রুবেন আমোরিম। প্রিমিয়ার লিগে এসে তার ট্যাক্টিকস কেমন কাজ করবে, সেটা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন অনেকেই। সে পরীক্ষায় পাস মার্ক পেয়ে উৎরে গেছেন, এখন দেখার বিষয় বড় দলগুলোর বিপক্ষে কীভাবে শিষ্যদের সামলান তিনি। ইউরোপে জায়গা করা নিতে এই ম্যাচ জয়ের কোনো বিকল্প নেই ইউনাইটেডের কাছে। জয় ছাড়া অন্য কোনো দিকে তাকানোর সুযোগ নেই আর্সেনাল কোচ মিকেল আর্তেতারও। লিগের লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে জয় পেতেই হবে আর্সেনালকে। এ সপ্তাহের সকল নজর কেড়ে নেবে এই দুই দলের লড়াই।
অ্যাস্টন ভিলা বনাম ব্রেন্টফোর্ড
টানা আট ম্যাচ ধরে জয়হীন অ্যাস্টন ভিলা। স্টামফোর্ড ব্রিজে চেলসির বিপক্ষে হার তাদেরকে ছুঁড়ে ফেলেছে লিগ টেবিলের ১২ তম স্থানে। চ্যাম্পিয়নস লিগ না খেলাতে পারলে হয়তো এতক্ষণে বিদায় ঘন্টা বেজে যেত উনাই এমেরির। তবে আশার কথা ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে শেষ চার ম্যাচেই জয় পেয়েছে ভিলা। কিন্তু ভিলা শিবিরে চিন্তার ভাজ ফেলেছে গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজের চোট। আঙ্গুলে চিড় ধরায় একাদশে থাকছেন না তিনি। অন্যদিকে ব্রেন্টফোর্ড আছে ফুরফুরে মেজাজে। আড়াই বছর পর ব্রেন্টফোর্ডের জার্সিতে হ্যাটট্রিক করলেন কোনো খেলোয়াড়। কেভিন শাদের হ্যাটট্রিকে লেস্টারকে ৪-১ গোলে হারিয়েছে তারা। কিন্তু তাদের অ্যাওয়ে ফর্ম চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে থমাস ফ্র্যাঙ্কের জন্য। তা ছাড়া ভিলা পার্কে শেষ ৯ ম্যাচ ধরে জয়ের দেখা পায়নি তারা।
ফুলহাম বনাম ব্রাইটন
১০ জনের দল নিয়েও গত ম্যাচে ড্র করেছে ফুলহাম। ম্যাচের শেষদিকে এসে সরাসরি লাল কার্ড দেখেছেন অধিনায়ক টম কিয়ের্নি। ফলে নিয়মিত অধিনায়ককে ছাড়াই নামতে হচ্ছে তাদের। ব্রাইটনের বিপক্ষে অধিনায়ককে না পাওয়া বেশ বড় একটা ধাক্কা হবে ফুলহামের জন্য। লিগ টেবিলের তলানিতে থাকা সাউদাম্পটনের বিপক্ষে ধাক্কা খেয়েছে ব্রাইটনও। তবে ম্যানচেস্টার সিটির হার তাদেরকে ঠেলে দিয়েছে শীর্ষ ৪–এ। জায়গা ধরে রাখতে জয়ের বিকল্প নেই জার্মান কোচ ফাবিয়ান হুৎজলারের।
বোর্নমাউথ বনাম টটেনহাম
বড় দলদের কাছ থেকে পয়েন্ট ছিনিয়ে ছোটদের দান করা। প্রিমিয়ার লিগে টটেনহামের নিয়মই যেন এটা। ‘রবিনহুড নীতি’ মেনে চললে এই ম্যাচেও কপাল পুড়তে চলেছে কোচ আগ্নে পোস্তেকোগলুর। লিগ টেবিলের ১৩তম অবস্থানে আছে বোর্নমাউথ। টানা দুই হারের পর উলভসের বিপক্ষে জিতে কিছুটা ধাতস্থ হয়েছে চেরিসরা। কাগজে–কলমে ম্যাচটা খুব একটা কঠিন না হলেও পচা শামুকে পা কাটা টটেনহামের জন্য ম্যাচটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বারবার ছোটদলের বিপক্ষে পয়েন্ট হারালে ইউরোপের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাবে তাদের।