ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ: ম্যাচউইক ২১ প্রিভিউ
জমে উঠেছে শীর্ষ চারের লড়াই
ডিসেম্বরের জমজমাট খেলা শেষে প্রায় আট-নয় দিনের বিরতির পর আবার মাঠে গড়াচ্ছে বিশ্বের সেরা ফুটবল লিগ–ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। এই বিরতির মাঝে কোচ বদলেছে দুটো দল- এভারটন এবং ওয়েস্ট হাম। গত সপ্তাহে জয়ের ধারায় ফিরেছে ম্যানচেস্টার সিটিও। ফলে জমে উঠেছে শীর্ষ চার নিশ্চিত করার লড়াই। এক নজরে দেখে নেয়া যাক প্রিমিয়ার লিগের ২১ তম সপ্তাহের খেলাগুলো।
ব্রেন্টফোর্ড বনাম ম্যানচেস্টার সিটি
গত সপ্তাহে নিজেদের মাঠে ওয়েস্ট হামকে ৪-১ গোলে হারানোর পর প্রাণ ফিরে পেয়েছেন গার্দিওলা। অবশেষে ছন্দ খুঁজে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে সিটিজেনরা। গোল খরা কাটিয়ে জোড়া গোল করে আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন স্ট্রাইকার আরলিং হালান্ডও। সব মিলিয়ে ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নামবে তারা। যদিও এই মৌসুমে ঘরের মাঠে খেলার বিবেচনায় লিভারপুলের পর দ্বিতীয় সেরা দল ব্রেন্টফোর্ড। এমবুয়েমো-উইসাদের দলটি এখন পর্যন্ত ঘরের মাঠে সবচেয়ে বেশি ২৭ টি গোল করেছে। তাই জয়ের ধারা রক্ষা করা একেবারে সহজ হবে না ম্যানচেস্টার সিটির জন্য।
চেলসি বনাম বোর্নমাউথ
হঠাৎ করেই যেন ছন্দপতন ঘটেছে ব্লুজদের খেলায়। মাত্র চার ম্যাচ আগেও শিরোপার লড়াইয়ে ছিল তারা, এখন এক ম্যাচ বেশি খেলেও লিভারপুলের সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান ১০! শেষ চার ম্যাচে কোনো জয় নেই, সংগ্রহে নিতে পেরেছে মাত্র দুটি পয়েন্ট। এনজো মারেসকা তাই মরিয়া হয়ে জিততে চাইবেন এই ম্যাচটি। ঘরের মাঠে বোর্নমাউথকে হারাতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না তাকে। কেননা বোর্নমাউথের স্কোয়াডে পড়েছে ইনজুরির থাবা। একে একে চোট পেয়ে ছিটকে গেছেন দলের দুই স্ট্রাইকার এভানিলসন এবং উনাল। বাধ্য হয়ে কোনো এক উইঙ্গারকে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলাতে হবে কোচ ইরাওলাকে।
ওয়েস্ট হাম বনাম ফুলহাম
প্রিমিয়ার লিগের ১৪ তম পজিশনে আছে ওয়েস্ট হাম। তবুও স্প্যানিশ কোচ লোপেতোগুইকে ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। লিভারপুলের কাছে ৫ গোল এবং ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ৪ গোল খাওয়ার রেশ ধরেই মূলত এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে ইংলিশ কোচ গ্রাহাম পটারকে। প্রায় পৌনে দুই বছর আগে চেলসির ডাগআউটে দাঁড়িয়ে শেষ কোনো ফুটবল ক্লাবের কোচিং করিয়েছিলেন তিনি। লম্বা বিরতির পর আবারও ফিরছেন নিজের চেনা জায়গায়। তবে লন্ডন ডার্বিতে ফুলহামের বিপক্ষে স্বস্তিতে থাকবেন না পটার। কেননা ইনজুরিতে দলের বাইরে আছেন ক্লাব ক্যাপ্টেন জেরার্ড বোয়েন। স্ট্রাইকার মিখাইল অ্যান্তোনিও’র পর ইনজুরিতে পড়েছেন জার্মান স্ট্রাইকার ফুলক্রুগও। সব মিলিয়ে একাদশ নামাতে হিমশিম খেতে হবে পটারকে। অন্যদিকে লিগে টানা ৮ ম্যাচ ধরে অপরাজিত থাকা মার্কো সিলভার ফুলহাম চাইবে এই ম্যাচেও সেই রেকর্ড ধরে রাখতে।
