কোন আইনে আউট হলেন মুশফিক
মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনের শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি বাংলাদেশের। সকাল সাড়ে নয়টায় ফ্লাইডলাইটের আলোর নিচে শুরু হয়েছিল দিনের খেলা। অদ্ভুত এই কন্ডিশনে প্রথম সেশনেই বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট। তবে শুরুর চাপ কাটিয়ে আশার আলো দেখাচ্ছিলেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম আর দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা শাহাদাত হোসেন দিপু। দুজনের পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটিতে ভর করে বড় স্কোরের স্বপ্ন একটু একটু করে জাগতে শুরু হয়েছিল সমর্থকদের মনে। সে আশায় জল ঢেলে দিলেন মুশফিক। আশাভঙ্গ হওয়া বাংলাদেশি সমর্থকদের জন্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু ঠিক যেভাবে নিজের উইকেট জলাঞ্জলি দিলেন মুশফিক, তাতে ১৭ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন তো জাগেই।
ঘটনাটা ৪০.৪ ওভারের। ৮২ বলে ৩৫ রান নিয়ে উইকেটের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন মুশফিক। কাইল জেমিসনের করা চতুর্থ বলটি ব্যাকফুটে গিয়ে ডিফেন্স করেছিলেন মুশফিক। বল মাটিতে বাউন্স করে আবারও উঠে আসে মুশফিকের দিকে। ইচ্ছাকৃতভাবে সেই বল ডান হাত দিয়ে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দেন মুশফিক। এমনও নয় যে বলটি স্ট্যাম্পের দিকে তেড়ে আসছিল কিংবা আউটের বিন্দুমাত্র কোনো সম্ভাবনা ছিল। সম্পূর্ণ উইকেটের বাইরে চলে যাওয়া একটি বল হাত দিয়ে সরিয়ে দেন মুশফিক।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান মাঠে থাকা সবাই। নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা আবেদন করেন আউটের। ভিডিও রিপ্লে দেখে মুশফিকুর রহিমকে আউট ঘোষণা করেন তৃতীয় আম্পায়ার। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউট হলেন মুশফিক।
ক্রিকেটের রুলবুকের ৩৭.১.২ নম্বর নিয়ম অনুযায়ী একজন ব্যাটসম্যান ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউট হবেন, যদি প্রতিপক্ষ দল কিংবা আম্পায়ারের অনুমতি ছাড়া একজন ব্যাটসম্যান ব্যাটে লাগার পরও বল ইচ্ছাকৃতভাবে হাত দিয়ে স্পর্শ করেন। তবে ব্যাটসম্যান যদি নিজেকে ইনজুরি বা চোট থেকে বাঁচানোর জন্য বল স্পর্শ করেন, তবে তা ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ হিসেবে বিবেচিত হবে না।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে ১২তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউট হলেন মুশফিকুর রহিম। টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে এই অদ্ভুত রেকর্ডের সাক্ষী হলেন তিনি। ১৯৫১ সালে প্রথমবারের মতো ‘অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড’ আউট হয়েছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান লিওনার্ড হাটন। এ ছাড়া ছেলেদের একদিনের ক্রিকেটে আটবার ঘটেছে এমন ঘটনা। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুবার! এর মধ্যে আছেন রমিজ রাজা, ইনজাম–উল–হক, মোহাম্মদ হাফিজ, বেন স্টোকস ও জেসন রয়ের মতো বিখ্যাত খেলোয়াড়েরা।
মুশফিকুর রহিমের আউটের পরই চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ১৪৫ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের এমন আউটে হতাশা প্রকাশ করেছেন তামিম ইকবালও। ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে সতীর্থের এমন আউট দেখা নিশ্চয়ই খুব সুখকর নয় তাঁর জন্য।