নিউজিল্যান্ডের এমন ভরাডুবি কেন
নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে প্রতি বিশ্বকাপেই আলোচনার ঝড় ওঠে। কাগজে কলমে তারা ফেভারিট থাকে সব সময়ই। প্রতিবারের মতো এবারও আশা নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছিল ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’রা। কিন্তু তাদের দৌড় থেমে গিয়েছে শুরু হওয়ার আগেই। বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচ শেষেই বিদায়ের সুর বেজেছে নিউজিল্যান্ডের ডাগআউটে।
অন্যদের তুলনায় কিউইদের বিশ্বকাপের পথ একটু কঠিনই ছিল। ‘গ্রুপ সি-তে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান, পাপুয়া নিউ গিনি আর উগান্ডা। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে আসা উগান্ডা আর স্বিতীয়বারের মতো খেলতে আসা পাপুয়া নিউ গিনিকে নিয়ে তেমন ভাবনা ছিল না কারোর। মূল লড়াইটা ছিল আফগান আর উইন্ডিজের বিপক্ষে। আর সেখানেই কাটা পড়েছে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। প্রথম ম্যাচে আফগান বোলিংয়ের সামনে দাড়াতেই পারেনি কিউইরা। ১৬০ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ৭৫ রানেই গুটিয়ে গিয়েছে তাদের ইনিংস। ৮৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে ‘সুপার এইট’-এর রেসে প্রথমেই পিছিয়ে পড়েছিল কেন উইলিয়ামসনের দল। সেই স্রোতে ধাক্কা দিয়েছে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩ রানের জয় শুধু উইন্ডিজদের ‘সুপার এইট’-এর টিকিটই দেয়নি, বরং কিউইদের বিদায় করে দিয়েছে সব সমীকরণ থেকে।
গত এক দশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে ধারাবাহিক দলের নাম নিউজিল্যান্ড। ওয়ানডে টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে সর্বশেষ ৬ বিশ্বকাপের প্রতিটিতে সেমি ফাইনাল খেলেছে তারা। এর মধ্যে তিন বিশ্বকাপের ফাইনালেও দেখা মিলেছে তাদের। কন্ডিশনের তোয়াক্কা না করে বিশ্বকাপের সেরা চারে উঠাকে রীতিমতো ‘রুটিন’ বানিয়ে ফেলেছিল নিউজিল্যান্ড। অথচ তারাই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিচ্ছে গ্রুপ পর্ব থেকে। সেরা চার দূরে থাক, সেরা আটেও জায়গা হচ্ছে না তাদের। এমন ভরাডুবির নেপথ্যে আছে কী?
চোট থেকে ফেরা খেলোয়াড়দের ওপর ভরসা
বিশ্বকাপে পা দেওয়ার আগে থেকেই নিউজিল্যান্ডকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ছিল ইনজুরি। ২০২৩ আইপিএলের প্রথম ম্যাচে ফিল্ডিং করতে গিয়ে চোটে পরেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। এরপর থেকেই তার ফর্মের ওঠানামা চলছে। বিশেষ করে ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটে অনেকদিন ধরেই নিজেকে খুজে ফিরছেন। এবার আইপিএল খেলতে গিয়ে আঙুলে চিড় পড়েছে ডেভন কনওয়ের। সার্জারির কারণে পুরো আইপিএল মৌসুম মিস করেছেন তিনি। বিশ্বকাপে ফিরলেও কনওয়ের সেরাটা পাচ্ছে না কিউইরা। আরেক ওপেনার ফিল অ্যালেনও সদ্য পিঠের চোট থেকে সেরে উঠেছেন।
কিউই টপ অর্ডারের প্রত্যেকেই কোনো না কোনো চোট সেরে ফিরেছেন জাতীয় দলে। চোটের ধকল সামলে নিজেদের সেরা ফর্মে ফিরতে পারেননি কেউই। যার প্রভাব পড়েছে ব্যাটিং অর্ডারে। টপ অর্ডারের ব্যর্থতা সামাল দিতে না পেরে পুরো ব্যাটিং অর্ডার ধ্বসে পরেছে তাসে ঘরের মতো।
বাজে ফিল্ডিং
নিউজিল্যান্ডের ফিল্ডিং সব সময়ই অসাধারণ। দলের প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গায় সেরা ফিল্ডার। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে নতুন এক নিউজিল্যান্ডকে আবিষ্কার করল বিশ্ব। ফিল্ডিংয়ে হতাশ করেছে কেন উলিয়ামসনের দল। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ক্যাচের মহড়া বসিয়েছিল তারা। প্রথম ১০ ওভারে ৪ ক্যাচ মিসসহ ১৩টি মিস ফিল্ডিং। মিস ফিল্ডিংয়ের মহড়া চলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও। ফিল্ডিংয়ে এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সের প্রভাব পড়েছে পুরো ম্যাচে। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে তাই বাড়ির পথ ধরতে হয়েছে তাদের।
আইপিএলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে না পারা
এবারের আইপিএলে ছিল কিউই খেলোয়াড়দের ছড়াছাড়ি। প্রায় প্রতিটি দলের স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছিল কিউই খেলোয়াড়েরা। কিন্তু আইপিএলের সেই অভিজ্ঞতা উল্টো বিপদে ফেলেছে তাদের। আইপিএলের রান বন্যার পিচ থেকে এসে স্লো পিচে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে কম-বেশি সবারই। কিউই খেলোয়াড়দের মধ্যে তা আরও বেশি স্পষ্ট। আইপিএল থেকে আসা রাচীন রবিন্দ্র, ডেরেল মিচেল এমনকি অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসনও তেমন কিছু করতে পারছেন না। ফলাফল এমন ভরাডুবি।