ফুটবল
সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হলেন কারা?
আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুম। ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে বাজার করতে নেমে পড়েছিল দলগুলো। গত কয়েক মৌসুমের তুলনায় বেশ শান্তই ছিল এবারের বাজার। কেনাবেচার হাটে সবচেয়ে দামি তারকা হলেন কারা? একনজরে দেখা আসা যাক।
জুলিয়ান আলভারেজ | ৭৫ মিলিয়ন ইউরো | ম্যানচেস্টার সিটি থেকে আতলেতিকো মাদ্রিদ
জুলিয়ান আলভারেজের দলবদল চমকে দিয়েছিল অনেককেই। পেপ গার্দিওলার অধীনে বিশ্বকাপজয়ী স্ট্রাইকারের কমতি ছিল না কোনো কিছুতেই। শুধু একটা জিনিস বাদে, গেম টাইম। আর্লিং হলান্ডের মতো খেলোয়াড় যে দলে আছেন, সেই দলে অন্য কারও সুযোগ পাওয়াটা বেশ দুরূহই বটে। ২৪ বছর বয়সী আলভারেজ তাই সিটি ছেড়ে ভিড়েছেন আতলেতিকো মাদ্রিদের ডেরায়। তাঁকে কেনার জন্য তেমন কাঠখড় পোড়াতে হয়নি কোচ ডিয়েগো সিমিওনেকে। আলভারেজও আর্জেন্টাইন কোচের অধীনে খেলতে রাজি, অন্যদিকে সিটিও ফেলতে পারেনি আতলেতিকোর অফার। সব মিলিয়ে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে ৭৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে জুলিয়ান আলভারেজ এখন আতলেতিকো মাদ্রিদের খেলোয়াড়।
ডমিনিক সোলাঙ্কে | ৬৫ মিলিয়ন ইউরো | বোর্নমাউথ থেকে টটেনহাম হটস্পার্স
নামটা দেখে অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। বয়স প্রায় সাতাশের কাছাকাছি, ইংল্যান্ডের জার্সিতে সুযোগ পেয়েছেন মাত্র ১ ম্যাচ, সেই খেলোয়াড়ের দাম ৬৫ মিলিয়ন ইউরো? কিন্তু নিয়মিত প্রিমিয়ার লিগ দেখা দর্শকেরা জানে, গোলপোস্টের সামনে কতটা ভয়ংকর এই ডমিনিক সোলাঙ্কে। চেলসির যুবদলে বড় হওয়া সোলাঙ্কে খেলেছেন লিভারপুল আর বোর্নমাউথের জার্সিতে। পাঁচ মৌসুম ধরে বোর্নমাউথের আক্রমণভাগ একাই সামলাচ্ছেন তিনি। বোর্নমাউথকে প্রিমিয়ার লিগে টেনে আনার পেছনেও সবচেয়ে বড় অবদান তাঁর। তবে গত মৌসুমে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য, প্রিমিয়ার লিগে ১৯ গোল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সবাইকে। চোটে না পড়লে ইউরোতেও সুযোগ হতো তাঁর। হ্যারি কেইন চলে যাওয়ার পর ভালো স্ট্রাইকারের খোঁজ চলছিল টটেনহামে। সেই ধারায় স্পার্সে যোগ দিচ্ছেন সোলাঙ্কে। দেখা যাক, বিশাল দামের বোঝা সামলে উঠতে পারেন কি না, এই ইংলিশ স্ট্রাইকার।
লেনি ইয়োরো | ৬২ মিলিয়ন ইউরো | লিল থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
তরুণ ফ্রেঞ্চ তারকাদের দিকে বরাবরই আলাদা নজর থাকে রিয়াল মাদ্রিদের। সেই সূত্র ধরে অনেক দিন ধরেই লেনি ইয়োরোকে চোখে চোখে রাখছিল রিয়াল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে রিয়ালের সঙ্গে দাম নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেন তিনি। ১৮ বছর বয়সী ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডারের জন্য ৬২ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছেন কোচ এরিক টেন হাগ। কিন্তু ইউনাইটেডের জার্সিতে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই চোটে পড়েছেন তিনি। প্রায় তিন মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাঁকে। তিন মাস পর এসে নিজেকে কতটুকু প্রমাণ করতে পারেন, সেদিকে নজর থাকবে সবার।
পেদ্রো নেতো | ৬০ মিলিয়ন ইউরো | উলভারহ্যাম্পটন থেকে চেলসি
পেদ্রো নেতোকে দলে ভেড়ানোর জন্য তৈরি ছিল বেশ কয়েকটি দল। উলভসের জার্সিতে তাঁর পারফরম্যান্স, সঙ্গে ইউরোতে পর্তুগালের হয়ে পারফরম্যান্স; দুইয়ে মিলে প্রিমিয়ার লিগ দলগুলোর নজরে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ২৪ বছর বয়সী তারকার জন্য আকাশচুম্বী দাম পরিশোধ করতে অনেকেই একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে চ্ছিল। কিন্তু নামটা যখন চেলসি, তখন খরচে ভয় কি? উলভসের দাবি করা চড়া মূল্যেই তাঁকে দলে ভিড়িয়েছে ব্লুজরা।
হোয়াও নেভেস | ৬০ মিলিয়ন ইউরো | বেনফিকা থেকে পিএসজি