নটিংহাম ফরেস্ট বনাম লিভারপুল
এ মৌসুমে সবচেয়ে বড় চমক দেখানো দলটির নাম নটিংহাম ফরেস্ট। নুনো এসপারিতো সান্তোসের হাত ধরে দলটি এখন পয়েন্ট টেবিলের তিনে উঠে এসেছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আর্সেনালের সঙ্গে তাদের পয়েন্ট সমান, কেবল গোল ব্যবধানে এক ধাপ পিছিয়ে আছে। নিজেদের মাঠে এবার তারা মোকাবেলা করবে লিভারপুলকে। এই সিজনে উড়তে থাকা লিভারপুলকে লিগে একমাত্র হারের স্বাদ দিয়েছে নটিংহামই। প্রিমিয়ার লিগের চতুর্থ সপ্তাহে লিভারপুলের ঘরের মাটিতে ১-০ গোলে হারিয়েছিল তারা। ফিরতি ফিকশ্চারে সেই ফলের পুনরাবৃত্তি করতে চাইবেন ক্রিস উড, গিবস হোয়াইটরা। তবে উড়তে থাকা মোহাম্মদ সালাহ, গ্যাকপো, আর্নল্ডদের সামনে এমন স্বপ্ন দেখার সাহস করা কঠিন। কেননা লিগে ১৯ ম্যাচে সবার চেয়ে বেশি ৪৭ গোল করে শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছে তারা। সেই সঙ্গে এখনই লিগে ১৮ গোল, ১৩ অ্যাসিস্ট করে ফেলা মোহাম্মদ সালাহকে আটকানো প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যেকোনো দলের জন্য।
এভারটন বনাম অ্যাস্টন ভিলা
শন ডাইচ ঠিক পারছিলেন না। একের পর এক ড্র করে পার পেলেও গত দুই ম্যাচে নটিংহাম এবং বোর্নমাউথের বিপক্ষে হেরে যাওয়ায় তাকে বিদায়ের সিদ্ধান্ত জানায় এভারটন। মাঝমৌসুমে দলটির দায়িত্ব দিতে যাচ্ছে ডেভিড ময়েসের হাতে। ডেভিড ময়েসকে এভারটন লিজেন্ড হিসেবে মানেন সবাই। প্রায় এগারো বছর কোচিং করিয়ে এভারটনকে লিগের শক্ত দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তারপর যাঁরাই এসেছেন, চেষ্টা করেছেন কিন্তু এভারটনের সেই ‘ময়েস যুগ’-কে টেক্কা দিতে পারেননি। দলের দুঃসময়ে তাই সেই ময়েসেই ভরসা রাখতে চলেছে ম্যানেজমেন্ট। প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকা অ্যাস্টন ভিলাও অনেকটা রোলার কোস্টার সময় কাটাচ্ছে। উনাই এমেরির শিষ্যদের পারফর্ম্যান্সে ধারাবাহিকতার বড় অভাব। প্রতিপক্ষের মাঠে খেলতে যাওয়া ভিলা ইনজুরির কারণে পাচ্ছে না ম্যাকগিন, বার্কলি, পাউ তরেস, ডিয়েগো কার্লোসকে। লাল কার্ড খাওয়ায় আরও এক ম্যাচ বসে থাকবেন তরুণ স্ট্রাইকার জন ডুরান।
লেস্টার সিটি বনাম ক্রিস্টাল প্যালেস
ঘড়ির কাঁটা এগোয়, ক্যালেন্ডারের পাতা ওল্টানো হয়। কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে না লেস্টারের। দলটির দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছিলেন কোচ নিস্টরলয়। তারপর টানা ছয় ম্যাচে কোনো জয়ের মুখ দেখেনি তারা, এর মধ্যে হেরেছে গত পাঁচ ম্যাচ। রেলিগেশন জোনে থাকা লেস্টারকে আগামী সিজনে প্রিমিয়ার লিগে থাকতে চাইলে এখনই ম্যাচ জেতা শুরু করতে হবে। বিশেষ করে ঘরের মাটিতে মধ্যম সারির প্রতিপক্ষ যেমন ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে। তবে গত ম্যাচে চেলসিকে রুখে দেয়া প্যালেসকে হারানো বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জই। কেননা এজে, মাতেতা এবং সারের ফর্মের ওপর ভর করে তারা চেলসিকে রুখে দিয়েছে।
নিউক্যাসল বনাম উলভস
