ক্রিকেট
বোলার হয়ে দলে ঢুকে ব্যাটসম্যান হিসেবে সফল যারা
জাতীয় দল থেকে বিপিএল ফাইনাল; বাংলাদেশের ক্রিকেটে ওপেনিংয়ে প্রায়ই দেখা যায় মেহেদি হাসান মিরাজকে। অথচ তাঁর অভিষেক হয়েছিল বোলার হিসেবে। ক্যারিয়ারের বড় একটা সময় বোলার হিসেবেই কাটিয়েছেন তিনি। কিন্তু এক বছর ধরে ব্যাট হাতেও সাফল্য পাচ্ছেন। ক্রিকেটে এমন রাতারাতি বদলে যাওয়া নতুন কিছু নয়। বোলার হিসেবে শুরু করে ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ার শেষ করা বেশ স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এমন কয়েকজন তারকা নিয়েই আজকের লেখা।
সনাৎ জয়াসুরিয়া
বোলার থেকে ওপেনার হওয়ার কথা বললে সনাৎ জয়াসুরিয়ার নাম আসবেই। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটকে রাতারাতি বদলে দিয়েছিলেন জয়াসুরিয়া। ওপেনার মানেই সতর্ক হয়ে খেলা নয়, বরং ম্যাচের শুরু থেকেই যে আক্রমণাত্মক খেলা যায়, তার প্রমাণ ছিলেন জয়াসুরিয়া। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান হিসেবেও ধরা হয় তাঁকে। বর্তমানের রোহিত শর্মা, ডেভিড ওয়ার্নাররা যেভাবে ম্যাচ শুরু করেন, নব্বইয়ের দশকে সেটাই নিয়মিত করে দেখাতেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। অথচ তাঁর ক্যারিয়ারের সূচনা হয়েছিল ৬–৭ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে। মারমুখী ব্যাটিং দেখে অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা একদিন তাঁকে পাঠিয়ে দেন টপ অর্ডারে। সেই শুরু। সেখান থেকে ক্যারিয়ারের শেষবেলা পর্যন্ত ওপেনার হিসেবেই খেলেছেন তিনি। ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৩৪৩০ রানের পাশাপাশি রয়েছে ৩২৩ উইকেট।
মনোজ প্রভাকর
মনোজ প্রভাকরের ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ওপেনিং বোলার হিসেবে। ইনিংসের শেষদিকে টুকটাক ব্যাট চালাতে পারতেন তিনি। হুট করেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এক ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন দেওয়া হয় তাঁকে। অধিনায়ক আজহারউদ্দিন কী মনে করে মনোজকে পাঠান ওপেন করতে। সেখান থেকে শুরু। এর পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ক্যারিয়ারের শেষপর্যন্ত ওপেনার হিসেবেই খেলেছেন তিনি। তবে বোলিংও চালিয়ে গিয়েছেন একই সঙ্গে। ২৫৩ উইকেট আর ৩৪৫৮ রান নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন মনোজ।
স্টিভ স্মিথ
স্টিভ স্মিথ যখন ক্যারিয়ার শুরু করেন, তখন অনেকেই তাঁর মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন শেন ওয়ার্নের ছায়া। স্বয়ং শেন ওয়ার্ন পর্যন্ত মুগ্ধ হয়েছিলেন তাঁর বোলিং প্রতিভায়। এমনকি ২০১০ টি-টোয়োন্টি বিশ্বকাপে স্মিথ সুযোগ পেয়েছিলেন লেগ স্পিনার হিসেবে। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর নিজেকে শাণিত করা শুরু করেন তিনি। আস্তে আস্তে মনোযোগ দেন নিজের ব্যাটিংয়ে। এমনও সময় গিয়েছে যখন দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা টানা ব্যাটিং অনুশীলন করতেন তিনি। ২০১৩ সালে যখন আবার দলে ফিরলেন, তখন তিনি পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান। এখন তো অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংইয়ের মূল ভরসা তিনি। দুইটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ, একটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ—সব ট্রফির পেছনেই মূল স্তম্ভ হয়ে আছে স্মিথের ব্যাটিং। একসময় শেন ওয়ার্নের সঙ্গে তুলনা করা স্মিথকে এখন তুলনা করা হয় ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে।
রবি শ্রাস্ত্রী
ধারাভাষ্য থেকে কোচিং, কোথায় নেই রবি শ্রাস্ত্রী। ভারতের খেলা হলেই নিয়মিত মুখ তিনি। তাঁর ক্যারিয়ারও শুরু হয়েছিল বোলার হিসেবে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে মুম্বাইয়ের ক্রিকেট সার্কিটে নজর কেড়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে। ভারতীয় জাতীয় দলে তাঁর অভিষেকও হয়েছিল স্পিনার হিসেবেই। প্রায় দেড় বছর পর তাঁকে ওপেন করতে পাঠান অধিনায়ক। সেখান থেকেই বদলে যায় তাঁর ক্যারিয়ার। এর পর থেকে ক্যারিয়ারের শেষদিন পর্যন্ত ওপেনার হিসেবেই খেলেছেন তিনি। ক্যারিয়ারে প্রায় ৭০০০ রানের পাশাপাশি আছে ২৮০ উইকেট।
মহিন্দর অমরনাথ
ভারতের আরেক কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান মহিন্দর অমরনাথের ক্যারিয়ারের সূচনা হয়েছিল বোলার হিসেবে। ৬৩০২ রান আর ৭৮ উইকেট নেওয়া এই অলরাউন্ডার তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ৮ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে। তাঁকে প্রমোশন দেওয়া হয় ব্যাটিং অর্ডারে। আস্তে আস্তে পুরোপুরি ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন অমরনাথ। ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম তারকা খেলোয়াড় ছিলেন তিনি।