কী জাদু আছে এই স্প্রেতে, যে কারণে আহত খেলোয়াড় মুহূর্তেই হয়ে ওঠেন চাঙা?
ব্যথায় কাতরাচ্ছেন খেলোয়াড়, ডাগআউট থেকে দৌড়ে এলেন ফিজিও। ব্যাগ থেকে একটা বোতল বের করে স্প্রে করে দিলেন খেলোয়াড়ের গায়ে। নিমেষেই গায়েব হয়ে গেল ব্যথা। কিছুক্ষণ আগেও যে খেলোয়াড় ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন, পুরো ফিট হয়ে মাঠে দৌড়ানো শুরু করলেন তিনি।
খেলার মাঠে এমন দৃশ্য নতুন কিছু নয়; বরং গত কয়েক বছরে বেশ স্বাভাবিক একটি বিষয়। অদ্ভুত এই স্প্রের নাম ম্যাজিক স্প্রে। নামেই পরিচয়। শরীরের সব ব্যথা যেন ম্যাজিকের মতো উবে যায় এই স্প্রের সংস্পর্শে। ফুটবলে বেশি দেখা গেলেও এখন অন্যান্য খেলাতেও নিয়মিতই চোখে পড়ে ম্যাজিক স্প্রে। কিন্তু কী এমন আছে এই স্প্রের ভেতর, যা মুহূর্তেই দূর করে দেয় শরীরের যত ব্যথা?
ম্যাজিক স্প্রে মূলত একধরনের নাম্বিং স্প্রে। যার কাজই হলো মাংসপেশিকে অসাড় করে দেওয়া। এই স্প্রে দিয়ে না খেলোয়াড়দের ব্যথা দূর হয়, না এটি কোনো ওষুধ; বরং খেলোয়াড়দের মাসলকে এমনভাবে অসাড় করে দেওয়া হয়, যেন তাঁদের কোনো ব্যথার অনুভূতি না হয়। এই অসাড় করে দেওয়ার কাজটি করে ইথাইল ক্লোরাইড। ইথাইল ক্লোরাইড ব্যবহার করা হয় ইনজেকশন দেওয়ার আগে। যাতে ইনজেকশনের ব্যথা না লাগে। মূলত ইথাইল ক্লোরাইডের সঙ্গে কুলিং সাবস্ট্যান্স মিথাইল স্যালিলেট মিলে তৈরি করা হয় ম্যাজিক স্প্রে।
ম্যাজিক স্প্রে মূলত অ্যানেসথেসিয়ার মতো কাজ করে। অ্যানেসথেসিয়া দিলে যেমন রোগীরা মুহূর্তেই ঘুমিয়ে পড়েন, তেমনই এই ম্যাজিক স্প্রে দিলেও পেশিগুলো ঘুমিয়ে পড়ে। আর ঘুমন্ত পেশিতে কোনো ব্যথাও অনুভূত হয় না। এটা অনেকটা ব্যথা পাওয়ার পর সেই জায়গায় বরফ দেওয়ার মতো। তাৎক্ষণিক ব্যথা সারানোর উপায়মাত্র।
তখন ফিজিওরা নিজেদের সঙ্গে রাখতেন বরফের ব্যাগ। আইসব্যাগ দিয়ে চলত ব্যথা কমানোর কাজ। তবে আগে আইসব্যাগের কাজ অন্যান্য খেলোয়াড় বা কোচ করতে পারলেও ম্যাজিক স্প্রে চালনার জন্য প্রয়োজন দক্ষ ফিজিওর।
প্রশ্ন করতে পারো, মাসল যদি অবশই হয়ে যায়, তবে খেলোয়াড়রা খেলেন কীভাবে? এই অবশ বেশিক্ষণ থাকে না। মিনিটখানেকের মধ্যেই অবশ অনুভূতি কেটে যায়, খেলোয়াড়দের মনোযোগ ততক্ষণে চলে যায় খেলায়। অ্যাডরেনালিন রাশের কারণে তাঁরা ভুলেই যান ব্যথার কথা।
ম্যাজিক স্প্রের দৌড় কিন্তু মাসল পেইন পর্যন্তই। হাড়ে ব্যথা পেলে, কিংবা পেশি ছিঁড়ে গেলে ম্যাজিক স্প্রে কোনো কাজেই আসে না। হতে পারে হিতে বিপরীত। তখন ম্যাজিক স্প্রে দিয়ে মাঠে খেলতে পাঠালে আরও বড় ইনজুরির আশঙ্কা থাকে। যে কারণে স্প্রে করার কিছুক্ষণ পর পর্যন্ত ফিজিওরা কড়া নজরদারি রাখেন খেলোয়াড়ের প্রতি। ম্যাজিক স্প্রে দেওয়ার পরও যদি খেলোয়াড়দের ব্যথা থাকে, তখনই খেলোয়াড়দের তুলে আনেন কোচ। এ ছাড়া কাটা জায়গায় কখনো ম্যাজিক স্প্রে দিতে হয় না।
ম্যাজিক স্প্রের আগে যে খেলোয়াড়দের ব্যথা দূর করার উপায় ছিল না, ব্যাপারটা তেমন নয়; বরং আগের ফুটবল ছিল আরও বেশি ভয়ানক। কড়া ট্যাকল, চোটের কারণে ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়া ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। তখন ফিজিওরা নিজেদের সঙ্গে রাখতেন বরফের ব্যাগ। আইসব্যাগ দিয়ে চলত ব্যথা কমানোর কাজ। তবে আগে আইসব্যাগের কাজ অন্যান্য খেলোয়াড় বা কোচ করতে পারলেও ম্যাজিক স্প্রে চালনার জন্য প্রয়োজন দক্ষ ফিজিওর। ঠিকভাবে ব্যবহার না করতে পারলে শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীনও হতে পারেন খেলোয়াড়েরা।
সবাই যে ম্যাজিক স্প্রে ব্যবহার করেন, ব্যাপারটা তেমন নয়। কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ম্যাজিক স্প্রে। তাদের মতে, ব্যথার জায়গায় হাত বোলানো আর ম্যাজিক স্প্রে ব্যবহার করা একই ব্যাপার।