রণক্ষেত্র প্রস্তুত। প্রস্তুত মঞ্চও। বাজছে দামামা। এবার শুধু লড়াইয়ের পালা। ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ১১ জুন রাত একটায় শুরু হবে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ২০২২–২৩ মৌসুমের ফাইনাল। ম্যানচেস্টার সিটি ও ইন্টার মিলান তৈরি নিজেদের সেরাটা নিয়ে। একদিকে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে আসা পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা, অন্যদিকে মিলান ডার্বির জয় করে আসা সিমোনে ইনজাঘির বাহিনী। কেউ কাউকে এক চুল পরিমাণ ছাড় দিতেও রাজি নয়!
দলে কোনো ইনজুরির সমস্যা না থাকলে, মিলান শহরের নীল অংশের দল ইন্টারনাজিওনালে নামবে সেমিফাইনালের একাদশ নিয়ে। কোচ সিমোনে ইনজাঘির পছন্দের ফরমেশন ৩-৫-২-এ মাঠে নামবে তারা। গোলের নিচে ওনানাকে রেখে তরুণ ডিফেন্ডার বাস্তোনি, পোড় খাওয়া আচেরবি, আর দারমিয়ানের ঘাড়ে থাকবে তিন সেন্টারব্যাকের পজিশন। মিডফিল্ডে থাকবেন হাকান চালাহানোলু, নিকোলাস বারেল্লা। এদের সঙ্গী হওয়ার সম্ভাবনা আছে মিখিতারিয়ানের, যদিও এ জন্য থাই ইনজুরি থেকে সেরে উঠতে হবে তাঁকে। কোনো কারণে মিখিতারিয়ানকে পাওয়া না গেলে প্রথম একাদশে থাকার সম্ভাবনা আছে ব্রোজোভিচের। দুই পাশের দুই উইংব্যাক হিসেবে খেলবেন ডি মারকো ও ডামফ্রিস। আক্রমণে নেতৃত্ব দেবেন বিশ্বকাপজয়ী লাওতারো মার্তিনেজ ও অভিজ্ঞ এডিন জেকো।
পেপ গার্দিওলা কোনোরকম পরীক্ষা–নিরীক্ষা না করলে ম্যানচেস্টার সিটিও মাঠে নামবে তিন ডিফেন্ডারের ফরমেশনে। তবে অন্যদের চেয়ে অন্য রকম এই ফরমেশনে নেই কোনো উইংব্যাকের ভূমিকা। ৩-২-৪-১ ছকের এই ফরমেশনে ওপরে থাকা উইংগাররা কিছুটা নেমে কাজ করেন উইংব্যাকের মতো। আবার পেছনের তিন ডিফেন্ডারের দুই প্রান্তে থাকা দুজন ওয়াইড সেন্টারব্যাকের ভূমিকা নিয়ে খেলতে থাকেন ফুলব্যাকের মতো। আক্রমণাত্মক কৌশলের বিচারে এই ফরমেশন ও খেলার ধরন গার্দিওলার দারুণ এক সংযোজন।
ম্যানুয়েল আকানজি, রুবেন ডিয়াস ও কাইল ওয়াকার থাকবেন এডারসনের সামনে, তিন ডিফেন্ডার হিসেবে। ডিফেন্সিভ মিড হিসেবে খেলবেন রদ্রি ও জন স্টোনস। সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং মিডের দায়িত্বে থাকবেন ডি ব্রুইনা ও গুন্ডোগান। উইংগার হিসেবে দুই প্রান্তে নামবেন বার্নারডো সিলভা ও জ্যাক গ্রিলিশ। স্ট্রাইকার থাকবেন আরলিং হলান্ড। কোনো ইনজুরির হানা না এলে এটা গার্দিওলার প্রথম পছন্দের একাদশ হবে। ছোট ছোট পাসে বিল্ডআপ এবং দ্রুতগতির আক্রমণ হবে খেলার মূল ধরন। কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনালে এর ভয়াবহতা দেখেছে সবাই! শক্তিশালী বায়ার্ন মিউনিখ ও রিয়াল মাদ্রিদ—দুই দলের বিপক্ষেই আধিপত্য বিস্তার করে ম্যানসিটি পেয়েছে ৪-১ গোলের জয়।