পর্তুগালের ইউরোদৌড় আশাহত করলেও তাদের খেলোয়াড়েরা আশাহত করেননি। পর্তুগিজ মিডফিল্ডার হোয়াও নেভেসকে ৬০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে দলে ভিড়িয়েছে পিএসজি। চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্নে বিভোর পিএসজি হেভিওয়েট তারকাদের দিয়ে এক দফা চেষ্টা করেছে। লাভ হয়নি। তাই লুইস এনরিকের হাত ধরে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা তাদের। এবার আর বড় নাম নয়, লক্ষ্য ঠিক পজিশনের ঠিক খেলোয়াড়। যে কারণে বড় নামের পেছনে না ছুটে হোয়াও নেভেসকে দলে টেনেছে তারা। বেনফিকাও ছাড় দেয়নি, পিএসজির পকেট থেকে শেষ পয়সাটুকু বের করে এনেছে তারা।
মুসা ডিয়াবি | ৬০ মিলিয়ন ইউরো | অ্যাস্টন ভিলা থেকে আল-ইতিহাদ
গত দুই মৌসুমের তুলনায় এবার বেশ শান্তই ছিল সৌদি লিগ। এই মৌসুমে সৌদির সবচেয়ে বড় দলবদল ফ্রেঞ্চ উইঙ্গার মুসা ডিয়াবি। গত মৌসুমেই সৌদি আরবের অফার ফিরিয়ে দিয়ে যোগ দিয়েছিলেন অ্যাস্টন ভিলায়। ৫১ মিলিয়ন ইউরোতে তাঁকে দলে ভিড়িয়েছিল প্রিমিয়ার লিগের দলটি। এক মৌসুম যেতে না যেতেই সৌদির পথে পা বাড়ালেন তিনি। ২৫ বছর বয়সী মুসার জন্য ৬০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে তারা।
আমাদু ওনানা | ৬০ মিলিয়ন ইউরো | এভারটন থেকে অ্যাস্টন ভিলা
মুসা ডিয়াবির জন্য প্রাপ্ত অর্থ অ্যাস্টন ভিলা পুরোটাই ঢেলে দিয়েছে আমাদু ওনানার পেছনে। তার প্রমাণও মিলেছে মৌসুম শুরু হতে না হতেই। প্রথম তিন ম্যাচেই দুই গোল করে নিজের দামের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি। দুই মৌসুম ধরে এভারটনের বেশ বাজে সময় গেলেও ওনানা ছিলেন ব্যতিক্রম। নতুন দলে এসে তাই নিজেকে খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি তাঁকে।
দানি ওলমো | ৫৫ মিলিয়ন ইউরো | আরবি লাইপজিগ থেকে বার্সেলোনা
এবারের ইউরোর সেরা খেলোয়াড় বললেও খুব একটা ভুল হবে না। ইউরোতে ওলমোর শুরুটা হয়েছিল বেঞ্চে বসেই। কিন্তু পেদ্রির ইনজুরির সুবাদে জায়গা করে নিয়েছিলেন মূল একাদশে। এরপর থেকে ইউরোতে চলেছে ওলমো–শো। কোয়ার্টার, সেমিতে গোল। ইউরো শেষ করেছেন ৩ গোল আর ২ অ্যাসিস্ট নিয়ে। তাঁকে কেনার জন্য বড় দলগুলো উঠেপড়ে লাগবে, জানাই ছিল। কিন্তু ওলমো ফিরতে চেয়েছিলেন নিজের ঘরে। তাই বড় অফারগুলোকে সরিয়ে বার্সেলোনাতেই যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যদিও তাঁকে সাইন করালেও রেজিস্ট্রি করাতে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে বার্সা কর্তৃপক্ষকে। তবে ২ ম্যাচে ২ গোল করে জানান দিয়ে দিয়েছেন, নিজের ঘরে ফেরাটা স্মরণীয় করতেই ফিরেছেন তিনি।
টিউন কুপমেইনার্স | ৫৪ মিলিয়ন ইউরো | আতালান্তা থেকে জুভেন্টাস
গত মৌসুমের অপরাজেয় লেভারকুসেনকে থামিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে ছিলেন যে কজন, তাঁদের প্রধান এই টিউন কুপমেইনার্স। লেভারকুসেনের ভয়ানক মাঝমাঠকে একাই আটকে দিয়েছিলেন এই ডাচ মিডফিল্ডার। জিতেছিলেন ইউরোপা লিগের শিরোপা। কিন্তু বেরসিক ইনজুরির কারণে খেলা হয়নি ইউরো। কিন্তু তাতে দলবদলের বাজার কাঁপাতে ভুল করেননি। ৫৪ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে যোগ দিয়েছেন আরেক ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাসে। থিয়াগো মোত্তার অধীনে নতুন জুভেন্টাসের মাঝমাঠ সামলানোর মূল দায়িত্ব এখন তাঁর।
মাইকেল ওলিস | ৫৩ মিলিয়ন ইউরো | ক্রিস্টাল প্যালেস থেকে বায়ার্ন মিউনিখ
নতুন কোচ ভিনসেন্ট কোম্পানির হাত ধরে নিজেদের নতুন করে সাজাচ্ছে বায়ার্ন। কোচের প্রিমিয়ার লিগ প্রেম যে এখনো অব্যাহত, তা বোঝা গেছে দলবদলের মৌসুমে তাঁর পছন্দ দেখেই। কানাঘুষা আছে বার্নলিতে থাকার সময়েও ওলিসের দিকে নজর ছিল তাঁর। অবশেষে বায়ার্নে গিয়ে তাঁকে দলে টেনেছেন তিনি। যদিও চেলসি ও নিউক্যাসল ওলিসকে কেনার জন্য চেষ্টা করেছিল বৈকি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বায়ার্নেই তরি ভিড়িয়েছেন ২২ বছর বয়সী ফ্রেঞ্চ উইঙ্গার।