অস্ট্রেলিয়া কেন এশিয়ার হয়ে ফুটবল খেলে?
ভৌগলিকভাবে অস্ট্রেলিয়া আর এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের মধ্যে রয়েছে বিশাল দূরত্ব। মধ্যে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের অথই জলরাশি। তাছাড়া পরিচয়ের দিক দিয়েও অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে মহাদেশের মর্যাদা। মূল ভূখণ্ডে দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড ছাড়াও দ্বীপ রাষ্ট্র হিসেবে পাপুয়া নিউগিনি রয়েছে। এবারের ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশের সঙ্গে একই গ্রুপে রয়েছে তারাও। অন্য মহাদেশের দেশ হয়েও এশিয়ার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলতে দেখায় অবাক হয়েছে অনেকেই। চলো এর পেছনের কারণ জেনে নেয়া যাক।
মূলত ২০০৬ সালের পর থেকে এশিয়ার ফুটবলে নিয়মিত খেলতে দেখা যায় অজিদের। এর পেছনে প্রধান কারণ ওশেনিয়া অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট কোটা না থাকা। ছোট্ট মহাদেশ হওয়ায় ফিফা কখনোই ওই অঞ্চল থেকে নির্দিষ্ট কোনো দলকে নিয়মিত অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেয়নি। ওশেনিয়ার বাছাইপর্বজয়ী দলকে প্লে-অফ খেলতে হয় অন্য মহাদেশীয় দলের সঙ্গে। কখনো সেটা হয় দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দল, কখনো আবার উত্তর আমেরিকা, এশিয়া কিংবা ইউরোপের কোনো দল।
শক্তিমত্তার দিক দিয়ে অন্য মহাদেশীয় দলগুলো এগিয়ে থাকায় প্রায়ই ওশেনিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া প্লে-অফ খেলতে গিয়ে বাদ পড়ে যেত। ১৯৯৪ সালে আর্জেন্টিনা, ১৯৯৮ সালে ইরান, ২০০২ সালে উরুগুয়ের কাছে প্লে–অফে বাদ পড়ার পর অস্ট্রেলিয়ান ফুটবল ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নেয় এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সদস্যপদ নেওয়ার।
যদিও ওশেনিয়া অঞ্চল থেকে খেলা শেষ বাছাইপর্বে উরুগুয়েকে প্লে-অফে হারিয়ে ২০০৬–এর জার্মানি বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার গৌরব অর্জন করে তারা। শেষ পর্যন্ত নিজেদের সিদ্ধান্তে অটুট থেকে ২০০৬ সালের পর থেকে এশিয়ার হয়েই বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলতে থাকে অস্ট্রেলিয়া।
২০২২ বিশ্বকাপ পর্যন্ত এশিয়া থেকে চারটি দেশ সরাসরি মূল পর্বে খেলার সুযোগ পেত। অস্ট্রেলিয়ার সামনে তাই বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া সহজ হয়ে যায়। তাছাড়া নিয়মিত জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরানের মতো শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় নিজেদের খেলার মানও বাড়তে থাকে তাদের। শুধু বিশ্বকাপ বাছাইপর্বই না, এএফসি এশিয়ান কাপ এবং এশিয়ার ক্লাব কম্পিটিশিনেও খেলতে পারে অস্ট্রেলিয়ার ক্লাবগুলো। এ কারণে স্পনসরসহ নানারকম আর্থিক সহযোগিতা পাওয়াও সহজ হয়েছে তাদের জন্য।
কিন্তু যেকোন দেশ চাইলেই কি এভাবে মহাদেশ বদল করে অন্য মহাদেশ থেকে অংশ নিতে পারে? এটার উত্তর এক কথায় দেওয়া সম্ভব না। প্রথমত ওই মহাদেশের সবগুলো সদস্য দেশ যদি একমত হয় এবং ফিফার কাছে যথাযথ কারণ পেশ করার পর তারা অনুমোদন দেয়, তাহলেই সম্ভব নতুন কনফেডারেশনের সদস্য হয়ে খেলায় অংশ নেয়া।
এর আগে এশিয়ার দেশ হয়েও ইসরাইলকে ইউরোপের ফুটবলে অংশ নিতে দেখা গেছে। কাজাখিস্তানও এএফসি বাদ দিয়ে উয়েফায় নাম লেখা ২০০২ সালে। এরই ধারাবাহিকতায় সকারুরা ওশেনিয়া ছেড়ে এএফসিতে আসার আবেদন জানালে সানন্দেই রাজি হয় সদস্য দেশগুলো। এতে ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর জন্যে সুবিধাও হয়েছে।
আগে অন্য দেশগুলোর চেয়ে অস্ট্রেলিয়া মহাশক্তিধর হওয়ায় প্লে-অফ পর্যন্ত পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব ছিল। অজিরা চলে যাওয়ার পরই ২০১০ সালে আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফে বাহরাইনকে হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় নিউজিল্যান্ড। তবে ওশেনিয়ার দেশগুলোর সেই কষ্ট শেষ হচ্ছে। ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপে এই অঞ্চল থেকে সরাসরি একটি দল মূল পর্বে খেলার সুযোগ পাবে। পাশাপাশি আন্তমহাদেশীয় প্লে-অফে খেলতে পারবে আরও একটি দল।