প্রতি চার বছর পর বসে ফুটবলের এই বিশ্বমঞ্চ। প্রতিটি বিশ্বকাপের আগে ফিফা নিয়ে আসে কিছু নতুন নিয়ম। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চলো, দেখে নেওয়া যাক এ বছর বিশ্বকাপে কী কী নিয়ম যোগ হলো।
খেলোয়াড় পরিবর্তন
করোনা অতিমারির মধ্যে পাঁচজন খেলোয়াড় পরিবর্তনের নিয়ম করেছিল ফিফা। এর আগে অবশ্য পরিবর্তন করা যেত তিনজন খেলোয়াড়। কিন্তু বিশ্বকাপের মঞ্চে আরও কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। আগের মতো পাঁচজন খেলোয়াড়ই পরিবর্তন করা যাবে। তবে পরিবর্তনগুলো করতে হবে মোট তিনবারে। খেলোয়াড় পরিবর্তন করা যাবে যেকোনো সময়, অর্থাৎ হাফ টাইমের আগেও। এ ছাড়া নকআউট পর্বে নির্দিষ্ট সময়ের পরে ম্যাচ ড্র হলে নিশ্চয়ই পেনাল্টি হবে। সেই পেনাল্টির আগেও পরিবর্তন করা যাবে মূল একাদশ বা গোলরক্ষককে।
রোবট লাইনসম্যান
আর্জেন্টিনা ও সৌদি আরবের ম্যাচটির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। মার্টিনেজের দুই–দুটি অফসাইড গোলের সঙ্গে আর্জেন্টিনার মোট তিনটা গোল অফসাইডে বাতিল না হলে, খেলার ফলাফল অন্য রকম হতে পারত। মূলত এই অফসাইড ঝামেলা কমাতে এবার বিশ্বকাপে ব্যবহার করা হয়েছে সেমি–অটোমেটেড অফসাইড–প্রযুক্তি। অর্থাৎ অফসাইড হলে সঙ্গে সঙ্গে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে ধরে ফেলবে রেফারিরা। এ জন্য প্রতিটি স্টেডিয়ামের ছাদের নিচে রাখা হয়েছে ১২টি ক্যামেরা। এ প্রযুক্তির সাহায্যে প্রতি সেকেন্ডে ৫০ বার পর্যন্ত খেলোয়াড়দের অবস্থান ও দৈহিক ভঙ্গি রেকর্ড করা হয়। তারপর এই অবস্থান থেকে তৈরি করা হয় খেলোয়াড়দের ত্রিমাত্রিক (3D) অবয়ব। যেহেতু বলেও ব্যবহার করা হয়েছে মোশন সেন্সর প্রযুক্তি, তাই ত্রিমাত্রিক অবয়ব ও বলের প্রযুক্তির সাহায্যে নিশ্চিত হওয়া যায় খেলোয়াড়দের অবস্থান। বলের প্রযুক্তির সাহায্যে প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ বার পর্যন্ত কিক পয়েন্ট ও অবস্থান রেকর্ড করা যায়। এরপর বল ও মানুষের অবস্থান–সম্পর্কিত তথ্য পাঠানো হয় ভিডিও অপারেশন রুমে। সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে অল্প সময়ে নির্ধারণ করা হয় অফসাইড।
আল রিহালায় আইএমআই সেন্সর
বিশ্বকাপের অফিশিয়াল বলের নাম আল রিহলা। এই বলে ব্যবহার করা হয়েছে ইনার্শিয়াল মেজারমেন্ট ইউনিট (আইএমআই) সেন্সর। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ বার পর্যন্ত বলের কিক পয়েন্ট ও অবস্থান রেকর্ড করা যায়। ফলে অল্প সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। আধুনিক এ সেন্সরের সাহায্যে খুব সূক্ষ্ম অফসাইডও ধরা সম্ভব। বলের এ প্রযুক্তি সেমি-অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তির সঙ্গে মিলে কাজ করে। এ ছাড়া এ বলের রয়েছে কিছু আধুনিক বৈশিষ্ট্য। বলের ভেতরের ফাঁপা অংশ বলের আকৃতি ও বাতাস ধরে রাখার পাশাপাশি ধারাবাহিক গতি নিশ্চিত করে। বলটিতে ব্যবহৃত মানসম্মত চামড়া ঠিক রাখে বলের আকৃতি ও বাতাসের গতিপথ। সব মিলিয়ে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ফুটবল। বিশ্বকাপের ইতিহাসে বাতাসে সবচেয়ে দ্রুতগামী বল এটি। ম্যাচের গতি আরও বাড়াতে বলটিকে এভাবে ডিজাইন করেছে ক্রীড়াপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস।
পেনাল্টি নিয়ম
নিশ্চয়ই ভাবছ, পেনাল্টিতে আবার নিয়ম কী? বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় নির্দিষ্ট স্থান থেকে বলে কিক মারবে আর গোলরক্ষক তা আটকে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। নিয়মটা আসলে খাটবে কোন জায়গায়। আসলে নিয়মটা হলো, পেনাল্টি কিকের আগে গোলরক্ষক লাইন থেকে পা সরাতে পারবেন না। অন্তত একটি পা গোলপোস্টের লাইনে রাখতেই হবে। যদি প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় বলে কিক মারার আগে গোলরক্ষক দুটি পা-ই গোললাইনে বাইরে সরিয়ে নেন, তাহলে পুনরায় পেনাল্টি হবে। ইউরোপের লিগে অনেক আগে থেকেই এই নিয়ম চালু আছে।
বিশ্বকাপে ২৬ সদস্যের দল
বিশ্বকাপের জন্য আগে ২৩ সদস্যের দল ঘোষণা করা হতো। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপে প্রতিটি দল গঠন করেছে ২৬ সদস্য নিয়ে। এই পরিবর্তন করা হয়েছিল করোনা অতিমারির কথা মাথায় রেখে। করোনার প্রভাব শেষ হলেও এই নিয়ম পরিবর্তন করা হয়নি। তাই কাতার বিশ্বকাপের জন্য প্রতিটি দেশ ২৬ সদস্যের দল গঠন করেছে। এটাও একটি নতুন নিয়ম বটে।
ডাগআউট
ম্যাচ চলাকালীন ডাগআউটে বসতে পারবেন সর্বোচ্চ ২৬ জন। প্রতিটি দলে সদস্যও থাকবেন ২৬ জন করেই। কিন্তু তাঁদের মধ্য থেকে ১১ জন সব সময় থাকবেন মাঠে। বাকি ১৫ জন খেলোয়াড় বসবেন ডাগআউটে। সেই সঙ্গে আরও ১১ কর্মকর্তা সেখানে বসতে পারবেন। তবে এই ১১ কর্মকর্তার মধ্যে অবশ্যই একজন হতে হবে চিকিৎসক।
নারী রেফারি
এই প্রথম পুরুষদের ফুটবল বিশ্বকাপ পরিচালনা করছেন নারীরা। অফিশিয়ালি তিনজন নারী রেফারিকে নির্বাচন করেছে ফিফা। কাতার বিশ্বকাপের জন্য মোট রেফারি আছেন ৩৬ জন। তাঁদের মধ্যে তিন নারী রেফারি হলেন ফ্রান্সের স্টেফানি ফ্রাপ্পার্ট, জাপানের ইওশিমি ইয়ামাশিতা ও রুয়ান্ডার সালিমা মুকাসাঙ্গা। এখন পর্যন্ত ভালোভাবেই ম্যাচ সামলাচ্ছেন তাঁরা।