একের পর এক জয়ে ম্যানচেস্টার সিটিকে পেছনে ফেলে টেবিলের পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। আইসাক, গর্ডন, মারফি, ব্রুনো গুইমারেসরা ফর্মে ফেরায় নির্ভার আছেন কোচ এডি হাও। অ্যাস্টন ভিলা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং টটেনহামকে হারিয়েছে তারা। এমনকি কয়েকদিন আগে হওয়া ক্যারাবাও কাপের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে শক্তিশালী আর্সেনালকে ২-০ গোলে হারিয়েছে। ঘরের মাঠে উলভসের বিপক্ষে ম্যাচটি তাই স্বাচ্ছন্দ্যেই জেতার কথা ম্যাগপাইদের। অন্যদিকে নতুন কোচের অধীনে সাফল্য পেতে থাকলেও গত ম্যাচে ৩-০ গোলে নটিংহামের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে উলভস। সেন্ট জেমস পার্ক স্টেডিয়ামের এই ম্যাচটি উলভসের জন্যে অগ্নিপরীক্ষা।
আর্সেনাল বনাম টটেনহাম
দলের বড় তারকা বুকায়ো সাকা ইনজুরিতে পড়েছেন। তবুও লিগে আর্সেনাল নিজের ছন্দ ধরে রেখেছে। সপ্তাহের সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচে তারা খেলতে নামবে টটেনহামের বিপক্ষে। লন্ডন ডার্বি বলে পরিচিত এই লড়াইয়ে জিতে লিগের দ্বিতীয় স্থান পাকাপোক্ত করতে চাইবেন গানার্স কোচ আরতেতা। অন্যদিকে লিগ টেবিলের ১২ তে চলে যাওয়া টটেনহামের লক্ষ্য থাকবে যেকোনো মূল্যে এই ম্যাচ জেতা। কেননা লিগে চার ম্যাচ ধরে জয়হীন থাকায় স্পার্স কোচ পোস্তেকোগলুর ওপরে ঝুলছে বরখাস্ত হবার খড়গ।
ইপসউইচ বনাম ব্রাইটন
সিজনের শুরুতে প্রিমিয়ার লিগের সাথে মানিয়ে নিতে না পেরে যেমন তথৈবচ অবস্থায় পড়েছিল ইপসউইচ, এখন সেটা অনেকটাই গুছিয়ে নিয়েছে তারা। কোচ কিয়েরেন ম্যাকেনার ছত্রছায়ায় নিজেদের ক্রমশই শক্ত করছে ট্র্যাক্টর বয়েজ নামে পরিচিত এই ক্লাব। গত ম্যাচে ফুলহামের সঙ্গে ২-২ গোলের ড্র এবং তার ঠিক আগের ম্যাচে চেলসিকে ২-০ গোলে হারানো সেটাই প্রমাণ করে। ব্রাইটনের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সেই ফর্ম অক্ষুণ্ণ রাখতে পারলে অবনমনের ঘর থেকে উঠে আসবে তারা। প্রায় উল্টো ভাগ্যে আটকে পড়া ব্রাইটনের জন্যে জরুরি জয় খুঁজে পাওয়া। কেননা গত আট ম্যাচে কোনো জয় নেই তাদের। লিগে দুর্দান্ত শুরু করার ফল হিসেবে এখনো পয়েন্ট টেবিলের দশে আছে তারা।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বনাম সাউদাম্পটন
বড় ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে রক্ষা করার দায়িত্ব যেন একাই নিয়েছেন আমাদ দিয়ালো। গত ম্যাচেও লিভারপুলের বিপক্ষে শেষ বাঁশি বাজার মিনিট দশেক আগে গোল করে মহামূল্যবান এক পয়েন্ট এনে দিয়েছেন। ঠিক যেমন অতিরিক্ত সময়ে গোল করে তিন পয়েন্ট এনে দিয়েছিলেন নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যান সিটির বিপক্ষে! এবার ঘরের মাঠে দিয়ালোর দিকেই তাকিয়ে থাকবে রেড ডেভিল সমর্থকরা। সাউদাম্পটনের বিপক্ষে সহজ ম্যাচে বড় জয় দিয়ে আত্মবিশ্বাস পেতে চাইবেন রুবেন আমোরিমও। গত ম্যাচেও ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়া সাউদাম্পটন আছে ভয়ানক অবস্থায়। কোচ বদলালেও ফলাফলের কোনো পরিবর্তন আসেনি। মাত্র ৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগের শেষ অবস্থানে আছে তারা। রেলিগেশন এড়াতে চাইলে রূপকথার মতো জেগে উঠতে হবে তাদের।