ইন্টার মিলানের মাথাব্যথা থাকবে কীভাবে মধ্যমাঠেই নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া যায় ম্যানচেস্টার সিটিকে। কারণ ম্যানচেস্টার সিটির মূল শক্তি ওই কেভিন ডি ব্রুইনার ডিফেন্সচেরা পাস এবং বলের দখল নিজেদের কাছে রাখা। সঙ্গে বুভুক্ষুর মতো গোলের ক্ষুধা নিয়ে থাকা বিশালদেহী স্ট্রাইকার আরলিং হলান্ডকে সামলাতে হবে ইন্টার ডিফেন্ডারদের। এ ক্ষেত্রে তারা অবশ্য অনুসরণ করতে পারে রিয়াল মাদ্রিদের পরিকল্পনা। ম্যান মার্ক করে এক মুহূর্তের জন্যও চোখের আড়াল হতে দেওয়া যাবে না হলান্ডকে। পাশাপাশি মিডফিল্ডে প্রেসিংয়ের মাধ্যমে নিতে হবে নিয়ন্ত্রণ। একবার নিজেদের পায়ে বল এলে স্বভাবজাত লং পাস এবং উইংব্যাকদের ক্রস ব্যবহার করে গোলের সুযোগ খুঁজবে ইন্টার। স্ট্রাইকার এডিন জেকোর বুদ্ধিদীপ্ত ওয়াইড ফরোয়ার্ড রোল বিপদে ফেলতে পারে সিটির ডিফেন্ডারদের। তাঁকে আটকাতে গিয়ে বের হওয়া ফাঁকা জায়গা কাজে লাগিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়তে পারেন বারেল্লা কিংবা মিখিতারিয়ানের মতো দ্রুতগতির কোনো ইন্টার মিডফিল্ডার। সঙ্গে লাওতারো মার্তিনেজের ফিনিশিংও হতে পারে গোল করার অন্যতম উপায়।
ম্যানচেস্টার সিটি অবশ্য গোল আটকানো নিয়ে খুব বেশি চিন্তায় থাকে না। কারণ আক্রমণাত্মক ফুটবলে প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশি গোল করে ম্যাচ জিতে আসা থাকে তাঁদের মূল লক্ষ্য। আরলিং হলান্ডকে আটকে ফেললেও ডি-বক্সের ফাঁকা হওয়া জায়গায় এসে দ্বিতীয় স্ট্রাইকারের ভূমিকা নিতে পারেন বার্নারডো সিলভা, জ্যাক গ্রিলিশরা। ঠিক এই বুদ্ধির জোরেই সেমিফাইনালে জোড়া গোল করেছেন সিলভা। হুটহাট ডি-বক্সের সামনে ঢুকে পড়া গুন্ডোগানও হতে পারেন বিকল্প উপায়। তবে গোলের সামনে থাকা আটটি ক্লিনশিট রাখা ওনানার সামনে দিতে হতে পারে অগ্নিপরীক্ষা।
৯০ মিনিট কিংবা ১২০ মিনিটের স্নায়ুযুদ্ধের লড়াই শেষে দেখা মিলবে নতুন চ্যাম্পিয়নের। একদিকে প্রথমবারের মতো ইউরোপের সেরা হওয়ার অপেক্ষায় থাকা ম্যানসিটি, অন্যদিকে চতুর্থ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার স্বপ্নে বিভোর ইন্টার মিলান। সর্বশেষ ইস্তাম্বুল ফাইনালে এসি মিলানের বিপক্ষে অসাধারণ কামব্যাকের গল্প লিখে ম্যাচ জিতেছিল লিভারপুল। এবারও সেই একই রকম ইতালিয়ান এবং ইংলিশ ক্লাবের লড়াই। সব মিলিয়ে ইস্তাম্বুল যে ফুটবলের এক উপভোগ্য ম্যাচ দেখতে চলেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।